শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : "দিনক দিন চাল, ডাল, এঁটেল মাটিসহ সব জিনিসের দাম বেড়েছে। কমেছে শুধু মাটির তৈরি জিনিসপত্রের। বাপদাদার অামল থেকে এ পেশাতেই অাছি। বর্তমানে মাটির তৈরি জিনিসপত্র অচল প্রায়ের মতো আমাদের জনজীবনেও অচলাবস্থা বিরাজ করছে। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না কোনমতে প্রতিটি দিন চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় পার করছি।" দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এমন বক্তব্য শুধু শাহজাদপুর পৌরসদরের প্রাণনাথপুর পালপাড়ার হতভাগা মৃৎশিল্পীদের দেয়া নয় ! শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জের শত শত মৃৎশিল্পীদের বর্তমানে একই হাল পরিলক্ষিত হচ্ছে। বংশপরম্পরায় জেনে ও শিখে আসা ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এ পেশা সংশ্লিষ্ট মৃৎশিল্পীদের অবস্থা বর্তমানে বড়ই করুণ। বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে বর্তমানে মৃৎশিল্পীরা পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছে। আর যারা এখনো এ পেশায় সম্পৃক্ত রয়েছে তাদের খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। জানা গেছে, বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক যান্ত্রিক যুগে তৈরিকৃত প্লাষ্টিক, এ্যালুমিনিয়ামসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রের আগ্রাসনে দেশের ঐহিত্যবাহী প্রাচীনতম মৃৎশিল্প বর্তমানে হুমকির সন্মুখীন হয়ে পড়েছে। এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত শত শত শিল্পীরা তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাটির হাড়ি,পাতিল,স্যানেটারী ল্যাট্রিনের চাক, পাটা, খাদা, কোলা, সড়া, ব্যাংক, ঝাঝুর ছাকনা, চারি, কাটাখোলা, ভাপাপিঠার খোলা, সাতখোলা, পাঁচখোলা, তিনখোলাসহ বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র তৈরি করে বাজারে নিয়ে গিয়ে পড়ছে মহাবিপাকে। অতিকষ্টে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও তৈরিকৃত মাটির জিনিসপত্রের ন্যায্য দাম না পেয়ে অনেক মৃৎশিল্পীরাই ইতিমধ্যে লোকসানের ভার সইতে না পেরে ঐতিহ্যবাহী পেশা বদলিয়ে অন্য পেশায় যোগদান করেছে। অপরদিকে, মৃৎশিল্পীদের তৈরিকৃত মাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রের চাহিদা দিন দিন হ্রাস পাওয়ায় তৈরিকৃত ওইসব মাটির সামগ্রী হাটবাজারে আশানুরূপ বেচাবিক্রি হচ্ছে না। ফলে দুই দিক থেকেই শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জের শত শত মৃৎশিল্পীরা যন্ত্রণার যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন মতে এখনোও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ওই পেশাটিকে টিকিয়ে রেখেছে।এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পরে হয়তো মাটির তৈরি জিনিসপত্র পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাদুঘরে স্থান করে নেবে-এমন আশংকা স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের।দিনভর অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাটির জিনিসপত্র তৈরি ও বিক্রি করে তারা যে অর্থ আয় করছে তা দিয়ে তাদের ভরণপোষনই অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।এছাড়া মাটি ও মাটি পোড়ানোর জ্বালানী ব্যায় বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের মাটির জিনিসপত্র তৈরির ব্যায় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেলেও তাদের আয় না বাড়ায় অতিকষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের ধুঁকে ধুঁকে দিন কাটছে।তার পরেও‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’এর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় উর্ধ্বগতিতে রীতিমতো মৃৎশিল্পীদের জীবনজীবিকার প্রশ্নে কালো মেঘের ঘনঘটার মতো চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। জেলার শাহজাদপুর পৌরসদরের প্রাণনাথপুর পালপাড়া সরেজমিন পরিদর্শনকালে মহল্লার বেশ কয়েকজন মৃৎশিল্পী এ প্রতিনিধিকে বলেন, বংশ পরম্পরায় জেনে ও শিখে আসা মৃৎশিল্পের কাজে নিয়োজিত পাল সম্প্রদায়ের অনেকেই লোকসানের ভার সইতে না পেরে এ পেশা ত্যাগ করে অন্য পেশায় আত্মনিয়োগ করেছে। পেশাটি পরিশ্রমের তুলনায় লাভজনক না হওয়ায় শাহজাদপুরসহ জেলার উল্লাপাড়া, চৌহালী, বেলকুচি, কামারখন্দ, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, কাজীপুরের শত শত মৃৎশিল্পীদের বর্তমানে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। বহুমুখী নানা সমস্যার যাতাকলে পিষ্ট হয়ে এক সময়ের অতি জনপ্রিয় ও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প হুমকির সন্মুখীন হয়ে পড়েছে। শাহজাদপুরের প্রাণনাথপুর পালপাড়া মহল্লার রংলাল পাল, সংকর পাল, ভোম্বল পাল, রনজিত পাল, অসিত পাল,অনন্ত পাল, পলান পাল, অধীর পাল, সুশীল পাল, নিখিল পাল, সনজয় পাল, সুজন পাল, সুশীল পাল, নিখিল পাল, তপন পাল, গোপাল পাল, পরিতোষ পাল, রুপম পাল, রাজকুমার পাল, বিমল পাল, প্রদীপ পাল, কৃষ্ণপাল ও সংকর পালসহ জেলার শত শত মৃৎশিল্পীদের বর্তমানে প্রতিটি দিন কাটছে অনাদরে, অর্ধাহারে। স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা জানান, প্রতি বছর পূঁজার সময় একেকটি প্রতিমা তৈরি করে তাদের আয় হয় ৬/৭ হাজার টাকা। এক ট্রাক এঁটেল মাটি ক্রয় করতে হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। আবহাওয়া খারাপ থাকলে ও বৃষ্টিপাত হলে তাদের কাজ বন্ধ রাখতে হয়।এছাড়া জ্বালানী ব্যায়ও অতীতের তুলনায় বহুলাংশে বৃদ্ধি পাওয়ায় তৈরিকৃত সকল মাটির পন্যের উৎপাদন ব্যায় বহুলাংশে বেড়েছে। কিন্তু তৈরিকৃত মাটির জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় ও চাহিদা অমিত পরিমানে হ্রাস পাওয়ায় বর্তমানে শত শত মৃৎশিল্পীরা রীতিমতো চোঁখেমুখে সর্ষের ফুল দেখছে। অভাব অনটন নিত্যসঙ্গী হওয়ায় অভাবের তাড়নায় ওই পল্লীর অনেক শিশুকিশোর বিদ্যালয়ে যেতে না পেরে ঝড়ে পড়ছে। অভাবজনিত কারণে ছোটবেলা থেকেই ওইসব শিশুদের কাজে নিযুক্ত হতে বাধ্য হতে হচ্ছে। সমাজপতি বা কোন সরকারি বেসরকারি সংগঠন ওদের মতো চির অবহেলিত, চির পতিত, চির অপাংক্তেয় ভাগ্যবিড়ম্বিত মৃৎ শিল্পীদের ভাগ্যোন্নয়নে এগিয়ে আসতে দেখা না যাওয়ায় ওদের বিচারের রায় নিরবে নিভৃতে কাঁদছে প্রতি ক্ষণে, প্রতিটি মুহুর্তে। আধুনিক যান্ত্রিক উপায়ে প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন ধরনের প্লাষ্টিক, এ্যালুমিনিয়মসহ ধাতব শিল্পের আগ্রাসনে বর্তমানে মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে দেশপট থেকে। অভাব অনটন আর ঋণপানে জর্জরিত হয়ে শাহজাদপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার শত শত মৃৎ শিল্পীদের জীবন চালাতে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসা ওই ঐহিত্যবাহী এ পেশাটি বিভিন্ন ধরনের ধাতব দ্রব্যের আগ্রাসনে আর কতদিন তারা ধরে রাখতে পারবেন, তা নিয়ে তাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন, সংশয় ও শংকার উদ্রেক হয়েছে। পেশাটি ধরে রাখতে সরকারী-বেসরকারী সহযোগীতা কামনা করেছে।

সম্পর্কিত সংবাদ

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

ফটোগ্যালারী

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

একটা সময় ছিলো যখন আমরা আমাদের সবকিছুই কাগজে লিখে রাখতাম। কখন খেতে যাবো, কবে মিটিং, কখন শপিং এ যাবো এসব টু ডু লিস্টগ...

শাহজাদপুরে গরু লালন পালন করে স্বাবলম্বী জোবেদা খাতুন

অর্থ-বাণিজ্য

শাহজাদপুরে গরু লালন পালন করে স্বাবলম্বী জোবেদা খাতুন

শাহজাদপুরে পোতাজিয়া গ্রামে ব্যবসায়ী আব্দুস সালামের শতাধিক গরু দেখাশোনা করেন তারই সহধর্মিণী জোবেদা খাতুন। মৌসুমী, বৃষ্টি,...

শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্য আটক

অপরাধ

শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্য আটক

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে ছিনতাই হয়ে যাওয়া দুটি অটোবাইক উদ্ধারসহ অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করেছে থানা পুলিশ। সোমবার...

কবিগুরুর ভাষ্কর্য ভালে পাকুড় বৃক্ষ জন্মেছে!

জানা-অজানা

কবিগুরুর ভাষ্কর্য ভালে পাকুড় বৃক্ষ জন্মেছে!

শামছুর রহমান শিশির: ঊনবিংশ শতাব্দিতে বাংলার সাহিত্য গগণে ও বিশ্ব জ্ঞান পরিমন্ডলে 'ভারস্যাটাইল জিনিয়াস' খ্যাত কবিগুরু রবী...

শাহজাদপুরে ১৬ হাজার টাকার জন্য জবাই করে হত্যা! আটক ২

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে ১৬ হাজার টাকার জন্য জবাই করে হত্যা! আটক ২

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে পৌর এলাকার নলুয়া বটতলার মুদি দোকানী রইচ উদ্দিনের নিখোঁজের ১৫ দিন পর প্রতিবেশি শফিকুলের বাড়ির পাশের...

শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ‘মামলা না হওয়ার কারণ’ খুঁজছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি

শাহজাদপুর

শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ‘মামলা না হওয়ার কারণ’ খুঁজছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি

আওয়ামী লীগ–সমর্থিত সাবেক সংসদ সদস্য, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কি না, না হ...