শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
শামছুর রহমান শিশির/ফারুক হাসান কাহার: দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহত শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে বর্তমানে আশানুরুপ বেচাকেনা নেই । দেশের বিভিন্ন তাঁতপল্লী ও কাপড়ের হাট এলাকা থেকে শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে আগত বেশকিছু ব্যপারী ও কাপড় ব্যবসায়ীদের সাথে অন্যান্য হাটের বেচাকেনার সার্বিক পরিস্থিতির ওপর আলাপ হয়। আলাপকালে তারা জানান, শুধু শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে দেশীয় তাঁতবস্ত্র বেচাকেনায় মন্দাভাব বিরাজ করছে এমনটি নয়। শাহজাদপুরের মতো ঐতিহ্যবাহী বাবুরহাট, গাউছিয়া হাট, টাঙ্গাইলের করোটিয়া ,বাজিতপুর , বল্লারামপুরহাট ,সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর কাপড়ের হাট, সোহাগপুর কাপড়ের হাট ,পাবনার আতাইকুলা হাট, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ হাট, কুমারখালী হাটসহ দেশের বড়ছোট কাপড়ের হাটে বেচাকেনায় মন্দাভাব বিরাজ করছে। এ অবস্থায় তাঁতিরা চরম উদ্বেগ, উৎকন্ঠা আর হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। অপার সম্ভাবনাময় দেশীয় তাঁতবস্ত্রের বিক্রয়কেন্দ্র ওইসব হাটের বেচাকেনায় মন্দাভাব কোনমতেই শুভ বা ভাল কোন লক্ষন হতে পারেনা। দেশীয় তাঁতবস্ত্রের এ বাজারাবস্থা দেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের জন্য অশনি সংকেত বহন করছে বলে অভিজ্ঞজনেরা মনে করছেন। শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে আগত পাবনার জালারপুর গ্রামের তাঁতি আব্দুছ ছালাম জানান, লোকসানের কারনে তার ৩৪ টা তাতের মধ্যে ১২টি বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি প্রতি হাটে আগে প্রচুর পরিমান কাপড় বিক্রি করতেন। বর্তমানে বেচাকেনা এতটাই মন্দা যে ,মাঝে মাঝে লোকসানে কাপড় বিক্রি করতে তিনি বাধ্য হচ্ছেন। উল্ল¬াপাড়ার সলপ বেতকান্দি গ্রামের তাঁতি আব্দুর রহিম ৭০ টি তাঁত চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, দেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পে বর্তমানে নীরব দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছে। সারাদেশের বিভিন্ন হাটগুলোতে কাপড় বেচাকেনায় মন্দাভাব বিরাজ করায় এর প্রভাব হিসাবে শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে দেশের অন্যান্য হাট থেকে আগত ব্যপারী, পাইকাররা আগের মত আর হাট করতে পারছেন না। ফলে শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে বেচাকেনায় নেমেছে ধ্বস। শাহজাদপুর তাঁত কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলমাছ আনছারী জানান, রং-সূতাসহ তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের সকল উপকরনের মূল্য অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে উৎপাদন ব্যায়। কিন্তু সে অনুপাতে উৎপাদিত কাপড়ের দাম বাড়েনি। ফলে দেশের তাঁতসমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে দিনদিন তাঁত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং তাঁত ব্যবসায়ে মন্দাভাব বিরাজ করায় তাঁতিরা চরম উদ্বেগ,উৎকন্ঠা,ঋনগ্রস্থ ও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। শাহজাদপুর তাঁত শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আল মাহমুদ প্রামনিকসহ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে আগত দেশের বিভিন্ন কাপড়ের হাটের কাপড় বিক্রেতা ,ব্যপারী ও পাইকার ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশের সকল কাপড়ের হাটের বিকিকিনির বর্তমান চিত্র একইরকম। ওইসব কাপড়ের হাটে সারাদিন আশানুরূপ কাপড় বিক্রি করতে না পেরে প্রতিনিয়ত তাঁতিরা বিষন্ন মনে অবিক্রিত কাপড় নিয়ে ঘরে ফিরছে। কাপড় কেনাবেচা ওঠানামার সাথে সাথে লাখ লাখ তাঁতির ভাগ্যও ওঠানামা করে। পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ তাঁতসমৃদ্ধ জনপদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ অর্জিত হয়েছে তাঁতশিল্পকে ঘিরেই। কাপড়ের হাটে বেচাকেনার ওপরে তাঁতিদের জীবনজীবিকা নীর্ভর করে। কাপড়ের হাটগুলোতে বেচাকেনা ভাল হলে তাঁতিরা ভালভাবে জীবন চালাতে পারে। অন্যদিকে বেচাকেনায় মন্দাভাব থাকলে অনুরূপ তাঁতিদের জীবনে নেমে আসে কালো মেঘের ঘনঘটা। অর্ধাহারে মানবেতরভাবে দিন যাপন করতে হয় অনেককেই ।এমতবস্থায় ক্ষুদ্র, মাঝারী ও প্রান্তিক তাঁতিরা দিনদিন ধ্বংশের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে। তাঁতসমৃদ্ধ জনপদের ধনী ও বিত্তবান তাঁতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠই তাঁতবস্ত্র উৎপাদন ও বিপননের মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদায় আসীন হয়েছে। উত্তরবঙ্গর তাঁতী নেতা আলহাজ হায়দার আলী বলেন, দেশের প্রাচীন শিল্প হিসাবে তাঁতশিল্প দেশের মাটি ও মানুষের সাথে নিবিঢ়ভাবে মিশে আছে। বংশানুক্রমে চলে আসা তাঁতশিল্পের ধারক ও বাহক অনেক তাঁতি এ পেশা ত্যাগ করে অন্য পেশায় আতœনিয়োগের চিন্তাভাবনা করেও কোন কূল-কিনারা পাচ্ছে না। তাঁতের ব্যবসায়ে মন্দাভাব বিরাজ করলেও ওইসব অনেক তাঁতিদের পক্ষে পেশা পরিবর্তন সম্ভব হচ্ছেনা। কারণ, অধিকাংশ তাঁতিরাই তাঁতের কাজ ছাড়া অন্য কাজ জানেন না। এছাড়া তাঁতিগোষ্ঠির সংখ্যাগরিষ্ঠই খুব একটা উচ্চ শিক্ষিত নয় যে তারা চাকুরী করবে। ফলে কলুর বলদের মতো তাঁতিরা শুধু খেঠেই যাচ্ছে। কোন উন্নতি করতে পারছে না। উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহত শাহজাদপুর কাপড়ের হাট ঘুরে দেখা গেছে, তাঁতিরা কাপড় বিক্রির জন্য তাঁতবস্ত্র সাজিয়ে বসে আছে। হাটে ব্যাপারী ও পাইকারদের আগমনের মাত্রা আগের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় ওই হাটে কাপড় ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতাই বেশী দেখা গেছে।দিনভর কাপড়ের হাটে তাঁতিরা তাতবস্ত্রের পসরা নিয়ে বসে আছে কিন্তু ক্রেতার তেমন সাড়া মিলছে না। গত ৩/৪ বছর আগের এ সময়েও শাহজাদপুর কাপড়ের হাট ব্যাপারী ও পাইকার ক্রেতাদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে থাকতো। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাড়ি, লুঙ্গী, গামছা , চাদরসহ বিপুল পরিমান বিভিন্ন তাঁতবস্ত্র সামগ্রী সারাদেশে সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে সেই সরবরাহের মাত্রায় বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্ধ্ব:গতির কারনে জনমানুষের মধ্যে একটা অসস্তিকর অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যক্রয়েই সর্বসাধারন হিমশিম খাচ্ছেন।এছাড়া বিভিন্ন কারনে জনমানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় তারা আর আগের মত বস্ত্র কিনতে পারছেন না। ফলে বাজারে আগের মত আর তাঁতবস্ত্র বিক্রি হচ্ছে না।কাপড়ের হাটগুলোতে অধিকাংশ সময়ই তাঁতিরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে থাকতে চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন। দেশের তাঁতবস্ত্রের হাটবাজারকে চাঙ্গা করতে অনতিবিলম্বে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে তাঁতিরা আহবান জানিয়েছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরে আবাসিক হোটেল ব্যবসার করুন অবস্থা, প্রনোদনা চায় ব্যবসায়ীরা

অর্থ-বাণিজ্য

শাহজাদপুরে আবাসিক হোটেল ব্যবসার করুন অবস্থা, প্রনোদনা চায় ব্যবসায়ীরা

এ বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া টানা একমাসের লকডাউনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের আবাসিক হোটেলগুলো ফাকা পড়ে আছে। স্টাফ বেতন,...

১১ আগস্ট থেকে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু

বাংলাদেশ

১১ আগস্ট থেকে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ভার্চুয়ালি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সচিবালয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদে...

শাহজাদপুরে দুই মেয়েকে বিষ পান করিয়ে মায়ের আত্মহত্যা

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে দুই মেয়েকে বিষ পান করিয়ে মায়ের আত্মহত্যা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ইসলামপুর ডায়া নতুনপাড়া গ্রামে স্বামীর সাথে ঝগড়া করে বিষপান করে ম...