শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
শামছুর রহমান শিশির, শাহজাদপুর থেকে : উত্তরাঞ্চলের ১২ লাখ প্রান্তিক পাটচাষি আশ্বিনের অভাবে পড়ে লোকসান দিয়ে পাট বিক্রি করছেন। হাট-বাজারে পাটের দাম কম হওয়ায় তাদের এই লোকসান দিতে হচ্ছে। এদিকে লোকসান কাটিয়ে উঠতে তার পাটসোলাা বিক্রি করছে বলে জানিয়েছে। জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় চলতি মওসুমে প্রতি হেক্টরে গড়ে দুই দশমিক ৪০ মেট্রিক টন হিসেবে দুই লাখ ৫১ হাজার ৫৫৭ হেক্টর জমিতে সুতি ও তোষা পাটের উৎপাদন হয়েছে ছয় লাখ তিন হাজার ৭৩৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে এক লাখ ৪০ হাজার ১৫৭ হেক্টরে তিন লাখ ৩৬ হাজার ৩৭৭ মেট্রিক টন এবং রংপুর অঞ্চলে এক লাখ ১১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হয়। উৎপাদিত পাটের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ ভাগ পাট ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রেডের। অবশিষ্ট পাট ‘সি’, ‘ক্রস’ ও ‘এসএসআর’। পাট বিক্রি করে উৎপাদন খরচ ওঠাতো দুরের কথা প্রান্তিক চাষিদের লোকসান দিতে হচ্ছে। স্থানীয় মোক্তার নামের এক পাটচাষী দুই একর (ছয় বিঘা) জমিতে তোষা পাট আবাদ করে ফলন পেয়েছেন মাত্র ৪০ মন। উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ৭১ হাজার টাকা। প্রতি মন পাট এক হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ৬৮ হাজার টাকা। এ বছর পাট উৎপাদন বাবদ তার লোকসান হয়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকা। লোকসান কাটিয়ে উঠতে পাট সোলা বিক্রি করছে। শুধু মোক্তার আলী নয়, উত্তরাঞ্চলের প্রায় ১৪ লাখ পাটচাষির মধ্যে ১২ লাখ প্রান্তিক চাষি পাট আবাদ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন। এ সময় জোতদার ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর কৃষকেরা কম দামে পাট বিক্রি না করে মজুদ করে রাখছেন। এদিকে মজুদদারেরা হাট-বাজার থেকে কম দামে ‘এ’ ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডের পাট কিনে গুদামজাত করছে। পরে তারা এই পাট সরকারি ও বেসরকারি জুট মিলগুলোতে বেশি দামে বিক্রি করবে। পাট রপ্তানিকারক সৈয়দ শাহিন রেজা জানান, হাট-বাজারে প্রতি মন পাট এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে হঠাৎ করে উন্নতমানের প্রতি মন পাটে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। বিপুল পরিমান পাট ভারতে পাচার হওয়ায় পাটের দাম বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। বিজেএমসির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে পাট কিনতে বিজেএমসি’র ২৭টি জুট মিল সারা দেশে ১৭৫টি পাট ক্রয় কেন্দ্রর মাধ্যমে পাট ক্রয় করছে। বেড়া পাট বন্দরে লতিফ বাওয়ানি, গুল মোহাম্মদ, জনতা জুট মিল, হাফিজ জুট মিল পাট ক্রয় করছে। পাট ক্রয়কেন্দ্রগুলো গড়সাট প্রতি মন সুতি ও তোষা পাট এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার ৯০০ টাকা দরে ক্রয় করছে। তবে স্পিনিং জুট মিলে সুতা তৈরি ও রপ্তানিমানের ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রেডের প্রতি মন পাট ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। পাবনা, বগুড়া, নাটোর, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ অঞ্চলের পাটের মান ভাল হওয়ায় প্রকার ভেদে প্রতি মন সুতি ও তোষা পাট এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রকার ভেদে সুতি ও তোষা পাট এক হাজার ৫০০ থেকে সাড়ে এক হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একাধিক পাট ব্যবসায়ী জানান, এ বছর পাটের গুনগত মান ভাল হয়েছে। সরকারি পাটকলগুলো গত বছরের বকেয়া টাকা পরিশোধ করেনি। চলতি মওসুমে সরকারি পাটকলগুলো বাঁকীতে পাট কিনছে। ফলে নগদ টাকার অভাবে পাট ব্যবসায়ী, বেলার ও রপ্তাানিকারকরা পাট ক্রয় না করে হাত গুটিয়ে বসে আছেন। আশ্বিন কার্তিক মাসে প্রান্তিক কৃষকের হাতে নগদ টাকা থাকে না। এ জন্য তারা লোকসান দিয়ে পাট বিক্রি করছে। এ সুযোগে ভারতীয় পাট ব্যবসায়ীরা রপ্তানিমানের পাট দেশের উত্তর ও দক্ষিনাঞ্চলের সীমান্ত পথে পাচার করে নিচ্ছে। পাট ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতের পাট ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা, পাবনার কাশিনাথপুর, বনগ্রাম, আতাইকুলা, চাটমোহর, বগুড়ার ধুনট’ কুড়িগ্রামের চিলমারী, রাজারহাট, ভূড়ঙ্গামারী অঞ্চলের পাটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। পাটের রং ও আঁশ উন্নতমানের হওয়ায় দেশি ও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে এ অঞ্চলের পাটের চাহিদা ও কদর সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, পাট উৎপাদন করে কৃষক সবসময় ঠিক দাম পায় না। আসলে পাট বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু বিষয় কাজ করে। কৃষক তার প্রয়োজনে অপেক্ষাকৃত কম দামে পাট বিক্রি করে দেয়। সেটা মহাজনরা কিনে গুদামজাত করে রাখে। পরে তারা বেশি দামে বিক্রি করে। এদিকে কৃষকরা যে পাট বিক্রির মুল্য হিসাব করে তার সঙ্গে কিন্তু সোলার দাম ধরে না। সেই সোলাটাও অনেক দামি। এক মন পাটের সঙ্গে প্রায় দুই মন সোলা পাওয়া যায়। সুদান, নিউজিল্যান্ড, সিরিয়া, তুরস্ক, ইরাক, ইরান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, মিশর, চীন, বেলজিয়ামসহ পশ্চিমের অনেক দেশেই এখন বাংলাদেশ থেকে পাট পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। বিদেশে বাংলাদেশের পাট পাটপণ্যের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার

উল্লাপাড়া

উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার

তানিম তূর্যঃ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর পুকুর থেকে ইয়াম ইসলাম( ৮) নামের এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে...

উপজেলা কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

অর্থ-বাণিজ্য

উপজেলা কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

শাহজাদপুর উপজেলা সংবাদদাতাঃ শাহজাদপুর উপজেলার কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির নব-নির্বাচিত ক...

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা

উপ-সম্পাদকীয়

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা