রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Abul-Basar-Picture ২৬ মার্চ-২০০১৫ সাল।৪৪তম স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের অগ্নিঝড়া মার্চ মাস ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর মাস। মার্চ এলেই হৃদয় উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। আমাদের মতো বয়স্ক মানুষের শরীরের মৃত শিরা উপ-শিরার মধ্যে দ্রুত রক্ত চলাচল করতে গিয়ে বাঁধাগ্রস্থ হয়ে রক্তের উচ্চচাপ বেড়ে যায়। অসুস্থ ও অস্বস্তি বোধকরি। একজন মুক্তিযোদ্ধার মনোজগতে আঁকা হৃদয়ের সকল অনুভূতি হাসি-কান্না,আনন্দ-বেদনা, চাওয়া-না পাওয়ার, দুঃখ-দুর্দশার নানা স্মৃতি ২০১৫ সালের এ অগ্নিঝড়া মার্চ মাসে বসন্তের ঝড়া পাতার মত ঝড়ে যেতে চায়। আমার মত অনেক মুক্তিযোদ্ধারাই কষ্ট করেই হয়তো সেই সকল দুঃসহ স্মৃতির ইতিহাস বহন করে চলেছেন। যারা এখনো বেঁচে রয়েছেন এমন ৬০ উর্দ্ধো বয়সের প্রত্যেকটি বাংগালির স্মৃতিপটে ভেসে রয়েছে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের উত্তপ্ত, উত্তাল ও ঐক্যবদ্ধ বিক্ষুব্ধ জনতার আন্দোলন সংগ্রাম ও আত্নদানের অনেক খন্ড স্মৃতি। ঐসকল স্মৃতি বেদনা বিধুর হলেও পরবর্তীতে স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ভুখন্ড ও সবুজের মাঝে লাল সূর্যের রক্ত রঞ্জিত জাতীয় পতাকা প্রাপ্তি বাংগালির জাতীয় জীবনে অনেকটাই প্রশান্তি এনে দিয়েছিল। দেশ স্বাধীনের ৪৪ বছর পার হলেও আমরা মুক্তিযুদ্ধে মানবাতা বিরোধী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ব্যাক্তিদের বিচার সম্পন্ন করে তাদের শাস্তি এখনও দিতে পারিনি। ৯০’র দশকে ৭১’র ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির নেত্রী জাহানারা ইমাম ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে গণআদালত বসিয়ে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে ঘাতক গোলাম আযম ফাঁসির রায় ঘোষনা করেছিলেন। ঐ গণআদালতে বিচারকদের সম্মিলিত এক বেঞ্চ বিভিন্ন নারকীয় হত্যাকান্ডের অভিযোগ ও তথ্য উপাত্ত এবং সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে এ ফাঁসির রায় ঘোষনা করেন। লাখো লোকের উপস্থিত ঐ গন-আদালতের ময়দানে লেখকের উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। আদালতে ঘোষিত ফাঁসির রায়টি, এই মুহুর্তে শোনা গেল, গোলাম আযমের ফাঁসি হলো’শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে রেসকোর্স ময়দান থেকে ঢাকা শহরের নানা প্রান্তে তাৎক্ষনিক ছড়িয়ে পড়েছিলো। সেদিনের গণআদালত বসানোর ক্ষেত্রে সরকারের সকল বাঁধা গনজোয়ারের সামনে উবে গিয়েছিল। গণআদালতের ঐ রায় ছিল ‘প্রতিকী’ বিচার। ঐ রায় বাস্তবায়নের জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচী পালন করে আসছিলো ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি। কিন্তু তৎসময়ের বিএনপি সরকার ঐ রায় বাস্তবায়ন করা দুরে থাক উল্টো নেত্রী জাহানারা ইমামসহ কমিটির অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ে করলেন। ঐ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা মাথায় নিয়েই দূরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করলেন সকল মুক্তিযোদ্ধার মাতা জাহানারা ইমাম। সেদিন রেসকোর্স ময়দানে গণআদালত বসানোর জন্য তৈরী মঞ্চ যখন সরকারের পুলিশ বাহিনী ভেঙ্গে দিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে শুরু করলো তখন ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির অন্যতম সংগঠক সেক্টর কমান্ডার প্রয়াত লেঃ কর্নেল (অব) কাজী নূরুজ্জামান বজ্রকণ্ঠে ঘোষনা করলেন, “আপনারা কেউ ময়দান ত্যাগ করবেন না। কোথাও আদালত বসানোর স্থান না পাওয়া গেলে আজ আমার মাথার টাকের ওপর গণআদালত বসবে”। জনতা ঘুড়ে দাঁড়ালো। জনতার দাবী ও প্রতিরোধের মুখে অবশেষে খোলা ট্রাকের ওপর মঞ্চ তৈরী করে গন-আদালত বসানো হলো এবং ফঁসির রায় ঘোষিত হলো। সেদিনের পুলিশের ছোরা টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ও ফাঁকাগুলি জনতাকে একটু দমাতে পারেনি। পরে পুলিশ স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র সরে গিয়েছিল। এ ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহন করতে হবে। ঐ প্রতিকিী বিচার থেকে শুরু করে আজ আমরা ৭১’র ঘাতকদের আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের মুখো মুখি করে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বেশ কয়েকজন জামাত নেতাকে ফাঁসি ও আজীবন সাজা দিদেত সমর্থ হয়েছে।কিন্তু রায় কার্যকর করা হয়নি। বিচারের নামে শুধুমাত্র জামাতে ইসলামী নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামি, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ গুটি কয়েক নেতৃস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করলেই কি দায়িত্ব শেষ হবে ? এর উত্তরে এটাই বলা যায় এটাই শেষ নয়। আমাদের আরো দায়িত্ব রয়েছে। সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শান্তি কমিটির দালাল,কূখ্যাৎ রাজাকার যারা মানুষ হত্যা করেছে, লুটপাট করেছে,বাড়ীঘড় জ্বালিয়ে দিয়েছে,মা-বোনকে ধরে নিয়ে গিয়ে পাকবাহিনীর কাছে তুলে দিয়ে ইজ্জত হরণ করেছে তাদের বিচার করবে কে ? মহাজোট সরকার পালের গোদাদের অনেকের বিচার সম্পন্ন করলেও রায়বস্তবায়ন সহজতর হচ্ছে না।কারণ বিএনপি-জামাত জোট আন্দোলনের নামে সারাদেশব্যপি অবরোধ হরতাল জ্বালাও পোড়াওসহ হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে। দেশে অভ্যন্তরে যে উগ্র ও সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি করেছে বিএনপি জামাত জোট তা থেকে সহসাই মুক্তি মিলবে এমনটাও মনে হচ্ছে না।সম্প্রতি মহাজোট নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার চ্রট্রগ্রাম ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী তফশীল ঘোষণা করে আপাততঃ বিএনপি জামাত জোটের সহিংস আন্দোলনের ব্যত্ত্যয় ঘটানোর উদ্যোগ নিলেও ভবিষ্যতে এর ফলাফল কতটুকু লাভজনক হবে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিটি করপোরেশণ নির্বাচনের তফশীল ঘোষিত হওয়ায় আপাততঃ বিএনপির বন্দীদশা থেকে মুক্তিমেলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর তারা তাদের সমমনা বুদ্ধিজীবিদের মাধ্যমে নানা চক্রান্তের মাধ্যমে তাদের আটকেপড়া বৈতরণী পাড় হওয়ার চেষ্টা চালাবে। এ অগ্নিঝড়া মার্চ মাস আমাদেরকে যেমন উদ্দীপ্ত করে তেমনি বর্তমানের রাজনৈতিক দৃশ্যপট আমাদেরকে অজস্র বেদনা দেয়। এ বেদনার দায়ভার থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। দেশবাসীকে বেদনার দায়ভার থেকে মুক্ত করার দায়িত্ব মহাজোট সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের। ১৯৭০ সালে দেশবাসী বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগকে ভোটের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দিয়ে বাংগালিদের জন্য চাওয়াপাওয়ার সকল ইচ্ছা পুরুনের দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন। স্বাধীনতার বীজ বপনের কাজ অনেক আগে থেকে শুরু হলেও তখন থেকেই অংকুরদ্যোম হতে শুরু করে। এরপর দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ, জাতির জন্য ভিন্ন পতাকা অর্জন ছিল বাংগালিদের শ্রেষ্ঠ অর্জন । অনেক ভূলক্রুটি চড়াই উৎরাই করে স্বাধীন দেশের ৪৪ বছরে পা রেখেছে। এখনও স্বাধীন দেশে আমরা শত্রু বেষ্ঠিত। এ শত্রুর বিরুদ্ধে শেষ বারের মত লড়াই করে বিজয় অর্জনের জন্য দেশবাসী আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোট সরকার এখন ক্ষমতায়।দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হলেও দীর্ঘ ৪৪ বছর পরও স্বজন হারানোর ব্যাথা বুকে নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার রয়েছে। আওয়ামীলীগেরও উচিৎ হবে দলীয় লুটেরা শক্তির কাছে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা বিক্রি করে দিলে আওয়ামীলীগ তথা শেখহাসিনার অস্থিত্বের টানাপোড়ণ শুরু হবে। দ্রুত যুদ্ধাপোরাধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়ন হলে শত্রুপক্ষ অনেকটাই দমিত হবে। বাংগালি বীরের জাতি। ন্যায় বিচার না হলে জাতি আবার ফুঁসে উঠবে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবেনা। প্রধান সম্পাদক

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরের সাবেক এমপি কবিতা ও চয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা

রাজনীতি

শাহজাদপুরের সাবেক এমপি কবিতা ও চয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। ঘটনার দুই বছর পর বৃহস্পতিব...

শাহজাদপুরে ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে প্রাণ গেল শিশু হোসাইনের

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে প্রাণ গেল শিশু হোসাইনের

ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে মহাসড়ক পাড়ি দেয়ার সময় পাবনা থেকে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাস চাপায় হোসাইন সরদার নামের এক ৯ বছরের শ...

নানা অব্যবস্থাপণায় চলছে পাবনা সেচ প্রকল্প

নানা অব্যবস্থাপণায় চলছে পাবনা সেচ প্রকল্প

পাবনা প্রতিনিধি :-নানা অব্যবস্থাপণার মধ্যদিয়ে চালু রয়েছে পবনা সেচ প্রকল্প। অবহেলা ও অনিয়মের কারণে সেচ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ...

নগ্ননৃত্য ও দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত ১১ নারী ও ৫ ব্যবসায়ী গ্রেফতার

অপরাধ

নগ্ননৃত্য ও দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত ১১ নারী ও ৫ ব্যবসায়ী গ্রেফতার

শাহজাদপুরে বিভিন্ন নদী-বিলে নৌকায় পিকনিক ও বিনোদনের...

সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে শাহজাদপুরে মানববন্ধন

শাহজাদপুর

সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে শাহজাদপুরে মানববন্ধন

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরের পোরজনা ইউনিয়নের হরিনাথপুর(পাঠার মোর) গ্রামে সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে এলাকাবাসী ও পোরজনা উচ্চ...

শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ‘মামলা না হওয়ার কারণ’ খুঁজছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি

শাহজাদপুর

শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ‘মামলা না হওয়ার কারণ’ খুঁজছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি

আওয়ামী লীগ–সমর্থিত সাবেক সংসদ সদস্য, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কি না, না হ...