সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫

সিরাজগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা। তাঁতশিল্প এ জেলাকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেছে। যমুনা সেতু এবং সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধের অপূর্ব সৌন্দর্য এ জেলাকে পর্যটনসমৃদ্ধ জেলার খ্যাতি এনে দিয়েছে। এছাড়া বিখ্যাত স্থাপত্য ও শিল্পকর্মের নিদর্শন এ জেলাকে সমৃদ্ধতর করেছে। চলুন জেনে নেয় এই জেলার দর্শনীয় ৮ গন্তব্য।


হযরত মখদুম শাহদৌলার মাজার ও মসজিদ

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় বগুড়া-নগরবাড়ি পাকা সড়ক থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে হুরাসাগর নদীর পশ্চিম তীরে হযরত মখদুম শাহদৌলা শহীদ ইয়ামেনী (র.)-এর মাজার অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত স্থাপনা। মাজারের পাশেই অবস্থিত আরো দুটি স্থাপনা হচ্ছে শাহজাদপুর দরগাহ মসজিদ এবং শামসুদ্দিন তাবরিজির মাজার। মখদুম শাহদৌলার সমাধিটি একটি গোলাকার এক গম্বুজবিশিষ্ট কক্ষ।

কথিত আছে, ইয়েমেনের শাহজাদা হযরত মখদুম শাহদৌলা ১১৯২-৯৬ সালের মধ্যে ইয়েমেন থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে বোখারা শহরে আগমন করেন। সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত করে তিনি বাংলার শাহজাদপুর অঞ্চলে আসেন। তিনি এখানে ইসলাম প্রচার শুরু করলে তৎকালীন সুবা বিহারের রাজা বিক্রম কেশরী রাগান্বিত হয়ে তার সেনাবাহিনী প্রেরণ করে। যুদ্ধে রাজার বাহিনী পরাজিত হয়ে ফিরে যায়। এভাবে একাধিকবার মখদুম শাহদৌলার সাথে রাজা বিক্রম কেশরীর সংঘর্ষ হয় এবং প্রতিবারই রাজার সৈন্যদল পরাস্ত হয়।

ইতিমধ্যে হযরত মখদুম শাহদৌলার ইসলাম ধর্ম প্রচারের কারণে শাহজাদপুরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ক্রমান্বয়ে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত হয়। এক বর্ণনা মতে, রাজা বিক্রম কেশরীর সাথে হজরত মখদুম শাহদৌলার ৩৩ বার সংঘর্ষ হয়। কিন্তু রাজার সাথে শেষ যুদ্ধে হজরত মখদুম শাহদৌলা এবং তার বহু সঙ্গী ও অনুসারী যোদ্ধা শহিদ হন। অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, ঈর্ষান্বিত রাজা তার এক গুপ্তচরের মাধ্যমে মখদুম শাহদৌলাকে হত্যা করে। এই ধর্মযুদ্ধে তার শহিদ হবার কারণে তিনি হজরত মখদুম শাহদৌলা শহীদ ইয়ামেনী (র.) নামে পরিচিতি লাভ করেন।

দরগাহপাড়ার এই স্থানটিতেই মখদুম শাহদৌলা (র.) তার অনুচর এবং ওস্তাদ শামসুদ্দিন তাবরিজিকে নিয়ে পাঞ্জেগানা নামাজ আদায় করতেন। পরবর্তীতে সুলতানি আমলে (১৫০০-১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দ) এই মসজিদটি নির্মিত হয়। তৎকালীন মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর কারুকার্য দেখা যায় নির্মাণ কৌশলে। ১৫ গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদ উত্তর-দক্ষিণে ১৩.১৯ মিটার (৪৩ ফুট) দীর্ঘ এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১২.৬০ মিটার (৪১ ফুট) প্রস্থ। ছাদের উপরিভাগের গম্বুজের ব্যাস ৩.০৮ মিটার (১০ ফুট)। গম্বুজের প্রতিটি মাথা পিতলের কারুকার্যমণ্ডিত। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি দেখার জন্য এবং মাজার জিয়ারত করতে প্রতিদিন অনেক লোকের সমাগম হয়।


রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি

শাহজাদপুর উপজেলার দরিয়ারপুর বাজারে রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি অবস্থিত। এটি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক জমিদারি তত্ত্বাবধানের কাচারি ছিল। তারও পূর্বে অষ্টাদশ শতাব্দীতে এটি নীলকরদের নীলকুঠি ছিল। সে কারণে এখনো অনেকে একে কুঠিবাড়ি বলে। পরে রবীন্দ্রনাথের দাদা দ্বারকানাথ ঠাকুর এটি নিলামে কিনে নেন। বাড়িটি ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত একটি দ্বিতল ভবন।

বাড়িটির প্রতি তলায় সিঁড়িঘর ব্যতীত বিভিন্ন আকারের সাতটি করে কক্ষ আছে। ভবনটির উত্তর ও দক্ষিণে একই মাপের প্রশস্ত বারান্দা, বারান্দায় গোলাকৃতির জোড়া থামের উপরাংশের অলংকরণ, বড় মাপের দরজা, জানালা ও ছাদের উপর প্যারাপেট দেয়ালে পোড়ামাটির কাজ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংস্কার করে ভবনটিকে রবীন্দ্র জীবনভিত্তিক আলোকচিত্র এবং এ বাড়িতে প্রাপ্ত ও সংগ্রহ করা আসবাবপত্র ও তৈজসপত্র দিয়ে একটি স্মৃতি জাদুঘরে রূপ দেওয়া হয়েছে। পাশেই রয়েছে রবীন্দ্র পরিষদ ভবন।

এখানে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি মিলনায়তন ও পাঠাগার। রবীন্দ্রনাথ পিতার আদেশে ঊনত্রিশ বছর বয়সে ১৮৯০ সালে জমিদারি তত্ত্বাবধানের জন্য প্রথম শাহজাদপুর আসেন। এখানে তিনি ১৮৯০ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত মোট ৭বছর জমিদারির কাজে শাহজাদপুরে আসা-যাওয়া এবং অবস্থান করেছেন। রবীন্দ্রনাথ এখানকার প্রকৃতি ও মানুষের বিচিত্র জীবন প্রবাহের সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হন। তার এই শাহজাদপুরে আসা-যাওয়া শুধু জমিদারি তত্ত্বাবধানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এই সময়ের মধ্যে বিশ্বকবি অনেক কালজয়ী সাহিত্য রচনা করেছেন। প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে বহু দর্শনার্থী কবির স্মৃতিধন্য এই স্থানটি দর্শনে আসেন।


শাহজাদপুর মসজিদ

সিরাজগঞ্জ জেলার অন্তর্গত শাহজাদপুর সদরের একেবারে শেষ প্রান্তে দরগাপাড়ায় হুরাসাগর নদীর পাড়ে মসজিদটি অবস্থিত। ধারণা করা হয়, প্রখ্যাত ওলি মখদুম শাহ এ মসজিদ নির্মাণ করেন। কোনো লিপি প্রমাণে নির্মাণ সময়কাল সম্পর্কে জানা যায়নি। তবে মসজিদের স্থাপত্যরীতি ও অলংকরণশৈলী হিসেবে মসজিদটি ১৫ শতকে নির্মিত হয়েছিল মর্মে অনুমান করা হয়। শাহজাদপুর মসজিদটি তিন সারিতে পাঁচটি করে মোট পনেরোটি গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত।

মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্য ১৯.১৩ মিটার (৬৩ ফুট) এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রস্থ ১২.৬০ মিটার (৪১ ফুট)। অভ্যন্তরভাগে এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১৫.৭৭ মিটার (৫২ ফুট) ও ৯.৬০ মিটার (৩২ ফুট) এবং দেয়াল ১.৫৭ মিটার (৫ ফুট) পুরু। এ মসজিদটির কিবলা কোঠা দেওয়ালের লম্বে, পাঁচটি স্তম্ভপথে এবং উত্তর-দক্ষিণে তিনটি স্তম্ভপথে আইল বিভক্ত হয়ে মোট পনেরোটি চতুষ্কোনাকার এলাকায় বিভক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থিত অন্যতম প্রাচীন এ মসজিদে প্রাথমিক সুলতানি আমলে বিকশিত মসজিদ স্থাপত্যরীতির সকল বৈশিষ্ট্যই পরিলক্ষিত হয়।


নবরত্ন মন্দির

উল্লাপাড়া উপজেলাধীন হাটিকুমরুল ইউনিয়নের নবরত্নপাড়া গ্রামে এই মন্দিরটি আছে। এর আশপাশে কয়েকটি ছোট মন্দির রয়েছে। এ মন্দিরগুলো আনুমানিক ১৭০৪-১৭২০ সালের মধ্যে নবাব মুর্শিদকুলী খানের শাসনামলে তার জনৈক নায়েব দেওয়ান রামনাথ ভাদুরী নির্মাণ করেন। মূল মন্দিরটি তিনতলা এবং অন্যান্য মন্দিরসমূহ দোচালা ও মঠাকৃতি আটকোনাবিশিষ্ট। জনশ্রুতি রয়েছে, এ মন্দির নির্মাণকালে প্রতিটি ইট ঘিয়ে ভেজে তৈরি করা হয়েছিল। নবরত্ন মন্দিরটি ১৯৮৭ সালে সংরক্ষিত ইমারত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কিছু সংস্কার সাধন করে।

যমুনা বহুমুখী সেতু যমুনা নদীর উপরে অবস্থিত একটি সড়ক ও রেল সেতু। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই সেতুটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু। ১৯৯৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। যমুনা সেতু স্থাপনের জন্য প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৪৯ সালে।

১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর এর কাজ শুরু হয় এবং ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সেতুটির পাশেই যমুনা রেল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় ২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে যমুনা বহুমুখী সেতু রেলপথ দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এটি যমুনা নদীর পূর্ব তীরের ভূঞাপুর এবং পশ্চিম তীরের সিরাজগঞ্জকে সংযুক্ত করে। এটি বিশ্বে ১১শ এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৬ষ্ঠ দীর্ঘতম সেতু। যমুনা বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীর মধ্যে বৃহত্তর এবং প্রবাহিত পানি আয়তানিক পরিমাপের দিক থেকে বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম। সেতুটি বাংলাদেশের পূর্ব এবং পশ্চিম অংশের মধ্যে একটি কৌশলগত সংযোগ প্রতিষ্ঠিত করে। এটি অত্র অঞ্চলের জনগণের জন্য বহুবিধ সুবিধা বয়ে আনে, বিশেষত অভ্যন্তরীণ পণ্য এবং যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা দ্রুত করে।


এনায়েতপুর দরবার শরিফ

যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে শাহজাদপুর উপজেলায় এই দরবার শরিফ অবস্থিত। তরিকতের বিশিষ্ট পীর হিসেবে খ্যাত মোহাম্মদ ইউনুস আলী ১৮৮৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার এনায়েতপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি খাজা এনায়েতপুরী নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। খাজা এনায়েতপুরী নক্সাবন্দ-মুজাদ্দেদী তরিকার অনুসারী ছিলেন।

তিনি তরিকত দর্শন প্রচারের পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কাজেও জড়িত ছিলেন। এই পীর ১৯৫২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। প্রতিবছর তার মৃত্যু দিবসে ওরস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ভক্ত মুরিদগণ তার মাজারে সমবেত হন।


ইলিয়ট ব্রিজ

ইলিয়ট ব্রিজ সিরাজগঞ্জ শহরের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত কাটাখালের ওপর লোহা ও সিমেন্টের সমন্বয়ে তৈরি একটি সেতু। তৎকালীন ছোট লাট আলফ্রেড ইলিয়ট ১৮৯২ সালে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর সিরাজগঞ্জের তৎকালীন এসডিও (সাব ডিভিশনাল অফিসার) বিটসন, আইসিএস ১৮৯৫ সালে ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে পিলারবিহীন এই সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন করেন এবং ছোট লাটের নামানুসারে ইলিয়ট ব্রিজ নামকরণ করেন। ৫৫ মিটার (১৮০ ফুট) লম্বা ও ৫ মিটার (১৬ ফুট) প্রশস্ত এই সেতুটি খালের ৯ মিটার (৩০ ফুট) উঁচুতে নির্মিত। প্রায় ১২৫ বছর পূর্বে নির্মিত এই সেতুটি সিরাজগঞ্জ শহরের একটি আকর্ষণীয় স্থাপনা। স্থানীয়ভাবে এটি বড় পুল নামে পরিচিত।


বাঘাবাড়ি ভাসমান বিদ্যুৎ প্লান্ট

২০০১ সালে বেসরকারি ওয়েস্টমন্ড কোম্পানি শাহজাদপুরের বাঘাবাড়িতে ‘বিজয়ের আলো-১ ও ২’ নামে ভাসমান বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে। এই প্লান্টের মাধ্যমে মোট ১৭১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ হচ্ছে- যা জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের সাথে সংযুক্ত। শাহজাদপুরের তাঁতশিল্প এবং মিল্ক ভিটা কারখানাসহ উপজেলার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে শুষ্ক মৌসুমে সেচের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে এই ভাসমান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

বড়াল নদীর তীরে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের পূর্ব প্রান্তে ভাসমান এই বিদ্যুৎ প্লান্ট দর্শনার্থীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। রাতের আঁধারে পানিতে ভাসমান লম্বা দুটি আলোকিত টাওয়ার অনেক দূর থেকে দেখা যায়। তাই প্রতিদিন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখার জন্য অনেক মানুষ ভিড় করে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর এলাকায়। বিদ্যুৎ প্লান্টটি সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এখানে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট সার্বক্ষণিক পাহারায় নিয়োজিত রয়েছে।

এসব উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান ছাড়াও দেখতে পারেন তাড়াশের মন্দিরসমূহ, জয়সাগর দীঘি, সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্ট, ছয় আনি পাড়া দুই গম্বুজ মসজিদ, যমুনা সেতু ইকোপার্ক, বাঘাবাড়ি নৌবন্দর, খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, রাউতারা জমিদার বাড়ি, রাউতারার যোগেশ ঘোষের বাড়ি, মকিমপুর জমিদার বাড়ি মন্দির, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর বাড়ি, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর বাড়ি, কবি রজনীকান্ত সেনের বসতভিটা, নায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্মস্থান ও সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ।


ভ্রমণের প্রস্তুতি:

পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও ছোট কিছু ভুল আপনার আনন্দময় ভ্রমণকে বিব্রতকর করে তুলতে পারে। তাই ভ্রমণকে আরো উপভোগ্য এবং স্মরণীয় করে তুলতে কিছু প্রস্তুতি অবশ্যই প্রয়োজন। ভ্রমণের প্রস্তুতির জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে পারেন।


লিস্ট তৈরি করা

ভ্রমণের সময় আপনি কী কী করবেন এই পরিকল্পনাগুলো লিখে ফেলুন। এতে করে আপনার ভ্রমণের সময় যথাযথ ব্যবহার করা যাবে। লিস্ট অনুযায়ী ঠিক করুন কোথায় কোথায় যাবেন এবং সেখানে কত সময় অতিবাহিত করবেন।

হালকা লাগেজ

লাগেজ যতটা সম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস এড়িয়ে চলুন। তাহলে আপনি খুব সহজেই ব্যাগ বহন করতে পারবেন। অন্যথায় ভারী ব্যাগ আপনার ভ্রমণকে তিক্ত করে তুলতে পারে।

সঠিকভাবে প্যাকিং

স্যান্ডেল বা জুতা পলিথিন বা কাগজে মুড়িয়ে ব্যাগে নিন এতে কাপড় ও অন্যান্য জিনিস পত্র নোংরা হবে না। এ জাতীয় ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখুন।

স্থানীয় খাবার

ভ্রমণে যতটুকু সম্ভব স্থানীয় খাবার খাবেন এবং সেই খাবারের স্বাদ বুঝতে চেষ্টা করবেন। আপনি যদি ঘুরতে গিয়ে নিয়মিত রেস্টুরেন্টে খাবার খান তাহলে আপনার ঘুরতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই ট্যুরিস্ট রেস্টুরেন্ট এড়িয়ে স্থানীয় লোকজন যেখানে খায় সেখানে খাবার চেষ্টা করুন।

অফ-সিজন ভ্রমণ

ভ্রমণ মৌসুমের বাইরে ভ্রমণ করলে খরচ কমে আসবে। অফ সিজনে সাধারণত পর্যটক কম থাকে। তাই হোটেল থেকে শুরু করে পরিবহন ও খাবার প্রায় সব জায়গাতেই আপনি কম খরচে চলতে পারবেন। তাই অফ সিজনে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন।

যাতায়াতের ব্যবস্থা

ভ্রমণের স্থানের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিন। কারণ এসব ভ্রমণে আমাদের সবচেয়ে বেশি ঠকতে হয় স্থানীয় যানবাহন ভাড়া নিয়ে। ভাড়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে গাড়িচালকরা আপনার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া চাইবেন।

অতিরিক্ত টাকা

ভ্রমণে সবসময় আপনার বাজেটের বাইরে কিছু টাকা সাথে রাখুন। যেকোনো সময় যেকোনো বিপদে এই অতিরিক্ত টাকা আপনাকে হেল্প করবে। আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং বা ডেবিট ক্রেডিট কারডের মাধ্যমে কিছু অতিরিক্ত টাকা সাথে রাখতে পারেন।

ছোট ব্যাগ

ভ্রমণে মোবাইল, মানিব্যাগ ও ছোট ছোট দরকারি জিনিসপত্র রাখার জন্য ছোট একটি ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। কিছু ব্যাগ পাওয়া যায় যেটি কোমরে রাখা যায়।

চার্জার

মোবাইল ও ল্যাপটপের চার্জার নিতে ভুলবেন না। পাওয়ার ব্যাংক হলে সবচেয়ে ভালো হয়। রুমের বাইরে যাবার সময় পাওয়ার ব্যাংকটি সঙ্গে নিতে পারেন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে মোবাইলের চার্জ অনেক বেশি খরচ হয়। তাই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা নিরাপদ।

ইয়ারফোন

ভ্রমণের সময় কাটানোর জন্য ইয়ারফোন বা এমপিথ্রি প্লেয়ার সঙ্গে নিতে পারেন। ছোট মাপের কোনো স্পিকার সঙ্গে নিতে পারেন। এতে করে গ্রুপের সবাই একসঙ্গে গান শুনতে পারবেন এবং একটি ভালো আড্ডা জমে উঠবে।

ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন:

ঢাকার গাবতলী বা মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি বাসে এবং কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে করে বগুড়া শহর যেতে পারেন।

বাস: ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ রুটে নিয়মিত যেসকল বাস যাতায়াত করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— অভি এন্টারপ্রাইজ, এস. আই. এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস, সীমান্ত সুপার সার্ভিস। সহজ ডট কমের মাধ্যমে অনলাইনে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন বাসের টিকিট। টিকিট কাটতে এখানে ক্লিক করুন। এছাড়া বাসের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়েও টিকিট কাটতে পারেন।

ট্রেন: ঢাকার থেকে শহীদ মনসুর আলী রেলস্টেশনের দিকে ছেড়ে আসে ধূমকেতু এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস, চিত্রা, পদ্মা, একতা, লালমনি এক্সপ্রেস। ট্রেনের টিকিট কাটতে এখানে ক্লিক করুন।


যেখানে থাকবেন:

আরমানী রেস্তোরাঁ কমপ্লেক্স
ঠিকানা: মুক্তা প্লাজা, মুজিব সড়ক, সিরাজগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭১১৩৪০৫১৯


পূবাইল আবাসিক হোটেল
ঠিকানা: সিরাজগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭১৫৯৭৫১০৭


হোটেল আলিশান (আবাসিক)
ঠিকানা: সিরাজগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭৫৬৮৭৭৭৪৭


চৌধুরী রেসিডেন্স
ঠিকানা: শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭৬০৯৩৫৬৭৮


হোটেল সততা আবাসিক
ঠিকানা: শহীদ সরোওয়ার্দী রোড, সিরাজগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭৬৫৩৩২৪৫১


হোটেল মোহনা আবাসিক
ঠিকানা: মনিরামপুর রোড, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ
মোবাইল: ০১৯১১১১৭৮৭০


যা খাবেন:

সিরাজগঞ্জে হোটেল ঘরোয়া, ফয়সাল ক্যাফে, আপ্যায়ন হোটেল, হাজি বিরিয়ানি ইত্যাদি খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়া সিরাজগঞ্জের বিখ্যাত খাবারে মধ্যে রয়েছে পানিতোয়া মিষ্টি, দুধ চিতই, রসমালাই, মুড়কি ইত্যাদি।

সতর্কতা:

ইট-পাথরের শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণের জন্য আকুল থাকে মন। তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরো আনন্দময়। ভ্রমণে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে—

পরিকল্পিত ভ্রমণ

পরিকল্পিতভাবে ভ্রমণ করলে যাত্রা আরামদায়ক ও নিরাপদ হয়। যদি বাস বা ট্রেনের টিকিট বুকিং করার সুযোগ থাকে, তাহলে মাঝামাঝি আসন নিন। রাতের বেলায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে জানালার পাশে বা বাসের খুব পেছনের আসন এড়িয়ে চলাই ভালো।

নির্ভরযোগ্য যানবাহন ব্যবহার

নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য বাস বা যানবাহন বেছে নিন। সরকারি বা স্বীকৃত পরিবহন সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করুন। বাস বা গাড়ির রুট ও সময়সূচি সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পরিষেবা (যেমন উবার, পাঠাও) ব্যবহার করলে গাড়ির তথ্য যাচাই করুন।

নিজের অবস্থান গোপন রাখুন

বর্তমান যুগে অনেকেই নিজের দৈনন্দিন কার্যকলাপ এবং ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন। যারা সন্ধ্যার পর বা রাতে ভ্রমণ করেন তাদের জন্য এটি ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। অপরিচিতদের সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না। যদি সম্ভব হয়, যাত্রাপথের লাইভ লোকেশন পরিবার বা বন্ধুকে শেয়ার করুন।

চারপাশ পর্যবেক্ষণ করুন

অপরিচিত বা সন্দেহজনক ব্যক্তির সঙ্গে অতিরিক্ত কথা বলা বা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা এড়িয়ে চলুন। ব্যস্ত থাকলেও মোবাইলে পুরোপুরি মনোযোগ দেবেন না, চারপাশের পরিস্থিতি লক্ষ্য রাখুন। সন্দেহজনক কিছু দেখলে বা অনুভব করলে বাসচালক বা সহযাত্রীদের জানান।

ভিড় এড়িয়ে চলুন

খুব বেশি ভিড় থাকলে বা সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখলে সেই যানবাহনে না ওঠাই ভালো। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র যেমন মানিব্যাগ, ফোন বা ব্যাগ নিজের কাছেই রাখুন।

আত্মরক্ষায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে রাখুন

প্রয়োজনে আত্মরক্ষার জন্য ছোটখাটো সরঞ্জাম (যেমন: পেপার স্প্রে, হুইসল, ফোল্ডিং মেটাল সেফটি রড, ইত্যাদি ) সঙ্গে রাখতে পারেন। ফোনের ব্যাটারি ও মোবাইল ডাটা চালু রাখুন, যাতে প্রয়োজনে সাহায্য চাইতে পারেন।

জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করুন

স্থানীয় পুলিশ, বাস সার্ভিস হেল্পলাইন ও পরিচিতজনের নম্বর সহজেই পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখুন। বিপদের সময় ৯৯৯ (বাংলাদেশের জরুরি সেবা) তে কল করুন।

যাত্রাপথে অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কিছু খাবেন না

যাত্রাকালে অনেক যাত্রী পার্শ্ববর্তী যাত্রীকে ভদ্রতার খাতিরে বা বন্ধুসুলভভাবে খাদ্য-পানীয় গ্রহণে অনুরোধ করেন। যাত্রীর ছদ্মবেশে অনেক সময় মলম পার্টির লোকেরা খাবারে বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে দেয়। এই খাবার গ্রহণের পর যাত্রীরা অচেতন হয়ে পড়লে তারা সর্বস্ব লুটে নেয়। এধরণের পরিস্থিতিতে ঝুঁকি এড়াতে অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া কিছু না খাওয়া নিরাপদ।

মোবাইল ফোন নিরাপদে রাখুন

অনেকেই বাসে বা গণপরিবহনে যাত্রাকালে মোবাইল ফোন বের করে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং করেন। এ ধরনের অভ্যাস ছিনতাইয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে জানালার পাশে বসলে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন বের না করে নিরাপদ। সম্ভব হলে, যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফোন বের না করে, নিরাপদে পকেটে বা ব্যাগে রাখুন।

সম্পর্কিত সংবাদ

সিরাজগঞ্জ-০৬ শাহজাদপুরে বইছে নির্বাচনী হাওয়া, মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা; আসন ধরে রাখতে অনড় আওয়ামীলীগ, পুনরুদ্ধারে অনড় বিএনপি

রাজনীতি

সিরাজগঞ্জ-০৬ শাহজাদপুরে বইছে নির্বাচনী হাওয়া, মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা; আসন ধরে রাখতে অনড় আওয়ামীলীগ, পুনরুদ্ধারে অনড় বিএনপি

শফিকুল ইসলাম ফারুকঃ উত্তরাঞ্চলের শিল্প বানিজ্য ও জনবহুল ক্ষ্যাত সিরাজগঞ্জ-০৬ আসন শাহজাদপুরে বইলে নির্বাচনী হাওয়া। আওয়ামী...

চলনবিলে হাজার হাজার বিঘা ধান তলিয়ে যাওয়ায় কৃষক মহাবিপাকে

দিনের বিশেষ নিউজ

চলনবিলে হাজার হাজার বিঘা ধান তলিয়ে যাওয়ায় কৃষক মহাবিপাকে

জয়নাল আবেদীন জয়, উল্লাপাড়া ও শামছুর রহমান শিশির, শাহজাদপুর : দেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিলের ১৪ উপজেলার নিম্নাঞ্চল গত কয়েক দ...

তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরে বৈশাখী তাঁতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক ! চাহিদা ও কদর বাড়ছে : ব্যাতিব্যস্ত দেশের তাঁতশিল্পীরা

অর্থ-বাণিজ্য

তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরে বৈশাখী তাঁতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক ! চাহিদা ও কদর বাড়ছে : ব্যাতিব্যস্ত দেশের তাঁতশিল্পীরা

শামছুর রহমান শিশির : পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরসহ দেশের তাঁতসমৃদ্ধ এলাকার তাঁত...

“ বাঙালি জাতীয়তাবাদ-চেতনায় নজরুলের ‘জয় বাংলা’ শীর্ষক প্রবন্ধ”

সম্পাদকীয়

“ বাঙালি জাতীয়তাবাদ-চেতনায় নজরুলের ‘জয় বাংলা’ শীর্ষক প্রবন্ধ”

শাহজাদপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে ৩তলা ভবনের ছাদের গাইড ওয়াল ধ্বসে খাবার হোটেল বিধ্বস্ত