একবার শ্রদ্ধেও নেতা মাওলানা ভাসানি পাকিস্তানের রাজধানী করাচি থেকে বিমানে নতুন আরেক রাজধানী ইসলামাবাদ এয়ারপোর্টে এসে নামলেন। তার রাজনৈতিক ভক্তরা তাকে এয়ারপোর্টে সাদরে গ্রহন করলেন। বিমান বন্দর থেকে বেড়িয়ে তিনি সবার সাথে হাটছেন। এমন সময় তিনি হঠাৎ করে রাস্তার পাশ থেকে এক খাবলা মাটি হাতে তুলে নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নিতে থাকলেন। সহকর্মীরা সবাই তাঁকে জিজ্ঞাসা করছেন, হুজুর আপনি মাটির ঘ্রাণ নিচ্ছেন কেন? হুজুরের উত্তর ছিল, এ মাটি দিয়ে আমার দেশের পাট পাট গন্ধ লাগছে।
এর মর্মার্থ হলো এই- তিনি তাদেরকে বোঝাতে চেয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের পাট বিদেশের কাছে বেঁচে, সেই টাকা দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজধানী করাচি থাকা স্বত্ত্বেও ইসলামাবাদে আবার নতুন আরেকটি রাজধানী বানাচ্ছো। পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করা হচ্ছে।
এ গল্পের অবতারণা বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ জন্যই করছি যে, স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ঢাকাকে তিলত্তমা করে গড়ে তোলা হচ্ছে। পাশি পাশি শাসন ব্যবস্থাকে জনগণের দাঁড় গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য নতুন নতুন বিভাগ তৈরী করা হয়েছে। আরো নতুন দুটি বিভাগের নাম করণের প্রস্তাবনা চলছে। নতুন জেলা হয়েছে। অনেক মহুকূমাকে জেলায় এবং থানাগুলোকে উপজেলায় রুপান্তরিত করা হয়েছে। হয়তো ইউনিয়ন পরিষদকেও আগামীতে উপজেলা বানানো হবে। এর সবই দৃশ্যমান উন্নয়ন চিত্র।
কিন্তু আমার প্রশ্ন সেটি নয়। আমার প্রশ্ন এই সকল উন্নয়ন, মাথাভাড়ী প্রশাসন, তার গাড়ী, বাড়ী পাইক পেয়াদার বেতন বাবদ যে অর্থ ব্যায় এবং প্রশাসনিক ভবন এগুলোর নির্মানের জন্য যে অর্থ ব্যায় হয়েছে বা হচ্ছে এই অর্থে যোগান দাতা কে বা কাহার?
সরকারের কি নিজের জমিদারী আছে? সেখান থেকে আয় করে এগুলো করেন?
এ প্রশ্নের উত্তরে আমি মাওলানা ভাসানীর সুরে সুর মিলিয়ে বলতে চাই- যখন বড় বড় দালান কোঠার পাশ দিয়ে যাই চেয়ে চেয়ে চেয়ে দেখি। আমার পাশ দিয়ে যখন সাহেবদের কোটি কোটি টাকা মূল্যের গাড়ীগুলো ধুলো উড়িয়ে,কাঁদা ছিটিয়ে যায় তখন প্রকৃতির এই লীলাভূমির আকাশ বাতাশ থেকে রক্ত ঘামের গন্ধ পাই। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের রক্তের গন্ধ, লাখো কোটি কৃষক শ্রমিক মজুরের গায়ের ঘামের গন্ধ পাই।
মনে প্রশ্ন যাগে যারা এ সকল উন্নয়নের অর্থের যোগান দাতা আমরা তাদের জীবন মানের কতটুকু উন্নয়ন সাধন করতে পেড়েছি? আমরা কি সেই রক্তের মূল্য, ঘামের যথাযথ মূল্য দিতে পেরেছি? পারি নাই।
উল্টো এখনো উন্নয়নের নামে তাদের গায়ের চামড়া ছুলিয়ে নিচ্ছি। তাদের রক্তঘামে অর্জিত টাকা আমরা বিদেশে পাঁচার করে দিচ্ছি। তাদের মাথার ওপড় নানা ধরণের করের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে তাদের জীবন নিত্য সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। বিগত ৫০ বছরে এটাই আমাদের অর্জন।
মর্মকথা হলো- যে কোন উন্নয়নের কথাই বলিনা কেন সকল উন্নয়ন হয় দেশের মানুষের করের টাকায়। যে টাকার যোগান দাতা আমাদের দেশের কৃষক শ্রমিক খেটে খাওয়া মানুষের রক্ত ঘামে অর্জিত অর্থ।
সেই টাকাতেই আমাদের যতো ফুটানি, বাহাদুরী,রাজকীয় চাল চলন। আমরা কি কখনো ভাবি তাদের কথা? তাদের গায়ের ঘাম চোখের পানি কি আমরা মুছে দিতে পেরেছি? পেরেছি কি তার জীবন মান উন্নয়ন করতে? আজকে দেশে প্রায় ৫ কোটি লোক বেকার। দেশের মানুষ অখাদ্য কূখাদ্য খেয়ে পুষ্টি হীনতায় ভুগছে। রোগে চিকিৎসা নেই, অফিস আদলতে ঘুষ ছারা কাজ নেই, থানা পুলিশ কোর্ট কাচারিতে ন্যায় বিচার নেই, শিক্ষায় ব্যাপক দূর্নীতি,শিক্ষার মাধ্যমে কোটি কোটি বেকার সৃষ্টি করা হচ্ছে। ঘুষ, দূর্নীতি,ধর্ষণ নানা বিবেকহীন অধর্মের কাজ অহরহ দেশের মাঝে চলছে। দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। গ্যাস তেল, বিদ্যুতের দাম প্রতি বছর বাড়ছে। চলছে লুটপাটের এক মহা উৎসব। অথচ আমাদের রাস্ট্র ধর্ম ইসলাম। আমাদের দেশের ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্ম পালন করে। প্রকৃত অর্থে আমাদেরকে এক লুম্পেন জাতি হিসেবে তৈরী করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক হিসেব মতে আমাদের দেশে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার হয়েছে ( বাংলাদেশি মুদ্রায় তা বছরে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা)।
আজ যে শিশুটি জন্ম নেবে, তার মাথায় ৮৪ হাজার ৭৭০ টাকা ঋণের দায় চাপবে।
প্রশ্ন জাগে কার আয়ের গড় হিসেব কাদের মাথায় চাপানো হলো? কাদের স্বার্থে কে বা কাহার ঋণ গ্রহন করলো সেই ঋণের গড় হিসেব কাদের মাথার ওপড় চাপানো হলো?
আমাদের যদি এতই উন্নয়ন হয়ে থাকে তাহলে কৃষক শ্রমিক সাধারণ খেটে মানুষ পুঁজি শুন্য (নগদ অর্থ) হলো কেন? তাদের ক্রয় ক্ষমতা নেই কেন? টাকাগুলো কোথায় হাওয়ায় উড়ে গেল?
সবই শুভঙ্করের ফাঁকি নয় কি?
এর পরেও নানা উন্নয়ন সূচকে আমরা নাকি এগিয়ে আছি। চমৎকার।
সে কারনে আমি বলি-
রাষ্ট্র ধর্মকে তাবিজ বানিয়ে
আমার গলায় ঝুলিয়ে দাও,
শরীরে যত রোগ ব্যাধি আছে সারিয়ে দাও।
রাষ্ট্রে যত উন্নয়ন সূচক আছে
সব পানিতে গুলিয়ে সে পানিতে
দেশের মানুষের গা ধুইয়ে দাও,
শুধু আমার ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থা করো,
খুন-ধর্ষণ,ঘূষ-দূর্ণীতি -লুটপাট,
অনিয়ম-অনাচার বন্ধ করো-
তোমরা আমার বাপ মাও-
আমরা তোমার ছাও।
দেশের মালিক কে? এই দেশের জনগণ। চাকুরে জীবিদের বেতন ভাতা প্রদান করেন কে? সেও ঐ জনগণ। চেয়ারে বসে এসিতে ঠান্ডা গরম হাওয়া খেয়ে কখনো কি তার ভাবেন এই কৃষক শ্রমিক মেহনতিরাই আমার বাবা। আমাদের জীবন রক্ষক? কোন কাজে এলে তাঁদের অপমান সূচক কথা বলেন। অসদাচারণ করেন। তার গায়ের ঘামের গন্ধ তাদের ভালো লাগেনা। তাঁকে দুরে দাঁড়াতে বলে। ঘুষের টাকা দিতে না পারলে নিত্য হয়রানি করেন। এটাইতো আমাদের দেশের রাজনীতি, সমাজনীতি, শাসননীতি সুশাসন।
আমি তাদের ঘৃণা জানাই যারা রাজনীতিতে মিথ্যা বলেন,শাসনে সেবার নামে ঘুষ, দূর্নীতি, বিবেকহীন অন্যায় অবিচার করেন।
আমি তাদের স্যালুট জানাই যাদের রক্ত ঘামের অর্জনে এখনো আমরা বেঁচে আছি।
বাংলাদেশ আমার, আমাদের, লুটেরা পাঁচারকারীদের নয়। দেশ চলে কৃষক শ্রমিক খেটে খাওয়া মানুষের করের টাকায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার
সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক
প্রধান সম্পাদক, শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম
২৩ অক্টোবর, ২০২১ খৃষ্টাব্দ।
সম্পর্কিত সংবাদ
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
শাহজাদপুরে দু’দিনব্যাপী হযরত মখদুম শাহদৌলা শহীদ ইয়ামেনী (রহ.) এর বাৎসরিক ওরশ শরু।
এম এ হান্নান শেখঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের পূর্ব পাশে অবস্থিত পিডিবির ৩টি ও বেসরকারি ১টি মিলে মো... নিজস্ব প্রতিনিধিঃ নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ৬৮ তম জন্ম দিবস উদযাপন ও শিশু মনেতার চেতনা ছড়িয়ে দিতে এবছর ‘তোমার সন্মুখে অ... শাহজাদপুর প্রতিনিধি :- শাহজাদপুরে এক কলেজ ছাত্রীকে উত্যক্ত করার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দন্ডবিধি ৫০৯ ধারা মোতাবেক বেলা... সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে।
ঘটনার দুই বছর পর বৃহস্পতিব...অর্থ-বাণিজ্য
শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ!
ফটোগ্যালারী
বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )
শিল্প ও সাহিত্য
শাহজাদপুরে সেলিম আল দীন জাতীয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
অপরাধ
শাহজাদপুরে ইভটিজিং এর অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে যুবক-যুবতীর সাজা
রাজনীতি
শাহজাদপুরের সাবেক এমপি কবিতা ও চয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা