

আজাদুল আদনান: বাংলাদেশে উন্নত সেবাসংবলিত হাসপাতাল তৈরির আশ্বাস দিয়েছে চীন। আর তা নিজ এলাকায় পেতে দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। চায়ের দোকান থেকে সামাজিকমাধ্যম, সবখানে এখন আলোচনার শীর্ষে- কোথায় হচ্ছে ‘চীন-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’। তবে চারদিকে এমন শোরগোল হলেও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্যোগটি এখনো নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছে। আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তিও হয়নি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষায়িত নাকি জেনারেল হাসপাতাল হবে, কোন কোন সুযোগ-সুবিধা থাকবে, কী পরিমাণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল লাগবে, কোথায় হবে সবকিছু এখনো মৌখিক পর্যায়ে, কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চীনের একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদলের চীন যাওয়ার কথা রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর আমার দেশকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত হাসপাতালটি নিয়ে দেওয়ার মতো তথ্য এখন পর্যন্ত হাতে নেই। এটি এখনো প্রাথমিক ও মৌখিক পর্যায়ে রয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ চীন সফরে যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরে দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। এরপর বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল করে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে দেশটি। একই সঙ্গে চিকিৎসা হাব তৈরি করতে বড় বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে চীন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাতে সাড়াও দেয়। পরে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের স্বাস্থ্য খাতে চীনা সহায়তা বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভায় তিনটি প্রকল্প প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি করে জেনারেল এবং টারশিয়ারি হাসপাতাল। অন্যটি জুলাই বিপ্লবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল, যা ‘চীন-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’ নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর একাধিক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বিষয়টি সামনে আনেন।
সর্বশেষ গত রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনান শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে চীন ১৩৮ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার তথা এক হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা সহযোগিতা দেবে। দেশটির সরকারের অর্থায়নে হাজার শয্যার হাসপাতালটি নির্মাণ করা হবে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, চীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বড় বিনিয়োগ করতে চায়। দেশটি থেকে ইতোমধ্যে রোবোটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেশে এসেছে। তিনটি হাসপাতালের মধ্যে উত্তরবঙ্গের হাসপাতালটি অত্যন্ত আধুনিক করার চিন্তা রয়েছে চীনের। এজন্য দেশটিতে গিয়ে অথবা দেশটির চিকিৎসকরা বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।
তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবিত এসব হাসপাতাল কতটা ভূমিকা রাখবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে জনবল নিয়োগের জটিলতা। এতে তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতায় হওয়া সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের উদাহরণ টেনে একই দশার শঙ্কা করছেন। যদিও তা মানতে নারাজ সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
জেলায় জেলায় মানববন্ধন
চীনের উপহারের হাসপাতাল কোন জেলায় হবে তা এখনো চূড়ান্ত না হলেও তার আগেই কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে। নিজ এলাকায় পেতে দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন হয়েছে। উত্তরবঙ্গের তিস্তাপাড়ের মানুষসহ হাসপাতালের দাবিতে দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের ঝালকাঠি, ফেনী ও চাঁদপুরে মানববন্ধন হয়েছে।
গত শনিবার রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরের তিস্তাপাড়ে সাত কিলোমিটারের দীর্ঘ মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। ‘তিস্তা উন্নয়ন ফোরাম, রংপুর’ আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন। একই দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার মানবন্ধন হয়েছে দক্ষিণের জেলা ঝালকাঠির নলছিটিতে।
প্রাথমিক ভাবনায় নীলফামারী, ধামরাই ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী
চীনের হাসপাতালের জায়গা দেখতে গত ১২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ নীলফামারীতে যান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন। সোমবার তিনি আমার দেশকে বলেন, ‘সম্প্রতি নীলফামারী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে গেলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হাসপাতালের জায়গা খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছিল। জেলার ব্রিটিশ আমলের কুষ্ঠ হাসপাতালের পাশের জায়গাটি দেখা হয়েছে। যেহেতু এক হাজার শয্যার হবে, তাই অনেক বড় জায়গা দরকার। সেজন্য আমরা এটি দেখেছি, তবে চূড়ান্ত নয়।’
তিনি বলেন, ‘রংপুর বিভাগে প্রায় তিন কোটি মানুষ থাকলেও টারশিয়ারি হাসপাতাল মাত্র একটি। আবার উত্তরবঙ্গ এখনো অনগ্রসর এলাকা। কাজেই সেখানে একটি হাসপাতাল হলে স্থানীয়দের অনেক উপকার হবে। পার্শ্ববর্তী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া এমনকি ঢাকায়ও রোগীর চাপ কমবে।’
অন্য দুটির একটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আর পক্ষাঘাতগ্রস্তদের হাসপাতালটি ঢাকার অদূরে সাভারের ধামরাইয়ে করার চিন্তা করছে সরকার।
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পুনরাবৃত্তির শঙ্কা
দেশের মানুষকে সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা দিতে এবং বিদেশমুখী রোগী ঠেকাতে আড়াই বছর আগে চালু হয় দেশের একমাত্র সর্বাধুনিক সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের দেওয়া নামমাত্র সুদে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকায় তৈরি হয় হাসপাতালটি। কথা ছিল হাসপাতালটিতে মিলবে বোনম্যারো ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট থেকে শুরু করে জটিল রোগের আধুনিক সব চিকিৎসা। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি।
১৮ শতাধিক চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জনবল থাকার কথা থাকলেও বিভিন্ন অনিয়মের কারণে এসব নিয়োগ আটকে আছে বছরের পর বছর। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আট মাস অতিবাহিত হলেও ওই জটিলতা কাটেনি। এতে অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে শত শত কোটি টাকার উন্নত সব চিকিৎসা সরঞ্জাম।
চীনা হাসপাতালের বেলায়ও একই অবস্থার পুনরাবৃত্তির শঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতাল করলেও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও দেশের চিকিৎসকরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাবেন কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আবদুস সবুর খান আমার দেশকে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে প্রস্তাবিত হাসপাতাটি এক হাজার বিছানার হবে এবং তা বিশেষায়িত। ফলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও লাগবে। কিন্তু ঢাকা থেকে আমাদের চিকিৎসকরা তো গ্রামে যেতে চান না। আওয়ামী লীগ গোপালগঞ্জে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল করেছিল, সেখানে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা যান না। ঠিক একই ভাবে যদি ভবন বানিয়ে রাখা হয় এবং চিকিৎসক না থাকে, তাহলে তাজমহল বানিয়ে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালে কী লাভ হবে?’
অবশ্য স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন মনে করেন, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে চিকিৎসক পেতে সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসকরা যেতে চান না, তার পেছনে অনেক বাস্তবতা রয়েছে। নিরাপদ কর্মপরিবশ ও নিরাপত্তা না থাকা বড় কারণ। এ ছাড়া পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকাও জরুরি। এগুলো নিশ্চিত করা গেলে চিকিৎসকরা সেখানে থাকবেন বলে বিশ্বাস করি।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ‘চীন মূলত এখানে চিকিৎসা হাব গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু হাসপাতাল করে দেওয়ার বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কী কী সেবা থাকবে, কত শয্যার হবে কোনোকিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এগুলো আন্তঃরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে।’
সূত্র: https://www.dailyamardesh.com/amar-desh-special/amdci7jyrjiwiসম্পর্কিত সংবাদ

ধর্ম
শাওয়াল মাসে বিয়ের কোনো ফজিলত আছে কি?
সুতরাং শাওয়াল মাসে বিয়ে করাকে যেমন অশুভ মনে করা যাবে না, এ মাসে বিয়ে করাকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করারও কোনো ভিত্তি নেই। ত...

জাতীয়
আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই। রাসূল (সাঃ) এর হাদিস গেলো কই?
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের নুকালী হাইস্কুল মাঠে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের শঙ্কা, কোন দেশের সামরিক শক্তি কত?
এছাড়া শাহিন-২ নামে পাকিস্তানের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এর পরিসর ২ হাজার কিলোমিটার বা ১ হাজার ২৪২ মাইল।

শিক্ষাঙ্গন
রতনকান্দি আল-হামিদ মাদ্রাসার গভর্নিং বডির নতুন সভাপতি আলী সাদাত খান মজলিস
নতুন সভাপতি মো. আলী সাদাত খান মজলিসসহ ৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সদস্য সচিব মো. আব্দুল ওয়াহাব, অভিভাবক সদস...

বাংলাদেশ
দেশজুড়ে শোরগোল হলেও প্রকল্প প্রাথমিক পর্যায়ে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর আমার দেশকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত হাসপাতালটি নিয়ে দেওয়ার মতো তথ্য এখন পর...

আন্তর্জাতিক
জম্মু-কাশ্মীরে বন্দুকযুদ্ধে ভারতীয় সেনা নিহত
সেনা কর্মকর্তারা জানায়, বন্দুকধারীদের উপস্থিতি সম্পর্কে তথ্যের ভিত্তিতে শুরু হওয়া একটি ঘেরাও ও তল্লাশি অভিযানের সময় দু...