আমাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে। আমরা যমুনা পাড়ের মানুষ। চলতি বর্ষা মৌসুমে যমুনার ব্যাপক ভাঙনে আমাদের ভিটে-মাটি ঘর-বাড়ি সবই ভেঙ্গে গেছে এবং বিলীন হয়ে গেছে। ঘর ভাঙ্গার কারনে আমরা বড়ই অসহায় অবস্থায় জীবন যাপন করছি। ঘর ভাঙ্গা মানুষের কি যে কষ্ট তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। যার ঘর ভেঙ্গেছে এই কষ্ট তারাই কেবল জানে। জীবনে একবার ঘর ভাঙ্গার চেয়ে মরে যাওয়াও ভাল। এত কষ্ট, এত দুঃখ আর প্রাণে সয়না।
কিন্তু আমার প্রশ্ন, যারা বিনোদন জগতের মানুষ অর্থাৎ অভিনয় শিল্পী, গানের শিল্পী তাদের কারো কারো ঘর প্রায়ই ভাঙ্গে। জীবনে দু-চার বার করে ঘর ভাঙ্গে, বারে বারে ভাঙ্গে। কিন্তু তারা তো এত কষ্ট পায় না। তারা হেসে খেলে আবার নতুন করে ঘর বাঁধে। তাদের ঘর ভাঙলে তারা বরং খুশিই হয়। আবার নতুন ঘরে নতুন করে স্বপ্ন দেখে। তারা ঘর ভাঙ্গার আগ থেকেই প্রচার করা শুরু করে তাদের ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। এই ঘর আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের এই সব খবর পত্র-পত্রিকায় খুব করে প্রচারও করা হয়। তারা আবার কোন কূলে কাকে নিয়ে ঘর বাঁধবে তাও ছাপা হয়। কিন্তু আমরা গরিব। তাই আমাদের ঘর ভাঙলে আমাদের নিয়ে কেউ কোনো লেখালেখি করে না। কোনো পত্রিকায় আমাদের কথা বিস্তারিত লেখে না। আমাদের আকুতি তেমন করে ছাপা হয় না।
আমি পত্র-পত্রিকার সাংবাদিকদের অনুরোধ করব, যমুনার ভাঙনে আমাদের ঘর ভেঙ্গেছে। আমরা অসহায়, আপনারা আমাদের নিয়ে লিখুন। শুধু অভিনয় শিল্পী আর গানের শিল্পীর ঘর ভাঙ্গলে তাদের নিয়ে বিস্তারিত লিখবেন তা নয় বরং আমাদের ঘর যমুনায় ভেঙ্গেছে এই কথাগুলোও লিখুন। আমরা গরিব,অনাহারে আজ আমরা পথে পথে কাঁদছি, খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করছি এই কথাগুলোও লিখুন। আমাদের ঘর ভাঙ্গার কি কষ্ট, কি যন্ত্রণা তাও লিখুন। আপনারা বেশি করে লিখুন। আমরা নতুন করে আর ঘর বাঁধতে পারছি না। আমরা এখন দিশেহারা । আমাদের এই কষ্টের কথাগুলো আপনাদের মাধ্যমে পৃথিবীর সবাই জানুক।
লেখক: এইচ এস সরোয়ারদী - ছড়াকার ও গীতিকার, ঢাকা।