শাহজাদপুর সংবাদ : সেই ১৪৫০ সালের কথা। জার্মানির নাগরিক গুটেনবার্গ উদ্ভাবন করেন মুদ্রণযন্ত্র। পেশায় তিনি ছিলেন কামার। হাতুড়ি পেটানো সেই মানুষটির তৈরি মুদ্র্রণযন্ত্র যোগাযোগ-বিশ্বে বিপ্লব বয়ে আনে। সেই বিপ্লবের হাত ধরে জন্ম নেয় সংবাদপত্র। প্রায় ৪০০ বছর ধরে এই সংবাদপত্র অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বের চতুর্থ স্তম্ভের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। ২০ শতকের শেষ ভাগে এসে প্রকাশনায় কম্পিউটার যুক্ত হওয়ায় গণমাধ্যম হিসেবে চূড়ান্ত রূপ পায় সংবাদপত্র। মুদ্রণপ্রযুক্তি, কাগজ ও কালির ক্রম আধুনিকায়নের ফলে রঙে-ঢঙে বিবর্তিত হয়েছে সংবাদের এই মাধ্যম। কিন্তু ২০ শতকের শেষভাগেই আবার সংবাদপত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় ইন্টারনেট-ভিত্তিক সীমাহীন ভার্চুয়াল বিশ্ব। অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলো এবং সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন সাইট হরদম সংবাদের জোগান দিচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, ইন্টারনেটের দুনিয়ায় মানুষ কি আর কাগজে ল্যাপটানো কালির অক্ষরের ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা চোখ বোলাচ্ছেন, নাকি বিকল্প কোনো মাধ্যমে খবরের ক্ষুধা মিটিয়ে নিচ্ছেন? সম্প্রতি বিশ্বের গণমাধ্যম-তাত্ত্বিকরা সংবাদপত্রের জন্য দুর্দিনের পূর্বাভাস দিচ্ছেন। তাদের পূর্বাভাসের মূল প্রেরণা অনলাইন সংবাদমাধ্যমের বিকাশ এবং এর বুনিয়াদি প্রতিষ্ঠা। ‘আজকের খবর কালকে পড়ার’ অভ্যাসের পরিবর্তে অনলাইন সংবাদমাধ্যম দিচ্ছে ‘মুহূর্তের খবর মুহূর্তে পড়ার’ সুযোগ। ফলে কেউ চাইলে প্রতি মুহূর্তে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারছেন মুঠোফোনের মতো যোগাযোগের একটি খুদে মাধ্যম দিয়ে। যার কারণে সংবাদপত্রের চেয়ে বিকল্প মাধ্যমেই খবর পাওয়া এখন অনেক সহজ হয়েছে। তবে সংবাদপত্রের বিকল্প মাধ্যম বলতে টেলিভিশন, রেডিওকে দাঁড় করানোর কোনো যুক্তি নেই। কারণ এই তিনটি মাধ্যম অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে টিকে আছে। কখনো সংবাদপত্রের খবর হচ্ছে টেলিভিশন, আবার সংবাদপত্র কখনো টেলিভিশনের খবর হচ্ছে। রেডিওর বেলায়ও তা-ই। এই তিনটি মাধ্যম পরস্পর পরস্পরকে উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন করে যার যার স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে সংবাদপত্রের অস্তিত্বের জন্য রেডিও-টেলিভিশন কখনো চরম হুমকি হয়ে দাঁড়ায়নি। সাংবাদিকতার ছাত্র হিসেবে এ নিয়ে বেশ কিছু গবেষণাপত্র পড়ার সুযোগ হয়েছে। দেখা গেছে, রেডিও-টেলিভিশন আবিষ্কারের পর ‘সংবাদপত্র’ হুমকিতে পড়ছে বলে যে আওয়াজ ওঠে, তা বাস্তবতার নিরিখে প্রমাণিত হয়নি।
