পণ্ডিত রামকানাই দাশ : সংগীত কিংবদন্তির অন্তর্যাত্রা

5


দীপংকর গৌতম,শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম: চলে গেলেন শাস্ত্রীয় সংগীত বিশেষজ্ঞ এবং বাংলা গানের প্রতিভাধর

দীপংকর গৌতম,শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম: চলে গেলেন শাস্ত্রীয় সংগীত বিশেষজ্ঞ এবং বাংলা গানের প্রতিভাধর শিল্পী পণ্ডিত রামকানাই দাশ। সাধনাগুণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলা গানের দিকচিহ্ন। সিলেটের ভাটি অঞ্চলে জন্ম হওয়ায় অঞ্চলের লোক গানের সাধকদের লেখা গান শৈশব থেকেই তাকে আলোড়িত করেছিল। রাধারমন, হাছন রাজাসহ ভাটি অঞ্চলের লোক সংগীতের ওপর তার বিশেষ দখল ছিলো, সংগ্রহও ছিলো বিশাল। গান অন্তপ্রাণ এই সহজ-সরল মানুষটি বিভিন্ন সময় সংকটের মুখোমুখি হলেও সাধন-ভজনের জায়গা থেকে সরে আসেননি। ২০০৫ সালে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে বসে তার সঙ্গে আমার যে দীর্ঘ আলাপ হয় সে আলাপচারিতাদৈনিক সংবাদ’- প্রকাশের পর প্রচুর ফোন আসতে থাকে আমার কাছে। ভক্তরা এই সংগীত মনীষীর ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যম আমার কাছে চান। এরপর এই পণ্ডিত ব্যক্তির সঙ্গে আমার আত্মিক যোগাযোগের ভিত্তি দৃঢ় হয়েছে উত্তরোত্তর অনেক বড় মনের মানুষ ছিলেন তিনি।সুরধ্বনির কিনারায়তার অ্যালবাম প্রকাশের পর ঢাকার নাগরিক শিল্পীরা, যারা তাকে চিনতেন না তারা এই অন্তর্মুখী সংগীত প্রতিভা দেখে বিমোহিত হন। এই অ্যালবামটি প্রকাশের পরে তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রয়াত শিল্পী অজিত রায়ের সঙ্গে তার সখ্য ছিলো। অজিত রায়ের কল্যাণপুরের বাসায় তাকে বেশ কয়েকবার নিয়ে গিয়েছি, তাদের সংগীত আড্ডার শ্রোতা হয়েছি। গানের উপর ভর করেই তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মৃত্যু ইহজাগতিক। গানই তাকে বাঁচিয়ে রাখবে অনন্তকাল। এত দ্রুত তিনি চলে যাবেন এটা ছিলো ভাবনার অতীত। গত ২৬ আগস্ট সিলেটে নিজ বাড়িতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই দিন সন্ধ্যায় তাকে সিলেটের একটি স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের বিষয়টি ধরা পড়লে পরদিন তাকে রাজধানীর মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৯ আগস্ট তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পী পরলোক গমন করেন। তার মৃত্যু শোকে দেশের সংগীতানুরাগীরা মুহ্যমান রামকানাই দাশের ছেলে পিনু দাশ  জানান, তার বাবার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়েছে। আজ সকালে সিলেট শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানো শেষে সুনামগঞ্জ পেড়ুয়া গ্রামে পারিবারিক শ্মশানে তার মরদেহ দাহ করা হবে। পণ্ডিত রামকানাই দাশের জন্ম ১৯৩৫ সালে সুনামগঞ্জ জেলায়। রামকানাইয়ের বাবা রসিকলাল দাশ এবং মা দিব্যময়ী দাশও ছিলেন লোকসংগীত শিল্পী। লোকসংগীতের ধারা রক্তে থাকলেও রামকানাই সেই গণ্ডি পেরিয়ে ধ্রুপদী সংগীত, বিশেষ করেখেয়াল’- মন দিয়েছিলেন। তালিম নিয়েছিলেন তবলাতেও। গাওয়ার পাশাপাশি তিনি গান লিখেছেন এবং সুর করেছেন। সেই সঙ্গে শিক্ষক হিসেবে বহু শিল্পী তৈরি করেছেন। ১৯৬৭ সাল থেকে সিলেট বেতারে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করে আসা রামকানাইয়ের গানের অ্যালবামগুলো হলো, ২০০৪ সালেবন্ধুর বাঁশি বাজে’, ২০০৫ সালেসুর ধ্বনির কিনারায়’, ২০০৬ সালেরাগাঞ্জলিঅসময়ে ধরলাম পাড়িএবং ২০১০ সালেপাগলা মাঝি শাস্ত্রীয় সংগীত বিষয়েসরল সংগীত শিক্ষানামে একটি বইও লিখেছেন রামকানাই। সংগীতে অবদানের জন্য একুশে পদক ছাড়াও ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি রসম্মানসূচকফেলোশিপএবং ২০০০ সালেরবীন্দ্রপদকপেয়েছেন তিনি। এই সংগীত মনীষীর মৃত্যুতে তাঁর জীবন কর্মের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।