উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চৌহালী উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীতে আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীব্র ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে তীরবর্তী এলাকায় শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙ্গন। ড্রেজিংয়ের অভাবে পলি জমে মাঝ নদীতে চর জেগে ওঠায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর গতি পথ পাল্টে তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থরা।
সরেজমিন জানা যায়, যমুনার পূর্বপাড় উত্তরে বোয়ালকান্দি থেকে দক্ষিণে পাথরাইল পর্যন্ত প্রায় ১৭কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। ভাঙনে চৌবাড়িয়া পূর্ব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যায়ল, বিরবায়ুনীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আড়কাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরজাজুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেহাইকাউলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চৌহালী মহিলা মাদ্রাসার পরিত্যক্ত ভবন নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে শত শত শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিয়তার দিকে চলে গেছে। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা পড়ার কথা চিন্তা করে তাদের অন্যত্র নিয়ে পাঠ দান করা হচ্ছে বলে চৌহালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল খালেক এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
এদিকে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চৌবাড়িয়াপূর্ব পাড়া, চরছলিমাবাদ, হাটাইল দক্ষিন পাড়া ও চরবিনানুই, খাষকাউলিয়া ইউনিয়নের চোদ্দরশি ও উত্তর খাষকাউলিয়া, খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের মিটুয়ানী ও শাকপাল, ওমরপুর ইউনিয়নের পাথরাইল ও শৈলজানা ও ঘোরজান ইউনিয়নের চরজাজুরিয়া এলাকার প্রায় ৪ শতাধিক ঘরবাড়ি, বিভিন্ন কাচাপাকা স্থাপনাসহ কয়েক’শ একর আবাদি জমি যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া পূর্ব পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, যমুনা নদী একে একে গ্রাস করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট কাচা-পাকা বসত বাড়ি ও ফসলি জমি । এই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কামরুল ইসলাম (৪৮) সাথে কথা হলে তিনি বলেন, চোখের সামনে শত শত ঘর-বাড়ি নদীতে চলে গেল। ক্ষতিগ্রস্থের খোজ খবর নিতে কেউ এখনো এলো না। আমরা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে কোন রকম বেচে আছি। বসতভিটা ও জমি-জমা হারিয়ে পরিবার-পরিজন বড় অসহায় আমরা। ভাঙন ঠোকাতে পাউবো এখনো কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।
বার বার যমুনা নদী ভাঙ্গনের শিকার উপজেলার খাষকাউলিয়ার কাজী রুহুল আমিন ও চোদ্দরশি গ্রামের আব্দুল লতিফ জানান, প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা ভাঙনের কবলে পড়ছে। এতে ঘর-বাড়ি ও জমি হারানো নিস্বঃ পরিবার গুলো এ পযর্ন্ত কোন সরকারী বা বেসরকারী সহায়তা পায়নি। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় দ্রুত সরকারী-বেসরকারী সংগঠনের সহায়তা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব:) আব্দুল্লাহ-আল মামুন বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধির পর থেকে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বহু বসত-ভিটা যমুনা গ্রাস করেছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে ও ভাঙনরোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না হলে মানচিত্র থেকে সম্পূন্ন রুপে হারিয়ে যাবে চৌহালী। ভাঙনরোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। এদিকে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার দয়িত্বপ্রাপ্ত টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ জানান, ভাঙ্গলেও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা ছাড়া আমাদের করনীয় কিছুই নেই। শুধু উপজেলা সদর রক্ষায় টেন্ডার হয়েছে তাও কাজ শুরু হবে বর্ষা মৌসুম শেষ হবার পর।
