শাহজাদপুরের আদিবাসী বাগদী পরিবারগুলোর মানবেতর জীবন

শামছুর রহমান শিশির : বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী ছোট গল্প ‘পোষ্ট মাস্টার’-এর রতন চরিত্রটি শাহজাদপুরের ‘বাগদী’ পরিবারের এক তরুণীকে ঘিরেই আবর্তিত বলে শাহজাদপুরের বাগদী পরিবারগুলো জানিয়েছে। কবিগুরুর সেই পালকি বাহক এবং রতনের উত্তরসূরি শাহজাদপুরের বাগদী পরিবারের সদস্যরা চির অবহেলিত, অপাঙক্তেয়। যাদের বুক ফাটেতো মুখ ফোটে না, যাদের বিচারের বানী নিরবে নীরবে নিভৃতে কাঁদে।
বর্তমানে পালকি বাহনের পেশা প্রায় বিলুপ্ত হওয়ায় বাগদী পরিবারগুলো দিন কাটছে অতিকষ্টে। বাগদী পরিবারগুলোর অনেকেই পালকি বাহনের পেশা পরিত্যাগ করে অন্য পেশায় চলে গেছে। যারা এখনো এ পেশা ধরে আছে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতরভাবে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। ওদের মতো অসহায় হতভাগা বাগদী পরিবারগুলোর প্রতি সমাজপতিদের যেন অবহেলার শেষ নেই। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট বুকে লালন ও ধারন করে ওদের দু’একজন এখনও ঐতিহ্যবাহী পালকি বাহনের পেশা ধরে রেখেছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলা পৌর সদরের মনিরামপুর বাজার সংলগ্ন কবিগুরুর শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ি প্রাঙ্গনের কয়েক’শ গজ পূর্বদিকে অবস্থিত আদিবাসী বাগদী পল্লী। সেখানে কথা হয়, স্বর্গীয় র

শামছুর রহমান শিশির : বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী ছোট গল্প ‘পোষ্ট মাস্টার’-এর রতন চরিত্রটি শাহজাদপুরের ‘বাগদী’ পরিবারের এক তরুণীকে ঘিরেই আবর্তিত বলে শাহজাদপুরের বাগদী পরিবারগুলো জানিয়েছে। কবিগুরুর সেই পালকি বাহক এবং রতনের উত্তরসূরি শাহজাদপুরের বাগদী পরিবারের সদস্যরা চির অবহেলিত, অপাঙক্তেয়। যাদের বুক ফাটেতো মুখ ফোটে না, যাদের বিচারের বানী নিরবে নীরবে নিভৃতে কাঁদে। বর্তমানে পালকি বাহনের পেশা প্রায় বিলুপ্ত হওয়ায় বাগদী পরিবারগুলো দিন কাটছে অতিকষ্টে। বাগদী পরিবারগুলোর অনেকেই পালকি বাহনের পেশা পরিত্যাগ করে অন্য পেশায় চলে গেছে। যারা এখনো এ পেশা ধরে আছে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতরভাবে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। ওদের মতো অসহায় হতভাগা বাগদী পরিবারগুলোর প্রতি সমাজপতিদের যেন অবহেলার শেষ নেই। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট বুকে লালন ও ধারন করে ওদের দু’একজন এখনও ঐতিহ্যবাহী পালকি বাহনের পেশা ধরে রেখেছেন। সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলা পৌর সদরের মনিরামপুর বাজার সংলগ্ন কবিগুরুর শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ি প্রাঙ্গনের কয়েক’শ গজ পূর্বদিকে অবস্থিত আদিবাসী বাগদী পল্লী। সেখানে কথা হয়, স্বর্গীয় রতন বাগদীর পুত্র শ্রীপদ বাগদী (৬৫), স্বর্গীয় জোতিন বাগদীর ছেলে মনো বাগদী (৬৫) ও স্বর্গীয় জলধর বাগদীর ছেলে সূনীল বাগদীর সাথে। তারা জানান, শাহজাদপুরের জমিদারী একদা নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারীর অংশ ছিল। ১৮৪০ সালে শাহজাদপুরের জমিদারী নিলামে উঠলে কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর মাত্র ১৩ টাকা দশ আনায় এই জমিদারী কিনে নেন। জমিদারীর সাথে সাথে শাহজাদপুরের কাছারিবাড়িটি ঠাকুর পরিবারের হস্তগত হয়েছিল বলে ধারনা করা হয়। জানা যায়, ১৮৯০ সালের দিকে শাহজাদপুরের জমিদারী দেখাশুনার কাজে কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর শাহজাদপুর এসেছিলেন। এখানে জমিদারী তদারকীর কাজে বিভিন্ন স্থানে পালকিতে চড়ে ভ্রমন করতেন। এজন্য কবিগুরু ভারতের বর্ধমান জেলা থেকে জমিদারী দেখাশুনার কাজে শাহজাদপুরে আসার সময় ৯টি আদিবাসী বাগদী পরিবারকে সাথে নিয়ে আসেন। শাহজাদপুরে এসে কবিগুরু ১৪ শতক জায়গা আদিবাসী ৯টি পরিবারের বসবাসের জন্য দান করেন। এ সময় শহজাদপুরের বর্তমান আদিবাসী বাগদীদের উত্তরসূরী স্বর্গীয় শশীনাথ বাগদী, অটোল বাগদী, কেদারনাথ বাগদী, ও মুরলী বাগদীসহ ৯টি পরিবারের বাগদীরা পালাক্রমে কবিগুরুকে পালকিতে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতেন। স্থানীয় বাগদী পরিবারের সদস্যরা জানান, কবিগুরুর দানকৃত ১৪ শতক জমিতে গন্ধময় স্যাঁতসেঁতে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ৪৫টি পরিবারের ২২৫ জন সদস্য এক দমবন্ধ করা অবস্থায় বসবাস করছে। এই বাগদী পরিবারগুলোর বসতির ঘনত্ব এতটাই বেশি যে একটি ঘরের পাশ দিয়ে একজন হেঁটে চলা কষ্টকর। বাগদীদের মূল পেশা পালকি বাহনের তেমন একটা কাজ না থাকায় অধিকাংশ সময় তাদের বসেই থাকতে হয়। বাগদী পরিবারগুলোর হাতেগোনা দু’একজন ছাড়া অবশিষ্ট সবাই শহর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, রিক্সা চালনা বা স্বল্প আয়ের বিভিন্ন কাজে শ্রম বিক্রি করে কোনমতে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনযাপন করছে। ওইসব ভাগ্যবিড়ম্বিত বাগদী পরিবারগুলোর কোন খোঁজই কেউ নেয় না। কেবলমাত্র ভোটের সময়ই ওদের কদর বাড়ে। প্রার্থীরা তাদের নানা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোটের পরে তাদের আর দেখা যায় না। বাগদী পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে তারা শুধু মাত্র ১৪ শতক জায়গা ভোগ দখল করছেন। অতি অল্প পরিসরের ওই জায়গায় ৪৫টি পরিবারের বসবাস খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারি প্রয়োজনে তাদের ৩ বিঘা জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে তাদের পূনর্বাসনের কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। কবিগুরুর লেখায় নানাভাবে উঠে এসেছে শ্রমজীবী এই বাগদী পরিবারের কথা। বিখ্যাত ছোট গল্প পোস্ট মাস্টারের রতন চরিত্রটি শহজাদপুরের বাগদী পরিবারের কোন এক তরুনীকে ঘিরেই আবর্তিত বলে বাগদী পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তবে রতন নামটি হয়তো বা ছিল কাল্পনিক। শাহজাদপুর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নূরুল ইসলাম জানান, রবীন্দ্রনাথের সাথে বাগদী পরিবারগুলোর অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক ছিল। এরাও ইতিহাসের স্বাক্ষী। যে কারণে শুধু রাষ্ট্র কিম্বা সরকারের নয়, আপামর জনসাধারনের উচিৎ এই পরিবারগুলোর অমানবিক অবস্থা থেকে রক্ষা করা, ওদের পাশে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেয়া।