শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
5 (2) মোঃ মুমীদুজ্জামান জাহান, শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম : আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গত ৪ মাস ধরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর এলাকাসহ ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষকদের বাড়ি ও  গো-খামারে শুরু হয়েছে ষাড় গরু মোটাতাজা করণের কাজ। অর্থ লোভী কিছু অসাধু ব্যক্তি ও খামার মালিক এসব ষাড় গরু দ্রুত মোটা ও তাজা করতে সরকারী নিষেধ অমান্য করে দেশীয় ও ভারতীয় নিষিদ্ধ ষ্টেরয়েড গ্রুপের ক্ষতিকারক ওষুধ গরুকে সেবন করাচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর সত্যতা স্বীকার করে বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহজাদপুর  উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল হাই জানান, ষ্টেরয়েড গ্রুপের ক্ষতিকারক ওষুধ গরুকে না খাওয়ানোর জন্য খামারীদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মাঠ কর্মীদের এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তদারকি করতে বলা হয়েছে। এ নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রদানের ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কেউ ধরা পরেনি। ফলে আশা করছি কৃষক ও খামারীরা  ক্ষতিকারক এসব ওষুধ গরুকে সেবন থেকে বিরত রয়েছে। জানা গেছে,  শাহজাদপুর উপজেলায় ৩ হাজার ৬০৫ টি ডেইরী ফার্ম রয়েছে । এছাড়া এ অঞ্চলে মৌসুমি খামারও রয়েছে। এ সব খামারে গরু মোটাতাজা করা হয়ে থাকে। এসব মৌসুমি খামারে ও কৃষকের বাড়ীতে ২/৫ টি করে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ বছর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে  প্রায় ৩২ হাজার ষাড় গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে।  সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা যায়, এসব ষাড় গরুর  মাংস দ্রুত ও অধিক পরিমানে বৃদ্ধির জন্য  অধিকাংশ কৃষক ও খামার মালিক  শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের নিষেধ অমান্য করে গোপনে এসব নিষিদ্ধ ষ্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ গরুকে  সেবন করাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের ওষুধের দোকানে অনেকটা খোলামেলা ভাবে ভারতীয় ষ্টেরয়েড পেরিঅ্যাকটিন, ডেক্সামেথাসনসহ দেশীয় ডেকাসন, এডাম-৩৩, বেটামেথাসন, ডেক্সানসহ অর্ধশতাধিক ব্রান্ডের এ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ  কৃষক ও খামারী নিষিদ্ধ ষ্টেরয়েড এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না জেনেই অধিক লাভের আশায় হরহামেশাই এ ওষুধ ষাড় গরুকে  সেবন করাচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা  ডাঃ গোলজার হোসেন জানান, ষ্টেরয়েড গ্রুপের এসকল ওষুধ সেবনের ফলে গরু দ্রুত মোটা ও তাজা হলেও গরু রোগাক্রান্ত ও  নিস্তেজ হয়ে পড়ে  এবং পশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে । এছাড়া গরুর  কিডনি,যকৃত, ফুসফুস, কলিজা ও মাংস নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এ সকল গরুর মাংস মানুষের জন্যও নিরাপদ নয়। এসব গরুর মাংস খেলে মানব দেহে নানা জটিল ও কঠিন রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এতে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। এ ওষুধ সেবনকারী গরু ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে জবাই করা না হলে হঠাৎ রক্ত পায়খানা, প্র¯্রাব বন্ধ, খাওয়া দাওয়া বন্ধ, পেট ফাপাসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে স্ট্রোক করে মারা যায়। এসব রোগ দেখা দিলে চিকিৎসারও সময় পাওয়া যায় না। ডাক্তার আসার আগেই গরু মারা যায়। তিনি  কৃষক ও খামারীদের সুষম খাদ্য গবাদী পশুকে  খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। গত বছর কোরবানির হাটে ষ্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ সেবনকারী অনেক গরু বিক্রি না হওয়ায় ঈদের পরের ১/২ সপ্তাহের মধ্যে শতশত গরুর প্রাণহানী ঘটে। এতে কৃষক ও খামার মালিকরা চরম লোকসানে পড়ে। এ লোকসান কাটিয়ে উঠতে না পেরে এবছর অনেকেই গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে।  ফলে এ বছর শাহজাদপুরে কোরবানির পশু লালন পালন কমে গেছে। গত বছর শাহজাদপুরে ৪০ হাজার পশু কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। লোকসানের মুখে পড়ে এ বছর ৮ হাজার কমে ৩২ হাজারে দাড়িয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী বছরে তা অর্ধেকে নেমে আসবে বলে অনেকেই জানিয়েছেন। এতে শাহজাদপুরে কোরবানির পশু প্রস্তুত করণে ব্যাপক ধস নেমে আসায় কৃষকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত বছর উল্টাডাব, পোতাজিয়া, রাউতারা, ডায়া, কাদই, বেলতৈল, মুলকান্দি, টিয়ারবন্দর, চরাচিথুলিয়া, চিথুলিয়া, বাড়াবিল, নুকালি, পেরজনা, জামিরতা, কৈজুরী, সোনাতুনি, ভেরাকোলা, শেলাচাপরি, পুরানটেপরি, তালগাছি, নরিনা, পারকোলা, মাদলা, বাঘাবাড়ী, চয়রা, কায়েমপুর, আঙ্গারু, চুলধরি, ভাইমারা, রেশমবাড়ী, সরাতৈল, কাশিনাথপুর, স্বরূপপুর, জালালপুর, সোনাতুনী ও গালা ইউনিয়নের চর এলাকার বিভিন্ন গ্রাম সহ সহ শতাধিক গ্রামের কৃষকদের শতশত গরু ষ্টেরয়েড সেবনের কারনে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এতে এসব এলাকার কৃষকরা চরম আর্থিক লোকসানে পরে এ বছর গরু মোটাতাজা করণ ব্যাবসা বন্ধ করে দিয়েছে। অপর দিকে তালগাছি গ্রামের গো-খামারী নুরুল ইসলাম প্রতি বছর ১৪/১৫ টি করে ষাড় গরু ডাক্তারের পরামর্শে কাঁচা ঘাস, খর অন্যান্য সুষম খাদ্য ও ভিটামিন জাতীয় কিছু ওষুধ খাইয়ে মোটাতাজা করে থাকে। তিনি জানান তার গরুকে কখনও ক্ষতিকারক ষ্টেরয়েড সেবন করান না। তারপরেও তিনি প্রতিটি গরু ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভে বিক্রি করেন। এ বছরেও তিনি  ১৪টি ষাড় গরু আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য লালন পালন ও মোটাতাজা করছেন। আশা করছেন এবারেও তিনি ভাল লাভ করবেন। তিনি আরো বলেন তাকে অনুকরণ করে গরু মোটাতাজার কাজ করলে কৃষক ও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। তিনি লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেতে এ পন্থা অবলম্বন করতে সবাইকে আহ্বান জানান।  

সম্পর্কিত সংবাদ

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

ফটোগ্যালারী

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

একটা সময় ছিলো যখন আমরা আমাদের সবকিছুই কাগজে লিখে রাখতাম। কখন খেতে যাবো, কবে মিটিং, কখন শপিং এ যাবো এসব টু ডু লিস্টগ...

শাহজাদপুরে আবাসিক হোটেল ব্যবসার করুন অবস্থা, প্রনোদনা চায় ব্যবসায়ীরা

অর্থ-বাণিজ্য

শাহজাদপুরে আবাসিক হোটেল ব্যবসার করুন অবস্থা, প্রনোদনা চায় ব্যবসায়ীরা

এ বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া টানা একমাসের লকডাউনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের আবাসিক হোটেলগুলো ফাকা পড়ে আছে। স্টাফ বেতন,...

শাহজাদপুরে ইসলামী জালসা অনুষ্ঠিত

ধর্ম

শাহজাদপুরে ইসলামী জালসা অনুষ্ঠিত

গতকাল রোববার রাতে উপজেলার শেলাচাপড়ী পশ্চিমপাড় গ্রামের পূর্ব উত্তরপাড়া মহল্লার ‘মাশয়ারিল হারাম’ জামে মসজিদের উন্নতিকল্পে...

১১ আগস্ট থেকে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু

বাংলাদেশ

১১ আগস্ট থেকে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ভার্চুয়ালি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সচিবালয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদে...

কোন পেশাই ছোট নয়, সব পেশাকে সম্মান করুন

উপ-সম্পাদকীয়

কোন পেশাই ছোট নয়, সব পেশাকে সম্মান করুন

মানুষের প্রয়োজনে দুনিয়ায় কত শত পেশা যে তৈরি হয়েছে তার ইয়ত্তা নাই । দেখুন না, জুতা সেলাই থেকে জাহাজ তৈরি কিংবা টিকা তৈরি...

শাহজাদপুরে কাভার্ডভ্যান চাপায় কৃষক নিহত

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে কাভার্ডভ্যান চাপায় কৃষক নিহত

একদিনের ব্যবধানে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় আক্তার মোল্লা (৪৫) নামের আরো এজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার...