“বিক্রেতাদের কোটি কোটি টাকার গোপন মজুদ”
শাহজাদপুর প্রতিনিধিঃ শাহজাদপুর উপজেলার পৌর এলাকার মনিরামপুর বাজার ও নতুনমাটির পৌরমার্কেট সহ ১৩টি ইউনিয়নের বই বিক্রির দোকান গুলোতে প্রকাশ্যে ও খোলামেলা ভাবে বিক্রি হচ্ছে সরকার নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই। শৃজনশীল ও সহায়ক গ্রন্থর মলাট লাগিয়ে প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী এবং নবম শ্রেণী থেকে ডিগ্রি ক্লাশ পর্যন্ত এসব নোট-গাইড বিক্রি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রাশাসন নীরব ভূমিকা পালন করায় বিক্রেতারা একেবারে প্রকাশ্যে খোলামেলা ভাবে এসব নোট-গাইড বিক্রি করছে। প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নোট ও গাইড প্রকাশ ও বিক্রয় সরকারী ভাবে নিষিদ্ধ হলেও শাহজাদপুরে বই বিক্রেতারা তা কিছুতেই মানছেননা। ফলে গত ১০ বছরে শাহজাদপুরের অনেক বই বিক্রেতাই শহরে বহুতল পাকা বাড়ী ও কোটি টাকার মালিক হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে সরকারী নিয়ম মেনে যে সব বিক্রেতা ব্যবসা চালিয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই লোকসানে পড়ে ইতি মধ্যেই দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। এদের মধ্যে রহমানিয়া লাইব্রেরী,শাহমখদুম লাইব্রেরী,বাংলাদেশ লাইব্রেরী উল্লেখযোগ্য। খোজ নিয়ে জানা গেছে শাহজাদপুর পৌর সদর এলাকার মনিরামপুর বাজারে ৫টি ও নতুনমাটির পৌরমার্কেটে ২টি মোট ৭টি বইয়ের দোকান রয়েছে। এ গুলো হলো মা-মনি বুক কর্ণার,সাগর লাইব্রেরী,ইসলামীয়া লাইব্রেরী,সুমন লাইব্রেরী,আনন্দ লাইব্রেরী,বই বিতান ও রুচিতা-রিমঝিম স্টেশনারী। এছাড়া কৈজুরী বাজার সহ ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট বাজারে একাধিক বইয়ের দোকান রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে মা-মনি বুক কর্ণার লেকচার,অনুপম,জুপিটার,জননী প্রকাশনীর এজেন্ট, ইসলামীয়া লাইব্রেরী ব্রাদার্স,অ্যাকটিভ চমক থ্রিজি, উৎসব,আল বারাকা প্রকাশনীর এজেন্ট,আনন্দ লাইব্রেরী গ্যালাক্সি ও আদিল লাইব্রেরীর এজেন্ট। সাগর লাইব্রেরী কিশোর ও আলফা প্রকাশনীর এজেন্ট। এ ছাড়া আরও কিছু প্রকাশনীর এজেন্ট শাহজাদপুরে রয়েছে। এসব প্রকাশনীর জোনাল ম্যানেজার ও মার্কেটিং অফিসারের মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের মোটা অংকের ডনেশনের মাধ্যমে ম্যানেজ করে ছাত্র/ছাত্রীদের মাঝে এসব নোট-গাইড বই চালানো হচ্ছে বলে একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন। শাহজাদপুর উপজেলায় ২২৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়,১০টি কলেজ ও ১৯ টি মাদ্রাসা রয়েছে। এতে প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। জানা যায় এসব শিক্ষার্থী অর্ধেকেরও বেশী শিক্ষার্থী প্রতি বছর নতুন বই কিনে থাকে। এরপরেও বই পরিবর্তন হলে এসংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়। এ হিসেবে শাহজাদপুরে প্রতি বছর ১০ কোটি টাকা থেকে ১২ কোটি টাকা মূল্যের নোট গাইড বিক্রি হয়ে থাকে। এর সিংহভাগ বই বিক্রি হয় সরকার নিষিদ্ধ প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মনোনিত নোট গাইড শিক্ষার্থীরা সংগ্রহ না করলে সেসব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতায় কম নম্বর দেয়ার হুমকি প্রদর্শনে শিক্ষার্থীরা ভয়ে শিক্ষকদের মনোনিত নোট গাইড সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে সরকারের সৃজনশীল কর্মসূচী বেস্তে যেতে বসেছে। শাহজাদপুরের বই ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একেকটি প্রকাশনী স্কুলের ছাত্র ভেদে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোনিম্ন ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত তাদের নোট গাইড চালানোর শর্তে ডনেশন দিয়ে থাকে। আরও জানা গেছে যে সকল লাইব্রেরীর বিভিন্ন এজেন্ট রয়েছে তাদের গোপন গোডাউনে এ পর্যন্ত ২ কোটি টাকা থেকে ৩ কোটি টাকার নোট গাইডের গোপন মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে। এদের একেক জনের ২ থেকে ৩টি করে গোপন গোডাউন রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব গোডাউন থেকে অল্প পরিসরে দোকানে এনে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ইসলামীয়া লাইব্রেরী মালিক মাহফিজুর রহমান বলেন, এ বছর ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে। জুপিটার সহ বিভিন্ন প্রকাশনী শিক্ষকদের মোটা অংকের ডনেশন দিয়ে তাদের বই চালানোর কারনে তার ব্যবসা পড়ে গেছে। সাগর লাইব্রেরীর মালিক আজিজুল হক চান্নু বলেন, সরকার নোট গাইড ছাপা বন্ধ করে দিলে আমরাও এ ব্যবসা থেকে বিরত থাকবো। ছাপা খানায় অভিযান না চালিয়ে আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের বই জব্দ করে পুড়িয়ে আমাদের আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মা-মনি বুক কর্ণারের মালিক লিখন মুখার্জি বলেন,অনুপম ও জুপিটার প্রকাশনীর এজেন্সী তার রয়েছে। লেকচার ও জননী অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকেন। তিনি আরো বলেনম,প্রকাশনী গুলীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা শিক্ষকদের ডনেশন দেন কিনা তা তার জান নেই। তিনি আরো বলেন, উপর থেকে বই প্রকাশ করা হয় তাই তারা কিনে এনে বিক্রয় করেন উপর থেকে নোট গাইড প্রকাশ বন্ধ হলে তারা আর এসব বিক্রি করবেন না। শিক্ষকদের নোট গাইড চালানো প্রসঙ্গে শিক্ষক প্রতিনিধি ও শাহজাদপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম সাইফুল ইসলাম বলেন,গোপনে ২/১জন শিক্ষক সহায়ক হিসেবে নোট গাইড ফলো করে থাকতে পারেন। তবে ডনেশন নেওয়ার বিষয়টি তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান বলেন, কেজি স্কুল গুলো তাদের নিয়ন্ত্রনে না থাকায় তারা নোট গাইড ব্যবহার করে থাকতে পারেন। তবে তার নিয়ন্ত্রনাধীন প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে নোট গাইড ব্যবহার করা হয়না। এ ধরনের প্রমান পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকরা ডনেশনের বিনিময়ে নোট গাইড চালন কিনা তার তা জানা নেই। এ ব্যাপারে উপযুক্ত তথ্য প্রমান পাওয়া গেলে ওই সকল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন অচিরেই লাইব্রেরী গুলোতে নোট গাইড বিক্রির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আহমেদ বলেন,অচিরেই ভ্রাম্যামন আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে নোট গাইড বিক্রির জন্য লাইব্রেরী গুলোতে ও নোট গাইড ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবেসম্পর্কিত সংবাদ
রাজনীতি
শাহজাদপুরের সাবেক এমপি কবিতা ও চয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। ঘটনার দুই বছর পর বৃহস্পতিব...
শাহজাদপুর
শাহজাদপুরে ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে প্রাণ গেল শিশু হোসাইনের
ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে মহাসড়ক পাড়ি দেয়ার সময় পাবনা থেকে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাস চাপায় হোসাইন সরদার নামের এক ৯ বছরের শ...
অপরাধ
নগ্ননৃত্য ও দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত ১১ নারী ও ৫ ব্যবসায়ী গ্রেফতার
শাহজাদপুরে বিভিন্ন নদী-বিলে নৌকায় পিকনিক ও বিনোদনের...
শাহজাদপুর
সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে শাহজাদপুরে মানববন্ধন
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরের পোরজনা ইউনিয়নের হরিনাথপুর(পাঠার মোর) গ্রামে সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে এলাকাবাসী ও পোরজনা উচ্চ...
শাহজাদপুর
শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ‘মামলা না হওয়ার কারণ’ খুঁজছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি
আওয়ামী লীগ–সমর্থিত সাবেক সংসদ সদস্য, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কি না, না হ...
রাজনীতি
শাহজাদপুরে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে মতবিনিময় করলেন চয়ন ইসলাম
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ডায়া ও বেড়াকুচাটিয়া গ্রামবাসীর উদ্যেগে ডায়া বাজারে আওয়ামী...