

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১১ ই আগষ্ট এস আই মোঃ মজিবুল হক শহীদ হন। তখন তিনি বেড়া থানার দারোগা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থ, খাদ্য ও অস্ত্র দিয়ে প্রত্যক্ষ সহযোগিতার অভিযোগে এদিন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী তাকে থানা থেকে ধরে নগড়বাড়ীঘাটে স্থাপিত সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তার ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। সেখানেই তার নির্মম মৃত্যু হয়। পাবনা জেলা পুলিশের রিজার্ভ অফিসে সংরক্ষিত ১৯৭১ সালের নথি তথ্য সূত্রে জানাযায়, তিনি ৭১ সালের ১৬ ই জুন বেড়া থানার দারোগা হিসেবে কর্মস্থলে যোগদান করেন। এর পূর্বে তিনি সিরাজগঞ্জ মহুকুমা সদর থানার দারোগা ছিলেন। সিরাজগঞ্জ সদর থানার দায়িত্বে থাকা কালিন তিনি ২৬/০৪/১৯৭১ ইং থেকে ১৫/০৫/১৯৭১ ইং তারিখ পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপুস্থিত ছিলেন। এর পর তিনি পুনুরায় তার কর্মস্থল সিরাজগঞ্জ থানায় যোগদান করেন।
তার একমাত্র পুত্র সন্তান নূরুল ইসলাম (৬৫) জানান, তার পিতা মজিবুল হক সে সময়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানার দারোগা ছিলেন। ৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেসকোর্স ময়দানে প্রদেয় ভাষণ," এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম" যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো। এ ঘোষণার পরপরই সারা দেশের মত সিরাজগঞ্জের জনপদও উত্তাল হয় ওঠে। সে সময়ে তিনি সিরাজগঞ্জের আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ ও তৎসময়ে গঠিত সংগ্রাম কমিটির নেতাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার নানা প্রস্তুতি সহ পাকবাহিনীকে সিরাজগঞ্জ ঢোকার রাস্তার বিভিন্নস্থানে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি সহ প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতি কাজে জনতার সাথ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ গ্রহন করেন। সে সময়ে মহুকুমা প্রশাসক হিসেবে সিরাজগঞ্জে কর্মরত এসডিও শামসুদ্দীন সাহেবের সহযোহি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার প্রস্তুতি মুলক কাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। মার্চ মাসে সিরাজগঞ্জে বিচ্ছিন্নভাবে বাংগালি বিহারি দাঙ্গা শুরু হলে তিনি বিহারিদের আটোক করে সিরাজগঞ্জ জেলখানায় কারারুদ্ধ করেন।
সকল প্রতিরোধ প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে ৭১'র ২৫ শে এপ্রিল হানাদার বাহিনী সিরাজগঞ্জ শহরে ঢুকে পরে। এর পূর্বেই থানার সকল অস্ত্র ও গোলা বারুদ মুক্তিবািহনীর কাছে হস্তান্তর করে তাদের সাথে স্বপরিবারে গ্রাম অঞ্চলে আশ্রয় গ্রহন করেন থানার দারোগা মজিবুল হক। মহুকূমা প্রশাসক শামসুদ্দিন সাহেব তদ্রুপ সিরাজগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে আশ্রয় নেন। এর মাঝে সিরাজগঞ্জ শহরের পূর্ণ নিযন্ত্রন গ্রহন করে নাপাকি হানাদার বাহিনী।
এরপর তারা মুসলীমলীগ নেতা সৈয়দ আসাদ উদ্দৌলা সিরাজী ও ডাঃ সানাউল্লাহ আনছারির নেতৃত্বে শহরের শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য গঠন করে শান্তি কমিটি। শান্তি কমিটির লোকেরা প্রশাসন যন্ত্র স্বচল করার নিমিত্তে তারা মহুকূমার যে সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্মচারিরা পালিয়ে আছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে অভয় দিয়ে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগদান করানোর প্রচেষ্টায় তৎপরতা চালাতে থাকেন। এ তৎপরতার অংশ হিসাবে তারা নানা আশ্বাস ও অভয়বানী দিয়ে মহুকূমা প্রশাসক শামসুউদ্দিন ও সিরাজগঞ্জ সদর থানার দারোগা মজিবুল হককে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করাতে সমর্থ হন। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস পরবর্তীতে এ দু'জনকেই নাপাক হানাদার বাহিনী পর্যায়ক্রমে নিষ্ঠুর ও নির্মম ভাবে হত্যা করে।
এ প্রতিবেদনের লেখক ও মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ একজন স্বশস্ত্র যোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অনেক স্মৃতি জাগানিয়া ঘটনাগুলোর স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছি। পুলিশ কর্মকর্তা শহীদ মজিবুল হক এর মত অনেক পুলিশ অফিসার যুদ্ধকালীন সময়ে নানা বিব্রতকর এবং নির্মম নৃশংস ঘটনার শিকার হয়ে শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু সেই ইতিহাস আজ আর কেউ স্মরণ করে না এমনকি শহীদ কিম্বা জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদেরও যথাযোগ্য মর্যাদা দেন না। যেটুকু আছে সেটুকু শুধু কাগজ কলমেই। বাস্তবে নয়।
এস আই মোঃ মজিবুল হক এর জন্ম ও কর্ম ইতিবৃত্তঃ---
তিনি ১৯২৮ সালের ১ লা মার্চ ভোলা জেলার, ইলিশা গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম- মৃত মুসলিম মিয়া, মাতার নাম- মৃত মানিকজান বিবি, তার দুই ভাই দুই বোন ছিল। তিনি ছিলেন সবার বড়। শহীদের শৈশব কাল কাটে 'ইলিশা' গ্রামে তার নিজ বাড়ীতে।
* শিক্ষা- তিনি নাদির হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (বার্ড স্কুল) ১৯৩৫ সাল থেকে ৪০ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পরে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পরানগঞ্জ হাইস্কুল ও নবম দশম শ্রেনী ভোলা টাউন স্কুলে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ভোলা টাউন স্কুল থেকে ম্যট্রিকুলেশন পাশ করার পরপরই পু্লিশের চাকুরিতে যোগদান করেন।
* চাকুরী- ইংরেজি ১৯৪৭ সালের সেপ্টম্বর মাসে বরিশাল জেলায় পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এ চাকুরিতে অংশ গ্রহন করেন।
যোগদানের পরপরই পুলিশ ট্রেনিং কলেজ, সারদা, রাজশাহীতে ১৮৪৭-৪৮ পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। প্রশিক্ষণ শেষে কুষ্টিয়া জেলার দর্শনা থানা ও রংপুর জেলায় চাকরি করেছেন। পরে বৃহত্তর পাবনা জেলার বিভিন্ন থানায়- যথাক্রমে উল্লাপাড়া, চাটমোহর, আটঘড়িয়া, চৌহালি, শাহজাদপুর, ঈশ্বরদি, পাবনা, সাথিয়া, সুজানগর, সিরাজগঞ্জ, বেড়া থানায় সর্ব্বশেষ চাকুরি করেছেন। শাহজাদপুর থানা সহ কোন কোন থানায় দু'দফা করে চাকুরি করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।
* আর্থিক সসহায়তা- ১৯৭২ সালে শহীদ পরিবার হিসেবে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কতৃক ২০০০/- (দুই হাজার) টাকার চেক পেয়েছিলেন। এর পর আর কো সরকারি সহায়তা পায়নি তার পরিবার।
* মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে তার পরিবার প্রথমে সিরাজগঞ্জের হামকুড়া সহ প্রত্যন্ত গ্রামে পরে আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার শরনার্থী শিবিরে।
* বিবাহিত ও পারিবারিক জীবন-
১৯৪৬ সালে ভোলা জেলার সদর থানা এলাকার চর বৈরাগী গ্রামের আব্দুল হক ফরাজীর মেয়ে মোসাম্মৎ আলেফা খাতুনকে বিবাহ করেন। তিনি এক পুত্র ও চার কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন।
তার বড় সন্তান- জাহানারা বেগম (জন্ম-২০/১২/১৯৪৭), দ্বিতীয়- মোঃ নুরুল ইসলাম চৌধুরি (জন্ম-১০/০৩/১৯৫১), তৃতীয়- রওশোনারা বেগম (জন্ম-১৮/১২/১৯৫৪), চতুর্থ- আনোয়ারা বেগম (জন্ম-১৫/১১/১৯৫৮), পঞ্চম- হোসনেআরা বেগম (জন্ম-১০/০৮/১৯৬৫)।
* শহীদ পরিবারের স্থায়ী অবস্থান- বিউটি হাউস, কলেজপাড়া, কলেজ রোড, ডাক- বি এম কলেজ, থানা- কোতয়ালী, জেলা- বরিশাল।
সম্পর্কিত সংবাদ

দিনের বিশেষ নিউজ
শাহজাদপুরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৩ দিনব্যাপী ১৬৪তম জন্মোৎসব শুরু
বাংলার সাহিত্যাকাশে ও বিশ্বের জ্ঞান পরিমন্ডলে বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন নোবেলজয়ী, বিশ্বকবি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের

রাজনীতি
মন্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আবদুল মজিদ মন্ডল আর নেই
সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবদুল মজিদ মন্ডল (৭২) আর ন...

অপরাধ
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষার ৬০ লাখ ৮৪ হাজার টাকার হদিস মিলছে না
শাহজাদপুরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিতর্ক যেন প...

শাহজাদপুর
শাহজাদপুরে রূপপুর দ্বো-তলা জামে মসজিদের কমিটি বিলুপ্ত
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর এলাকার রূপপুর পুরাতনপাড়া মহল্লার ঐতিহ্যবাহী রূপপুর দ্বো-তলা জামে মসজিদের কমিটি

শাহজাদপুর
পদত্যাগ করলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে গত বৃহস্পতিবার আমরণ অনশনের আন্দোলনের মুখে পদ...

শাহজাদপুর
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আউয়াল মাস্টারের দাফন সম্পন্ন
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আউয়াল মাস্টার (৭৩) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২৪ জুন) স...