স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন উপজেলা গভর্ন্যন্স প্রজেক্ট এর আওতায় উপজেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় মাদক বিরোধী ও মাদক নিরাময় সম্পর্কে সামাজিক স্বচেতনতা ও উদ্বুদ্ধ করণ কর্মশালায় উপস্থাপিত প্রবন্ধ ।
স্থানঃ শাহজাদপুর উপজেলা শহিদ স্মৃতি সম্মেলন কক্ষ, সিরাজগঞ্জ। (তারিখ- ২১ জানুয়ারী’ ২০১৫ ইং)
-আবুল বাশার-
মাদকের পূর্বাপর ইতিহাস সুপ্রিয় পাঠক, এই প্রবন্ধ লেখার উদ্দেশ্য পান্ডিত্য প্রদর্শন নয়। বাংলাদেশ নামক রেখাচিত্রের এ স্বাধীন ভুখন্ডের অভ্যন্তরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠি আমরা কিভাবে নেশার ছোবলে পড়ে ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছি তারই একটি তথ্য চিত্র আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরাই এ প্রবন্ধের মুল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কোন ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান,গোষ্ঠির প্রতি বিদ্বেষ কিম্বা তাদের হেও প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায় নয়। আমরা সমালোচনা আতœসমালোচানার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে জানাতে বুঝতে এবং বুঝাতে চাই। নেশার ছোবলে শিক্ষা,সংস্কৃতি,অর্থনীতি,রাজনীতি সর্বপরি মানবিক মূল্যবোধের কোন অবস্থানে আমরা রয়েছি সেটা জানাটাও আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দায়িত্ব কর্তব্য এবং বর্তমানের এ ক্ষয়িষ্ণু সমাজে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে কাউকে না কাউকে সত্য ও বাস্তব চিত্র জনগোষ্ঠির সম্মুখে তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ প্রবন্ধ প্রকাশনার মাধ্যমে সেটারই চেষ্টা করা হয়েছে। মাদকের ব্যবহার আদিকাল থেকেই ছিল। কিন্ত সেটি আধুনিকালের মাদকের নয়। আদিকালের মানুষেরা প্রাকৃতিক উদ্ভিদ থেকে কিছু নেশাদ্রব্য তৈরী করে ব্যবহার করতো। কিন্তু এ ধরনের মাদকের ব্যবহার ছিল অত্যন্ত সীমিত আকারে। যারা তৈরী করতে পারতো বা মদকের ব্যবহার সম্পর্কে জানতো এ ধরনের মাদক শুধু তারই ব্যবহার করতো। কিন্তু ঐ মাদক বাজারজাত করা হতো না। হিন্দু ধর্মের পৌরানিক কাহিনীতেও মাদক ব্যবহারের কথা জানা যায়। তবে সেটি শুধু নেশার জন্য নয়। অতীতে ধর্মীয় নানা আচার অনুষ্ঠান, পুজাপার্বন, বিয়ের অনুষ্ঠান এবং আনন্দ অনুষ্ঠাগুলোতের নেশা দ্রব্যের ব্যবহার ছিল সীমিত আকারে। হিন্দু ধর্মের বর্ণবৈশম্যের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে শ্রেনী বিভাযনে মাদক ব্যবহারের ধরণও পাল্টাতে থাকে। প্রাকৃতিক উদ্ভিদ থেকে ‘আফিং’(পপি ফুলের বীজ থেকে তৈরী), ‘গাজা’, ‘ভাং’, ধুতরা পাতা থেকে তৈরী নেশা দ্রব্য, ভাত পঁচিয়ে তৈরী ‘চুয়ানি’, তালের রসের ‘তারী’ মানুষ নেষা হিসেবে ব্যবহার করতো। শ্রেনীভেদ অনুযায়ী মানুষ এ ধরনের নেশাদ্রব্য ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। এর সাথে ছিল তামাক পাতার ব্যবহার “তামাক’ এর মাধ্যমে ধুমপান। এই তামাক পাতার ব্যবহারে ধুমপানটি করা হতো হুক্কার(নাড়কেলের খুলি ও কাটের ছিদ্রযুক্ত লম্বা লইচার তৈরী) মাধ্যমেসেটি করা হতো। তবে এ ধরনের নেশাকে বেশীরভাগ মানুষ ঘৃণার চোখে দেখতো। ইসলাম ধর্মে মাদকে হারাম হিসেবে ঘোষণা করায় মুসলমান ধর্মে বিশ্বসীরা নেশাকে ঘৃনার চেখে দেখে। এ উপমহাদেশে মুসলীম শাষনের শেষাবধি সময় পর্যন্ত মাদক ব্যবহারের বিস্তার তেমন একটা ঘটেনি। মুসলী শাসন পর্যন্ত ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যদিয়েই মাদকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত ছিল। এর জন্য ভিন্ন কোন আইন প্রণীত ছিল না। পাকভারত উপমহাদেশের শাসনভার গ্রহন করে ব্রিটিশরা। এই ইংরেজ শাসকদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার সংগে ছিল মদ। মদ খাওয়াটা তাদের জন্মগত ও পারিবারিক বৈশিষ্ট ছিল। ঐ দেশের আবহাওয়ার সাথে তামিলিয়ে এ ধরনের পরিমিত এ্যালকোহল (মাদক) পান তারা করতো শারীরিক প্রয়োজনে। সেটি কখনও মাত্রারিক্ত ছিল না। এ দেশে এসেও তাদের জীবন-যাপনে এর ধারাবাকিতা বজায় রেখেছিল। ইংরেজদের সাথে মেলা মেশায় ধনীক,বনিক, আমলা,মুৎসুদ্দি ভূস্বামী, জমিদার শ্রেনীর উদ্ভোব হয়। তারা ইংরেজদের সাথে মেলামেশায়, আথিতেয়তার অনুষ্ঠানে, ক্লাবে গিয়ে ধীরে ধীরে মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠে। অভ্যস্ত হয় মদ্যপানে। উংরেজরাও দেশের মানুষের চরিত্র হননে, উঠতি ধনীক শ্রেনীর মাঝে মাদক ও নারীশুক্তির এক সংস্কৃতি তৈরী করে। এ ধরনের মাদকাশক্তদের জন্য ইংরেজদের ব্যপক পরিমান মদ ইংল্যান্ড থেকে আমদানী করতে হতো। তাদের শাসন ব্যবস্থা দীর্ঘকালীণ সময় টিকেয়ে রাখার কৌশল হিসেবে এ ধরণের সংস্কৃতি ফলপ্রসু হওয়ায়। তারা এর পরিধির ব্যবকতা সৃষ্টির জন্য সে সময়ে উপমহাদেশের প্রতিষ্টিত বিভিন্ন শহর,নগর ও বন্দর এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় মাদকের অবাধ ব্যবসা। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠা করা হয় পতিতালয়। পতিতালয়ে পাশাপাশি বিভিন্ন শহর বন্দর এলাকায় স্থানীয় কাঁচামাল দিয়ে এ্যালকোহল তৈরীর জন্য গড়ে তোলা হয় কারখানা। সে সময়ে পূর্ববঙ্গে এ ধরনের একটি এ্যালকোহল কারখানা বৃটিশ তৈরী করেছিল। এ ধরনের স্থাপিত একটি কারখানা বর্তমানে কুষ্টিয়ায় স্থাপিত কেরু এন্ড কোঃ (কেরু কোম্পানী)। এ ধরনের কারখানায় এ্যালকোহল তৈরীতে সাধারণত চিটাগুড়(গুড় তৈরীর বৈর্জ্য), চিনির মিলের চিনি তৈরীর বৈর্জ্য এবং নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়। এর পাশাপাশি বৃটিশ আইন করে এর উৎপাদন, বাজারজাত করণ ও বিক্রি ব্যবস্থার প্রচলন করে। এর জন্য আইনের মাধ্যমে এজন্টে, ডিলার ও বিক্রির জন্য লাইসেন্স প্রদান করা হয়। ঐ সময় থেকে বৃটিশ তৈরী থানা এলাকাগুলো পর্যন্ত আফিং,ভাং,গাজা,মদ (স্থানীয় ভাবে তৈরী এ্যালকোহল), বিক্রির এই সংস্কৃতির পাকাপোক্ত রূপদানের জন্য বৃটিশ এর জন্য তৈরী করে আইন । যে আইনের কাঠামোয় থানায় লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এই আইনের পরিকাঠামোয় (কিছু সংশোধনী সাপেক্ষে) এখনও স্বাধীন বাংলাদেশে টিকে আছে মাদক নিয়ন্ত্র অধিদপ্তর। অথচ এর মাঝে আমরা দু দুইবার স্বাধীনতা লাভ কেরেছি। দু দুইবার আমাদের সংবিধান রচিত হয়েছে। কিন্তু মাদকে আমারা একবারে না বলতে পারি নি। উপরোন্ত ব্যপক হারে এর বিস্তার ঘটছে। নানা ধরনের বানিজ্যক মোড়কে মাদক এখন সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় গড়াগড়ি যাচ্ছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আইনি কাঠোমোর বাতাবরণে আমরা সবাই মাদকা সক্তের সংস্কৃতির মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছি । বাংলাদেশে নেশাদ্রব্যের বিস্তার জ্যামিতিক হারে বাড়ছে, ভয়াবহ মাদক নেশার মরণ ছোবলে আক্রান্ত বাংলাদেশ। শহর,নগর,বন্দর,জেলা,উপজেলা পেড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল পর্যন্ত ব্যাপক হারে এর বিস্তার ঘটেছে। ‘মাদকদব্য’ বর্তমান সমাজে যেমন সংকট সৃষ্টি করছে ভবিষ্যতে এর বিরুপ প্রতিফলন দেশের মণুষ্য সামাজকে এক ভয়াবহ সংকটের মুখে ঠেলে দেবে বলে গবেষকরা মনে করছেন। তাদের দাবী বাংলাদেশে নেশাদ্রব্যের বিস্তার জ্যামিতিক হারে যেমন বাড়ছে তেমনি মাদকাশক্তের সংখ্যাও অনরূপ আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে। গবেষকদের এ দাবীর যথার্থতা আছে। তাদের হিসাব মতে স্বাধীনতা পরবর্তী দেশে মাদক সেবীদের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার প্রায় ০ দশমিক ৫ শতাংশ। এ মাদক সেবীদের বেশীরভাগ ছিল নিন্ম বর্নের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। বর্তমানে দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ কমবেশী মাদকাশক্ত হয়ে পড়েছে। এর হার ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। এদের মধ্যে ২ শতাংশ স্পিরিট, ২ শতাংশ ফেনসিডিল, হিরোইন ও গাঁজা ও ১ শতাংশ প্রচলিত বাংলা চোলাই বা চুয়ানি, ৩ শাতাংশ ইয়াবা বড়ি, ২ শতাংশ দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন ব্রান্ডের মাদক পান করে থাকে। এই মাদক সেবীদের মধ্যে রয়েছে প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক, ছাত্র, পেশাজীবি শ্রমিক, চাকুরীজীবি, ব্যাবসায়ী সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ। মাদকের ছোবলে প্রাণহানি, নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা কাদের হাতে ? ব্যাপকহারে মাদকের বিস্তার ও মাদকাশক্তদের সংখ্যা বাড়লেও এর নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা কাদের হাতে এ নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। যদিও মাদক দ্রব্যের কেনা-বেচা করা আইনত: নিষিদ্ধ এবং সরকারি বিধি নিষেধ আছে। এর পরেও গোটা দেশেই অবাধে মাদকদ্রব্যের বিকিকিনি চলছে। আইন থালেও এর প্রয়োগ নেই কোথাও। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর থাকলেও তার তৎপরতা নেই। অবৈধ মাদক দ্রব্যের চোরাচালান ও বিক্রি কোথাও বন্ধ নেই। থানা পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে মাদক ব্যাবসায়ীদের মাসিক মোটা অংকের অর্থ চুক্তিতে সারাদেশে মাদক ব্যাবসার ব্যাপক বিস্তার ঘটছে।বিষয়টি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। ইতিপূর্বে ১৯৯৮ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিনে দেশবাসী গাইবান্ধার বিষাক্ত মাদক ট্রাজেডি, এরপর নরসিন্দি, বগুড়া, রাজশাহী, ঢাকার রামপুরা, তেজগাও, গোপীবাগ, টাঙ্গাইল, যশোর, ব্রাক্ষনবাড়ীয়া, চট্রগ্রাম, নারায়নগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মদ পানে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি ছিল গাইবান্ধায়। সরকারী হিসেবে বিষাক্ত মদপানে ৪৭ জনের মুত্যুকে স্বীকার করে নেয়া হলেও বে-সরকারী হিসেবে এ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল দেড় শতাধিক। ঐ গণ মুত্যুর ঘটনাকে এলাকাবাসী গণহত্যার সামিল বলে দাবী করেছিল। তারা আন্দোলন করেছিল। শেষ পর্যন্ত ঐ আন্দোলনের ফলাফল ছিল শুন্য। ঐ মাদক ট্রাজেডির জন্য যে ব্যাক্তি দায়ী ছিল সেই মাদক বিক্রেতা রবিন্দ্র নাথ সরকারকে গ্রেফতার করা হলেও প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় তাকে থানা থেকে ছেরে দেয়া সহ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। এ ভাবে প্রতিবছর বিভিন্নস্থানে মাদকসেবীদের মৃত্যু হলেও মাদক ব্যাবসার বিস্তার যেমন থামেনি তেমনি দায়ী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য শাস্তির ব্যাবস্থা নেয়া হয়নি। ক্রমান্বয়ে এ ধরনের মুত্যুর ঘটনার পুনুরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। আর এসকল মৃত্যুর সামন্যতম অংশই খবরের কাগজগুলোর মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পারে। কিন্তু মাদক সেবনের নীল দংশনে প্রতিবছর দেশের অসংখ্য তরতাজা প্রান নিরবে, নিভৃত্তে ধুকে ধুকে মারা যাচ্ছে সে খবর রাখে কে ? এখন প্রায়শই খবরের কাগজগুলোতে খবর হিসেবে দেখা যায়, মাদকসেবী পুত্রের অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে পিতা তার পুত্রকে, আবার মাদকসেবী পিতার কারনে পুত্ররা তাদের পিতাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে জেলখানার নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠাচ্ছে। কিন্তু জেলখানাও মাদকমুক্ত নয়। জেলের অভ্যন্তরেও মাদক দ্রব্যে ধরাপড়া ও সেবনের সংবাদ খবরের কাজগুলোতে দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে নেশা একটি ভয়ানক সামাজিক অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই অভিশাপ সুস্থ পরিবারকে ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের মুখে। সারাদেশে এমন বহু পরিবার আছে যেগুলো এই নেশার কারনে অতিষ্ট। নেশার দংশনে কেউ কেউ অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছে নানা অসামাজিক কাজে। লিপ্ত হচ্ছে সন্ত্রাসী, ছিনতাই, ডাকাতি, চুরি সম নানা অপরাধে। সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যা। পরিবারে সৃষ্টি করছে অশান্তি। এ থেকে মুক্তি পাবার উপায় কি ? এ প্রশ্নের উত্তর সরকার ও দেশবাসীকে দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকবল এবার মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের করুন অবস্থার বর্ননা দেয়া যাক। মাদকদ্রব্য তথা মদ, গাঁজা, হিরোইন, অডফি, ফেনসিডিল, প্যাথড্রিন প্রভৃতির অবৈধ চাষাবাদ, উৎপাদন, সরবরাহ ক্রয়-বিক্রয় মাদকাশক্তদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং মাদক দ্রব্যের অপ ব্যবহারের বিরুদ্ধে গণ সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সরকার ১৯৯০ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন’ ৯০ প্রবর্তনসহ সাবেক নারকোটিক্স এন্ড লিকার ডিপার্টমেন্টকে বিলুপ্ত করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠান তৈরী করেন। প্রথমে এ বিভাগটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনে থাকলেও ১৯৯০ সালে অধিদপ্তরটিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের আওতায় নেয়া হয়। বর্তমানে দেশের ৪’শ ৬০টি থানাকে ১’শ ৪টি সার্কেলের আওতায় এনে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। কাজ কর্মের সুবিধার জন্য দেশের পুরানো ৪টি বিভাগকে ৪টি অঞ্চল, ৬৪টি জেলাকে ২৫টি উপ-অঞ্চল ও রেঞ্জে ভাগ করা হয়েছে। মাদক সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার জন্য সারা দেশে ১৩টি প্রসিকিউটর ও ৭৩টি সহকারী প্রসিকিউটর পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই অধিদপ্তরের অবকাঠামোতে একজন মহা-পরিচালক, একজন অতিরিক্ত মহা-পরিচালক, ৪ জন পরিচালক, ও কেন্দ্রীয় মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্রের কনসালটেন্ট পরিচালক সহ মোট ১ হাজার ২’শ ৭৪ জন কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে। এসকল পদের ৭৫ ভাগ কর্মকর্তা কর্মচারী আছে, বাকি ২৫ ভাগ পদ শুন্য। মাদক বিরোধী অভিযানে ব্যাবহারের যোগ্য কোন অস্ত্র অধিদপ্তরের হাতে নেই। নেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও যানবাহন। নেই প্রয়োজনীয় জনবল ও শক্তি। গোট অধিদপ্তরটি ‘ঠুটো জগন্নাথ’ এর সামিল। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজনীয় ক্ষমতাও এদের নেই। আছে দূর্নীতি, অনিয়ম ও চাঁদাবাজীর অভিযোগ। আরো আছে সরকারী পারমিটে ভূয়া কিম্বা মৃত অসংখ্য মানুষের মদ্যপানের অভিযোগ। মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের দূর্নীতি ও চাঁদাবাজ কর্মকর্তাদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে এক শ্রেনীর অসৎ মাদক ব্যাবসায়ী ঢাকা সহ সারা দেশে রেকটিফাইড ও মিথানল স্পিরিট মিশ্রিত ভেজাল মদের রমরমা ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে সারা দেশে ব্যাজ্ঞের ছাতার মত গড়ে উঠেছে হোমিওপ্যাথি ঔষধের দোকান। এ দোকান গুলো থেকেও স্পিরিট বিক্রী করা হচ্ছে। হোমিওপ্যথিক পটেনসি মেডিসিনের নামে ৮৭% এ্যালকোহল ১০০ মিলি লিটার সমপরিমান বোতলজাত করে ঢালাওভাবে হোমিওপ্যাথি ঔষধের দোকানগুলো থেকে বিক্রী করা হচ্ছে। অধিদপ্তরটি মূলত ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’ এর সামিল। জানাযায়, মাদক দব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রশাসনিক বিভাগ থেকে বিশেষ চার প্রকার ড্রাগ লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছেঃ- (১) ডিনেচার স্পিরিট, (২) কানট্রি স্পিরিট, (৩) রেকটিফাইড স্পিরিট, (৪) লাইফ সেভিং ড্রাগ (মরফিন, প্যাথেড্রিন ইত্যাদি)। এসব লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অনিয়ম, দূর্নীতি, জালিয়াতি ও ঘুষ প্রীতির অভিযোগ রয়েছে। তাদের ইস্যুকৃত লাইসেন্স ও পারমিটের মাধ্যমে উত্তোলিত মাদক দ্রব্যকে পুঁজি করেই সারাদেশে নেশার রাজ্য কায়েম হয়েছে। ভূয়া নাম ঠিকানা ব্যাবহার করে এমনকি মৃত ব্যাক্তির নামেও ইস্যুকৃত পারমিটের মাধ্যমে এক শ্রেনীর অসৎ ব্যাবসায়ীরা নিয়মিত মাদক দ্রব্য উত্তোলন করছে। ওইসব দ্রব্য দেদার বিক্রী হচ্ছে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা লাইসেন্স বিহীন দোকান কিম্বা ভাটিখানায়। লাইসেন্স পারমিটধারীরা মারা গেলেও তাদের নামে উত্তোলিত হচ্ছে হাজার হাজার গ্যালন তরল মত-স্পিরিট। অধিদপ্তরের বিধান মতে শুধুমাত্র নি¤œ বর্নের হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বাভাবিক পদ্ধতিতে লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। কোন মুসলমানকে পারমিট পেতে হলে তাকে সিভিল সার্জনের মার্টি কি কেটের প্রয়োজন পরে। কিন্তু এসব মার্টি কি কেটের কোন তোয়াক্কা না করেই ভূয়া নাম ঠিকানা ব্যাবহার করে অনেকেই মদের পারমিট পাচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাক্তির অজান্তেই তার নামে বিশেষ ব্যাবস্থায় মদের পারমিট ইসু হয়ে যাচ্ছে। এসব ব্যাক্তি মারা যাওয়ার পরেও প্রতি অর্থ বছরের জুনে ওইসব পারমিটগুলোর নবায়ণ বন্ধ নেই। সারাদেশে মাদক দ্রব্যের লাইসেন্স-পারমিট ধারীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। এর মধ্যে সিংহ ভাগই ভূয়া নাম ঠিকানা ব্যাবহারের মাধ্যমে হয়েছে। অনেক পারমিট কিম্বা লাইসেন্সধারীর মৃত্যু হয়েছে ১০/১৫ বছর আগেই। অথচ সরকারি খাতায় ওইসব মৃত মানুষের নামে নিয়মিত মদপান দেখিয়ে সরকারি রাজস্ব জমার বিপরীতে পারমিটগুলোর নবায়ন অব্যাহত রয়েছে। তাছারাও মাদকদ্রব্য উদ্ধার,গ্রেফতার, মামলা থেকে বাদ দেয়া ইত্যাদি ব্লাক মেইলিং করেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীরা অবৈধ ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গড়ে তুলছে অবৈধ সম্পদের পাহাড়। অনেকেরই আয়ের সাথে ব্যায়ের সঙ্গতি না থাকলেও জবাবদিহিতার সন্মুখীন হতে হচ্ছেন না। তিন লাখ মানুষের বিপরীতে মাদক নিয়ন্ত্রণকর্র্মী একজন। মাদক নিয়ন্ত্র অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী- দশে প্রতি তিন লাখ মানুষের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মী রয়েছেন মাত্র একজন। ডিএনসিতে এক হাজার ২৮৩ লোকবলের স্থলে এখন ৯৯৩ জন কর্মরত। মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন ৫৩০ জন। জনসংখ্যার হিসাবে প্রতি তিন লাখ মানুষের জন্য একজন ডিএনসির কর্মী রয়েছেন। চারটি আঞ্চলিক অফিস, চারটি গোয়েন্দা অফিস, ২৫টি উপ ও ২৫টি রেঞ্জ অফিস এবং ১০৯টি সার্কেল থেকে অধিদপ্তর কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। নিজস্ব অফিস, জনবল, যানবাহন, অস্ত্র, ঝুঁকি ভাতা, তদন্ত ভাতাসহ অনেক সমস্যা থাকলেও সন্তোষজনক হারে মামলা করা হয়েছে বলে দাবী করছেন সংস্থার কর্মকর্তারা। তাদেও দাবী ২০১৪ বছরের আক্টোবর পর্যন্ত ১০ হাজার ৩৫৪টি মাদকসংক্রান্ত মামলা করেছে ডিএনসি। প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার মামলা করা হচ্ছে। এ সময়ে পাঁচ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮৪ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে ডিএনসি। অন্যান্য মাদক উদ্ধারের হারও সন্তোষজনক বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। এ ছারাও দেশের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি গঠনের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরির কাজ চলছে বলে দাবী করা হয়েছে। ভারত থেকে বিভিন্ন রুটে আসছে মাদক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রতিবছর ভারত থেকে অবৈধভাবে চোরাই পথে আসা বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের জন্য প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। যা আমাদের ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরের ৩৯ তম জাতীয় (বাজেট বরাদ্দ ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা) বাজেটের এক দশমাংশ। এ বিষয়ে জাতীয় দৈনিকগুলোর শিরোনাম ছিল, “মাদক বাজার ২২৪ চোরাচালানীর হাতে”। শিরোনামে প্রকাশিত খবর আমাদের হতবাক করেছে। এ সকল চোরাচালানীরা কে বা কাহারা ? এসব গড ফাদারদের নামের তালিকা প্রকাশিত হলে দেশবাসী কিছুটা হলেও উপকৃত হতো। প্রকাশিত খবর সূত্রে আরও জানাযায়, সরকার বিভাগ ভিত্তিক এসব চোরাচালানীর তালিকা চূড়ান্ত করেছে। তালিকানুযায়ী ঢাকা বিভাগে ২২, চট্রগ্রামে ৫২, রাজশাহীতে ৯৬, খুলনায় ৪৬, বরিশালে ৪, এবং সিলেট বিভাগে ৪ জন শীর্ষ চোরাচালানী রয়েছে। এ ছারাও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর মধ্যে কুমিল্লায় সবচেয়ে বেশী চোরাচালানী রয়েছে। এদের মধ্যে শীর্ষ চোরাচালানীর সংখ্যা ২০ জন। এসব চোরাচালানীরা দেশের ১১ টি জেলার ৯৯ টি রুট দিয়ে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য নিয়ে আসছে বাংলাদেশে। গত ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত ৪ মাসে বিডিআর,কোষ্টগার্ড,পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৩৬ কেজি ৫১৪ গ্রাম হিরোইন, ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬৪০ বোতল ফেনসিডিল, ১৩ হাজার ৩৪ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১৯ হাজার ২৮ পিস প্যাথেডিন ইনজেকশন এবং ৫ হাজার ৯৩৭ কেজি গাঁজা আটোক করেছে । আটোক পণ্য চোরাই পথে আসা মাদকের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। অবশিষ্ট ৭০ থেকে ৬৫ শতাংশ মাদকদ্রব্য দেশের বিভিন্ন বয়সী মানুষ ব্যাবহার করেছে। বে-সরকারী হিসাব মতে এর সংখ্যা ও পরিমান প্রায় ৪ গুন বেশী। গোয়েন্দা সংস্থা, বিডিআর, কোষ্টগার্ড ও মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের রিপোর্ট সমন্বয় করার পর এ তথ্য রেরিয়ে এসেছে। এটি দেশের জন্য একটি ভয়াবহ চিত্র। এ ছারাও কলকাতার বিভিন্ন স্থানে ২০টি ফেনসিডিল কারখানা রয়েছে । এ ২০ কারখানার ৩০৩টি ইউনিট থেকে প্রতিনিয়ত ফেনসিডিল তৈরী হচ্ছে। এসব কারখানায় উৎপাদিত ফেনসিডিল ১০-১২ লিটারের প্লাষ্টিকের জারে করে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে আসা হয়। বিভিন্ন ধরনের বোতল আসে আলাদাভাবে। সীমান্ত এলাকায় ছোট ছোট কারখানায় ফেনসিডিল বোতলজাত করার পর এতে লেবেল লাগানো হয়। এরপর ত্রিপুরা জেলার আড়াইটিলা এবং বিশ্বরামগঞ্জ এলাকা, দক্ষিন ত্রিপুরার বিলুনিয়ার কাছে শান্তির বাজার, আগরতলার ইন্দ্রনগর কালিবাড়ী ও দুর্গ চৌমুহনী, মেঘালয়ের বড়নাগাপাড়াসহ সাতটি পথ দিয়ে এসব মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে আনা হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের ৫ হাজার ৭০৭ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে। এই বিশাল সীমান্ত এলাকায় বিডিআর ৩২ টি সীমান্ত জেলার ৫৩৫ টি চৌকি থেকে পাহাড়া দিচ্ছে। এর মাঝ দিয়েই প্রতিনিয়ত আসছে মাদকদ্রব্য।প্রতিবছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে মাদক বিরোধি দিবস পালন, ফেষ্টুন, ব্যানার, মাথায় সাদা ক্যাপ, বিশেষ ব্যাচ লাগানো ইত্যাদি সহকারে শোভাযাত্রা অনেকটা ‘বর্জ্র্র আটোন ফসকা গিট্টুর মত’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রনে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের চোরাকারবারীদের তালিকা তৈরী ও হালনাগাত করন ‘অনেকটা আই ওয়াশ’ ও ‘বর্জ্র্র আটোন ফসকা গিট্টুর মত’।নাম প্রকাশ বিহিন এধরনের তালিকা প্রনয়ন করে হুমকির মুখে রেখে চোরাকারবারীদের সাথে নতুন করে দেন দরবারের মাধ্যমে চুক্তি নবায়ন করে অর্থের অংক বাড়ীয়ে নেয়াই মূলত লক্ষ্য থাকে সংশ্লিষ্টদের। এ ব্যাপারে একটি জাতীয় দৈনিকে ( ১৪ ডিসেম্বর,০৯ যুগান্তর ) প্রকাশিত “চট্রগ্রামে বার-ক্লাবে বিদেশী মদ-বিয়ার বাণিজ্য রক্ষায় কোটি টাকার তহবিল” শিরোনামে সংবাদটি উধাহরণ হতে পারে। অবৈধ মদ-বিয়ারের রমরমা বাণিজ্য নিয়ে যুগান্তরে গত ১৫ ও ১৮ নভেম্বর দু’টি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় প্রশাসনিক, বিভাগীয় ও পুলিশি তদন্তের জন্য পৃথকভাবে নির্দেশ প্রদান করে। ৮ ডিসেম্বর ‘চট্রগ্রামে বার-ক্লাবের অবৈধ মদ ব্যাবসা বন্ধ হয়নি’ শিরোনামে প্রকাশিত ফলোআপ রিপোর্ট নিয়েও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। এ সকল তদন্ত রিপোর্ট নিজেদের পক্ষে আনতে চট্রগ্রামের মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর (নারকোটিকস) মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামানের তত্বাবধায়নে গঠিত হয়েছিল আর্ধকোটি টাকার নিরাপত্তা তহবিল। এসকল খবর দেশবাসীকে হতাশ করে। মাদককে নিয়ন্ত্রন না করা গেলে দেশের সামাজিক শৃংখলা রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পরবে। রাজনৈতিকভাবে মাদককে মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু এখন প্রশ্নজাগে আমাদের দেশের ক্ষমতায় আসীন ক্ষমতার বাইরে অবস্থানকারী রাজনৈতিক দলগুলো মাদককে নিয়ন্ত্রনের জন্য কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে পেরেছে কিনা ? এর উত্তরে একবাক্যে হয়তো সবাই না বলবেন। সরকারের কর্তাব্যাক্তিরা প্রতিবছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে মাদক বিরোধি দিবস পালন, ফেষ্টুন, ব্যানার, মাথায় সাদা ক্যাপ, বিশেষ ব্যাচ লাগানো ইত্যাদি সহকারে শোভাযাত্রা করার মদ্যদিয়ে নিজেরা পুলকিত হন। হিত কর্ম করতে পেরে বেশ গর্ব বোধ করেন। কিন্তু আসল কাজ না করে (চোরকে বলে চুরি কর, সাধুকে বলে লাঠি ধর) প্রশাসনের শুধুমাত্র মাদক বিরোধি দিবস পালন, আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতা কতটা অর্থহীন মাদক বিস্তারের এ ভয়াবহ চিত্র আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে প্রমান করে দেয়। তবে এ ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে দায়ী করা যায়না। দেশব্যাপী এ মাদকদ্রব্য বিস্তারে সাথে যে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই। পর্দার অন্তরালে থেকে কখনও প্রকাশ্যে ক্ষমতাবলে সিন্ডিকেট করে রাজনীতিবিদ ক্ষমতাধরদের কেউ কেউ মাদক ব্যাবসা ও চোরাকারবারীদের নিয়ন্ত্রন করেন। এ সকল ক্ষমতাধরদের হাত অনেক লম্বা। কারবারের ময়দান থেকে মন্ত্রনালয় পর্যন্ত এদের চেইন অফ কমান্ড অনেক শক্তিশালী। কারন তাদের পকেটে থাকে অবৈধ পথে উপার্জিত কোটি কোটি টাকা। বৃহত্তর পাবনার (পাবনা + সিরাজগঞ্জ) মাদক ব্যবসা এ বিষয়ে জাতীয় দৈনিক (যুগান্তর) এর ৪, ৫, ৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত “ মদ বিক্রী করে উপেন পরিবার শত কোটি টাকার মালিক” “পাবনায় মাদক বিরোধী মিছিলে ২৫ গ্রামের মানুষ” উত্তরাঞ্চলে সক্রিয় নকল বাংলা মদ তৈরির বিশাল সিন্ডিকেট” শিরোনামে প্রকাশিত খবরগুলো উধাহরণ হিসেবে আসতে পারে। এ প্রসঙ্গে দেশের একটি জেলার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা যেতে পারে। হাড়ির একটি মাত্র ভাত টিপলেই শক্ত না নরম সব খবর মেলে তেমনি একটি জেলার উধাহরণ পেলে পাঠকদের বুঝতে বাকি থাকবেনা। ইশারায় কাফি। সম্প্রতি পাবনা জেলার মাদক ব্যাবসা সংক্রান্ত বিষয়ে পত্র পত্রিকায় বেশ লেখালেখি হচ্ছে। পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী ঘাটে চুয়ানি, চুলাই মদ, স্পিরিট, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বিক্রী করে উপেন কানার পরিবার এখন শতকোটি টাকার মালিক। একসময়ে উপেন কানার মত অন্ধ ব্যাক্তিও আইনবহির্ভূত ভাবে মাদক বিক্রী করার লাইসেন্স পেয়েছিল। এ লাইসেন্স প্রাপ্তির পিছনে ছিল রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। এ বিষয়ে একটু পিছনের ইতিহাস তলিয়ে দেখা যাক। সদ্য স্বাধীন দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘোষনা অনুযায়ী শুধুমাত্র পৌরসভা/মিউনিসিপ্যাল এলাকায় মাদকদ্রব্য বিক্রীর লাইসেন্স প্রদানের আইন করা হয়। ঐ আইনের বলে বৃহত্তর পাবনা জেলার পাবনা সদরে লক্ষীচাকী, ঈশ্বরদীতে লতিফ বিশ্ব্যাস, সিরাজগঞ্জের তোফাজ্জল এর নামে এ তিনটি মাদক বিক্রীর লাইসেন্স বহাল থাকে। অন্য সবার লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। ১৯৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে পূর্বের আইন বাতিল করে যত্রতত্র ঢালাও ভাবে মদ বিক্রীর লাইসেন্স প্রদান করার আইন পাশ করেন। দেশব্যাপী রাজনৈতিক বিবেচনায় দলীয় সমর্থক নেতা কর্মিদের লাইসেন্স প্রদানে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এই রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার সূত্র ধরেই ১৯৭৯ সালে লাইসেন্স প্রদান করা হয় বেড়া নগরবাড়ী ঘাটের অন্ধ উপেন শীলকে। উপেন শীলের পরিবারের সদস্যরা নগরবাড়ী ঘাট, নাকালিয়ার সাধুগঞ্জ (পূর্বে সাধুগঞ্জের লাইসেন্স ছিল জনৈক আবুল বাশারের নামে) ও চাটমোহরের অষ্টমনিষায় চুটিয়ে মাদক ব্যাবসা চালাতে থাকে। তৎসময়ে এ তিনটি এলাকাতেই ছিল পতিতালয়। পাবনা সদরে ও বেড়া থানা এলাকায় মাদক বিক্রীর লাইসেন্স প্রদান করা হয় হাবিুবুর রহমান তোতাকে ( তৎসময়ের ছাত্রদল নেতা, বর্তমানে পাবনা জেলা বিএনপির সভাপতি। সে সময় বেড়ার জ্যোতিস দত্তের নামে মদ বিক্রীর লাইসেন্স থাকলেও তার লাইসেন্স বাতিল করে লাইসেন্স দেয়া হয় হাবিবুর রহমান তোতার নামে। উল্লাপাড়া এলাকায় মদ বিক্রীর লাইসেন্স দেয়া হয় তার অপরভাই শফিকুর রহমান লালুর নামে। সে সময়ে তাদের পিতা মজিবর রহমান আবগারি বিভাগের সিপাহি ছিলেন। চাকুরী থাকাকালীন তার পরিবারের সদস্যদের নামে লাইসেন্স না দেয়ার বিধান থাকলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় অসাধ্য সাধন হয়ে যায়। একটি নয় একাধিক লাইসেন্স প্রাপ্তির মধ্যদিয়ে। অপরদি;কে সিরাজগঞ্জের লাইসেন্সধারী তোফাজ্জলকে মিথ্যা অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে বিএনপি সমর্থক আব্দুর রশীদ মাদকের লাইসেন্স গ্রহণ করে। তার মৃত্যুর পর মাদকের লাইসেন্সটি গ্রহণ কওে চুটিয়ে ব্যবসা করছে বিএনপি নেতা সিরাজগঞ্জ বাসমালিক সমিতির সেক্রেটারী লিটন। লাহিড়ী মোহনপুরের মাদক লাইসেন্স গ্রহণ করে ব্যবসা করছে তার এক ভাই বিএনপি নেতা নরুল ইসলাম। তার অকস্যাৎ মৃত্যুর এক মাস পর অধিদপ্তরের কর্মকর্তদের সাথে যোগসাজসে অবৈধ এফিডেভিডের মাধ্যমে লাইসেন্স পায় তায় পুত্র। এখন তিনি চুটিয়ে ব্যবসা করছেন। এক সময়ে শাহজাদপুরেও মাদক বিক্রির কেরিয়ার লাইসেন্স ছিল। পাবনা মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের সাথে যোগসাজসে সুকৌশলে শাহাজাদপুরে মদ বিক্রীর ঐ কেরিয়ার লাইসেন্স বন্ধ করে দেয় হাবিবুর রহমান তোতা গংরা। বর্তমানে অবৈধভাবে উল্লাপাড়া ও বেড়া থেকে প্রতিনিয়ত শতশত লিটার মদ এনে শাহজাদপুর ও বাঘাবাড়ী বন্দর এলাকা সহ প্রত্যন্ত আঞ্চলের বিভিন্ন পয়েন্ট বিক্রী করা হচ্ছে। শাহজাদপুরের অবৈধ মদ বিক্রেতার দোকান থেকে শতশত লিটার অবৈধ মদ উদ্ধার করে দোকান মালিক তার নামের আদ্যি অক্ষর “ম” ও তার দুই কর্মচারীকে দুই দফা গ্রেফতার করে সিরাজগঞ্জ র্যাব-১২। র্যাবের পক্ষ থেকে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। একদফা একই দোকান মালিকের কাছ থেকে ৩১৫ লিটার অবৈধ মদ উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশ। থানায় মামলা হয়। ঐ মামলার আসামির তালিকায হাবিবুর রহমান তোতা ও তার ভাই শফিকুর রহমান লালুর নাম ছিল। পরে আটোক মদ মোটা অংকের অর্থের লেনদেনে চোয়ানী মদে পরিনত হয়ে যায়। অর্থেও বিনিময়ে আসামির তালিকা থেকে নাম বাদ যায় দুই ভাইয়ের। ঈশ্বরদীর মদ বিক্রীর দোকান পরিচালনা করতো লতিফ বিশ্ব্যাসের ছেলে মতিন বিশ্ব্যাস। সরকারী রেভিনিউ ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে তার ১৪ বছর জেল হলে দোকান বন্ধ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে অন্যকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে মদের দোকান চালু রাখার বিধান থাকলেও দোকান বন্ধ রেখে হাবিবুর রহমান তোতার ভাই শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে ঈশ্বরদী এলাকায় অবৈধভাবে মদ বিক্রী করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অবৈধ মদ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী থানায় একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। ঐ সময়ে পাবনা মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বক্কার সিদ্দিক, কেরু কোম্পানীর এজেন্ট তাজুল ইসলাম এর সাথে যোগসাজসে বৃহত্তর পাবনা এলাকার সর্বত্র আনাচে কানাচে এক ব্যাক্তিই মাদক ব্যাবসা নিয়ন্ত্রন করে আসছিলো তোতা গং। এদের সকলেই এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। এ ছারাও উপ-পরিচালক আবু বক্কার সিদ্দিক একই ষ্টেশনে দীর্ঘ ৬ বছর অবস্থান করে চাকরী বিধির রেকর্ড ভঙ্গ করার ইতিহাস রচনা কওে সম্প্রতি বদলি হয়েছেন। সম্প্রতি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পাবনা জোনের নতুন উপ-পরিচালক যোগ দিয়েছেন। কার্যস্থলে যোগ দিয়েই তিনি তার স্বজাতির একজনকে শাহজাদপুরের ক্যারিয়ার লাইসেন্স দিয়েছেন। যে পরিবারর সদস্যকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ঐ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে পূর্বেও ভূয়া ক্যারিয়ার লাইসেন্সে মাদক ব্যবসা করার অভিযোগে মামলা রয়েছে। এই ব্যবসা করার দোষের নয়। কিন্তু যারা ইজারা দিয়ে এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালানা করার সুযোগ দিচ্ছেন অভিযোগের তীরটা তাদের দিকেই যায়। আমাদের ধারনা সমগ্র দেশব্যাপী মাদক ব্যাবসা নিয়ন্ত্রনকারীদের চেহারা অনুরুপ। সরকারকে এ ব্যাপারে শক্ত হাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা শাহজাদপুরবাসী কেমন আছি ? আমরা শাহজাদপুরবাসী কেমন আছি ? এ প্রশ্নের উত্তরে একবাক্যে বলা যায়, আমরা ভালো নেই। আমারাও নেশাদ্রব্যে ঘেড়া টোপের মধ্যে অবস্থান করছি। এমন কোন নেশা দ্রব্য নেই যা শাহজাদপুরে বিক্রী হয়না। বৃটিশ শাসনামল থেকেই শাহজাদপুরে পতিতালয় ও মদের দোন ছিল। মাদক বিক্রীর লাইসেন্স ধারী ছিলেন, মনিরামপুর বাজের সুদয় পার। পাকিস্থান পর্বে মাদক ব্যবসার লাইসেন্সধারী ছিলেন, বাড়াবিল গ্রামের ডা: আমজাদ হোসেন। মাঝে জ্বাল কেরিয়ার লাইসেন্স ব্যবহার কওে মাদক বিক্রী করতো জনৈক “র” আদ্যিঅক্ষরের একজন ব্যবসায়ী। এখনও ঐ পরিবারই ব্যাবসা করছে। তবে সেটি কেরু কোম্পানীর সরকার সরবরাহকৃত স্প্রীট। সরকার সরবরাহকৃত এই রেক্টিফাইড স্প্রীট সাধারনত নি¤œ বর্নের হিন্দুদের মাঝে পারমিটের মাধ্যমে দেয়া হয়। সুইপার মালিরা প্রতিজন জন পারমিটের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৯ লিটার তরে স্প্রীট (বাংলামদ) পেয়ে থাকেন। এ ধরনের বাংলামদ মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত কেরু ুকোম্পনীর পাবনা ওয়ার হাউজ থেকে পারমিটধারী ভোক্তরা পেয়ে থাকেন । তবে সরবরাহ করার পূর্বে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে থেকে মানুষের পানযোগ্য করার জন্য রেক্ট্রিফাইড স্প্রীটের সাথে ৬০% পানি মিশেয়ে সরবরাহ করার বিধান রয়েছে (অর্থাৎ মিশ্রণ পরিমান হবে ৬০% পানি+ ৪০% স্প্রীট)। পারমিটধারীকে প্রতিমাসে জন প্রতি ৯ লিটার সরবরাহ ক?সম্পর্কিত সংবাদ
রাজনীতি
শাহজাদপুরের সাবেক এমপি কবিতা ও চয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। ঘটনার দুই বছর পর বৃহস্পতিব...
অর্থ-বাণিজ্য
শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ!
এম এ হান্নান শেখঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের পূর্ব পাশে অবস্থিত পিডিবির ৩টি ও বেসরকারি ১টি মিলে মো...
শাহজাদপুর
শাহজাদপুরে ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে প্রাণ গেল শিশু হোসাইনের
ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে মহাসড়ক পাড়ি দেয়ার সময় পাবনা থেকে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাস চাপায় হোসাইন সরদার নামের এক ৯ বছরের শ...
অপরাধ
নগ্ননৃত্য ও দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত ১১ নারী ও ৫ ব্যবসায়ী গ্রেফতার
শাহজাদপুরে বিভিন্ন নদী-বিলে নৌকায় পিকনিক ও বিনোদনের...
শাহজাদপুর
সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে শাহজাদপুরে মানববন্ধন
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরের পোরজনা ইউনিয়নের হরিনাথপুর(পাঠার মোর) গ্রামে সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে এলাকাবাসী ও পোরজনা উচ্চ...
অপরাধ
শাহজাদপুরে পানিতে চেতনানাশক মিশিয়ে ৫ বাড়িতে চুরি! আটক ৪
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে দুটি টিউবওয়েলের পানিতে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে ৫ বাড়ির পরিবারের সবাইকে অচেতন করে নগদ টাকা ও স্বর্ণলংক...