বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
  • ১১ ক্যাটাগরির ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

  • সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তি করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত ?

Abul-Basar-Pictureআবুল বাশারঃ মুক্তিযুদ্ধের ৪৩ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ সিন্ধান্ত বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেকটাই ইতিবাচক। তবে উদ্দেশ্য প্রনোদিত বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংঙ্গা নির্ধারণ করা হলে ভবিষ্যতে এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নির্ধারিত সংঙ্গা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই এর পরিবর্তে অতীতের মতো বিশেষ ব্যক্তি ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণনয়নে সহায়ক হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন তারা তাঁদেও দলের অর্শীবাদপুষ্ট লোকদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার-আলবদর সহ ভূয়া ব্যক্তিরা মুক্তিযোদ্ধা তালিকার কলেবর বৃদ্ধি করেছেন। অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের কাজ সম্মন্ন হওয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন কার্যক্রম ব্যর্থ হয়েছে। এ কারনে মুক্তিযোদ্ধাদেও জন্য দেয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নামক ব্যক্তিরা। বারবার মুক্তিযোদ্ধা সংঙ্গা পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে এমন সৃযোগ সুবিধা প্রদান করায় সুযোগ সন্ধানীদের ভীড় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এ ধরনের তুঘলকি কান্ড কারখানা কেবলমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব বলে মনে হয়। প্রকাশিত বিভিন্ন মাধ্যমের খবরে জানাগেছে ১৯৭১ সালের মহান মুািক্তযুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ ছাড়াও উল্লেখিত ১১ ক্যাটাগরির ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হবে। তারা হলেন- ১. যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে ট্রেনিং ক্যাম্পে নাম লিপিবদ্ধ করেছেন। ২. যেসব পেশাজীবী বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। ৩. যারা মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ৪. সেনাবাহিনী, পুলিশ, ইপিআর, আনসার বাহিনীর যারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ৫. মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের যথাক্রমে এমএনএ ও এমপিএরা। ৬. পাকবাহিনী ও তার সহযোগী বাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত নারীরা। ৭. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী-কলাকুশলীরা। ৮. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। ৯. মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ডাক্তার, নার্স, সহকারীরা। ১০. মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকারের কর্মচারীরা। ১১. মুক্তিযুদ্ধকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে গঠিত সংগ্রাম পরিষদের জেলা, মহকুমা ও থানা পর্যায়ের নেতারা। সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছাড়া উল্লিখিত ১১ ক্যাটাগরির যেসব ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত সেটাও ভাববার বিষয় রয়েছে। বিষয়টি অস্ত্রহাতে যুদ্ধারত সশস্ত্র প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি বিশাল ব্যঞ্জনা। মুক্তিযুদ্ধের সংঙ্গাকে এতটা সরলীকরণ করণ কখনই যুক্তিযুক্ত নয়। দেশ স্বাধীনের ৪৩ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার সংঙ্গার যতটা সরলীকরণ ও সহজ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধ করা এবং জীবনদান করে শহীদ হওয়া অতটা সহজ ছিল না। সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ক্যাম্পে নাম লেখালেই যদি মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যেত তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো কিনা বিষয়টি প্রশ্নাধীন। যারা ভারতে গিয়ে নিরাপদে থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গান গেয়েছেন বা ফুটবল খেলেছেন বা মুজিবনগর সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন; তাদের সঙ্গে রণাঙ্গনে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে, রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে বনে-জঙ্গলে খেয়ে না খেয়ে যারা পাকবাহিনীর সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধ করেছেন, তাদের একই কাতারে ফেলা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত বলা যায় না। মুক্তিযোদ্ধা কারা তা মুক্তিযোদ্ধা শব্দের মধ্যেই বলা আছে। মুক্তির জন্য যারা স্বশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন তারাই মুক্তিযোদ্ধা। যারা যুদ্ধ করেনি, তারা কখনও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হতে পারেন না। তাই যারা রণাঙ্গনে সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কেবল তাদেরই মুক্তিযোদ্ধা বলা যেতে পারে। এছাড়া অন্যান্য যারা গান গেয়ে, ফুটবল খেলে বা প্রবাসী সরকারের চাকরি করে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন; তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের ‘সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন, তবে তারা কোনোভাবেই মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন না। মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হলে মুক্তিযোদ্ধাদের শৈর্য-বীর্য, গৌরব ও আতœত্যাগকে খাটো করা হবে। ১৯৭১ সালে যেসব নারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নির্যাতিতা (ধর্ষিতা) হয়েছেন তাদেরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হবে! স্বাধীনতার অব্যবহিত পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস পাকিস্তানি বাহিনী ও তার দোসর দালাল-রাজাকারদের দ্বারা যেসব নারী ধর্ষিতা হয়েছিল, তাদের বীরঙ্গনা আখ্যায়িতকরে সম্মানিত করেছিলেন। শেখ মুজিব যাদের বীরঙ্গনা আখ্যায়িত করেছিলেন তাদের সেই পদবি পরিবর্তন করা শেখ মুজিবের প্রতি চরম অবমাননার সামিল বলেই গণ্য হবে। বীরঙ্গণাদের জন আলাদ্যা তালিকা তৈরী করে তাদের সম্মানীত করা যেতে পারে। তাছাড়া ধর্ষিতার দের মুক্তিযোদ্ধা সংঙ্গার মধ্যে ফেলে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করলে মুক্তিযোদ্ধা সনাক্তের মূল বৈশিষ্ট নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ৪৩ বছর পর হলেও বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। স্বাধীনতার পর থেকে ৪৩ বছর ধরে স্বাধীন বাংলা সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা যারা যুদ্ধ পরিচালনা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত ছিলেন সর্বোপরি স্বাধীন বাংলা সরকারের অধীনে যুদ্ধরত ১১ সেক্টরের বিভিন্ন পর্যায়ের আঞ্চলিক কমান্ডার, স্বীকৃত বাহিনীগুলোর আঞ্চলিক কমান্ডার ও যুদ্ধকালীন সংগঠকদের পাশ কাটিয়ে বা বাদ দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় (মুক্তিযোদ্ধা তৈরীর কারখানা) নির্ভর এ পর্যন্ত যতগুলো তালিকা প্রণীত হয়েছে তা আজও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই প্রশংসনীয় উদ্যোগকে সফল করতে হলে ’৭১-এর যুদ্ধকালীন কমান্ডার এবং স্বাধীন বাংলা সরকারের সংশ্লিষ্ট (যুদ্ধের সঙ্গে) সবাইকে নিয়ে যৌথভাবে যাচাই-বাছাই করে একটি তালিকা করলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার একটি সঠিক তালিকা তৈরী সম্ভব হতে পারে। এ না হলে হলে কিয়ামত পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা সম্পন্ন করা যাবে না। এই ব্যর্থতার জন্য একদিন ইতিহাসের কাঠগড়ার দাঁড়াতে হবে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি করতে হলে অতীতের ভুল ও ক্রুটিপূর্ণ নিয়ম পরিহার করতে হবে। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ বর্তমানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কারখানা) এর মত গ্রাম, ইউনিয়ন, থানা, জেলাভিত্তিক কাঠামোয় পরিচালিত হয়নি। তাই আজ যুদ্ধকালীন কোনো থানা কমান্ডার বা কাল্পনিক কোনো উপজেলা ও জেলা কমান্ডার বা কারও প্রতিনিধি দ্বারা কমিটি করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করলে অতীতের মতো ক্রুটি থেকে যাবে। যারা কমিটির সদস্য হবেন তাঁদের অবশ্যই স্বাধীন বাংলা সরকারের অধীন যুদ্ধরত আঞ্চলিক যুদ্ধকালীন কমান্ডারদের প্রতিনিধি হতে হবে। লেখক- মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক,কলামিষ্ট ও গবেষক প্রধান সম্পাদক শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম মোবাইলনং- ০১৮৫৫-৬৯৪৯৪৬ তারিখ- ১৫ মার্চ, ২০১৫ ইংরেজি।

সম্পর্কিত সংবাদ

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

আন্তর্জাতিক

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান সেখানে থাকা সবাই। সরকারি কর্মকর্তা ওই নারী পাশে থাকা একজনকে আঁকড়ে ধরে ভারসাম্য রক্ষার চে...

সাংবাদিক শিমুল হত্যার ২ মাস পর মেয়রের স্ত্রী’র মামলা দায়ের; এলাকায় তোলপাড় !হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা : নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়

আইন-আদালত

সাংবাদিক শিমুল হত্যার ২ মাস পর মেয়রের স্ত্রী’র মামলা দায়ের; এলাকায় তোলপাড় !হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা : নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়

শামছুর রহমান শিশির : শাহজাদপুরে সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার দীর্ঘ ২ মাস পর ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামী পৌর মেয়র...

শাহজাদপুর প্রগতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শিক্ষাঙ্গন

শাহজাদপুর প্রগতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শাহ মখদুমের পূণ্যভূমি ও কবিগুরু রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরে একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্কল...