উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এবং বর্ষনে মধ্য আগষ্ট থেকে শুরু হওয়া বন্যায় জনভোগান্তির সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার সহস্রাধিক গো-খামার। গবাদি পশুর খাবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন শাহজাদপুরের বন্যাকবলিত খামারীরা। বন্যার পানিতে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলায় বন্যা দেখা দেওয়ায় এসব গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। বন্যায় উপজেলার অর্ধলক্ষ পরিবার ও ৭০০’শ খামারের প্রায় তিন লাখ গবাদি পশু পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বানভাসিরা বিভিন্ন রাস্তা, উঁচু স্থান ও বাঁধে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে কৃষকের গচ্ছিত রাখা খড়ও। বন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ম আয়ের খামারীরা। গো খাদ্যের সংকটে ক্রমেই গবাদিপশু দুর্বল হয়ে পড়ছে। এতে দুশ্চিন্তায় কৃষক ও খামারিরা।
তবে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যায় গো-খাদ্যের সংকট মোকাবিলায় খড় প্রক্রিয়াজাত করে গবাদি পশুকে খাওয়ানোর জন্য তাদের ভ্যাটেনারি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে।
প্রতি মন খড় (বিচালী) বিক্রি হচ্ছে ৫ শ’ টাকায়। কাচা ঘাস না পাওয়ায় অনেক খামারী খাল বিল ডোবা নালা থেকে কচুরী পানা সংগ্রহ করে গবাদী পশুকে খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছে।
উপজেলার শতাধিক গরুর বাথান ও ৩ হাজার গোচারণ ভূমি বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় কাঁচা ঘাসের অভাব ও এলাকার প্রায় ৩ লাখ গবাদি পশুর খাদ্যাভাব তীব্র আকার ধারন করেছে। বন্যার সময় বেশীর ভাগ এলাকা দীর্ঘ সময় পানির নিচে তলিয়ে থাকার কারণে ফসলসহ তৃণজাতীয় খাদ্য স্বমুলে নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে বন্যাদুর্গত এলাকায় গবাদী পশুর চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। স্বল্প আয়ের খামারীরা সারাদিন মাঠে মাঠে ঘুরেও গো-খাদ্যের কাচা ঘাসের যোগান দিতে পারছে না। অনেকেই সংসার খরচের পাশাপাশি ধানের খড় (বিচালী) কিনতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। চরাঞ্চলের অনেক খামারী গরু, মহিষ ও ছাগল-ভেড়াকে অর্ধাহারে অনাহারে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এ কারণে অনেক খামারী তাদের গৃহপালিত পশু বাধ্য হয়েই বিক্রি করে দিচ্ছেন।
সরেজমিন উপজেলার তালগাছি, গাড়াদহ, চরনবিপুর, টেপড়ি, নরিনা, বাতিয়া, যুগ্নীদহ, টেটিয়ারকান্দা, কায়েমপুর ব্রজবালা, পোতাজিয়া, রেশমবাড়ী, চৌচির, বাড়াবিল, দাবাড়িয়া, দাড়িয়াপুর, পোরজনা, কৈজুরি, পাতালিয়াপাড়া, উল্টাডাব, জামিরতা, সোনাতনী, বানতিয়ার, বাঘাবাড়ী, চরাচিথুলিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বেশ কিছু মাঝারি খামারিদের সাথে কথা হলে তারা প্রতিবেদকে জানায় অন্তত যদি তাদের ১৫দিনের গো-খাদ্য সরকারি অথবা বেসরকারি ভাবে সহযোগীতা পাই তাহলে এই আকস্মিক বন্যায় যে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে তা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যাবে।
পোতাজিয়া ইউনিয়নের রেশমবাড়ী গ্রামের বড় খামারী মোহাম্মদ আলী ব্যাপারী জানান, তার গ্রামে সব মিলে প্রায় ২’শ খামারী ব্যক্তিগত উদ্যোগে গরু লালন পালন করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি প্রতিবেদককে জানান তার নিজেরও পাঁচ শতাধিক গরুর একটি খামার রয়েছে। খৈল-ভুষি ও খড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং দুধের দাম কম থাকায় খামারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বন্যার কারণে চারণ ভুমির ঘাস সম্পুর্ন ভাবে বিনষ্ট হওয়ায় চরাঞ্চলে গবাদী পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত স্বল্প আয়ের লোকজন যেকোন ভাবেই হোক তাদের নিজেদের খাদ্যাভাব মেটাতে পারলেও গবাদী পশুর খাদ্যের যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতি মন খড় ৫’শ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তারা গবাদী পশুর খাবারের ব্যবস্থা করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সকল সংস্থার সহায়তা কামনা করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মীর কাওছার হোসেন জানান, বন্যা আসার আগে আমি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কর্মী টিম নিয়ে কিভাবে ঢোলের মত গর্ত করে তিন মাস যাবৎ খাদ্য সংরক্ষন করা যায় তা প্রতিটা ইউনিয়নে খামারীদের নিয়ে উঠান বৈঠক করা হয়েছে। আমি এবং আমার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কর্মী টিম সব সময় খামারীদের পশু তদারকি করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোন সহযোগীতা পাইনি। গতবার উপজেলা প্রশাসন থেকেও পেয়েছিলাম এবার এখন পর্যন্ত কোন ত্রান সহযোগীতা পাইনি। তবে সহযোগীতার জন্য আবেদন করা হয়েছে। ত্রাণ সহযোগীতা পেলে ছোট ও মাঝারী খামারীদের মাঝে বিতারণ করা হবে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার গো-খামারীদের জন্য কোন ত্রাণ সহযোগীতা আসেনি। তবে আবেদন করা হয়েছে সহযোগীতা এলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে বিতারণ করা হবে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ মোঃ শামসুজ্জোহা জানান, শাহজাদপুর একটি গবাদীপশু সমৃদ্ধ এলাকা। এই গবাদী পশুর খামারের উপর প্রায় ৭০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এই সম্পদকে টিকিয়ে রাখতে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সম্পর্কিত সংবাদ
শাহজাদপুর
শাহজাদপুরে ১৬ হাজার টাকার জন্য জবাই করে হত্যা! আটক ২
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে পৌর এলাকার নলুয়া বটতলার মুদি দোকানী রইচ উদ্দিনের নিখোঁজের ১৫ দিন পর প্রতিবেশি শফিকুলের বাড়ির পাশের...
অর্থ-বাণিজ্য
শাহজাদপুরে গরু লালন পালন করে স্বাবলম্বী জোবেদা খাতুন
শাহজাদপুরে পোতাজিয়া গ্রামে ব্যবসায়ী আব্দুস সালামের শতাধিক গরু দেখাশোনা করেন তারই সহধর্মিণী জোবেদা খাতুন। মৌসুমী, বৃষ্টি,...
অপরাধ
শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্য আটক
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে ছিনতাই হয়ে যাওয়া দুটি অটোবাইক উদ্ধারসহ অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করেছে থানা পুলিশ। সোমবার...
পড়াশোনা
শাহজাদপুরে ১৪৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ বিতরণ
নিজস্ব প্রতিনিধি: ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করে শ্রেণি পাঠদানের জন্য শাহজাদপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ বিতরণ কর...
ধর্ম
মহান ওস্তাদজী শাহ্ সামসুদ্দীন তাবরেজি (রহ.)'র দিনব্যাপী বাৎসরিক ওরশ শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ (বুধবার) সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর পৌরসদরের দরগাহপাড়া মহল্লাস্থ করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত মখদুমিয়া...
জানা-অজানা
কবিগুরুর ভাষ্কর্য ভালে পাকুড় বৃক্ষ জন্মেছে!
শামছুর রহমান শিশির: ঊনবিংশ শতাব্দিতে বাংলার সাহিত্য গগণে ও বিশ্ব জ্ঞান পরিমন্ডলে 'ভারস্যাটাইল জিনিয়াস' খ্যাত কবিগুরু রবী...