দেবাশিস দত্ত, ম্যাঞ্চেস্টারঃ ৭ আগস্ট– ৬২ বছর আগের এক ভয়াবহ সকালের দুঃসহ স্মৃতি যেন টাইম মেশিনে চড়ে ফিরে এসেছিল বৃহস্পতিবার চতুর্থ টেস্টের প্রথম সকালে৷ সেবার হেডিংলেতে শূন্য রানে ৪ উইকেট পড়ে গিয়েছিল ভারতের৷ পঙ্কজ রায়, দত্তাজিরাও গায়কোয়াড়, মাধব মন্ত্রী ও বিজয় মঞ্জরেকার ফিরে গিয়েছিলেন কোনও রান করার আগেই৷ ফ্রেডি ট্রুম্যান ওই বিপর্যয় ঘটানোর মূল কারিগর ছিলেন৷ তিনি তুলে নিয়েছিলেন সেই সকালে ৩ উইকেট৷ অন্য উইকেটটি পান অ্যালেক বেডসার৷ শূন্য রানে ৪ উইকেট এদিন তুলে নেয়নি অ্যালিস্টার কুকের ইংল্যান্ড. কিন্তু ৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ভারতীয় শিবিরে ছিল ৬৪ বছর আগের সেই ঠকঠকানি৷ বাড়তি বাউন্স, ভয়াবহ সিম বোলিং, যথেচ্ছ সুইংয়ে বিভ্রাম্তিতে ফেলে দিয়ে অ্যান্ডারসন, ব্রড জুটি দু’প্রাম্ত থেকে একের পর এক উইকেট তুলে নিলেন৷ অধিনায়ক ধোনি এসেও অস্বস্তিতে ছিলেন৷ কিন্তু ব্যাট সরিয়ে, শরীর বাঁচিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন অজিঙ্ক রাহানেকে সঙ্গে নিয়ে৷ কিন্তু লাঞ্চের ঠিক আগে অফ স্টাম্পের বাইরে সামান্য লাফিয়ে ওঠা বলে খোঁচা দিয়ে ফিরে গেলেন অজিঙ্ক রাহানেও (২৪)৷ বোলারের নাম জর্ডান৷ ড্রাইভ করতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপে বেলের হাতে জমা পড়ে যান৷ লাঞ্চে গেল ভারত, ৫ উইকেটে ৬৩ অবস্হায়৷
টিমের ইনিংস শেষ পর্যম্ত থামল ১৫২ রানে৷ শুরুতে যে বিপর্যয় হয়েছিল, তা মাথায় রাখলে এটা অবশ্যই একটা ভাল স্কোর৷ অধিনায়ক ধোনি ৭১ রান না করলে পরিস্হিতি আরও খারাপ হত৷ রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ৪০ রান এই ভরাডুবিতে বড় রান অবশ্যই৷ হাঁটুতে অস্ত্রপচার করতে হবে, এই অবস্হায় স্টুয়ার্ট ব্রড ৬ উইকেট তুলে নিলেন৷ ব্রড-অ্যান্ডারসন জুটিকে সামলাতে হিমসিম খেতে হল আরও একবার৷ কুকরা অতিরিক্ত সতর্ক, বলের লাইনের পেছনে গিয়ে খেলতে চাইছেন৷ যা পূজারা-কোহলিদের খেলায় ছিল না৷ সতর্ক থাকাকালীনই হঠাৎ হুক মেরে বল সীমানার ওপারে পাঠাতে গিয়ে কুক ডিপ স্কোয়ার লেগে ধরা পড়ে গেলেন পঙ্কজ সিংয়ের হাতে৷ রবসন জানেন না স্যুইং খেলতে৷ একেবারেই জানেন না৷ এদিন ভুবনেশ্বরের ভেতরে আসা বলে বোল্ড হলেন, কোনও স্ট্রোক না নিয়ে৷ যাকে ক্রিকেটের ভাষায় বলে ‘ওয়েল লেফট!’ এরপর ব্যালান্স-বেল জুটি যোগ করলেন ৭৭ রান৷ শেষবেলায় ব্যালান্স (৩৭) এল বি ডব্লু হলেন বরুণ অ্যারনের বলে৷ কুককে ফিরিয়ে দেওয়ার পর ব্যালান্স হলেন তাঁর দ্বিতীয় শিকার৷ দিনের শেষে ইংল্যান্ড তুলল ৩ উইকেটে ১১৩৷ ইনিংস ধরে রাখার, তৈরি করার দায়িত্ব নিয়ে ক্রিজে আছেন ইয়ান বেল (৪৫)৷ অশ্বিন হাত ঘোরাচ্ছেন, এই পর্যম্তই৷ ইংল্যান্ড আপাতত পিছিয়ে আছে ৩৯ রানে! এর চেয়েও বিপজ্জনক উইকেটে ভারতকে চলতি সিরিজেই খেলতে হয়েছিল লর্ডসে৷ কিন্তু ইংরেজ বোলাররা ফুল লেংথ ডেলিভারি রাখতে না পারায়, ভারত কোনও রকমে নিজেদের বাঁচিয়ে দিনের শেষে ৯ উইকেটে ২৯০ রান কুড়িয়ে-বাড়িয়ে জোগাড় করতে পেরেছিল৷ এদিন নিশানায় অভ্রাম্ত থাকা শুধু নয়, নিখুঁত লেংথে রাখতে পারছিলেন ব্রড এবং অ্যান্ডারসন৷ উইকেটে বাউন্স, স্যাঁতসেঁতে ভাব বাতাসে, আকাশ মেঘলা, সত্যিকারের ইংলিশ সামার বলতে যা বোঝায়, তা থাকায় ভারত প্রথম থেকেই কাঁপছিল৷ টসে জিতেও ধোনি কেন প্রথমে ব্যাট করলেন, এমন প্রশ্ন উঠল৷ কিন্তু বিলেতে এসে একবার তো এমন বিপদের মুখে পড়তেই হয়৷ প্রথম তিন টেস্টে এমন আবহাওয়া, এমন পিচ, এমন নিখুঁত বোলিং না থাকায় ওজনদার ভারতীয় ব্যাটিং ঠিক ক্যাচ, কট, কট হয়ে যায়নি৷ ওকস বা জর্ডানের জায়গায় ফিনের মতো গতিসম্পন্ন বোলারকে খেলালে পরিস্হিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকত৷ চার বছর আগে বার্মিংহামে এমন উইকেটে রাহুল দ্রাবিড়, বীরেন্দ্র শেহবাগ, শচীন তেন্ডুলকাররা থাকা সত্ত্বেও ভারতের ব্যাটিং-কঙ্কাল এভাবেই বেরিয়ে পড়েছিল৷ বছরের পর বছর, ঘাসের উইকেটে বাউন্স সামান্য বেশি থেকেছে আর ভারত মুখ থুবড়ে পড়েছে৷ চলুন, ওই ‘টাইটানিক’ মুহূর্তে ঢুকে পড়ি, যখন কিনা ২৩ বলের ব্যবধানে গম্ভীর, মুরলী বিজয়, কোহলি ও পুজারা ফিরে গেলেন৷ গম্ভীর যখন আউট হয়েছিলেন, তখন দলের রান ছিল ১ উইকেটে ৮৷ পুজারা যখন চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন, তখনও দলের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ৮! ইহাকেই বলে ইংলিশ সামার! অজিঙ্কের মতো প্রথম ক্রিকেটাররা, যাঁরা প্রথম ইংল্যান্ডে এলেন, তাঁরা বুঝতে শুরু করলেন, কেন এদেশ থেকে বড় রান পেয়ে দেশে ফেরা কঠিন৷ এবার, টাইটানিক মুহূর্ত গৌতম গম্ভীর: ক রুট ব ব্রড ৪৷ ২০ মাস পর জাতীয় দলে ফিরে এসে ব্রডের বলে গালিতে দাঁড়ানো জো রুটের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন৷ ব্যাক ফুট ডিফেন্স করার চেষ্টা৷ বাড়তি বাউন্সের কারণে বল উড়ে গিয়েছিল গালিতে৷ ১৷৮৷ মুরলী বিজয়: ক কুক ব অ্যান্ডারসন ০৷ ১৪ বল খেলেছেন৷ প্রত্যেকটি বলই খেলতে হয়েছিল অ্যান্ডারসনের বিরুদ্ধে৷ ব্রডের কোনও ডেলিভারি খেলার সুযোগ হয়নি তাঁর৷ এই সকালে সবচেয়ে ভাল বল৷ ছাড়তে চেয়েও পারেননি৷ অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে একটু লাফিয়ে বাইরে বেরোনোর আগে আলতো স্পর্শ করল বিজয়ের ব্যাটে৷ উইকেট ভাল ‘ক্যারি’ থাকায় বল চলে গিয়েছিল প্রথম স্লিপে কুকের হাতে৷ ২৷৮৷ বিরাট কোহলি: ক কুক ব অ্যান্ডারসন ০৷ অনেকটা মুরলী বিজয়ের আউট হওয়ার কার্বন কপি ডেলিভারিতে অ্যান্ডারসন ফিরিয়ে দিলেন কোহলিকে৷ সামনের পায়ে ডিফেন্স করতে গিয়েছিলেন৷ বল বাঁক নিয়ে চলে গিয়েছিল সেই কুকের হাতে৷ ৩৷৮৷ চেতেশ্বর পুজারা: ক জর্ডান ব ব্রড ০৷ ওই একই ভঙ্গিমায় উইকেটের পতন৷ অফ স্টাম্পের বাইরে বল লাফালেই ভবলীলা সাঙ্গ৷ ব্রডের এই বলে চেতেশ্বরের ক্যাচ ধরলেন জর্ডান, চতুর্থ স্লিপে দাঁড়িয়ে৷ ৪৷৮৷ অ্যান্ডারসন-আতঙ্কে ভুগছে টিম ইন্ডিয়া৷ মাঠে ও মাঠের বাইরে৷ গালাগাল দিচ্ছেন, ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন, অধিনায়কের সমর্থন পাচ্ছেন গালাগাল চালিয়ে যাওয়ার জন্য, উইকেট পাচ্ছেন ইচ্ছেমতো, অ্যান্ডারসনকে রোখে কে? ১১টা ৪৩ থেকে ১১টা ৫৭, এই ১৪ মিনিটে ভারতকে তিনি অন্ধকূপের মধ্যে ঠেলে দিয়েছিলেন ২ উইকেট নিয়ে৷ লাঞ্চের পর ফিরিয়ে দিলেন রবীন্দ্র জাদেজাকে (০)৷ এল বি ডব্লু৷ মাঠের ভেতরেও অ্যান্ডারসন হারিয়ে দিচ্ছেন জাদেজাকে, বারবার৷ চলতি সিরিজেই ইয়ান বথামের ৩৮৩ উইকেটের রেকর্ড তিনি ভেঙে দিলে অবাক হবেন না৷ জোরে বোলিংয়ের সামনে দুর্বলতার শিকলের সামনে ভারতকে আটকে দেওয়ার কৌশল রয়েছে তাঁর হাতের তালুতে৷সম্পর্কিত সংবাদ
অপরাধ
শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্য আটক
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে ছিনতাই হয়ে যাওয়া দুটি অটোবাইক উদ্ধারসহ অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করেছে থানা পুলিশ। সোমবার...
অর্থ-বাণিজ্য
বেলকুচি সহ সিরাজগঞ্জে ঈদ মার্কেট জমে উঠেছে
চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ষ্টার জলসার অভিনেতা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নামে পোশাক বিক্রি হচ্ছে এবারের ঈদে...
জানা-অজানা
কবিগুরুর ভাষ্কর্য ভালে পাকুড় বৃক্ষ জন্মেছে!
শামছুর রহমান শিশির: ঊনবিংশ শতাব্দিতে বাংলার সাহিত্য গগণে ও বিশ্ব জ্ঞান পরিমন্ডলে 'ভারস্যাটাইল জিনিয়াস' খ্যাত কবিগুরু রবী...
পড়াশোনা
শাহজাদপুরে ১৪৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ বিতরণ
নিজস্ব প্রতিনিধি: ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করে শ্রেণি পাঠদানের জন্য শাহজাদপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ বিতরণ কর...
রাজনীতি
বেলকুচিতে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মানব-বন্ধন অনুষ্ঠিত
চন্দন কুমার আচার্য, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দ...