বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

শাহজাদপুর প্রতিনিধিঃ গত ৮ দিনেও শাহজাদপুরের তাঁত শ্রমিক জাহিদ হাসান হত্যা রহস্য উদঘাটিত হয়নি। অন্ধকারেই রয়ে গেছে এ হত্যা রহস্য। পুলিশের ধীরগতি নীতিতে চলার কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে নিহতর পরিবার অভিযোগ করেছে। অপরদিকে জাহিদ হাসানের পিকনিকের সহপাঠি ৬০ বন্ধু রহস্য জনক ভাবে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করে আছে। পুলিশ এ সব বন্ধদের নামের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের সম্পর্কে খোজ খবর নিচ্ছে। আত্মগোপনকারী বন্ধুদের স্বজনেরা জানিয়েছে, পুলিশের হাতে গ্রেফতারের ভয়ে তারা অন্যত্র সরে আছে। প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হলে তারা আবার এলাকায় ফিরে আসবে। এ ব্যাপারে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই কমল কুমার দেবনাথ জানান, প্রতিদিনি সন্দেহ ভাজনদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে। এদের গ্রেফতার করা সম্ভব হলে এ হত্যা রহস্য বেড়িয়ে আসবে। এছাড়া ময়না তদন্ত রিপোর্ট এখনো হাতে না পাওয়ায় তারা এ হত্যা সম্পর্কে কিছুই নিশ্চিত হতে পারছেনা । ফলে এ হত্যা রহস্যা উদঘাটন কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তিনি আশা করেন,অচিরেই জাহিদ হত্যা রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, তাঁত শ্রমিক জাহিদ হাসান (১৮) উপজেলার হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়নের দরগারচর গ্রামের আনোয়ার হোসেন মনির ছেলে। তাকে গত ২৪ জুলাই শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে পিকনিকের কথা বলে বন্ধুরা বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যার পর লাশ করতোয়া নদীতে ফেলে দিয়েছে বলে পরিবারের লোকজন অভিযোগ করে। গত ২৬ জুলাই রোববার সকালে শাহজাদপুর পৌর সদরের রূপপুর নতুনপাড়া উড়িরচর ও শেরখালী এলাকার দক্ষিণে করতোয়া নদী থেকে জাহিদ হাসানের লাশ পুলিশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে নিহত জাহিদের দুই বন্ধু আকাশ (১৮) ও সাগর (১৯) কে তাদের দরগাপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে সন্দেহজনকভাবে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আকাশ কে জেল হাজতে প্রেরণ করে এবং সাগর কে ছেড়ে দেয়। জাহিদ হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা আনোয়ার হোসেন মনি বাদি হয়ে জাহিদের ৮ বন্ধুর নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ২০/২৫ জন বন্ধুকে আসামি করে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জাহিদকে নৌকায় পিকনিকে যাওয়ার কথা বলে বন্ধু রনি, তালেব, ও উজ্জল বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর দুদিন পেরিয়ে গেলেও জাহিদকে খুঁজে না পেয়ে জাহিদের মোবাইল ফোনে কল করলে রনি ফোন রিসিভ করে জানায়, মোবাইল রেখে জাহিদ বাড়ি চলে গেছে। এর একদিন পর শনিবার বিকেলে জাহিদের মোবাইল, জামা-কাপড় ও জুতা ৭ বন্ধু মিলে জাহিদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে জানায়, পিকনিক শেষে জাহিদ জামা-কাপড় খুলে রেখে নৌকা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরিয়ে বাড়ি চলে এসেছে। এতে জাহিদের পরিবারের সন্দেহ হলে তারা রাতে শাহজাদপুর থানায় একটি জিডি মামলা দায়ের করে। সেই থেকে তিন দিন জাহিদ নিখোঁজ থাকার পর ২৬ জুলাই রোববার সকালে দরগারচর এলাকা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভাটিতে রূপপুর নতুনপাড়া উড়িরচর ও শেরখালির দক্ষিণে করতোয়া নদীতে তার ক্ষত-বিক্ষত ও বিভৎস লাশ ভেসে ওঠে। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে জাহিদের পিকনিকের সাথী বন্ধুরা সবাই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। নিহত জাহিদের পিতা আনোয়ার হোসেন মনি দাবি করেন, পিকনিকের কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বন্ধুরা পরিকল্পিতভাবে তার ছেলেকে হত্যা করেছে। শাহজাদপুর থানার এসআই কমল ও এসআই রেজাউল করিম জানান, নিহত জাহিদের হাত, গলা, নাক, চোয়ালসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক আঘাতের চিহ্ন থাকায় এটিকে প্রাথমিক ভাবে হত্যা বলে ধারনা করা হচ্ছে। কিন্তু এখনো ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে না পাওয়ায় এ ব্যাপারে কিছু নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছেনা। এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল হক জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি হত্যাকান্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। গত ৮ দিনেও চাঞ্চল্যকর এ হত্যা রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা অবিলম্বে আসামীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জোর দাবি জানিয়েছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্য আটক

অপরাধ

শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্য আটক

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে ছিনতাই হয়ে যাওয়া দুটি অটোবাইক উদ্ধারসহ অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করেছে থানা পুলিশ। সোমবার...

শাহজদাপুর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিক্ষা কেন্দ্রে বহিস্কার ৬

অপরাধ

শাহজদাপুর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিক্ষা কেন্দ্রে বহিস্কার ৬

মো: মামুন বিশ্বাস: শাহজাদপুর উপজেলার পৌরসদরের  মহিলা ডিগ্রী কলেজে উন্মুক্ত বিশ...

মাদকের অন্ধকার থেকে ৫ যুবকের  আলোর জীবনে পদার্পণ

স্বাস্থ্য

মাদকের অন্ধকার থেকে ৫ যুবকের আলোর জীবনে পদার্পণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, শাহজাদপুর : ‘মাদক যখন সেবন করেছি, তখন মানুষ খুন করা ছাড়া এমন কোন অপরাধ নাই যা করতো নূন্যতম দ্বিধাবোধ ক...