শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম : মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটের মুন্সীগঞ্জের মাওয়াঘাটের অদূরে কীর্তিনাশা পদ্মায় ডুবে যাওয়া লঞ্চের নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। মাওয়া লঞ্চ টার্মিনালে মেডিকেল ক্যাম্প ও সরকারি তথ্য কেন্দ্রে নিখোঁজ ১১৫ জনের তালিকা করা হয়েছে। এ দিকে রাতভর অভিযানেও সনাক্ত করা যায়নি এমএল পিনাক-৬ নামে লঞ্চটি। বিআইডব্লিউটিসির উপ-পরিচালক আলী আজগর জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চের ১১০ জনের মতো যাত্রী জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। ৬ জন নিহতের খবর রয়েছে। বাকী শতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন।এদিকে উত্তাল পদ্মায় প্রচন্ড ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে সোমবার সারা রাত উদ্ধার কাজ চলে। উদ্ধার তৎপরতায় রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস, নৌ-বাহিনী ও উদ্ধারকারী ৩টি জাহাজের অর্ধ-শতাধিক ডুবুরি। দুর্ঘটনাস্থলের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র স্রোত থাকায় নদীর তলদেশে স্কেনার দিয়েও লঞ্চটি শনাক্ত করা যায়নি বলে জানান মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাইফুল হাসান বাদল।তিনি জানান, পদ্মার ৬০-৭০ ফুট পানির নীচে রয়েছে। নদীর তলদেশে উজান থেকে ধেয়ে আসা প্রচুর পরিমাণে বালিতে লঞ্চের ওপরে আবরন পড়ে। এতে লঞ্চের অবস্থান নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সোমবার রাত পৌনে ১০টার দিকে উদ্ধারকারী তিনটি জাহাজ রুস্তম, দূরন্ত ও সন্ধানী ঘটনাস্থলে পৌঁছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয় লঞ্চের খোঁজে অভিযান।অন্তত আড়াইশ' যাত্রী নিয়ে সোমবার সকাল ১১টায় লঞ্চটি ডুবে যায়।
যেভাবে লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটেছিল : ঘাট তখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। ভিড়তে বড়জোর মিনিট দশেক লাগবে। যাত্রীরা ব্যাগ-বোঁচকা গোছগাছ করছিল। হঠাৎ আতঙ্ক ছড়ায়, ডুবে যাচ্ছে লঞ্চ। শুরু হয় হুড়োহুড়ি। চারদিকে আহাজারি। আচমকা এক দিকে কাত হয়ে যায় লঞ্চ। জানালা দিয়ে পানি ঢুকতে থাকে। দেখতে দেখতেই অর্ধেকটা ডুবে যায়। যে যেভাবে পারে লাফিয়ে পড়ে। নদীর ঘূর্ণিস্রোত দেখে বাকিদের লাফ দেওয়ার সাহস হয় না। তারা ছাদে কিংবা জানালার ধারে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ঘাটের দিকে। চোখে-মুখে বাঁচার তীব্র আকুতি। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পদ্মার উত্তাল জলের নিচে তলিয়ে যায় লঞ্চ। গতকাল সোমবার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে মাওয়া ঘাটের কাছে এভাবেই ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি। ঘড়িতে তখন সকাল ১১টা। মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া যাচ্ছিল লঞ্চটি। প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও ঘাট সূত্র জানায়, কাওড়াকান্দি থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় ছেড়ে আসে পিনাক-৬। সকাল ১১টার দিকে মাওয়া ঘাটের কাছে লৌহজং টার্নিংয়ে পৌঁছলে ঢেউয়ের তোড়ে লঞ্চটি ডুবে যায়। উদ্ধার পাওয়া যাত্রী মাদারীপুরের দুরাই এলাকার আফজাল হোসেন জানান, নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ ছিল। ঢেউয়ের আঘাতে লঞ্চটিতে জানালা দিয়ে পানি উঠছিল। পানি উঠতে উঠতে একসময় লঞ্চটি আধাডুবু হয়ে যায়। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করলে লঞ্চটি কাত হয়ে পেছনের দিক প্রথমে তলিয়ে যায়। দ্রুত পুরো লঞ্চ ডুবে যায়। তাঁর সঙ্গে তাঁর ভাই মিজান (১৪), বোন ইমা (১৮) ও আফরোজা ছিল। তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের কামরুল হাসান ও তাঁর স্ত্রী তাসলিমা ছিলেন ওই লঞ্চে। গতকাল সন্ধ্যায় মাওয়া লঞ্চঘাটে কামরুল বলেন, লঞ্চটি ছাড়ার সময় বারবার দুলছিল। যাত্রী ছিল বোঝাই। পথে কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে আরো লোক তোলা হয়। সব মিলিয়ে ডুবে যাওয়ার সময় অন্তত আড়াই শ যাত্রী ছিল। কামরুল বলেন, ‘হঠাৎ করে লঞ্চের পেছন দিক ডুবতে শুরু করে। যাত্রীরা বাঁ দিকে ঝুঁকে পড়লে ওই দিকেই লঞ্চটি ডুবে যায়। আমার এক সিট পরই বসে ছিল আমার স্ত্রী। আমি জানালা দিয়ে কোনো রকম বের হতে পারলেও ও আর বের হয়ে আসতে পারেনি। এখন আমি আমার পাঁচ বছরের বাচ্চাকে কী জবাব দেব।’ডুবে যাওয়া লঞ্চের পাশ দিয়ে এ সময় মাওয়ায় আসছিল প্রিন্স অব মেদিনী মণ্ডল নামের একটি লঞ্চ। ওই লঞ্চের যাত্রী রুবেল জানান, লঞ্চটি ঢেউয়ের তোড়ে চোখের সামনে ডুবে যায়। পুরো লঞ্চটিই পাঁচ-সাত মিনিটে ডুবে যায়। এ সময় যাত্রীরা যে যেভাবে পেরেছে পদ্মায় লাফিয়ে পড়েছে। রুবেল বলেন, যাত্রীরা যখন নদীতে লাফিয়ে পড়ছিল, তখন আশপাশ দিয়ে যাওয়া লঞ্চ, সিবোট ও ট্রলার তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে। মাওয়া ঘাট থেকেও সঙ্গে সঙ্গেই সিবোট ও লঞ্চগুলো যাত্রীদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে। কিন্তু পদ্মায় যে স্রোত তাতে উদ্ধারের আগেই স্রোতের টানে অনেক যাত্রী দূরে চলে গেছে। লঞ্চের ওপরে-নিচে এমনকি ছাদেও যাত্রী ছিল। দুর্ঘটনার পরপরই মাওয়া ঘাট থেকে বেশ কয়েকটি সি-বোট, লঞ্চ ও ট্রলার দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে যাত্রীদের উদ্ধারে তৎপরতা চালায়। এরপর খবর পেয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা ছুটে আসেন। তাঁরাও নিজস্ব বিভিন্ন নৌযান নিয়ে উদ্ধারকাজে অংশ নেন। পাশাপাশি সেনা ও নৌবাহিনী, র্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থা যোগ দেয় উদ্ধার তৎপরতায়। দুটি হেলিকপ্টার ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান ও নিখোঁজ যাত্রীদের সন্ধান চালায়। বিকেল থেকে বিআইডাব্লিউটিএর ‘তিস্তা’ নামের একটি জাহাজ সাইড স্ক্যান সোনার ও সোলার যন্ত্র ব্যবহার করে লঞ্চটির অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা চলাচ্ছিল। দুর্ঘটনার খবর বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে লঞ্চে থাকা যাত্রীদের স্বজনরা বিভিন্ন এলাকা থেকে মাওয়া ও কাওড়াকান্দি ঘাটের কাঁঠালবাড়ী এলাকায় ছুটে আসেন। হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে পদ্মার তীরে। এ সময় স্বজনহারা মানুষের আহাজারিতে পুরো এলাকায় হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নূরুর রহমানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি এবং সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার ও শিপ সার্ভেয়ার নাজমুল হককে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
সর্বাত্মক তৎপরতার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর ডুবে যাওয়া লঞ্চ উদ্ধারে সর্বাত্মক তৎপরতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেনা ও নৌবাহিনী এবং র্যাব, কোস্টগার্ড, ফায়ার ব্রিগেড ও বিআইডাব্লিউটিএর সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের অবহেলা না করে দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। উদ্ধারকাজের সার্বক্ষণিক খোঁজখবরও রাখছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এ কথা জানিয়েছেন।
নৌবাহিনীর তৎপরতা : নৌবাহিনী থেকে গত রাত সোয়া ৮টায় জানানো হয়, আধুনিক অনুসন্ধান যন্ত্র ‘সাইড স্ক্যান সোনার’-এর মাধ্যমে বিআইডাব্লিউটিএর সহযোগিতায় নৌবাহিনীর একটি দল অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে নৌবাহিনীর ১২ সদস্যের একটি ডুবুরিদল অনুসন্ধান শুরু করে। পরে আরো দুই সদস্য এ কাজে যোগ দেন। নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে এ অনুসন্ধানকাজ চলছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ থেকে ছয় সদস্যের একটি দল বোট নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। খুলনা থেকেও চার সদস্যের একটি সার্চ টিম উদ্ধার অভিযানে যোগ দিচ্ছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
সম্পর্কিত সংবাদ
শাহজাদপুর
শাহজাদপুরে ১৬ হাজার টাকার জন্য জবাই করে হত্যা! আটক ২
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে পৌর এলাকার নলুয়া বটতলার মুদি দোকানী রইচ উদ্দিনের নিখোঁজের ১৫ দিন পর প্রতিবেশি শফিকুলের বাড়ির পাশের...
অপরাধ
শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্য আটক
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে ছিনতাই হয়ে যাওয়া দুটি অটোবাইক উদ্ধারসহ অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করেছে থানা পুলিশ। সোমবার...
পড়াশোনা
শাহজাদপুরে ১৪৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ বিতরণ
নিজস্ব প্রতিনিধি: ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করে শ্রেণি পাঠদানের জন্য শাহজাদপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ বিতরণ কর...
অর্থ-বাণিজ্য
শাহজাদপুরে গরু লালন পালন করে স্বাবলম্বী জোবেদা খাতুন
শাহজাদপুরে পোতাজিয়া গ্রামে ব্যবসায়ী আব্দুস সালামের শতাধিক গরু দেখাশোনা করেন তারই সহধর্মিণী জোবেদা খাতুন। মৌসুমী, বৃষ্টি,...
ধর্ম
মহান ওস্তাদজী শাহ্ সামসুদ্দীন তাবরেজি (রহ.)'র দিনব্যাপী বাৎসরিক ওরশ শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ (বুধবার) সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর পৌরসদরের দরগাহপাড়া মহল্লাস্থ করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত মখদুমিয়া...
জানা-অজানা
কবিগুরুর ভাষ্কর্য ভালে পাকুড় বৃক্ষ জন্মেছে!
শামছুর রহমান শিশির: ঊনবিংশ শতাব্দিতে বাংলার সাহিত্য গগণে ও বিশ্ব জ্ঞান পরিমন্ডলে 'ভারস্যাটাইল জিনিয়াস' খ্যাত কবিগুরু রবী...