শাহজাদপুর উপজেলা সংবাদদাতাঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর,চৌহালীসহ যমুনা নদী তীরবর্তী পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো থেকে চরাঞ্চলে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম অসংখ্য ত্রুটিপূর্ণ শ্যালোইঞ্জিন চালিত নৌযানে ঠাসাঠাসি করে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ঝূঁকি নিয়ে চলাচল করছে। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত এসব নৌযানের ফিটনেস ও পারাপারে নৌযানে যাত্রীসংখ্যা ওঠানোর ওপর কোন নীতিমালা না থাকায় অসংখ্য নৌযান মালিকেরা তাদের ফিটনেসবিহীন এসব নৌযানে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী তুলে যমুনার বুকে চলাচল করছে। যমুনা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকা হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি যমুনা পর্যন্ত না পৌছানোয় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌযান মালিকেরা হাজার হাজার যাত্রীকে জিম্মি করে তাদের নিয়ে ঝূঁকিপূর্ণ চলাচল করলেও দেখার কেউ নেই। গতকাল সকালে শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদী তীরবর্তী দুর্গম এলাকা কৈজুরী জামিরতা,জগতলা পূর্বপাড়া,বাসুরিয়া পূর্বপাড়া,কাশিপুরসহ পার্শ্ববতী এলাকাসমূহ সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, অধিক মুনাফার আশায় নৌযান মালিকরা ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিনচালিত নৌযানে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী ও মালামান নিয়ে প্রমত্তা যমুনার বুকের ওপর দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে। মাত্রাতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই এসব ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিনচালিত নৌযান যমুনায় ডুবে গিয়ে সাধারন জনমানুষের জান ও মালের সীমাহীন ক্ষতিসাধনের খবর মাঝে মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে । যমুনার বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রীদের নিজ নিজ শহরের সাথে যোগাযোগে এসব নৌযানই একমাত্র মাধ্যম হওয়ায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ যমুনায় পারাপার হচ্ছে। যমুনার বুকে ত্রুটিপূর্ণ ফিটনেসবিহীন শ্যালো ইঞ্জিনচালিত এসব নৌযানে শাহজাদপুর,চৌহালীসহ যমুনার পার্শ্ববর্তী চরাঞ্চলে উৎপাদিত বিভিন্ন সামগ্রী পারাপার করা হচ্ছে। এসব ত্রুটিপূর্ণ নৌযানই চরাঞ্চলবাসীর কাছে যোগাযোগে ‘অন্ধের ষষ্ঠি’ হওয়ায় নিরূপায় হয়ে এভাবেই বছরের পর বছর হাজার হাজার যাত্রী যমুনার বুকে ঝূঁকিপূর্ণ চলাচল ও সব ধরনের মালামাল পরিবহন করছে। নৌযান মালিকদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই চরাঞ্চলের সকল যাত্রীদের নির্ভর করে যমুনা পাড়ি দিতে হচ্ছে। ফলে তারা ওইসব ত্রুটিপূর্ণ নৌযান মালিদের কাছে পুরোপুরি জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার পরিত্রানে সংশ্লিষ্টদের অবিলম্বে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন অতিব জরুরী হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী জানান, শাহজাদপুর, চৌহালী উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল বানতিয়ার, ছোট চামতারা,বড় চামতারা, হাতকোড়া, মুনপুর, রতনদিয়ার, বাঙ্গালা, বৃদাশুরিয়া, দাশুরিয়া, ক্ষিদ্র দাশুরিয়া, শ্রীপুর, ঠুটিয়া, মনাকষা, স্থল, ধীতপুর, মৌকুড়ি, নোহাটা, শোনতোষা, বসন্তপুর, দিঘলকান্দি, ঘাটাবাড়ী, বাঐখোলা, জালালপুর, রূপসী, ঘোরজান, সোনাতনীসহ যমুনার চরাঞ্চলের অসংখ্য জনমানুষ নিম্নমানের ঝুঁকিপূর্ণ নৌযানে ঠাসাঠাসি করে নিয়মিত চলাচল করছে। শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী, জামিরতা, কাশিপুর, বেনুটিয়া,জগতলা ঘাটসহ পার্শ্ববর্তী যমুনা তীরবর্তী বিভিন্ন ঘাট থেকে ওইসব দুর্গম চর এলাকায় ৫/১০ মিনিট পরপর শ্যালোইঞ্জিন চালিত অসংখ্য নিম্নমানের ত্রুটিপূর্ণ ও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ নৌযান ছেড়ে যাচ্ছে। বেশী ভাড়া আয়ের লক্ষ্যে ওইসব নৌযানে ঠেসে ঠেসে মাত্রাতিরিক্তভাবে যাত্রী ও মালামাল তোলা হচ্ছে। এসব ত্রুটিপূর্ণ নৌযান তৈরি করা হচ্ছে নিম্নমানের কাঠ ও বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে। এছাড়া এসব নৌযান তৈরিতে বিশেষজ্ঞদের তৈরি নকশার বা অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই নিজেদের তৈরি নকশা দিয়েই ত্রুটিপূর্ণ নৌযান তৈরি করা হচ্ছে। যে কোন সময় অনাকাঙ্খিত নৌ-দুর্ঘটনার আশংকা ক্রমেই বৃদ্ধি ঘণীভূত হচ্ছে। এদিকে প্রতিটি নৌযানে ১৫০ জন থেকে ২০০ জন যাত্রী, যা কিনা ধারণ ক্ষমতার প্রায় তিনগুণ, না হওয়া পর্যন্ত নৌযান মালিকেরা ঘাট ছাড়ছে না। অনেক সময় এর চাইতে বেশী যাত্রী নিয়েও প্রবল, প্রমত্ত, রাক্ষুসী যমুনার বুক দিয়ে হাজার হাজার লোকজনকে নিয়মিত চলাচল করতে হচ্ছে। এদিকে বর্ষা মৌসুমে যমুনার চরাঞ্চলের অসংখ্য লোকের অবর্ণনীয়,অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ মৌসুমে যমুনা নদীর চিত্র ভয়াল ও রাক্ষুসী আকার ধারণ করে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। বর্তমানে যমুনার পানি বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু যমুনার স্রোত প্রবল আকার ধারন করেছে । অনেক সময় বড় বড় ঢেউ,ঝড়ো হাওয়া ও তীব্র স্রোতের টানে এসব নিম্নমানের নৌযান দশ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ঘন্টা বা তার চাইতে বেশী সময় পার করে ফেলছে। ফলে একদিকে যেমন যাতীদের সময়ের অপচয় হচ্ছে,অন্যদিকে তীব্র ঝুঁকি নিয়ে তাদের চলাচল ও মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে। এতে মাঝে মধ্যেই ঘটছে বিপত্তি। অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল এসব ত্রুটিপূর্ণ নৌযানে তুলে যমুনার বুকে প্রায় ডুবোডুবো অবস্থা নিয়ে চলাচল করায় তীব্র ঢেউ ও স্রোতের টানে মাঝে মধ্যেই নৌকাডুবিতে নিহতের ও নিখোঁজের সংখ্যা বাড়ছে। এতে যমুনার চরাঞ্চলের অসহায় জনমানুষের প্রাণ ও মালামাল খোয়া যাওয়ায় তারা চরমভাবে অপূরণীয় ক্ষতির সন্মূখীন হচ্ছে। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আহমেদ জানিয়েছেন,‘ এ ব্যাপারে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’ সব মিলিয়ে হাজার হাজার চরাঞ্চলবাসীর যমুনা নদী পাড়ি দেওয়া বিষয়ে ভাষ্য,‘বর্তমান আধুনিক যুগে তারা আজও চির অবহেলিত,পতিত,বঞ্চিতই রয়ে গেছে। বিশাল এ জনগোষ্ঠির যোগাযোগ ব্যবস্থায় লাগেনি আধুনিকতার কোন ছোঁয়া। এ অবস্থার পরিত্রানে শাহজাদপুর,চৌহালীসহ পার্শ্ববর্তী যমুনার দুর্গম চরাঞ্চলবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। সেইসাথে তারা এ নৌপথে ঝুঁকিমুক্ত যাতায়াতের সু-ব্যাবস্থারও জোড়ালো দাবী জানিয়েছেন।’
সম্পর্কিত সংবাদ
অর্থ-বাণিজ্য
শাহজাদপুরে গরু লালন পালন করে স্বাবলম্বী জোবেদা খাতুন
শাহজাদপুরে পোতাজিয়া গ্রামে ব্যবসায়ী আব্দুস সালামের শতাধিক গরু দেখাশোনা করেন তারই সহধর্মিণী জোবেদা খাতুন। মৌসুমী, বৃষ্টি,...
অপরাধ
শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্য আটক
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে ছিনতাই হয়ে যাওয়া দুটি অটোবাইক উদ্ধারসহ অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করেছে থানা পুলিশ। সোমবার...
জানা-অজানা
কবিগুরুর ভাষ্কর্য ভালে পাকুড় বৃক্ষ জন্মেছে!
শামছুর রহমান শিশির: ঊনবিংশ শতাব্দিতে বাংলার সাহিত্য গগণে ও বিশ্ব জ্ঞান পরিমন্ডলে 'ভারস্যাটাইল জিনিয়াস' খ্যাত কবিগুরু রবী...
ফটোগ্যালারী
বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )
শাহজাদপুর
শাহজাদপুরে ১৬ হাজার টাকার জন্য জবাই করে হত্যা! আটক ২
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে পৌর এলাকার নলুয়া বটতলার মুদি দোকানী রইচ উদ্দিনের নিখোঁজের ১৫ দিন পর প্রতিবেশি শফিকুলের বাড়ির পাশের...
শাহজাদপুর
শাহজাদপুরে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষ! নিহত ২
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাটি পরিবহনের ড্রাম ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে সিএনজির চালকসহ ২ জন...