শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
শামছুর রহমান শিশির : বহুল প্রচলিত খনার বচন ‘চৈতে কুয়া ভাদ্রে বান, নরের মুন্ড গড়াগড়ি যান’ অর্থাৎ চৈত্র মাসে কুয়াশা আর ভাদ্র মাসে বন্যা হলে সেটা ‘মহামারী’ হবার ঈঙ্গিত বহন করে। ভারতের একতরফা মরুকরণ প্রক্রিয়ার যাতাকলে পিষ্ট হয়ে আমাদের দেশে ষড় ঋতুর বৈচিত্রময়তায় বিরূপ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কারণে আবহাওয়া ও জলবায়ুর স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মাঝে মধ্যেই ছন্দপতন ঘটছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশে আগত নদ-নদী ও উপনদীর মুখে বাঁধ, ড্যাম, রাবার ড্যাম নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে নদ-নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ রুদ্ধ করে দেয়ায় সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামল এ দেশ ক্রমান্বয়ে মিনি মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। ভারতের মরুকরণ প্রক্রিয়ার যাতাকলে পড়ে শুষ্ক মৌসুমে স্রোতস্বিনী যমুনা, পদ্মা, করতোয়া, বড়াল, হুরাসাগর, নন্দকুজা, বেশানী, আত্রাই, গুমানী, গুর, ফকিরনী, শিববারনই, নাগর, ছোট যমুনা, মুসাখান, নারদ ও গদাইসহ দেশের নদীগুলো ও এর শাখানদীসহ খাল-বিল শুকিয়ে যায় প্রতি বছর। ফলে নদ-নদী বিধৌত দেশে দুঃখ দুর্দশার পালা ভোগ করতে হয় দেশবাসীকে। প্রয়োজনীয় পানি না পাওয়ায় প্রকৃতি নির্ভর কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা শুষ্ক মৌসুমে পরিণত হয় মিনি মরুভূমিতে। দ’ুচোখ যেদিকে যায় সেদিকেই দেখা যায় ধূঁ-ধূঁ বালুচর। ওই চর দেখলে হাহাকার করে ওঠে মন। প্রতিবেশী দেশ ভারত নদ-নদীগুলোর স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে নদ-নদীগুলো অবস্থান করায় মরুকরণের কু-প্রভাব এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশকে করছে ভারসাম্যহীন। এসব কারনে এ অঞ্চলের নদীগুলোর গতি প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটছে। আমরা হারাতে বসেছি আমাদের অনেক গ্রামীন ঐহিত্য। আবহমান কাল থেকে গ্রামীন জনপদের মানুষের প্রিয় সুস্বাদু দেশী মাছ এখন সোনার হরিণের মতো। এখন আর দেখা যায়না গ্রামীন ঐহিত্যের অনুসঙ্গ নৌকা বাইচ, খরা জাল, সূতি ফাঁদ, সেঁচের মাধ্যম দাঁড়। মৎসভান্ডার সংকুচিত বা শুকানোর ফলে অনেক মৎসজীবী হয়ে পড়েছে বেকার। আবার অনেকেই পেশার পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ সালের ভয়াবহ বন্যার পর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে ১৯৫৭ সালে জাতিসংঘের অধীনে ক্রুগ মিশন এর সুপারিশক্রমে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের লক্ষে ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যূৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ইপিওয়াপদা) গঠন করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) ইপিওয়াপদা এর পানি উইং হিসাবে দেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেঁচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কৃষি ও মৎস সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে দেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রধান সংস্থা হিসাবে কার্যক্রম শুরু করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-৫৯ মোতাবেক ইপিওয়াপদা এর পানি অংশ একই ম্যান্ডেট নিয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাইবো) সম্পূর্ণ স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা হিসাবে আতœপ্রকাশ করে। এরপর পর্যায়ক্রমে সংস্কার ও পুনর্গঠনের ধারাবাহিকতায় জাতীয় পানি নীতি-১৯৯৯ ও জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা-২০০৪ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাপাউবো আইন-২০০০ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের আওতায় মাননীয় মন্ত্রী,পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট পানি পরিষদের মাধ্যমে বোর্ডের শীর্ষ নীতি নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। জানা গেছে, নাব্যতা সংকট,বাস যোগ্য পানি ও প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজ করায় উত্তরাঞ্চলের নদী থেকে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্তি’র পথে ! এসব কারণে এ অঞ্চলের নদী নির্ভর কৃষক ও এলাকাবাসীর বুকভরা আশা ক্রমশঃ হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। এছাড়া এসব নদীগুলোতে প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় একদিকে যেমন নৌ-চলাচল মারাত্বকভাবে বিঘিœত হচ্ছে,অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। বেশ কয়েকজন প্রবীণ এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, ছোট বেলায় তারা ভয়াল উত্তাল যমুনা, পদ্মা, করতোয়া, বড়াল, হুরাসাগর, নন্দকুজা, বেশানী, আত্রাই, গুমানী, গুর, ফকিরনী, শিববারনই, নাগর, ছোট যমুনা, মুসাখান, নারদ ও গদাইসহ উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর এপাড় (পশ্চিম) থেকে ওপারে (পূর্ব) তাকালে চোখে পড়তো দিগন্তছোঁয়া পানি আর পানি আর এখন চোখে পড়ে ধুঁ-ধুঁ বালু চর। আর এখন বিজলী বাতি জ্বলা জাহাজ তো দুরের কথা! পানির অভাবে পাল তোলা নৌকাও কালে ভাদ্রে চোখে পড়েনা। দেশের নদ-নদীগুলোর বিস্তীর্ণ জলসীমা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে ও বালির চরের প্রশস্ততা বাড়ছে। মরুকরণের কু-প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের জীব বৈচিত্র হুমকির সন্মুখীন হয়ে পড়েছে। মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষক। বিজ্ঞমহলের মতে, দেশের পানি হিস্যা আদায়ে বহুমুখী পরিকল্পনা ও কর্মপস্থার কথা বলা হলেও ভারতের সাথে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বছরের পর বছর শুধু সময়ই অতিবাহিত হচ্ছে। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। এজন্য বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসীমায় যেভাবে নটিক্যাল মাইল যোগ হয়েছে ঠিক সেভাবেই আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা যেতে পারে। এর ব্যত্যয় হলে বর্তমানের উত্তরাঞ্চলের মিনি মরুভ‚মিগুলো পরিণত হবে বৃহৎ মরুভ‚মিতে। আবহাওয়া-জলবায়ু ও নদ-নদী বিশেষজ্ঞরা আমাদের দেশে আবহাওয়ার বৈরি আচরণের জন্য ভারতের মরুকরণ পক্রিয়ার কু-প্রভাবকেই প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ কারণে মরুকরণের কু-প্রভাবে শুষ্ক মৌসুমে দেশের নদ-নদী বক্ষে সময়মতো পানি থাকছে না। ফলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষি, মৎস খাতসহ প্রকৃতি নির্ভর বহুমূখী খাত যার নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে। ’ - সমাপ্ত।

সম্পর্কিত সংবাদ

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

ফটোগ্যালারী

বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )

একটা সময় ছিলো যখন আমরা আমাদের সবকিছুই কাগজে লিখে রাখতাম। কখন খেতে যাবো, কবে মিটিং, কখন শপিং এ যাবো এসব টু ডু লিস্টগ...

শাহজাদপুরে ১৬ হাজার টাকার জন্য জবাই করে হত্যা! আটক ২

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে ১৬ হাজার টাকার জন্য জবাই করে হত্যা! আটক ২

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে পৌর এলাকার নলুয়া বটতলার মুদি দোকানী রইচ উদ্দিনের নিখোঁজের ১৫ দিন পর প্রতিবেশি শফিকুলের বাড়ির পাশের...

শাহজাদপুরে আবাসিক হোটেল ব্যবসার করুন অবস্থা, প্রনোদনা চায় ব্যবসায়ীরা

অর্থ-বাণিজ্য

শাহজাদপুরে আবাসিক হোটেল ব্যবসার করুন অবস্থা, প্রনোদনা চায় ব্যবসায়ীরা

এ বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া টানা একমাসের লকডাউনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের আবাসিক হোটেলগুলো ফাকা পড়ে আছে। স্টাফ বেতন,...

শাহজাদপুরে ইসলামী জালসা অনুষ্ঠিত

ধর্ম

শাহজাদপুরে ইসলামী জালসা অনুষ্ঠিত

গতকাল রোববার রাতে উপজেলার শেলাচাপড়ী পশ্চিমপাড় গ্রামের পূর্ব উত্তরপাড়া মহল্লার ‘মাশয়ারিল হারাম’ জামে মসজিদের উন্নতিকল্পে...

শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ‘মামলা না হওয়ার কারণ’ খুঁজছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি

শাহজাদপুর

শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ‘মামলা না হওয়ার কারণ’ খুঁজছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি

আওয়ামী লীগ–সমর্থিত সাবেক সংসদ সদস্য, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কি না, না হ...

আবার জোড়া গোল মেসির, মায়ামির পর এবার শীর্ষে তুললেন নিজেকে

খেলাধুলা

আবার জোড়া গোল মেসির, মায়ামির পর এবার শীর্ষে তুললেন নিজেকে

জিলেট স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুটা অবশ্য ইন্টার মায়ামির পক্ষে ছিল না। প্রায় ৬৬ হাজার দর্শকের সামনে স্বাগতিক নিউ ইংল্যান্ড ম...