বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
শামছুর রহমান শিশির, বিশেষ প্রতিবেদক : মহাসড়কে গাড়ি চালানোর আইন কানুনকে উপেক্ষা করা, মহাসড়কের দুরপাল্লার যানবাহনের চলাচলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গতিবিধি না মেনে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, যত্রতত্র ওভারটেক ও পার্কিং, তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় বা হেলপারকে দিয়ে গাড়ি চালানো, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শ্যালো-ইঞ্জিনচালিত যানবাহন মহাসড়কে চলাচল, বাঁকের স্থলে অপরিকল্পিতভাবে সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণ, মহাসড়কের দুই পাশে ছোট যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে হার্ড শোল্ডার নির্মাণ না করা, খানা-খন্দ মেরামত সংস্কার না করা, অরক্ষিত রেলক্রসিং সুরক্ষিত না করা, মহাসড়ক সংলগ্ন স্কুল, কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও সংযোগ সড়কের পূর্বভাগে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড স্থাপন না করাসহ বহুমূখী কারণে সিরাজগঞ্জ-ঢাকা, বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কে নিত্যদিন ঘটছে দুর্ঘটনা বাড়ছে প্রাণহানী। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে আনেকেই। পাশাপাশি যানবাহন মালিক ও মালামাল পরিবহনকারীদের অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতির কবলে পড়ছে হচ্ছে। বিশেষ করে এ দুই মহাসড়কে চলাচলকারী ভলবো, ওয়ানজে, ওয়ানজে সুপার, দাইয়্যোসহ বিশ্বের সর্বাধুনিক ইঞ্জিন সংযোজিত বিভিন্ন পরিবহনের চালকেরা ‘সওজ’ নির্দেশিত গতিবিধি অমান্য করে ইচ্ছেমতো ঘন্টায় ১শ’ কিলোমিটারের অধিক গতিতে বাস চালাচ্ছে। অতীব জনগুরূত্বপূর্ণ এ দুই মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে গতিবিধির ওপর আরোপিত বিধি নিষেধ কেবলই ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে গোয়ালে নেই’-এর মতো সাইনবোর্ড সর্বস্ব হয়ে পড়েছে! ফলে সড়ক দুর্ঘটনার হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ২০১৯ সালে শুধুমাত্র সিরাজগঞ্জে ১’শ ১০ জন এবং ২০১৮ সালে ৮৫ জন মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে শতশত যাত্রী। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকেই। পরিবহন মালিকদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার পরপরই নিহতের স্বজনেরা মামলা ঝামেলা এড়াতে লাশ নিয়ে যাওয়ায় এ পরিসংখ্যানের চেয়েও নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিজ্ঞমহলের মতে, ‘এ দুই মহাসড়কের দ্রæতগামী যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গতিবিধি না মেনে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, যত্রতত্র ওভারটেক ও পার্কিং, তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় বা হেলপারকে দিয়ে গাড়ি চালানো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত তদারকি, শ্যালো-ইঞ্জিনচালিত যানবাহন মহাসড়কে চলাচল রোধ, বাঁক সংলগ্ন স্থলে পরিকল্পিতভাবে সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণ, মহাসড়কের দুই পাশে ছোট যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে হার্ড শোল্ডার নির্মাণ, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্ট খানা-খন্দ দ্রæত মেরামত সংস্কার করা, ঝূঁকিপূর্ণ স্থান ও মহাসড়ক সংলগ্ন স্কুল, কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও সংযোগ সড়কের পূর্বভাগে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড লাগানোসহ এসব বিষয়ে নিয়মিত তদারকী করা হলে সড়ক দুর্ঘটনার হার বহুলাংশে কমে যাবে এবং উত্তরাঞ্চলসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অনেকের প্রাণ বেঁচে যাবে। সেইসাথে জানমালের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকেও আমজনতা রেহাই পাবে।’ সিরাজগঞ্জ-ঢাকা, বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের চলাচলকারী বেশ কয়েকজন পরিবহন মালিক, চালক, হেলপার, সুপারভাইজার ও যাত্রীদের সাথে এসব বিষয়ে আলাপকালে তারা জানিয়েছে, সিরাজগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়কের ওপর দিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার যাত্রীসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অগণিত অত্যাধুনিক ইঞ্জিন বিশিষ্ট দ্রæতগামী যাত্রীবাহী বাস ও পন্যবাহী যানবাহন চালকেরা প্রতিনিয়ত প্রচলিত সড়ক গতিবিধির আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী, প্রতাপ, প্রভাব দেখিয়ে বেপোরোয়া গতিতে যানবাহন চালাচ্ছে। ওই দুই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে নিত্যদিন সংগঠিত সড়ক দুর্ঘটনার সিংহভাগই যানবাহন বেপোরোয়া গতিতে চালানোর কারণেই ঘটছে। এ দুই মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন সর্বোচ্চ ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চালানোর নির্দেশনা থাকলেও অনেক চালক তা মানছে না। ফলে বাস্তবে তার ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ দুই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ‘সওজ’ বিভাগ কর্তৃক নির্দেশিত গতিবিধি সম্বলিত সাইনবোর্ড দেখে চালকেরা যানবাহন পরিচালনা না করায় বর্তমানে অতীতের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ দুই মহাসড়কের যে স্থানে সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটারে যানবাহন চালানোর নির্দেশনা রয়েছে সেখানে দ্রæতগামী ভলবো, ওয়ানজে, ওয়ানজে সুপার, দাইয়্যোসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক দ্রæতগতির ইঞ্জিনবিশিষ্ট যাত্রীবাহী ঢাকা কোচের চালকেরা ঘন্টায় ৮০ কিঃমিঃ থেকে ১’শ ১০ কিঃমি গতিতেও যানবাহন চালাচ্ছে।’ তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ- ঢাকা মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে হাটিকুমরুল, নাটোর থেকে বনপাড়া, বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের হাটিকুমরুল থেকে বগুড়া, বগুড়া থেকে নগরবাড়ি মহাসড়কে গত বছর মর্মান্তিক ৪৬ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮১ জন যাত্রী। এছাড়া আঞ্চলিক সড়কে ২৬ দুর্ঘটনায় আরো ২৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। মামলা এড়াতে স্বজনরা লাশ নিয়ে যাওয়ায় কিছু দুর্ঘটনার তথ্য রেকর্ডভুক্ত হয়নি। ফলে উল্লিখিত হিসাবের চেয়ে দুর্ঘটনা ও হতাহতের প্রকৃত পরিমাণ আরো বেশি। এসব হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার (ওসি) মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘গত বছর বগুড়া-নগরবাড়ি, নাটোর-বনপাড়া -হাটিকুমরুল -ঢাকা মহাসড়কের নলকা পর্যন্ত ২৯ দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়। এসব ঘটনায় ২৯টি হয়েছে। এর বাইরেই আরো কিছু দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। মহাসড়কে যত্রতত্র ওভারটেক, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় বা হেলপারকে দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনার হার বাড়ছে। এছাড়া, বেহাল রাস্তাঘাট ও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শ্যালো-ইঞ্জিনচালিত যানবাহন মহাসড়কে চলাচল করায় এগুলোই দুর্ঘটনার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ শহিদ আলম জানান, ‘গত বছর বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম ও হাটিকুমরুল সংযোগ সড়কের নলকা পর্যন্ত মহাসড়কে ১৬টি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত এবং ২৭ জন আহত হয়।’ এদিকে, এসব সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে অপরিকল্পিতভাবে সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণকেই দায়ী করে সিরাজগঞ্জ মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাজী আনছার আলী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। এ সড়কে বেশকিছু বাঁক রয়েছে, যার একপ্রাশ থেকে অপর পাশ দেখা যায় না। এটাও দুর্ঘটনার বড় কারণ। চালকরাও নির্দেশনা না মেনে ওভার স্পিডে গাড়ি চালায়। আবার কখনো কখনো ঘুমের ঘোরে তারা গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। আঞ্চলিক সড়কগুলোতে অবৈধ থ্রি-হুইলা চলাচল করার কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা।’ বিজ্ঞমহলের মতে, সিরাজগঞ্জ-ঢাকা, বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের দুরপাল্লার যানবাহনের মহাসড়কসহ উত্তরাঞ্চল-ঢাকার বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে গতিবিধি নিয়ন্ত্রনে সংশিষ্টদের নিয়মিত তদারকীর অভাবে একদিকে যেমন মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার হার রেকর্ড পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে জনগুরুত্বপূর্ণ এ দুই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ক্রমাগত বাড়ছে। অনতিবিলম্বে সিরাজগঞ্জ-ঢাকা, বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে নির্দেশিত গতিবিধিতে যানবাহন চালানোর ওপর কড়াকড়ি শর্তারোপ, নিয়মিত তদারকি, মহাড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্ট খানা-খন্দ মেরামত, মুছে যাওয়া সাদা বর্ডার পুনঃঅঙ্কন, নির্দেশিত গতিবেগ অমান্যকারী চালকদের বিরুদ্ধে দ্রæত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ চালক, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অধিকতর গণসচেতনতা সৃষ্টিতে কার্যকর উদ্যোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সিরাজগঞ্জ-ঢাকা, বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের চলাচলকারী যাত্রী সাধারণসহ এ দুই মহাসড়কে চলাচলকারী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদেরও জানমালের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যাবে এবং তারা অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকেও রেহাই পাবে।’

সম্পর্কিত সংবাদ

এইডস আতঙ্কের ব্যাপ্তি, প্রতিরোধেই মিলবে মুক্তি

সম্পাদকীয়

এইডস আতঙ্কের ব্যাপ্তি, প্রতিরোধেই মিলবে মুক্তি

লাইট হাউস শাহজাদপুর ডিআইসি আয়েজিত প্রজেক্ট ফ্যসিলিটেশন টিমের ২০১৫ সালের ১ম সভায় উপস্থাপি...

মাদকের অন্ধকার থেকে ৫ যুবকের  আলোর জীবনে পদার্পণ

স্বাস্থ্য

মাদকের অন্ধকার থেকে ৫ যুবকের আলোর জীবনে পদার্পণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, শাহজাদপুর : ‘মাদক যখন সেবন করেছি, তখন মানুষ খুন করা ছাড়া এমন কোন অপরাধ নাই যা করতো নূন্যতম দ্বিধাবোধ ক...

‘অতীতে বঙ্গবন্ধুর নামে; এখন প্রধানমন্ত্রীর অবদানে ক্রিকেটের টাইগার হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্ববাসী চিনেছে’ - সাবেক এমপি চয়ন ইসলাম

খেলাধুলা

‘অতীতে বঙ্গবন্ধুর নামে; এখন প্রধানমন্ত্রীর অবদানে ক্রিকেটের টাইগার হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্ববাসী চিনেছে’ - সাবেক এমপি চয়ন ইসলাম

শামছুর রহমান শিশির, শাহজাদপুর থেকে : ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর নামে বিশ্ববাসী চিনতো। কিন...

সাংবাদিক শিমুলের কবর জিয়ারতে আগামীকাল শাহজাদপুরে আসছেন পিআইবি’র চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার

জাতীয়

সাংবাদিক শিমুলের কবর জিয়ারতে আগামীকাল শাহজাদপুরে আসছেন পিআইবি’র চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার

আগামীকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি ও স্থানীয় সাপ্তাহিক জনতার মশাল পত্রিকার বার্তা সম্পা...

স্ত্রীর কারনে হার্ট অ্যাটাক বেশি হয় পুরুষদের

স্বাস্থ্য

স্ত্রীর কারনে হার্ট অ্যাটাক বেশি হয় পুরুষদের

নিউজ ডেস্ক: আজকের কম্পিটিশনের দুনিয়ায় স্ট্রেস একটি দৈনন্দিন সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর...

সিরাজগঞ্জ জেলায় যৌন উত্তেজক সিরাপ বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন নাম দিয়ে  নেই কোন প্রশাসনের তৎপরতা

সিরাজগঞ্জ জেলায় যৌন উত্তেজক সিরাপ বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন নাম দিয়ে নেই কোন প্রশাসনের তৎপরতা

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারগুলোতে ছড়িয়ে পরেছে অনুমোদ...