রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
muktijoddha_sonod-600x364 মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নেয়া এসএসসি এবং এইচএসসি ইত্যাদি পরীক্ষার জাল সার্টিফিকেট ব্যবহারের চেয়ে ভয়াবহ ও কলঙ্কজনক অপরাধ। কেননা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধারা জাতির গৌরবময় ইতিহাস এবং ইতিহাসের স্রষ্টা। তাঁরা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁদের নাম ব্যবহার করে ফায়দা লোটা, তাও আবার অতি উচ্চশিক্ষিত, রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্ত্রক শক্তির সঙ্গে যুক্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের দ্বারা যখন সংঘটিত, তখন বাঙালীর উগ্র লোভের নানা চরিত্রিক বৈশিষ্ট আমাদের হতবাক তোলে। সবচেয়ে বেশী আশ্চর্য হবার বিষয় হলো এই সকল ব্যক্তিরা তাদের নিজেদের এবং পরিবারের মানসম্মান খোয়ানোর ভয় করে না। পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের এক চরম অবক্ষয়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমরা। আর এ সকল ঘটনা এটাই প্রমান করে সমাজের বা রাষ্ট্রের পচন মাথা থেকেই ধরে। এর শ্রেষ্ঠ উধাহরণ- ১। ক্রেস্ট জালিয়াতি : - মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিদেশী বন্ধুদের দেয়া সম্মাননা ক্রেস্ট জালিয়াতির ঘটনা আমাদেরকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক ও সংগঠনকে সম্মাননা দেয় সরকার। সম্মাননার স্মারক হিসেবে বিশিষ্টজনদের একটি করে ক্রেস্ট দেয়া হয়। প্রতিটি ক্রেস্টে এক ভরি স্বর্ণ ও ৩০ ভরি রুপা থাকার কথা ছিল। কিন্তু সম্মাননা দেয়ার সময় বিএসটিআইয়ে একটি ক্রেস্ট পরীক্ষা করায় মন্ত্রণালয়। তাতে দেখা যায়, ক্রেস্টটিতে এক ভরির জায়গায় সোয়া তিন আনা স্বর্ণ এবং ৩০ ভরি রূপার বদলে ৩০ ভরি পিতল, তামা ও দস্তা দেয়া হয়েছে। পরে প্রকাশিত খবরের সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটি নথিপত্র পর্যালোচনা ও বিভিন্ন পর্যায়ের মতামত নিয়ে এবং একটি ক্রেস্ট সংগ্রহ করে আবার পরীক্ষা করায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ওই ক্রেস্টে স্বর্ণ বা রূপার কোন অস্তিত্বই নেই। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত কমিটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের কাছে ১০৪ পৃষ্ঠার রিপোর্ট জমা দেয়। এতে ক্রেস্টে সোনা জালিয়াতির জন্য যাদের দায়ী করা হয় তারা হলেন- মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক সচিব মিজানুর রহমান, আরেক সচিব কেএইচ মাসুদ সিদ্দিকী, ক্রেস্ট ক্রয়সংক্রান্ত দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব (বর্তমানে ওএসডি) গোলাম মোস্তফা, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (বর্তমানে ওএসডি) আবুল কাসেম তালুকদার, উপ-সচিব এনামুল কাদের খান, সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ বাবুল মিয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের নিরীক্ষক আনিসুর রহমান, সুপারিনটেনডেন্ট আমিনুর রশিদ, নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বেগম জেসমিন আক্তার, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বেগম জাহানারা পারভীন, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান ও সাঁটমুদ্রাক্ষরিক আবুল কাসেম। এছাড়াও তদন্তে ক্রেস্ট সরবরাহকারী দু’টি প্রতিষ্ঠানকেও অভিযুুক্ত করা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান দু’টির মধ্যে একটি এমিকন এবং অপরটির নাম মেসার্স মোহসিনুল হাসান। এমিকন ২৮৫টি এবং অবশিষ্ট ৬০টি ক্রেস্ট সরবরাহ করে মেসার্স মোহসিনুল হাসান। মোহসিনুল হাসান মূলত একজন নির্মাণ ঠিকাদার এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় বলে পরিচিত। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বরেণ্য রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক এবং সংগঠককে ৩৩৮টি ক্রেস্ট দেয়া হয়। এরমধ্যে বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা ১টি, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা ১৫টি এবং মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা ক্রেস্ট দেয়া হয় ৩১২ জন ব্যক্তি ও ১০টি সংগঠনকে। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিসহ ১৫ বিশিষ্ট জনকে দেয়া হয় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা। ইন্দিরা গান্ধীকে দেয়া সম্মাননা ক্রেস্টিতে সোনার পরিমাণ ছিল ২০০ ভরি। ২। সনদ জালিয়াতি : - রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেও সনদ জালিয়াতির বিষয়গুলো উঠে আসে ২০১৪ সালে। একই বছরের মে মাসে প্রায় তিন হাজার ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিলের সিন্ধান্ত নেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সুপারিশ ছাড়া এই ব্যক্তিরা সনদ নিয়েছিলেন, যা বেআইনি৷ তাঁদের মধ্যে সরকারের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারাও ছিলেন। আর গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মোট ১১ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে সচিব থেকে শুরু করে চিকিৎসক, শিক্ষক, প্রকৌশলী, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তারা রয়েছেন।এদের মধ্যে ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজ উদ্দিন মিঞা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম তালুকদার । গত বছরের ১৭ নভেম্বর এই দুই কর্মকর্তার প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল। এই দুই কর্মকর্তা নিজেদের পরিচয় না দিয়ে আবেদন করেছিলেন, যে কারণে তাঁদের গোয়েন্দা প্রতিবেদনও লাগেনি। ঐ সময় আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাকরির বয়সসীমা এক বছর বাড়ায়৷ এ সুযোগ কাজে লাগাতে মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহের হিড়িক পড়েছিল জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে স্পষ্টই বলা হয়েছিল, কেউ মুক্তিযোদ্ধা হলে চাকরিতে যোগদানের সময়ই তাঁকে ঘোষণা দিতে হবে। পরে বললে তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হবে না। কিন্তু বেশ কয়েকজন সচিবের নাম অন্তর্ভুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা গেজেট প্রকাশিত হয় গত ৫ জানুয়ারির আগে৷ এই কর্মকর্তারা হলেন স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজ উদ্দিন মিঞা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসচিব এ কে এম আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব খোন্দকার শওকত হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম তালুকদার। এ সংক্রান্ত খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেলে সরকারের টনক নড়ে। এরপর গত বছরের জুলাই মাসে ভুল ব্যাখ্যা ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে নেওয়ায় একজন উপসচিব, রেলের একজন অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপকসহ ৩৫ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে সরকার। একই সঙ্গে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ঐ সময় পর্যন্ত ১৫১ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সনদ বাতিল করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আরও ৫৬ জনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যয়ন চাওয়া হলেও তা নাকচ করে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মোট ১১ হাজার ১৫০ জন। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর আদেশ জাির করার পর এই সনদ নেওয়ার হিড়িক পড়ে। সনদ বাতিল হওয়া কর্মকর্তারা হলেন- ভারপ্রাপ্ত (ওএসডি) উপসচিব শেখ আলাউদ্দিন, চট্টগ্রাম রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) মো. সোলায়মান চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মো. শফিকুর রহমান ও মো. আবদুল ওয়ারেছ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মো. আবদুল হালিম ও মো. শফিকুল হক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আজহার আলী খান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের আ ন ম বজলুল রশীদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ টি এম শাহজাহান, রনজিৎ কুমার রায়, মো. রওশন আলম, মো. আবু হোসেন মিয়া, মো. মজিবুর রহমান ও এ কে এম হাবিবুল্লাহ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মো. দানেশ মিয়া, কৃষি মন্ত্রণালয়ের মো. আব্বাস আলী খান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এ কে এম জালাল ও হাশেম আলী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মো. জয়নাল আবেদীন, কে এ নিজাহার উদ্দীন, ঢাকা ভ্যাট কমিশনের রাজস্ব কর্মকর্তা (বর্তমানে পিআরএলে) শেখ মাহবুবুল আলম, রাজস্ব বিভাগের কর অঞ্চল-২-এর পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. নুরুন্নবী পাটোয়ারী, যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ম্যানেজার মো. গোলাম রব মোল্লা, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা শিক্ষা অফিসের মো. আবুল হোসেন ও মোহাম্মদ আলী। এ ছাড়া আছেন সোনালী ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম আবদুল হাই, পুলিশ বিভাগের (বেতার) মো. সোলায়মান বিশ্বাস, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মো. হারুন অর রশীদ খান, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মো. শাহযাদ আযীম, এম এ মজিদ, মো. নূর ইসলাম, মো. বেলাল হোসেন ও মো. আবদুল মালেক। এরপরে গত বছরের আগষ্ট মাসে এক যুগ্ম-সচিবসহ ৩১ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে সরকার। এদের মধ্যে ছিলেন-জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এম মাহাবুব উল আলম, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের ইউসিআরআইপি প্রকল্পের পরিচালক এস এম সেলিম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল হামিদের নাম এ ৩১ জনের তালিকায় রয়েছে। এর আগে গত ২২ জুলাই একজন উপসচিবসহ ৩৫ জন সরকারি কর্মকর্তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়। এভাবে তিন দফায় মোট ১৮২ সরকারি কর্মকর্তার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হলো। গত বছরের সেপ্টম্বর মাসে বহুল আলোচিত পাঁচ সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রাজধানীর মগবাজারে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ২৪তম (জামুকা) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে সনদ নেয়ার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সুপারিশের পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সিদ্ধান্ত ছাড়া যারা সনদ নিয়েছেন, তাদের সবার সনদ স্থগিত করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ঐ সভায়। তদন্তে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সপক্ষে প্রমাণ না পাওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আরও ৩০ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ (প্রত্যয়নপত্র) ও গেজেট বাতিল করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন অধিদপ্তর, সংস্থা ও ব্যাংক কর্মকর্তা, অধ্যক্ষ, শিক্ষকও রয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তদন্ত ও জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই ৩০ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ এবং এ-সংক্রান্ত গেজেট বাতিল করা হয়েছে। তদন্তে তাঁদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়ে গ্রহণযোগ্য দালিলিক কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয় এ নিয়ে পাঁচ সচিবসহ ২১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করেছে। যে ৩০ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের নথি অনুমোদন করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইব্রাহীম মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সিডিসি) ফজলুর রহমান, কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুস সামাদ, পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের যুগ্ম প্রধান বেগম শামীমা আখতার, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রহমত আলী বিশ্বাস, শাহবাজপুর গ্যাসফিল্ড রক্ষা প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মতিন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম নুরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন, জালশুলকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. আবদুর বারী খান, নওগাঁর অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা খালেদুর রহমান, দেবহাটা রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজ আলী, মেহেরপুরের গাংনীর সহকারী শিক্ষক ইদ্রিস আলী, আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মচারী মতিউর রহমান শেখ, জনতা ব্যাংকের সাপোর্ট স্টাফ হাসমতুল্যা, নারায়ণগঞ্জের সঢ়ক ও জনপথের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দিলীপ কুমার দাস, ভোলার সাধারণ প্রশাসন শাখা সহকারী এনামুল হক খান, পাউবোর ডিইও এনামুল হক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মাসুদ আহমেদ।যশোরের মাজহারুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কামরুল ইসলাম ও কাফন মিয়া, মানিকগঞ্জের শাহজাহান আলম, রাজশাহীর নুরুল ইসলাম, লালমনিরহাটের সাইফুল ইসলাম ও নরসিংদীর জসিম উদ্দিনের পদবি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আরও ২৬ জনের মুক্তিযোদ্ধা সাময়িক সনদ ও গেজেট বাতিল করেছে সরকার। এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক, ব্যাংক কর্মকর্তা, শিক্ষক, প্রকৌশলী, হিসাবরক্ষণ ও কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকার) সুপারিশে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। এই তালিকায় রয়েছেন ঢাকার কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ আব্দুস সামাদ, পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের যুগ্ম-প্রধান শামীমা আখতার, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিইও মোঃ এনামুল হক। অগ্রণী ব্যাংকের নওগাঁর বোয়ালিয়া শাখার এফএএলডিএ মোঃ খালেদুর রহমান, ভৈরবের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, বান্দরবান জেলা সমাজসেবা অফিসের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ আহমেদ, চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ রহমত আলী বিশ্বাস, জনতা ব্যাংকের সাপোর্ট স্টাফ মোঃ হাসমতুল্যা, নারায়ণগঞ্জ সওজের সড়ক উপ-বিভাগ-১ -এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দিলীপ কুমার দাস, সাধারণ প্রশাসন শাখার সহকারী মোঃ এনামুল হক খান, আবহাওয়া অধিদফতরের এমএলএসএস মোঃ আবদুল হান্নান শেখ, পাউবোর শাহাবাজপুর গ্যাস ফিল্ড রক্ষা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মতিনের সনদ ও গেজেট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও বাপাউবো সার্কেল-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী (নকশা) এ কে এম নুরুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ ইব্রাহীম মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক (সিডিসি) মোঃ ফজলুর রহমান, সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ কামাল উদ্দিন ও সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার ইফতেখার উদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধার সাময়িক সনদ ও গেজেট বাতিল করা হয়েছে। তালিকায় আরও রয়েছেন চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার সহকারী শিক্ষক মোঃ ইদ্রিস আলী, যশোর চৌগাছার ইন্দ্র্রপুরের মোঃ মজহারুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবার সৈয়দাবাদের মোঃ কামরুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর কালঘড়ার মোঃ কাঞ্চন মিয়া, মানিকগঞ্জ সিঙ্গাইর চর আটিপাড়ার মোঃ শাহজাহান আলম আবদুর রহমান। নওগাঁর মোঃ নুরুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম উলিপুরের খামারের মোঃ সাইফুল ইসলাম, ঝিনাইদহের শৈলকুপার জালশুকা রেজিঃ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আঃ বারী খান, নেত্রকোনার পূর্বধলা দেবহাটা রেজিঃ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজ আলীর মুক্তিযোদ্ধার সাময়িক সনদ ও গেজেট বাতিল করা হয়েছে। এর আগেও কয়েক দফা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও গেজেট বাতিল করেছে সরকার। এই সকল তথ্যাদিই কতিপয় রাজনীতিবিদ ও উচ্চ শিক্ষিতদের শঠতা- প্রতারণার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে জাতির সামনে উঠে এসেছে। আলোচিত বিষয় ও ঘটনা থেকে উন্মোচিত হয়েছে যে, ঘটনা সংঘটনকারীরা কোনভাবেই জাতির গৌরবজনক ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। সুতরাং, মুক্তিযুদ্ধের পরিকল্পক, পরিচালক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীনসহ সব নেতা এবং লাখ লাখ শহীদ ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি প্রদ্ধাশীল নয়। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শÑ চার মৌল প্রত্যয়ের প্রতিও তারা বিশ্বাসী নয়। তারা স্বার্থানেষী লোভী এক শ্রেনীর প্রতারক। এ সকল ঘটনায় একটি বিষয় প্রমাণিত হয়েছে যে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না করা হলে দুদকের পক্ষে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব। এটাও প্রশংসনীয় যে, এই অনিয়মের নাটের গুরু বলে যিনি প্রতীয়মান হন, সেই সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর ব্যাপারে দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, আইনকানুন না মেনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী পাঁচ সচিবকে সনদ দিতে সহায়তা করেছিলেন। কিন্তু দুদক পাঁচ সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলেও প্রতিমন্ত্রীর ব্যাপারে নীরব রয়েছে। একাত্তরে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী থাকা এই ব্যক্তিরা যে সবাই ঠান্ডা মাথায় জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর ভাবমূর্তি অপরিচ্ছন্ন। নানা ঘটনায় তাঁর ভূমিকা গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি বন্ধুদের দেওয়া সম্মাননা পদকে স্বর্ণ কেলেঙ্কারি দেশবাসীকে বিক্ষুব্ধ ও স্তম্ভি¢ত করেছে। অন্য ঘটনায় তিনি কোটি টাকার বরাদ্দে যাচ্ছেতাই করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অথচ তাঁর জবাবদিহির প্রশ্ন ক্ষমতাসীনদের কাছে গৌণ রয়েছে। তিনি এতটাই নির্বিকার ও শক্তিধর যে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ অলংকৃত করে চলেছেন। সদ্য বিদায়ী মন্ত্রীদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা সংসদীয় রীতিবিরুদ্ধ। কারণ, এতে স্বার্থের সংঘাত দেখা দেয়। এটা তাই পরিহাসমূলক যে, সনদ জালিয়াতির ঘটনার পরবর্তী কোনো সংসদীয় ব্যবস্থা নিতে স্বয়ং কমিটির সভাপতিই হবেন বড় বাধা। দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের সুস্থ ধারা থাকলে দুদকের ওই প্রতিবেদনের পর অভিযুক্ত মন্ত্রীর সভাপতির পদে বহাল থাকা বা রাখা সম্ভব হতো না। আমরা আশা করব, পাঁচ সচিবসহ সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে। তাঁদের ওএসডি করে মুখরক্ষার পলায়নপর নীতি অনুসরণ করা হবে না। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে- দুর্নীতিবাজদের মুখে ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ শুনতে চায় না জাতি। তাঁরা নীরবে অপরাধ স্বীকার করে সরে যাবেন, অযথা মানসম্মান প্রশ্নে মামলা বা অন্য বিতর্ক না করে নিজেদের, স্বজনদের এবং আমাদের আর অবমাননা করবেন না এটাই কাম্য । লেখক- মুক্তিযোদ্ধা,সাংবাদিক,কলামিষ্ট ও গবেষক প্রধান সম্পাদক

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরের সাবেক এমপি কবিতা ও চয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা

রাজনীতি

শাহজাদপুরের সাবেক এমপি কবিতা ও চয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। ঘটনার দুই বছর পর বৃহস্পতিব...

শাহজাদপুরে ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে প্রাণ গেল শিশু হোসাইনের

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে প্রাণ গেল শিশু হোসাইনের

ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে মহাসড়ক পাড়ি দেয়ার সময় পাবনা থেকে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাস চাপায় হোসাইন সরদার নামের এক ৯ বছরের শ...

নগ্ননৃত্য ও দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত ১১ নারী ও ৫ ব্যবসায়ী গ্রেফতার

অপরাধ

নগ্ননৃত্য ও দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত ১১ নারী ও ৫ ব্যবসায়ী গ্রেফতার

শাহজাদপুরে বিভিন্ন নদী-বিলে নৌকায় পিকনিক ও বিনোদনের...

সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে শাহজাদপুরে মানববন্ধন

শাহজাদপুর

সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে শাহজাদপুরে মানববন্ধন

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরের পোরজনা ইউনিয়নের হরিনাথপুর(পাঠার মোর) গ্রামে সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে এলাকাবাসী ও পোরজনা উচ্চ...

শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ‘মামলা না হওয়ার কারণ’ খুঁজছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি

শাহজাদপুর

শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ‘মামলা না হওয়ার কারণ’ খুঁজছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি

আওয়ামী লীগ–সমর্থিত সাবেক সংসদ সদস্য, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কি না, না হ...

শাহজাদপুরে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে মতবিনিময় করলেন চয়ন ইসলাম

রাজনীতি

শাহজাদপুরে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে মতবিনিময় করলেন চয়ন ইসলাম

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ডায়া ও বেড়াকুচাটিয়া গ্রামবাসীর উদ্যেগে ডায়া বাজারে আওয়ামী...