শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
ঢাকা: দেশে প্রতিবছরই ঈদের দিন পানির দরে কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়। বিগত বছরগুলোতে দাম না পেয়ে চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। পচা চামড়া সিটি করপোরেশনকে অপসারণ করতে হয়েছে। কিন্তু এমন ঘটনা প্রতিবছর কেন ঘটছে? চামড়ার দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে না কেন? কারণ খুঁজতে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, তারা ঠিকমতো ঋণ পান না বলেই চামড়ার দামের এই অবস্থা। আবার চামড়ার আড়তদাররা বলছেন, সব ঋণ ট্যানারি মালিকরাই পান। চামড়া নিয়ে সময়মতো দামও পরিশোধ করে না। কেউ বলছেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা না বুঝেই বেশি দামে চামড়া কেনেন বলেই দাম পড়ে যায়। আবার কেউ কেউ বলছেন, ট্যানারি স্থানান্তরের কারণে দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক বাজারেও দাম পড়ে গেছে। সে কারণে দেশের চামড়ার বাজারে এত অস্থিরতা। চামড়ার বাজারের এই অস্থিরতা কাটাতে সরকার এবারও ঋণ সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ঋণ সুবিধা দেওয়া হলেও কি চামড়ার বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে? ব্যাংকগুলো ঠিকমতো ঋণ দেয় না- ট্যানারি মালিকদের এমন অভিযোগ থাকলেও জানা গেছে, চামড়া খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ কোটি ৬৫ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ছাগলের চামড়া ১ কোটি, গরু ৫০ লাখ এবং ভেড়া ও মহিষ মিলে ১৫ লাখ। সব মিলিয়ে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। আর এই চামড়ার প্রায় অর্ধেকই পাওয়া যায় কোরবানি ঈদের সময়। এসব কথা মাথা রেখে চামড়া সংগ্রহের জন্য প্রতিবছর ট্যানারি মালিকদের ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে সরকার। কিন্তু প্রতি কোরবানির ঈদের বিকেলে পানির দরে বিক্রি হয়ে থাকে কাঁচা চামড়া। বিগত কয়েক বছর ধরেই দেখা যায়, মৌসুমী চামড়া বিক্রেতারা চামড়া নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ করে থাকেন। মিরপুর ৬০ ফিটের বারেক মোল্লা মোড়ে বাস করেন আরিফুল ইসলাম। তিনি ঢাকা কলেজে বাংলায় অনার্স পড়ছেন। সামান্য কিছু আয়ের আশায় প্রতি কোরবানির ঈদে এই মহল্লায় থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেন। স্থানীয় ছেলে হওয়ায় অনেকের কাছ থেকে সহজেই কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করতে পারেন তিনি। কিন্তু গত দুই কোরবানির ঈদে তিনি লোকসান গুণেছেন প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবার আর কাঁচা চামড়ার ব্যবসা করবেন না। আরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দুই কোরবানির ঈদে চামড়ায় লোকসান হয়েছে। বিক্রি করতে গেলে লালাবাগ পোস্তার আড়তদারেরা নানা রকমের বাহানা করে। ট্যানারি মালিকেরাও চামড়ার সঠিক মূল্য দেয় না। তাহলে প্রতি বছর সরকার এদের কেন চামড়া কিনতে ঋণ দেয়? গতবছর ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়াও ৫শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সাধারণ মাপের গরুর চামড়ার দাম ছিল না বললেই হয়। এচাড়া খাসি-ছাগল-ভেড়ার চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০-১২টাকায়। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) দাবি, ২০১৫ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দরপতন শুরু হয়। ফলে দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৫ সাল থেকে ঈদের দিন চামড়ার দাম পড়ে যাচ্ছে। এর আগে এমনটা ঘটেনি। এর প্রধান কারণ ব্যাংক ঋণ আড়তদাররা পান না। ঋণ সব সময় ট্যানারি মালিকেরা পেয়ে থাকেন। এছাড়া ঈদের দিন চামড়া নিয়ে যে ঝামেলা তৈরি এর জন্য দায়ী মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা না বুঝেই বেশি দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েন। জানা গেছে, এবারও (২০২০) চামড়া খাতের ঋণের প্রায় ৭০ শতাংশই খেলাপি হয়ে আছে। এ খাতের উদ্যোক্তারা নতুন করে ঋণ নিতে পারছেন না। এজন্য কোরবানি উপলক্ষে সহজ শর্তে ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মাত্র ২ শতাংশ এককালীন জমা দিয়ে চামড়ার ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চামড়া খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। ঋণের বড় অংশই সরকারি ব্যাংকের। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৭ সাল থেটে ট্যানারি স্থানান্তর করতে হচ্ছে। ফলে আমরা সঠিকভাবে উৎপাদনে যেতে পারিনি। আন্তর্জাতিক অনেক মার্কেট আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এছাড়া ব্যাংক থেকে আমাদের সঠিকভাবে ঋণও দিচ্ছে না। এ কারণে ঈদের দিন চামড়া বেচাকেনায় সমস্যাগুলো হচ্ছে। তথ্য সুত্রঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরে আবাসিক হোটেল ব্যবসার করুন অবস্থা, প্রনোদনা চায় ব্যবসায়ীরা

অর্থ-বাণিজ্য

শাহজাদপুরে আবাসিক হোটেল ব্যবসার করুন অবস্থা, প্রনোদনা চায় ব্যবসায়ীরা

এ বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া টানা একমাসের লকডাউনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের আবাসিক হোটেলগুলো ফাকা পড়ে আছে। স্টাফ বেতন,...

শাহজাদপুরে দুই মেয়েকে বিষ পান করিয়ে মায়ের আত্মহত্যা

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে দুই মেয়েকে বিষ পান করিয়ে মায়ের আত্মহত্যা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ইসলামপুর ডায়া নতুনপাড়া গ্রামে স্বামীর সাথে ঝগড়া করে বিষপান করে ম...

শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ!

অর্থ-বাণিজ্য

শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ!

এম এ হান্নান শেখঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের পূর্ব পাশে অবস্থিত পিডিবির ৩টি ও বেসরকারি ১টি মিলে মো...