বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মো: জহুরুল ইসলাম, কাজীপুর: সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় এ বছর ভুট্টা চাষে বিপ্লব ঘটেছে। চাষীরা ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। যমুনা নদী বিধৌত সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে কাজিপুর একটি নদী ভাঙ্গন উপজেলা। প্রতি বছর বন্যায় হাজার হাজার আবাদী জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। অত্র এলাকার কৃষক ও কৃষিক্ষাতের উন্নয়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ভুট্টাচাষের পাশাপাশি খাদ্য শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে ডাল, তৈল, কন্দাল ও মসলাসহ বিভিন্ন অর্থকারী ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির উপর জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ।

উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ কল্যাণ প্রসাদ পাল এর সঠিক দিক নিদের্শনার কারনে ভূট্টা ফসলকে টার্গেট করে লক্ষ মাত্রার দোড় গোড়ায় পৌছিয়ে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি কৃষকদের ভূট্টা চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং ২০১৫ সাল নাগাদ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ভূট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে কাজ শুরু করেন।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কল্যাণ প্রসাদ পাল বলেন ২০১১-১২ সালের রবি মৌসুমে ভূট্টা চাষের আওতায় জমির পরিমান ছিল মাত্র ২৫৫০ হেক্টর এবং ফলন উৎপাদন ছিল প্রতি হেক্টরে ৭.৩৫ টন। তিনি আরো বলেন সম্ভবনাময় ভূট্টার আবাদ বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করেছি। উল্লেখযোগ্য সমস্যা সমূহঃ আধুনিক/হাইব্রিড/উফশী জাতের ভূট্টা বীজের অভাব, আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার না করা, সুষম সার ব্যবহারে চাষীদের জ্ঞানের অভাব এবং সুষম সার ব্যবহার না করা, শ্রমিক সংকট, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে বাজার জাতকরন সমস্যা সর্বপরি কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতেন। তিনি কৌশলগত ভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় বিভিন্ন প্রকল্প, গ৪ঈ প্রকল্প, বীজ ও বালাইনাশক সরবরাহকারী বিভিন্ন কোম্পানীর সাথে যৌথভাবে সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে উদ্যোগ গ্রহন করেন। এ সম্পর্কে পদক্ষেপ নেওয়াও বাস্তবায়ন করার ফলে দেখা যায় ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের মৌসুমে ভূট্টা চাষের আওতায় জমির পরিমান বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮৯০ হেক্টর এবং ফলন বাড়িয়ে প্রতি হেক্টরে ৭.৮ টন।

পদক্ষেপ গুলোর মধ্যে ছিল প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে ভূট্টা চাষী কৃষক গ্রুপ গঠন ও উৎপাদিত ভূট্টা সঠিক মূল্যে বিক্রয়ের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কৃষক কন্ট্রাক্টর তৈরী যিনি অন্যদের ভূট্টা ক্রয় করে কোন কোম্পানী বা বড় ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রয় করা। নতুন জাতের ভূট্টার প্রদর্শণী প্লট স্থাপন করা, গ্রুপভূক্ত কৃষক ও কন্ট্রাক্টর দের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও সুষম সারের ব্যবহার সর্ম্পকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা, বালাই দমনে কোয়ালিটি সমৃদ্ধ বালাইনাশক এবং হাইব্রিড জাতের বীজের সরবরাহ নিশ্চিতকরা। উক্ত মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় বিভিন্ন প্রকল্প, গ৪ঈ প্রকল্প, বীজ ও বালাইনাশক সরবরাহকারী বিভিন্ন কোম্পানীর সাথে যৌথভাবে প্রায় ৪৫০০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান, ৪২টি হাইব্রিড জাতের ভূট্টার মাঠ প্রদশনী করা হয়।

ভূট্টা চাষের সফলতা ও আগ্রহ নতুন মাত্রায় কৃষকদের আশার সৃষ্টি করে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ নিয়মিত ও নিয়মকরে মাঠ পরিদর্শন এবং কৃষকের সমস্যার তাৎক্ষনিক সমাধানে করনীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান। মান সম্মত বীজ সরবরাহ করতে বিভিন্ন হাইব্রিড বীজ আমদানীকারক কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করা। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা। গবেষনাগারে ব্যবহারিক লব্ধজ্ঞান কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা। উঠান বৈঠক/কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করা। আইসিএম/আইপিএম/আইএফএম কৃষক মাঠ স্কুল এর মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে গণসচেতনতা গড়ে তোলা। নতুন ও হাইব্রিড জাতের ভূট্টার মাঠ প্রদর্শণী স্থাপন ও কৃষক মাঠ দিবসের আয়োজন করা ছিল উল্লেখ্য। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আবার যৌথভাবে প্রায় ৫৫০০ কৃষক ও কন্ট্রাক্টর কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ৪৫টি প্রদর্শণী প্লট স্থাপন করা হয়। যার কারনে চলতি অর্থবছরের রবি মৌসুমে ৫৪৮৫ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আসে এবং গড় ফলন হয় প্রতি হেক্টরে ৮.৮৫ টন।

কাজিপুর উপজেলায় ভূট্টার মোট ফলন হয় ৪৮৪৮৭ মেঃটন। কৃষক ন্যায্য মূল্য পাওয়ার ফলে অন্যান্য ফসলের চেয়ে এ ফসলে লাভের পরিমান বেশী দেখছেন চাষিরা। এ ব্যাপারে ভুট্টাচাষি উপজেলার বিল সুন্দর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, সুতানারা গ্রামের রুবেল মিয়া, সোনামুখী গ্রামের আব্দুল মালেক ভুইয়া, উজান মেওয়া খোলা গ্রামের রফিকুল ইসলাম, ভেটুয়া জগন্নাথপুর গ্রামের আজিজুর রহমান ও রেহাইশুড়িবেড় গ্রামের শহিদুল ইসলামসহ অনেক ভুট্টাচাষি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সরকার থেকে যেটুকু সহযোগীতা করেছেন তাতে আমরাসহ অনেক চাষি ভুট্টাচাষে আগ্রহ বাড়াছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মাহবুবুর রহমান এ প্রতিবেদক কে বলেন চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মৌসুমে ৬৫০০ হেক্টর জমিতে ভূট্টা চাষ করা হয়েছে এবং আশা করা যাচ্ছে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৮০০০ হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে মিরাকেল, সানসাইন,পইওনিয়ার, ডেনালী, টাইটান, প্রফিট, এনকে ৪০, ডন ১১১ সহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের ভূট্টা বীজ কৃষক ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছে। এ ধারা অব্যহত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট অফিস সুত্রে জানাযায়। কাজিপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ এ উপজেলায় ভুট্টাচাষের ব্যাপক সম্ভবনা দেখছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

করোনায় আক্রান্ত নায়িকা পূর্ণিমা

বিনোদন

করোনায় আক্রান্ত নায়িকা পূর্ণিমা

এ নায়িকা জানান, গত সপ্তাহে কিছুটা উপসর্গ পেয়েছিলেন তিনি। সে কারণে করোনা টেস্ট করান। তার ফল পেয়েছেন পজিটিভ। আপাতত তিনি বা...

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

আন্তর্জাতিক

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান সেখানে থাকা সবাই। সরকারি কর্মকর্তা ওই নারী পাশে থাকা একজনকে আঁকড়ে ধরে ভারসাম্য রক্ষার চে...

কাল থেকে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

জাতীয়

কাল থেকে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

আগামীকাল রোববার (৬ নভেম্বর) থেকে সারা দেশে একযোগে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।

শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব থেকে রাজীব রাসেলকে সাময়িক বহিষ্কার

অপরাধ

শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব থেকে রাজীব রাসেলকে সাময়িক বহিষ্কার

মাদক ব্যবসা, অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণের ভ...

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

কৃষি

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

ধান থেকে উৎপাদিত চালের মতো হুবহু এই বাঁশ ফুলের চাল। ভাত, পোলাও, আটা কিংবা পায়েস সব কিছু তৈরি হচ্ছে বাঁশ ফুলের চাল থেকে।...

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

খেলাধুলা

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

তাই তাঁর পারফরম্যান্সে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে চেন্নাইয়ের ব্যাটিং কোচ মাইক হাসি। আজ আবার মাঠে নামছে চেন্নাই। আজ...