শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

নিয়মিত তদারকীর অভাবে দেশের দুগ্ধশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু ও নিউজিল্যান্ড খ্যাত জনপদ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অনুমোদনবিহীন নিম্মামানের ভেজাল গো-খাদ্যে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। শাহজাদপুর পৌর এলাকাসহ ১৩টি ইউনিয়নের হাটবাজারে অবাধে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে এসব ভেজাল গো-খাদ্য। সব ধরনের গো-খাদ্যের বস্তায় উৎপাদন তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখসহ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য থাকার নিয়ম থাকলেও তা না মেনে অনেক গো-খাদ্য বিক্রেতা নিজের ইচ্ছেমতো বস্তায় নিম্মামানের  নানা ভেজাল গো-খাদ্য ভরে তা বাজারে বিক্রি করছে। দীর্ঘদিন ধরে খামারিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে এ রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি অসাধু সিন্ডিকেট। শাহজাদপুরসহ বাঘাবাড়ী মিল্কশেড এরিয়ায় লাখ লাখ গবাদীপশু থেকে দৈনিক প্রায় সাড়ে তিন লাখ লিটার দুধ উৎপন্ন হয় যা মিল্কভিটাসহ বেসরকারি বিভিন্ন ডেইরি প্রজেক্টের কুলিং সেন্টারের মাধ্যমে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। দুগ্ধশিল্পের রাজধানীখ্যাত শাহজাদপুরের হাজার হাজার গো-খামারিরা নিরূপায় হয়ে অধিক মূল্যে এসব অনুমোদনবিহীন নিম্মামানের ভেজাল গো-খাদ্য কিনে গরুকে খাওয়ানোও গরুর দুধ উৎপন্নের হার কমে যাচ্ছে। সেইসাথে গবাদীপশু অপুষ্টিতে ভোগাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে । দেখার কেউ নেই!তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে গড়ে ওঠা ধান ভাঙ্গানো মিল ও রাইস মিল থেকে খুদ, ভূসি, কুঁড়া ও চালের পঁচা ব্রাণ, মেয়াদোত্তীর্ণ ময়দা সংগ্রহ করে তা নামী দামী নানা কোম্পানীর বস্তায় ভরে ভেজাল গো-খাদ্য তৈরি করে অবাধে শাহজাদপুরে বিক্রি করে আসছে একটি অসাধু চক্র। আবার অনেক ধান ভাঙ্গানো মিলে ভূট্টা ভাঙ্গিয়ে ভ্ট্টুার গুঁড়ার সাথে গবাীপশূর জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর মাছের খাবার ডলোমিট ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে গো-খাদ্য তৈরি করে তা বস্তায় ভরে বাজারজাত করছে। অনেকে আবার নিম্মামানের  ভারতীয় গো-খাদ্য নতুন নতুন বস্তায় ভরে উৎকৃষ্টমানের গো-খাদ্য হিসেবে তা বেশি দামে বিক্রি করছে। এছাড়া ডিএলএস লাইসেন্সবিহীন অসংখ্য বেনামী কোম্পানীর ক্যাটল ফিডেও বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। মানহীন এসব গো-খাদ্য ও দানাদার গো-খাদ্য গবাদীপশুকে খাওয়ানোয় শাহজাদপুরের হাজার হাজার গো-খামারিদের আর্থিক ক্ষতির হার দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।

শাহজাদপুর উপজেলার করতোয়া কলেজ সংলগ্ন তালগাছী বাসষ্ট্যান্ডের পাইকারী ও খুচরা গো-খাদ্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাসুদ ট্রেডার্স’র দোকান ও ২টি গোডাউন ঘুরে দেখা যায়, সেখানে শত শত বস্তা গমের ভূষি, খেসারী ভূষি, মশুরের ভূষি, সয়াবিন ভূষি, লাল ও সাদা এংকার, ডিএলএস লাইসেন্সবিহীন নানা বেনামী কোম্পানীর ক্যাটল ফিড, তিলের খৈল, বাদামের খৈল, মাশকালাই ও ছোলার ভূষি, ধানের গুুঁড়া, ভূট্টার গুঁড়া, মটরের ভূষিসহ ভারতীয় আমদানীকৃত নি¤œনামের আকাশ ছোকার নামের গো-খাদ্য মজুদ রয়েছে যার সিংহভাগ বস্তায়ই নেই উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ। আবার অসংখ্য গো-খাদ্যের বস্তায় নেই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম। কিছু কিছু বস্তায় আবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নামের পাশে উৎপাদন তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঘর থাকলেও তা কবে উৎপাদন করা হয়েছে বা কবে এর মেয়াদ শেষ হবে তা উল্লেখ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স মাসুদ ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী খোদা বক্স প্রামাণিক ও তার ছেলে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা বাইরে থেকে যেসব কোম্পানীর কাছ থেকে এসব গো-খাদ্য কিনে এনেছি তাদের সাথে কথা বলেন।’ তবে শত শত বস্তায় উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ নেই কেনো? ক্যাটল ফিডের বস্তায় ডিএলএস লাইসেন্স নাম্বার নেই কেনো? এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর তারা দিতে পারেন নি।

বিষয়টি মুঠোফোনে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মিজানুর রহমানকে অবহিত করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘পরে গোপনে খোঁজ খবর নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

অপরদিকে, শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোঃ শামসুজ্জোহা’কে মুঠোফোনে বিষয়টি জানানো হলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের আশ্বাস দেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরে গরু লালন পালন করে স্বাবলম্বী জোবেদা খাতুন

অর্থ-বাণিজ্য

শাহজাদপুরে গরু লালন পালন করে স্বাবলম্বী জোবেদা খাতুন

শাহজাদপুরে পোতাজিয়া গ্রামে ব্যবসায়ী আব্দুস সালামের শতাধিক গরু দেখাশোনা করেন তারই সহধর্মিণী জোবেদা খাতুন। মৌসুমী, বৃষ্টি,...

শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্য আটক

অপরাধ

শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্য আটক

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে ছিনতাই হয়ে যাওয়া দুটি অটোবাইক উদ্ধারসহ অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করেছে থানা পুলিশ। সোমবার...

কবিগুরুর ভাষ্কর্য ভালে পাকুড় বৃক্ষ জন্মেছে!

জানা-অজানা

কবিগুরুর ভাষ্কর্য ভালে পাকুড় বৃক্ষ জন্মেছে!

শামছুর রহমান শিশির: ঊনবিংশ শতাব্দিতে বাংলার সাহিত্য গগণে ও বিশ্ব জ্ঞান পরিমন্ডলে 'ভারস্যাটাইল জিনিয়াস' খ্যাত কবিগুরু রবী...