ছবি : হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্ক
শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম ; আজ ঐতিহাসিক হিরোশিমা দিবস। প্রতি বছর ৬ আগস্ট পৃথিবীর সভ্য মানুষ এ দিনটিকে হিরোশিমা দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে। ১৯৪৫ সালের এ দিনে মানব সভ্যতার ইতিহাসে ভয়াবহতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল জাপানের হিরোশিমা শহরে। গণহত্যার নায়ক আজকের কথিত মানবতার প্রতিভূ আমেরিকা। একটি যুদ্ধ জয়ের নেশা কথিত মানবতাবাদী আমেরিকাকে এতটা অন্ধ করে দিয়েছিল যে,তারা মানবতার কথা ভুলে গিয়ে ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছিল জাপানের হিরোশিমা শহরে।হিরোশিমার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা। আকাশে শত্রু রাষ্ট্র আমেরিকার তিনটি যুদ্ধ বিমান। মুহূর্তে সতর্ক সাইরেনের শব্দে কেঁপে উঠেছে পুরো শহর। শহরবাসীর চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ। ওই তিনটি বিমানের সঙ্গে আর একটি শত্রু বিমান এসে যোগ দেয়াতে শহরবাসী আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তবে ওই আতঙ্ক বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। আধ ঘণ্টা ধরে (৭.৩০ মিনিটে) বিমানগুলো হিরোশিমার আকাশে ওড়াউড়ি করলেও কোনো বোমা ফেলেনি শহরে। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমানগুলো হিরোশিমার আকাশ ছেড়ে চলে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে পুরো শহরজুড়ে স্বস্তির সুবাতাস বয়ে যায়। বিমানগুলো ফেরত গেলেও ৮টার সময় আবারও তিনটি বিমান হিরোশিমার আকাশ সীমায় প্রবেশ করে। কিন্তু সাইরেন বাজানোর দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি আগের ঘটনাকে মনে করে মনে মনে হয়তো হেসেছিলেন। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন খামাখাই ঘণ্টা খানেক আগে সাইরেন বাজিয়ে শহরবাসীকে ভয় পাইয়ে দিলাম। মনে মনে হয়তো লজ্জাও পেয়েছিলেন। তাই তিনি এবার এ বিমানের ওড়াউড়িকে কোনো পাত্তাই দিলেন না। বাজালেন না কোনো সতর্ক সাইরেন। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই শহরবাসী কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটে গেল পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়াবহতম গণহত্যা। একটি পারমাণবিক বোমা পুরো হিরোশিমাকে পরিণত করল মৃত্যুপুরীতে। কথিত মানবতাবাদী আমেরিকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রণকৌশলী সেনানায়ক মেজর জেমস আবি হপকিং ৫ আগস্ট ১৯৪৫ সালে একটি নির্দেশনামায় স্বাক্ষর করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড়কে ঘুরিয়ে দিতে চাইলেন। তিনি জাপানের ওপর পারমাণবিক বোমা ফেলার মিশনে অংশ নিতে সাতটি বিমান পাঠানোর অনুমতি দিলেন। ওই সাতটি বিমানের একটির পাইলট হলেন কর্নেল পল ওয়ার ফিল্ড টিবেটিস; নিখুঁত বিমান চালানোর জন্য যার সুখ্যাতি ছিল পুরো আমেরিকাজুড়ে। তিনি ৬ আগস্ট স্থানীয় সময় রাত ২.৩০ মিনিটে তিনিয়ানর দ্বীপের আকাশে পারমাণবিক বোমা 'লিটল বয়' বহনকারী অ্যানোলা গে নামক বিমান আকাশে উড়ালেন। লক্ষ্য ১ হাজার ৭০০ মাইল দূরের জাপানের হিরোশিমা শহর।শহরবাসী কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটে গেল মানব সভ্যতার ইতিহাসে ভয়বহতম গণহত্যা। ১০ ফুট ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, ২৯ ইঞ্চি ব্যাস আর ৯ হাজার ৭০০ পাউন্ড ওজনের একটি পারমাণবিক বোমা একটি সুন্দর শহরকে মুহূর্তে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করল। তাৎক্ষণিক তেজস্ক্রিয়তায় মারা গেল প্রায় ৮০ হাজার শহরবাসী। আহত হয়েছিল সেদিন ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। হিরোশিমার আকাশ থেকে ৬ মাইল তথা ৩১ হাজার ৬০০ ফুট উপর থেকে ২৬ বছর বয়সী মেজর ফেরেবির ছোড়া পারমাণবিক বোমাটি মাত্র ৪৩ সেকেন্ড পর ভূপৃষ্ঠের হাজার ৮৯০ ফুট উপরে বিস্ফোরিত হলে হিরোশিমা শহর এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল সেদিন। শহরের দালান-কোঠার ৬৯ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেল। আরও ৭ ভাগ এমনভাবে আক্রান্ত হলো যে, তা আর বসবাসের উপযুক্ত রইল না। হিরোশিমা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত নিয়ে কালের সাক্ষী হয়েও ফের ঘুরে দাঁড়ালেও এ শহরবাসীর মনে আজও সেই ভয়াল দিনের স্মৃতি সবকিছুকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করে। সেই ভয়াবহতা কাটিয়ে না উঠতেই যুদ্ধ জয়ে অন্ধ আমেরিকা ওই ঘটনার তিন দিন পর ৯ আগস্ট আবারও পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল পশ্চিম জাপানের অন্য শহর নাগাসাকিতে। ফ্যাট ম্যান নামক ওই বোমার তেজস্ক্রিয়তায় তাৎক্ষণিক ৭৩ হাজার ৮৮৪ জন মারা গিয়েছিল। আর আহত হয়েছিল প্রায় সমসংখ্যক (৭৪ হাজার ৯০৯ জন)। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যারা পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তায় তাৎক্ষণিক মারা গিয়েছিল; তারা সেদিন চিরদিনের মতো বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু যমদূত ওই দিন যাদের নিয়ে যায়নি তারা অসহ্য যন্ত্রণা আর মানসিক অস্থিরতা নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে দুঃসহ মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করেছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার প্রভাব আজও শেষ হয়ে যায়নি। তাই এ শহরে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের অনেকেই এখনও বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মগ্রহণ করে। আজ মানবতা ও মানবাধিকার রক্ষার নামে আমেরিকা সারা বিশ্বের মানুষকে ছবক দেয় কিন্তু তারাই একদিন জাপানের মানুষকে পারমাণবিক বোমা ফেলে হত্যা করে বিজয় উল্লাস করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে মানবতা রক্ষার নামে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লেবাননসহ প্রভৃতি দেশে সামরিক অভিযান প্রেরণ করে এবং ড্রোন বিমানের মাধ্যমে নিরীহ, নিরপরাধ মানুষকে হত্যার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে তারা হিরোশিমা ও নাগাসাকির গণহত্যার পথই অনুসরণ করছে। আর গাজায় নিরীহ নারী-শিশুদের হত্যাকারী ইসরাইলকে রক্ষার নামে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের মাধ্যমে তারা গাজাকে আরেক হিরোশিমায় পরিণত করতে চাইছে। এভাবে মানবতার মুখোশধারী আমেরিকার মতো মানবতার শত্রুরা যতদিন পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন না হবে; ততদিন হিরোশিমা থেকে গাজা, বাগদাদ থেকে কান্দাহার মানবতা ও মানবাধিকার কখনও রক্ষিত হবে না।
সম্পর্কিত সংবাদ
ফটোগ্যালারী
বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )
শাহজাদপুর
শাহজাদপুরে ১৬ হাজার টাকার জন্য জবাই করে হত্যা! আটক ২
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে পৌর এলাকার নলুয়া বটতলার মুদি দোকানী রইচ উদ্দিনের নিখোঁজের ১৫ দিন পর প্রতিবেশি শফিকুলের বাড়ির পাশের...
জানা-অজানা
কবিগুরুর ভাষ্কর্য ভালে পাকুড় বৃক্ষ জন্মেছে!
শামছুর রহমান শিশির: ঊনবিংশ শতাব্দিতে বাংলার সাহিত্য গগণে ও বিশ্ব জ্ঞান পরিমন্ডলে 'ভারস্যাটাইল জিনিয়াস' খ্যাত কবিগুরু রবী...
অর্থ-বাণিজ্য
শাহজাদপুরে আবাসিক হোটেল ব্যবসার করুন অবস্থা, প্রনোদনা চায় ব্যবসায়ীরা
এ বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া টানা একমাসের লকডাউনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের আবাসিক হোটেলগুলো ফাকা পড়ে আছে। স্টাফ বেতন,...
শাহজাদপুর
শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ‘মামলা না হওয়ার কারণ’ খুঁজছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি
আওয়ামী লীগ–সমর্থিত সাবেক সংসদ সদস্য, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কি না, না হ...
শাহজাদপুর
শাহজাদপুরে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের গ্রাহক সমাবেশ অনুষ্ঠিত
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং এর তথ্য হালনাগাদ ও গ্রাহক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবীন্দ্র-কাছারিব...