মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Abul Basar Pictureরাজনীতিতে উন্নয়ন শব্দটি ব্যাপকার্থে ব্যাবহার হয়ে আসছে। যে সরকার যখনই ক্ষমতায় অধিষ্টিত হচ্ছেন সবাই উন্নয়নের কথা বলছেন। ক্ষমতায় গিয়ে মাঠে ময়দানে জনতার সামনে বক্তব্য রাখতে দিয়ে নেতা নেত্রীরা বক্তব্য রাখছেন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের যদি জোয়ার থাকে তবে এর ভাটাও রয়েছে। ভাটা কখন, কিভাবে হচ্ছে এটা কেউ জানেননা। তবে ক্ষমতাসীনরা যখন নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে হেরে গিয়ে বিরোধী ক্ষমতাসীনদের নানা সমালোচনার সন্মুখীন হন এবং নিজেদের ব্যাক্তিগত উন্নয়নে প্রবিন্ধকতা সৃষ্টি হয়, তখন হয়তো ভাটার অনুভূতিটা তাদের গায়ে আঁচর কাটে। কিন্তু নীতি নৈতিকতা বিহীন রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। ব্যাক্তিস্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলে অবশেষে ডিগবাজী দিয়ে অন্যদলে গিয়ে লেজুরবৃত্তি করে হলেও নিজের অর্থ ও প্রতিপত্তি রক্ষা করা ফরজ হয়ে পরে। তাই এ ফরজ কাজটি করতে নেতারা ভুল করেননা। আবার সরাসরি ডিগবাজী দেওয়টা অনেক সময় লজ্জার কিম্বা অন্যদলে যোগদান করাটা জটিল বিষয় হলে, নিজেদের উত্তরসুরীদের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন হলে জামাত-রাজাকার,দালাল-আলবদর হলেও অসুবিধা নেই। একটু টাকা খরচ করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লেখাতে পারলেতো অতীত ইতিহাসের সকল কলংক থেকে ধুয়ে-মুছে ছাফা হয়ে গেল। যে ভাবেই হোক যোগসূত্র রক্ষা করে নিজেকে রক্ষা করতে অসুবিধা কোথায় ? এবার কবিতায় রাজনীতির কথা বলি-

“সেবার নামে শোষণ বঞ্চনা ও লন্ঠুনবৃত্তির রাজনীতির ঘেড়া টোপে আটকে গেছে দেশ, উন্নয়নের নামে নিজেদের উন্নয়নে আছে তারা বেশ। গণতন্ত্র ও তন্ত্রমন্ত্র চলে ভোটের নামে, দিনরাত পরিশ্রমে দেশে প্রবৃদ্ধি তৈরী করে শ্রমিক-তাদের দেহ খাটানো ঘামে।

সোয়াকোটি বাংলাদেশী ভাইবোন শ্রম বিকোচ্ছে বিদেশের মাটিতে-মা-বাবা-স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ছেড়ে, তাদের আয়ের ডলার দেশে এসে উন্নয়ন- ব্যবসা-বানিজ্যের ধুয়ায়- রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের আলখেল্লা গায়ে চড়িয়ে-বিদেশের ব্যাংকে জমা করে চলেছে ভদ্রবেশী চোরে। এক পক্ষের সাংবিধানিক অপর পক্ষের তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরী দরকার, হরতাল আর অবরোধ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার- ভাংচুর আর আগুনে পুড়ে দেশের মানুষের জানমাল হচ্ছে ছারখার। অবরুদ্ধ মানব সন্তানদের জিম্মি রেখে আগুনে পুড়িয়ে বোমা ফাটিয়ে গুলি করে মেরে আছো তোমরা বেশ, কে বা কাহারা টানিবে রাজনীতি নামক তোমাদের এ লাগামহীন ধ্বংসাত্বক ঘোড়ার রেস। কৃষক ফলাচ্ছে ফসল তাদের ঘড়ে ফিরছেনা আসল,খাদ্যে স্বংসম্পূর্নতা অর্জন ও খাদ্য নিরাপত্তার সনদ সেওতো নকল। আধুনিক শিল্পের আদলে তোমাদের দর্জির মেশিনে শিলাইছে কাপড় দেশের অর্ধকোটি শ্রমজীবি পুরুষ-নারী, তাদের পেটভাতায় রেখে রাজধানী আর বিদেশের শহরে শহরে রাতারাতি বানিয়ে ফেলছো বিলাসবহুল আলীসান বাড়ী। কোটি টাকা মূল্যের গাড়ী হাকিয়ে প্লেনে চড়ে তোমরা ঘুড়ে বেড়াচ্ছ দেশ বিদেশ, তোমাদের ভোগ-বিলাশিতার অর্থ যোগান দিতে তারা কেবলই হচ্ছে নিঃশেষ। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতি, একই সুতায় গেঁথে তোমরা টেনেছো ইতি, কৃষক শ্রমিক জনতার ঐক্য সংগ্রাম ছারা ফিরবেনা তোমাদের সুমতি। আসুন ভাই আমজনতা এবার মোরা ঐক্য গড়ি, ওদের প্রতিরোধ করে সকল শ্রেনীপেশার মানুষ মিলে রাজনীতির ট্রেনে চড়ি।” রাজনীতিতে উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে শুরু করেছিলাম। এবার মূল প্রশ্নে ফিরে আসি। প্রকৃত অর্থে উন্নয়নকি ? এর উত্তর সম্পূর্নটাই নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। অর্থাৎ কোনটাকে উন্নয়ন বলবো কিম্বা কোনটাকে উন্নয়ন বলা যাবে না এ বিষয় নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন রয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বেঁচে থাকার নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার কথা মাথায় না রেখেই অপরিকল্পিত এবং প্রকৃতি পরিবেশ বিরোধী ভারসাম্যহীন কতিপয় মানুষের ব্যাক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা সুউচ্চ দালানকোঠা ও নগরায়ন, শহর-বন্দর,রাস্তাঘাট,নদীতে বাঁধ, খালবিল নদীনালা ভরাট করে এবং কৃষিজমি নষ্ট ঢলাওভাবে রাস্তাঘাট ও বাড়ীঘড় নির্মান প্রকৃত অর্থে উন্নয়ণ কিনা ? এ প্রশ্ন বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত বলেই মনে হয়। খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের নামে ঢালাও ভাবে ভূগভীরস্থ পানি উত্তোলন,মাটিতে সার ও বিষ প্রয়োগ করে একমুখী ফসল উৎপাদন বর্তমানে এবং আগামীদিনে খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পারছে বা পারবে এ বিষয়টিও আমাদের ভাবতে হবে। এ প্রসঙ্গে সরকারের দিন বদলের কর্মসূচী ও ভিশন-২০২১ আলোচনায় আসতে পারে। সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনের প্রত্যাশা নিয়ে দেশের মানুষের সুখী ও সুন্দও জীবন গড়ে তোলার নিমিত্তে ১৩ টি লক্ষ্যমাত্র নির্ধারন করে ভিশন-২০২১ ঘোষনা করেছে। লক্ষ্য মাত্রাগুলো হলো, ২০১৪ সালের মধ্যে নিরক্ষরাতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, ২০১৫ সালের মধ্যে সকল মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা, ২০২১ সালের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, কৃষিখাতে শ্রমশক্তি ৪৮ শতাংশ থেকে কমে ৩০ শতাংশে দাঁড় করানো, বর্তমান দারিদ্রের হার ২৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। তথ্য-প্রযুক্তিতে ‘ডিজিট্যাল বাংলাদেশ’ হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচিত লাভ করানো দেশের ৮৫ শতাংশ নাগরিকের মান সম্পন্ন পুষ্টি চাহিদা পুরুন নিশ্চিত করা,দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য প্রতিদিন নুন্যতম ২১২২ কিলো ক্যালোরির উর্দ্ধে খাদ্য নিশ্চিত করা,সকল প্রকার সংক্রামক ব্যধি সম্পূর্ন নির্মূল করা, গড় আয়ুস্কাল ৭০ এর কোঠায় উন্নীত করা,শিশুমৃত্যুর হার বর্তমান হাজারে ৪৬ থেকে কমিয়ে ১৫ তে নামিয়ে আনা, মৃত্যুহার ১.৫ শতাংশ করা ও প্রজনন নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করা। কিন্তু সরকারের এই ১৩ দফা লক্ষমাত্রা অর্জনের প্রধান অন্তরায় হলো দূর্নীতি,স্বজনপ্রীতি,দলবাজী ও অস্থিতিশীল রাজনীতি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দূর্নীতি রোধ করা ছারা ভিশন-২০২১ এর লক্ষ অর্জণ সম্ভবপর হবে না। এ ছারাও কথিত উন্নয়ই উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা করে চলেছে। যে উন্নয়ন প্রকৃতি পরিবেশ বিধ্বংষী হয় , জীব জীবনের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলে, ভবিষ্যৎকে সংকটাপন্ন করে তোলে, মানুষের বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, দেশের মানুষকে ক্রমাগত দরিদ্র করে, শতশত হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেেেশর কাছে ঋনদায় গ্রস্থ করে, তাকে কি আমরা উন্নয়ন বলবো ? কখনই না। প্রশ্ন ওঠে দেশে আদৌও কোন উন্নয়ন হচ্ছে কি ? যদি উন্নয়নের কিছু কর্মকান্ড হয়ে থাকে তবে সেটি কিসের, কারজন্য, কারা স্বার্থে এ প্রশ্নের অবকাশ থেকে যায়। এবার এক এক করে উন্নয়নের বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেয়া যাক। স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ ৪২ বছরে ঢাকা শহরের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রাজকীয় হাজার, হাজার বাসভবন সহ সুউচ্চ সব টাওয়ার ও সপিংমল নির্মিত হয়েছে । রাস্তাঘাট নির্মিত হয়েছে । ঢাকা রাজধানী এখন চোখ ধাঁধানো তিলত্তমা নগরী। এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে । এ ধরনের উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঢাকা শহরের আশেপাশের নদী নালা খালবিল সব ভরাট হয়ে বহুতল বিশিষ্ট ভবনের পর ভবন নির্মিত হচ্ছে। এ যেন নরম লালমাটির বুকের ওপর দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠির রক্তেঘামে অর্জিত শোষিত ও লন্ঠুনকৃত কালো টাকার কালো পাথরের বোঝা চাপতে শুরু হয়েছে। এর ভার বইবার ক্ষমতা মাটির আছে কিনা সেটাও ভাবা হচ্ছেনা। প্রশ্নজাগে এ সকল বিলাশবহুল ভবনের মালিক কারা ? এসব ভবন নির্মানের অর্থ তারা কোথায় পেলো ? উত্তরে হয়তো জানাযাবে, এসব ভবনের মালিক সরকারী আমলা,রাজনীতিবিদ,ব্যাবসায়ী, বুদ্ধিজীবি, এনজিও প্রতিষ্ঠানের নামে কোন ব্যাক্তি বা পরিবার ,গোষ্টি কিমবা ব্যাক্তিসমষ্টির। এ ধরনের উন্নয়ন দেশের ১৬ কোটি মানুষের কতটুকু উপকারে আসছে বা আসবে এ প্রশ্ন থেকে যায়। এ উন্নয়নের ছোয়া দেশের বিভাগীয় নগর ,জেলা শহর ছারিয়ে উপজেলা পর্যন্ত এর ছোয়া লেগেছে। ঘুরে ফিরে এসকল ভবনের মালিক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী কিছু মানুষ । এর সংখ্যা অত্যান্ত সীমিত। এদের অনেকেই আবার লুণ্ঠিত সম্পদের আরও নিরাপত্বা বিধানের জন্য বিপুল অংকের অর্থকড়ি পাচার করে বিদেশেও বাড়ীঘড় ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছেন। এরা দেশকে ভালো না বেসে, দেশের মানুষের নিরাপত্তা বিধান না করে, দেশ ও দেশের মানুষের সম্পদ লন্ঠুন করে পূর্বকালের রাজা জমিদারদের মত প্রজন্ম পর প্রজন্মের নিরাপত্বা বিধানের জন্য তৎপর রয়েছে। অতীত ইতিহাসের সব শিক্ষাই তারা ভুলতে বসেছে। কিন্তু এ ধরনের উন্নয়ন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কতটুক নিরাপত্তা বিধান করতে পারবে এটি ভাববার সময় হয়ে গেছে। কথিত উন্নয়ন সমস্য ও সংকট, এবং এর ভবিষ্যৎ ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে ? এ নিয়ে পর্যালোচনা করলে বিষয়গুলির ওপর পরিচ্ছন্ন ধারনা পাওয়া যাবে। আমরা জানি প্রকৃতি সর্ব্বংসহা কিন্তু বারং বার প্রকৃতির স্বাভাবিক ধারার ওপর মানুষের নির্লজ্জ আচরণ তাকে প্রতিশোধ প্রবন করে তুলেছে। এবার প্রকৃতির প্রতিশোধ নেবার পালা। বর্তমানে রাজধানীর প্রধান সমস্য হিসেবে বিবেচিত চচ্ছে পানি। এর পর জ্বালানী, বিদ্যুৎ, চলাচলের ক্ষেত্রে যানজট,জলাবদ্ধতা ও দূর্ঘন্ধময় পরিবেশ। এ ছারাও আরও অনেক সমস্য রয়েছে। ভবিষ্যতে প্রধান সমস্যগুলোর সমাধান আদৌও করা সম্ভব কিনা সেটাই ভেবে দেখবার বিষয়। ঢাকা ওয়াশার হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে ওয়াসার পানি ব্যাবহারকরীর সংখ্যা প্রায় দেড়কোটি। এ বৃহত জনগোষ্ঠির দৈনিক পানির চাহিদা প্রায় ২৬০ কোটি লিটার। ওয়াসার উৎপাদন ১৭০ কোটি লিটার। প্রতিদিনের ঘাটতি ৯০ কোটি লিটার। ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে বছরে পানির চাহিদা বাড়ে ১০ কোটি লিটার। কিন্তু সে পরিমানে পানির উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম নয় ওয়াসা। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষনা প্রতিদেনে বলা হয়েছে, ঢাকায় পানির ঘাটতিতো রয়েছেই এবং তা ক্রমাগত বাড়ছে ,কিন্তু এ ঘাটতি পুরণে দীর্ঘ মেয়াদী কোন পরিকল্পনা নেই। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ সালে ঢাকায় পানির চাহিদা হবে ২৭০ কোটি লিটার, ২০১৫ সালে এই চাহিদা ৩৪০ কোটি লিটার এবং ২০২০ সালে ৪১০ কোটি লিটারে গিয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু উৎপাদন কত হবে তার কোন পরিকল্পনা নেই। পানির অপর নাম জীবন। সেই পানি সরবরাহের কোন নিশ্চয়তা নেই। ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে তাও নিরাপদ পানি নয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে ওয়াসার পানিতে নানারকম রোজীবাণু ও ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে । বিষেষজ্ঞদের মতে, ওয়াসার পানিতে এমন ক্ষতিকর উপাদান লক্ষ্য করা গেছে যা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ফুটালেও ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস হয় না। এ ছারাও ওয়াসা এ পানির চাহিদার শতকরা ৯৫ ভাগেরও বেশী ভূগর্ভস্থ থেকে সরবরাহ করে থাকে। নদীমাতৃক এ বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল দেশের তালিকায় বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। ওয়াসা ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল হওয়ার কারনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ইতিমধ্যে ৪০ থেকে ৬০ মিটার নীচে নেমে গেছে। প্রতিবছরই এ স্তর ৩/৪ মিটার করে নেমে যাচ্ছে। এতে রাজধানী ঢাকা প্রতিবছর অল্প অল্প করে দেবে যাচ্ছে। আগামি ২০ বছরে ঢাকা শহরের উচ্চতা অনেক কমে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন। ভূগর্ভস্থ পানির নিচে নামা সম্পর্কে এক গবেষণা সূত্র থেকে জানাযায়, রাজধানীর সবুজবাগে ১৯৭৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ পানির স্থর ৬০ মিটার নেমে গেছে। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মোহাম্মদপুরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩৩ মিটার নেমেছে। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ধানমন্ডিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৬১ মিটার নেমেছে। মিরপুরে ১৯৮৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৬১ মিটার নিচে। ক্যান্টমেন্টে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৪০ মিটার নেমেছে। রাজধানীর বাইরে পানির স্থর অনেকটা ভালো। ধামরাই ও কেরানীগঞ্জে ভূর্গস্থ পানির স্তর ৭ মিটার নেমেছে। সূত্রাপুরে পানির স্তর নেমেছে ২০ মিটার নিচে। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভূতত্ব বিভাগের শিক্ষকরা পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারন হিসেবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ঢাকার আশে পাশের খাল ও জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। ঢাকার শীতলক্ষা ও বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হয়ে গেছে। উন্মক্ত নিরাপদ পানির জলাধার কোথাও নেই। এ ছারাও ঢাকার আশে পাশের ৪৪টি খালের অধিকাংশই দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। খালে মধ্যে বর্জ্য ফেলে ভরাট করে বাড়ীঘড় নির্মানের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ কারনে সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকা এখন জলাদ্ধতার শহর। এর পরেও সরকার বড়ীঘড় নির্মানকরীদের কালো টাকার আওতার বাইরে রাখা হবে বলে ঘোষনা দেয়ায় যত্রতত্র হাউজিংষ্টেট ও বাড়ীঘড় নির্মানের হিড়িক পরে গেছে । খালবিল,জলাধার এমন কি কৃষি জমিও রক্ষা পাচ্ছেনা। আর এই দালানকোঠা নির্মান কাজের জন্য কৃষিমাঠে গড়ে উঠছে একের পর এক ইটভাটা। কালো টাকার বৈধতা দেয়া আর অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া একই কথা। অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে চোরকে কখনই সাধু বানানো যায়না। রাজধানীতে জ্বালানী হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে গ্যাস । সে গ্যাসও পর্যাপ্ত নয়। বর্তমানে যেটুকু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ভবিষ্যতে সেটুকও পাওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত। নগরীতে এবং এর আশেপাশে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় বিদ্যুতের চাহিদা কোন সরকারই পুরণ করতে পারছেনা। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের সম্ভাবনার বিষয়টি ক্ষীণ। বর্তমানে রাজধানীতে চলার পথে যানজট মহা সংকট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর পরেও নব্য কোটিপতি ও নগরবাসীকে পরিবহনের জন্য প্রতিমাসে রাস্তায় নামছে সহচ্রাধিক গাড়ী ও প্রাইভেট কার। যে হারে গাড়ী বাড়ছে সে হারে সড়ক বাড়ছেনা। এতো গাড়ী চলবে কোন রাস্তায়। ভবিষ্যতে যানজট বাড়বে বই কমবেনা। যানজট মোকাবেলায় সরকার মেট্র রেললাইন ও ওপর দিয়ে সড়ক পথ নির্মানের মহা পরিকল্পনা করছেন। এ উন্নয়ন পরিকল্পনার সম্পূর্নটাই নির্ভর করছে দাতাদের ঋন বরাদ্দের অর্থের ওপর। এ উন্নয়নও সুদুর প্রসারী। দেশের রাজনীতিতে এ যাবৎকাল ধরে উন্নয়নের নামে যে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হয়েছে তা প্রকৃতি ও পরিবেশ বান্ধব নয়। এর পরেও রাজধানী উন্নয়নের নামে যে অর্থব্যায় করা হোকনা কেন সবই হবে পরিবেশ বিধ্বংসী। এর অর্থই গুটিকয়েক স্বার্থানেষী মানূষ তাদের নিজেদের ভোগ বিলাসিতার জন্য দেশ ও দেশের মানূষকে ঋনদায়গ্রস্থ করে রাজধানী উন্নয়নের নামে যে মহাসংকট সৃষ্টি করেছে ভবিষ্যতে সে সংকটের মোকাবেলা তাদেরকেই করতে হবে। পরিবশবাদী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামি দুই দশকের মধ্যে নানা সংকটের কারনে ঢাকা নগরবাসীকে হয় ঢাকা ছারতে হবে অথবা ঢাকা নগর বাসীকে নিয়েই হারিয়ে যাবে। তবে ভূতাতিœক গবেষকদের ধারনা, পরিবেশ বিপর্যয়তো রয়েছেই। রাজধানীর ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তলনের কারনে পানির স্তর অ-স্বাভাবিক হারে নীচে নেমে যাওয়ায় ভূ-অভ্যন্তরে কোথাও কোথাও ২’শ থেকে ৫’শ ফুট ভ্যাকুয়াম বা ফাঁকা স্থানের সৃষ্টি হয়েছে। মাঝারী ধরনের ভূমিকম্প হলে যে কোন সময় ঢাকা শহরের কোন কোন স্থান মাটির নীচে হারিয়ে যেতে পারে। কেউ কেউ মনে করছেন অর্ধ শতাব্দির মধ্যে ঢাকা রাজধানীকে হয়তোবা হরোপ্পা মহেনজদেরো সভ্যতার মতো মাটি খুরে আবিস্কার করতে হবে। সারা দেশেই উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত যে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ঘটেছে তা এলাকার প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষা ও জাতির ভবিষ্যতের জীবন জীবিকার জন্য সহায়ক হয়নি। বরং সংকট সৃষ্টি করেছে। কৃষি ক্ষেত্রও এর বাইরে নয়। এ কারনে রাজনীতিতে উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে রাজনীতিবিদদের দৃষ্টি ভঙ্গির উন্নয়ন জাতীর জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। এর প্রধান শর্ত হতে পারে আই এম এফ, বিশ্বব্যাংক ও যে কোন দাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋন গ্রহন বন্ধ করা ও তাদের পরমর্শ গ্রহন না করা। তারিখ- ১৯/২/২০১৫ ইং

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুর উপজেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সন্মেলন ফের স্থগিত; যুবলীগ নেতাকর্মীরা হতাশ

রাজনীতি

শাহজাদপুর উপজেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সন্মেলন ফের স্থগিত; যুবলীগ নেতাকর্মীরা হতাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, শাহজাদপুর: আজ ২৫ এপ্রিল শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি মিলনায়তনে দীর্ঘ ১৩ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ...

শাহজাদপুর কায়েমপুরে কায়েমপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান রানাসহ ৩ জনের জাসদে যোগদান

রাজনীতি

শাহজাদপুর কায়েমপুরে কায়েমপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান রানাসহ ৩ জনের জাসদে যোগদান

নিজস্ব প্রতিবেদক, শাহজাদপুর : ২৫ মার্চ রোববার বিকেলে স্থানীয় জাসদ কার্যালয়ে উপজেলা জাসদ সভাপতি শফিকুজ্জামান শফির সভাপতিত...

শিমুল হত্যার পলাতক আসামীদের মালামাল ক্রোক শুরু: প্রথম দিনেই ৪ জনের বাড়িতে সফল অভিযান

জাতীয়

শিমুল হত্যার পলাতক আসামীদের মালামাল ক্রোক শুরু: প্রথম দিনেই ৪ জনের বাড়িতে সফল অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক : শাহজাদপুরে সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলার চার্জশিট ভূক্ত পলাতক ৪ আসামীর বাড়িতে পুলিশ আজ মঙ্...

শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক ২ এমপি রোষানলে

রাজনীতি

শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক ২ এমপি রোষানলে