শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
শামছুর রহমান শিশির, শাহজাদপুর থেকে : সরকারী বিধি, বিধান, আইন, কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম ব্যবসায় সফল মফস্বল শহর শাহজাদপুরে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারীর অভাব আর ভবন মালিকদের চরম স্বেচ্ছাচারিতায় দীর্ঘদিন ধরেই প্রথম শ্রেণির শাহজাদপুর পৌরসভা’র আওতাভূক্ত বিভিন্ন ওয়ার্ডে বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। এসব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেকেই পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়েই, নির্ধারিত ফি না দিয়েই একের পর এক বহুতল ভবন নির্মাণ করায় সরকারের রাজস্ব আদায়েও ভাঁটা পড়ছে বলে বিজ্ঞমহল মনে করছেন। ফলে শাহজাদপুর পৌরসদর ক্রমেই ঘিঞ্জি শহরে পরিণত হওয়ায় পৌর এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের প্রতিনিয়ত বহুমূখী সমস্যায় নিপতিত হতে হচ্ছে। দেখার কেউ নেই ! গতকাল শুক্রবার বিকেলে সরেজমিন পৌরসদরের কান্দাপাড়া মহল্লা পরিদর্শনকালে এলাকাবাসী জানায়, সাবেক ভিপি ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিমের কান্দাপাড়াস্থ বাসভবন সংলগ্ন পশ্চিম পাশে প্রতিবেশী একই মহল্লার হাজী শাহজাহান একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। নির্মাণাধীন ওই বহুতল ভবনের পূর্ব পাশের সীমানা প্রাচীরের ওপর বহুতল ওই ভবনের দেয়াল নির্মিত হচ্ছে। পৌর এলাকায় দালানকোঠা নির্মাণের ক্ষেত্রে সড়ক থেকে ৫ ফুট ও সীমানা প্রাচীর থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট জায়গা ফাঁকা রেখে ইমারত তৈরির বিধান থাকলেও এক্ষেত্রে ১ ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা রাখেননি হাজী শাহজাহান। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সাবেক ভিপি আব্দুর রহিম বলেন,‘নেতাদের এমনিতেই দোষারোপ করা হয়ে থাকে। তবে হাজী শাহজাহানের ও তার পরিবারের সদস্যদের ওই ভবণে বসবাসের ক্ষেত্রে হাওয়া-বাতাস চলাচলের জন্যও তো কিছু জায়গা ফাঁকা রাখতে পারতেন।’ অন্যদিকে, হাজী শাহজাহানের মোবাইল ফোনে সাংবাদিকরা যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোনে তাকে পাওয়া জায়নি।’ এলাকাবাসীর অভিযোগ ও তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ‘শাহজাদপুর পৌর এলাকার সিংহভাগ দালান-কোঠা নির্মাণে নুন্যতম পরিকল্পনার ছোঁয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যে যার মতো করে সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্থাপনা নিমার্ণ করলেও সেক্ষেত্রে পৌর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অনেকটা ‘ঠুটো জগন্নাথ’-এর মতোই। ফলে ঘিঞ্জি ঘিঞ্জি শহরে ক্রমেই পরিণত হচ্ছে শাহজাদপুর। এতে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে পৌরবাসীর বঞ্চিত হবার শংকা সৃষ্টি হয়েছে বলে পরিবেশবিদগণ মনে করছেন। বিশেষ করে ইমারত নির্মাণ আইনও বিধিমালা লংঘন করে যত্রতত্র ভবন নির্মাণ করার অনেক সময় প্রতিবেশীদের ভোগান্তীতে পড়তে হচ্ছে। ভবন নির্মানের সময় নির্ধারিত জায়গা ছেড়ে না দেয়া এবং ছাদ, কার্নিশ ও সানশেট বড় করে তৈরী করায় এলাকায় যানজট ও জনগণের চলাচলে প্রায়শই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পৌর শহর এলাকায় যত্রতত্র গড়ে ওঠছে বহুতল ভবন কিংবা স্থায়ী অবকাঠামো। অনেকস্থানে দেখা যাচ্ছে, দালান তৈরির ইট, বালু, সিমেন্ট, রডসহ আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র সদর রাস্তায় লোড-আনলোড করে শ্রমিকেরা মাথায় তুলে সংশ্লিষ্ট স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। রিক্সা-ভ্যান কিংবা ছোটখাটো পিকআপ ভ্যান ছাড়া ওইসব স্থানে গড়ে ওঠা দালানকোঠা কিংবা ঘর-বাড়িতে অগ্নিকান্ড, দৈব-দূর্বিপাকে দমকল বাহিনীর গাড়ি কিংবা অসুস্থ রোগীকে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়ার জন্য দমকল বাহিনীর গাড়ি ও এ্যাম্বুলেন্সও যথাসময়ে প্রবেশ করতে পারছে না। প্রযুক্তিগত দিক বিবেচনায় রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প সহনীয় যে মাত্রার বিধি রয়েছে, তাও উপেক্ষা করে ভবনগুলো নির্মিত হচ্ছে। এছাড়া এ অঞ্চলের তৈরী হওয়া ইমারত ভবনগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে এইচভ্যাক সার্কুলার, রেইন ওয়াটার হারভেষ্টিং, বিশুদ্ধ বায়ু প্রবাহ নিশ্চিতকরন, আন্ডার ভেইকেল সারভেইলেন্স স্থাপন, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, এক্সেস কন্ট্রোল সিষ্টেমও উপেক্ষা, বাছবিচার ছাড়াই তা নির্মাণ করা হচ্ছে । ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২-এর ক্ষমতা বলে সরকার ১৯৯৬ সালে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন করে পূর্নাঙ্গ আইনে রূপ দিলেও ওই বিধিমালায় ইমারত নির্মাণ অনুমোদন, সরকারী অনুমোদন ফি, নকশা, সড়কের দূরত্ব, প্রনয়ণকারীর যোগ্যতা, অনুমোদনের জন্য আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে নিস্পতিসহ ইমারত কিংবা ভবন নির্মাণে কী ভাবে হবে ওই আইনের ৩ (ক) ধারায় উদ্দেশ্যে ব্যাতীত অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না বলা হলেও সেক্ষেত্রেও ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’-এমন অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ বিষয়ে পৌরসভার মেয়র (দায়িত্বপ্রাপ্ত) নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,‘এ বিষয়ে সরকারী ভাবে নতুন একটি নির্দেশনা পেয়েছি। এখন আর কেউ এককভাবে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিতে পারবেন না। জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী, পৌরসভার প্রকৌশলীসহ কয়েকজন মিলে গঠিত একটি কমিটির সমন্বিত মতামতের ওপর ভিত্তি করে আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে তবেই ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেবেন। পৌর বিধি মোতাবেক সড়ক থেকে ভবনের দুরত্ব কমপক্ষে ৫, ক্ষেত্র বিশেষে নূন্যত ৩ ফুট জায়গা ফাঁকা রেখে তবেই ভবন নির্মাণ করতে হবে। যদি কেউ সীমানা প্রাচীরকে কক্ষের দেয়াল হিসেবে নির্মাণ করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে পৌর বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ পৌরসভায় নিজস্ব ম্যাজিষ্ট্রেট না থাকায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলেও তিনি এ সময় অভিমত ব্যাক্ত করেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরের আদিবাসী বাগদী পরিবারগুলোর মানবেতর জীবন

জীবনজাপন

শাহজাদপুরের আদিবাসী বাগদী পরিবারগুলোর মানবেতর জীবন

শামছুর রহমান শিশির : বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী ছোট গল্প ‘পোষ্ট মাস্টার’-এর রতন চরিত্রটি শা...

ফেসবুকের কল্যাণে ঢাকা থেকে ১১ দিন পূর্বে হারিয়ে যাওয়া শাহজাদপুরের কিশোরী লিমা বাড়ি ফিরলো

তথ্য-প্রযুক্তি

ফেসবুকের কল্যাণে ঢাকা থেকে ১১ দিন পূর্বে হারিয়ে যাওয়া শাহজাদপুরের কিশোরী লিমা বাড়ি ফিরলো

শাহজাদপুর প্রতিনিধি : জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি সম্বলিত ‘হারানো বিজ্ঞপ্...

“বিশ্ব ভালবাসা দিবসের জয় হোক”

আন্তর্জাতিক

“বিশ্ব ভালবাসা দিবসের জয় হোক”

আজ বিশ্ব ভালবাসা দিবস। ভালবাসার জয় হোক, ভালবাসা দিবসের জয় হোক। ভালবাসার মহিমায় উদ্ভাসিত...

শাহজাদপুরের ভেকা ও হাটপাচিল গ্রাম বিলীন হওয়ার উপক্রম

শাহজাদপুরের ভেকা ও হাটপাচিল গ্রাম বিলীন হওয়ার উপক্রম

স্টাফ রিপোর্টারঃ দ্রুত বন্যার পানি কমতে থাকায় শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীতে ভয়াবহ ভাঙ্গন...

শাহজাদপুরে হেরোইন সহ মাদক বিক্রেতা আটক

আইন-আদালত

শাহজাদপুরে হেরোইন সহ মাদক বিক্রেতা আটক

ফারুক হাসান কাহার শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি ঃসিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এ হেরোইন সহ এক মাদক বিক্রেতাকে আটক করা হয়েছে ।...

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র জিপিএ–৫ না পেয়েও কেমব্রিজে

আন্তর্জাতিক

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র জিপিএ–৫ না পেয়েও কেমব্রিজে

জাহিদ হোসাইন খানঃ ২০১৬ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র সাজিদ আখতার পেয়েছিলেন জিপিএ-৪.৫০। আর এ...