বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে দেশের নিউজিল্যান্ডখ্যাত জনপদ ও গবাদীপশুর রাজধানীখ্যাত শাহজাদপুর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে গরু মোটাতাজাকরণে হাজার হাজার গো-খামারীরা অতি ব্যতিব্যাস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলে গরু মোটাতাজাকরণে গো-খামারীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোরবানীর ঈদে দেশে গরুর চাহিদার সিংহভাগ শাহজাদপুর,সিরাজগঞ্জ জেলাসহ বাঘাবাড়ী মিল্কশেড এরিয়া থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। প্রতি বছরই ঢাকার গাবতলীর গরুর হাটসহ দেশের বিভিন্ন কোরবানীর হাটে শাহজাদপুরসহ বাঘাবাড়ী মিল্কশেড এরিয়া থেকে লাখ লাখ গরু নিয়ে যাওয়া হয় শাহজাদপুর থেকে। কোরবানীর ঈদকে উপলক্ষ করেই বর্তমানে এ অঞ্চলের হাজার হাজার গো-খামারীরা গরু মোটাতাজাকরণে অতি ব্যতিব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, কাজিপুরসহ সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে শত শত বেকার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ে অল্প টাকা বিনিয়োগে ৬ থেকে ১০ মাসের মধ্যে দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন জাতের গরু বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মোটাতাজাকরণ করে দারিদ্র জয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।এক সময়ে কিছুই ছিলনা তাদের।একে অন্যের দেখাদেতিতে দেশী ও বিদেশী জাতের বাছুর লালন পালন করে তারা আজ স্বনির্ভরশীল। মাত্র ৬ থেকে ১০ মাসে বাড়ির অন্যান কাজের পাশাপাশি মাত্র ৩/৪ টি ষাঢ় গরু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মোটাতাজাকরন করে লাখ লাখ টাকা আয় করে বেকার অনেকেই এক দৃষ্টান্তমূলক নজির স্থাপন করেছেন। তাদের সাফল্যগাথা বাস্তব এ কাহিনী শুনতে কল্পবাক্য মনে হলেও অনেক সময় বাস্তবতা কল্পনাকেও হার মানায় , তারই প্রমাণ মিললো শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গরু মোটাতাজাকরন খামারীদের সাথে কথা বলে। জানা গেছে, দেশের গবাদীপশুর রাজধানী শাহজাদপুরে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বনে বানিজ্যিক ভিত্তিতে সব চেয়ে বেশী গরু মোটাতাজাকরণ হয় টেপরি ও পুরান টেপরি গ্রামে। এছাড়া উপজেলার পোতাজিয়া, রেশমবাড়ী, আঙ্গারু, বৃআঙ্গারু, বাড়াবিল, রুপবাটি, রাউতারা, পোরজনা, পুঠিয়া, ডায়া, নগরডালা, কাকুরিয়া, কাদাইবাদলা, চিথুলিয়া, কাশিনাথপুর, বনগ্রাম, সরিষাকোল, মশিপুর, নুকালী, শেলাচাপড়ী, চরাচিথুলিয়া, ভাইমারা, বহলবাড়ী, আহম্মদপুর, বিন্নাদায়ের, মাদলা, টিয়ারবন্দ, শাকতোলা,বিলকলমীসহ বিভিন্ন বসতবাড়ী ও গো-খামারে বানিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরণে এলাকার হাজার হাজার গো-খামারীরা মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেকার অনেক এলাকাবাসী মাত্র ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে দেশী ও বিদেশী জাতের ফ্রিজিয়ান,শাহীওয়াল,দেশী শংকর,অষ্ট্রেলিয়ান,জার্সিসহ বিভিন্ন জাতের এঁড়ে বাছুর ক্রয় করে কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে মোটাতাজাকরণ করছেন। এসব বাছুর ও এঁড়ে গরু ৬ থেকে ১০ মাস লালন পালন করে তিন-চারগুণ বেশী দামে কোরবানীর হাটগুলোতে গো-খামারীরা বিক্রি করে আসছেন। এ কাজে খামারীদের খুব একটা বেশী বেগ ও খরচ করতে হচ্ছে না। কারন হিসাবে গরু মোটাতাজাকরণ করা খামারীরা জানিয়েছেন, শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জে এমনিতেই প্রচুর দুর্বা ঘাস জন্মে থাকে। গরুকে এসব ঘাস খাওয়াতে বাড়তি কোন খরচ করতে হয় না। ফলে একজন লোক ৩/৪ টি গরু খুব সহজেই বাড়ির অন্যান্য কাজের পাশাপাশি গরু মোটাতাজাকরণ করার জন্য গরু প্রতিপালন করতে পারে। বানিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরন করা অনেক খামারীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ১৮ হাজার টাকার একটি গরু ৬ থেকে ১০ মাস লালন পালন করে অনায়াসে ৫৪ হাজার থেকে ৭৪ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। ৫০/৫৫ হাজার টাকার একটি ষাঢ় ৬ মাস থেকে ১ বছর লালন পালন করে ১ লক্ষাধিক টাকায় বিক্রয় করা হয়। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মুসলিম দেশ হওয়ায় প্রতি বছর কোববানীর ঈদে এসব গরুর ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফলে বেশ ভালো দামে গরুগুলো বিক্রি করা হয়ে থাকে। শাহজাদপুরের পুরান টেপরি গ্রাম রয়েছে গরু মোটাতাজাকরণের সবচাইতে বেশী গো-খামার। গরু মোটাতাজাকরণ করে কোরবানীর হাটে বিক্রি করে স্বাবলস্বী হওয়া ওই গ্রামের অনেক গো-খামারীরা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন,প্রথমে ওই গ্রামবাসী বংশপরস্পরায় শিখে আসা মান্ধাতা আমলের পদ্ধতি অনুসরণ করে গরু মোটাতাজাকরণ করতেন। প্রথম থেকেই ওই গ্রামের অনেক বেকার কৃষক অভাবনীয় সফলতা লাভ করেন।পরবর্তীতে অধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির অবলম্বনে অত্যন্ত লাভজনক এ পেশাকে অনেক বেকারই অনুসরণ করতে থাকেন। ওই গ্রামে বৃদ্ধি পেতে থাকে গরু মোটাতাজাকরণ করে স্বাবলম্বী এলাকাবাসীর সংখ্যা । পশুবিজ্ঞানীদের মতে,‘আগেকার মানুষ দু’একটি গরু পালতো শখ করে। বলদ গরু হলে হাল চাষের ক্ষেত্রে ,আর ষাঁড় গরু হলে তাকে অনেক কৃষক মাংসের জন্য তৈরি করতো। গোমাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশে গরুর সংখ্যা বেশী হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠইা জীর্ণশীর্ণকায় গরু। অথচ সামান্য যত্ন নিলেই মোটাকাতাজকনের মাধ্যমে অধিক মাংস উৎপাদন করা সম্ভব । যা দেশে মাংসের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জ জেলার গরু মোটাতাজাকরণ শত শত গো-খামার।’ কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো এবারও উপজেলার পুরানটেপরি গ্রামের অনেক গো-খামারীরা গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। ওই গ্রামের বেশ কয়েকজন গো-খামারী শাহজাদপুর সংবাদ ডট কমকে জানান, বংশপরষ্পরায় আদি পুরুষের কাছ থেকে গ্রামের হাতে গোনা মুষ্টিমেয় কৃষক অতীত সময় হতেই ষাঁড় ও বলদের মোটাতাজাকরণের কাজ শুরু করেছিলেন। ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ও পেশাটি লাভজনক হওয়ায় ওই গ্রামের মুকুল শেখ,গোলাম মওলা,কাদের মেম্বার,জহুরুল হক,মিজানুর রহমান, বাবলু মিয়া, সাখাওয়াত হোসেন, মো: আইয়ুব আলী, দুলাল মিয়া, নজরুল ইসলাম, গোলবার হোসেন, আলম মিয়া, আব্দুল বারেক, আমজাদ হোসেন, নিজাম উদ্দিন, আব্দুল কুদ্দুস, ঠান্ডু মিয়া, আনছার মিয়া, গোলাম হোসেন, আবু সাইদ, আবু তালেব, ভোলা মিয়া, আব্দুল আজিজ, শহীদ আলী, নূর মোহাম্মদ, নজরুল ইসলাম(২), খয়বার আলী, মোজাহার আলী, বাবলুমিয়া, ইদ্রিস আলী, আমির হোসেন, ইছা, সরোয়ার হোসেন, আবুল কালাম, কুরমান আলী, আজিজল হক, জহুরুল(২), ইনসাফ আলী, গাজীউর রহমান, রহম আলী, এরশাদ আলম,শাখাওয়াত হোসেন, হান্নান প্রামানিক, আব্দুল মান্নান, জামাল হোসেন, ছাকের আলী, দেলওয়ার হোসেনসহ শতাধিক গ্রামবাসী মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। তাদের ধারাবাহিক সাফল্য উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার অন্যান্য গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এখন শাহজাদপুর পৌরসদরসহ ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় সকল গ্রামেই গো-খামারীরা গরু মোটাতাজাকরণে কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছে।

সম্পর্কিত সংবাদ

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

আন্তর্জাতিক

উদ্বোধনের ফিতা কাটার মুহূর্তে ভেঙে পড়ল সেতু

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান সেখানে থাকা সবাই। সরকারি কর্মকর্তা ওই নারী পাশে থাকা একজনকে আঁকড়ে ধরে ভারসাম্য রক্ষার চে...

বেলকুচিতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত তাঁত শ্রমিকদের অর্থ সহায়তা

সিরাজগঞ্জ জেলার সংবাদ

বেলকুচিতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত তাঁত শ্রমিকদের অর্থ সহায়তা

জেলার বেলকুচি উপজেলায় কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্রতাঁতী ও তাঁত শ্রমিকদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্...

শাহজাদপুরে ‘প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা’কে গণসংবর্ধনা প্রদান

রাজনীতি

শাহজাদপুরে ‘প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা’কে গণসংবর্ধনা প্রদান

শামছুর রহমান শিশির : আজ মঙ্গলবার বিকেলে শাহজাদপুর পৌর এলাকার শক্তিপুরস্থ প্রয়াত ড. মযহারুল ইসলামের বাসভবনে কেন্দ্রীয় আও...

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

খেলাধুলা

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

তাই তাঁর পারফরম্যান্সে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে চেন্নাইয়ের ব্যাটিং কোচ মাইক হাসি। আজ আবার মাঠে নামছে চেন্নাই। আজ...

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

কৃষি

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

ধান থেকে উৎপাদিত চালের মতো হুবহু এই বাঁশ ফুলের চাল। ভাত, পোলাও, আটা কিংবা পায়েস সব কিছু তৈরি হচ্ছে বাঁশ ফুলের চাল থেকে।...

৬ বছর ৮ মাসে লেখা কোরআন শরিফের দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনী চলছে সাতক্ষীরায়

বাংলাদেশ

৬ বছর ৮ মাসে লেখা কোরআন শরিফের দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনী চলছে সাতক্ষীরায়

৪০৫ কেজি ওজনের কোরআন শরিফটি লিখতে হাবিবুর রহমান ৪০৮টি আর্টপেপার ও ৬৬০টি কলম ব্যবহার করেছেন