রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Abul Basar Picture লাক্ষার সাথে আমরা কমবেশী অনেকেই পরিচিত। ব্যাবহারিক দিক থেকে লাক্ষা মানুষের জীবনে অতি প্রয়োজনীয়  একটি সম্পদ। পৃথিবী ব্যাপী মণুষ্যজগতের দৈনন্দিন নানাবিধ চাহিদা মেটাতে অত্যান্ত স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ন সহায়ক  এবং মূল্যবান সম্পদের ভূমিকা পালন করে আসছে লাক্ষা। ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষি ও পরিবেশের ক্ষেত্রে অগ্রগতির দিক  থেকে লাক্ষা চাষ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক উজ্জল সম্ভাবনার দিক রয়েছে। পৃথিবীতে আদিকাল থেকেই  নানা কাজে লাক্ষার ব্যাবহারের ইতিহাস রয়েছে। পৌরানিক যুগেও বঙ্গ-ভারতসহ এ উপমহাদেশে লাক্ষা বহুবিধ কাজে  ব্যবহার করা হতো এমন উদাহরণ রয়েছে। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র মহাভারতে আদিপর্বে, “কৌরবগণ পান্ডবদের ধ্বংস করার  জন্য লাক্ষা দিয়ে ‘জতুগৃহ’ তৈরী করেছিল বলে উল্লেখ রয়েছে। ১৫৯০ খৃঃ সম্রাট আকবর লিখিত ‘আইন-ই-আকবরী’  বইতে লাক্ষার ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। মুসলিম সাধু পুরুষ আবু হানিফা (রাঃ) লিখিত বইতেও লাক্ষার নানাবিধ  ব্যাবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে। লাক্ষা পরিচিতি lacca লাক্ষা এক প্রকার অতি ক্ষুদ্র পোকা Lack-Insect(লাক্ষা পোকা) বৈজ্ঞানিক নাম Keria-  Laccak। ক্যারিয়া ল্যাক্কা কতৃক নিঃসৃত রজন জাতীয় পদার্থ। এ পদার্থ মানুষের হাতে  পরিমার্জিত রুপ হলো লাক্ষা । এর প্রানীজাত বহুমুখী-কর্মশক্তি সম্পন্ন এক প্রকার রজন যার  অনুপম গুনাগুনের কারণে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। লাক্ষা পোকার ত্বকের নীচে সর্বত্র ছড়িয়ে  থাকা এক প্রকার গ্রন্থি থেকে আঠালো রস নিঃসৃত হয়, যা ক্রমশঃ শক্ত ও পুরু হয়ে পোষক  গাছের ডালকে আচ্ছাদিত করে ফেলে। পোষক গাছের ডালের এই আবরণই ‘লাক্ষা বা স্থানীয়  নামানুসারে লাহা’ নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ডালের উক্ত শক্ত আবরণ ছাড়িয়ে ও শোধিত  করে ঐ লাক্ষা বিভিন্ন কাজে ব্যাবহার করা হয়।   আধুনিক বিশ্বে লাক্ষার নানাবিধ ব্যবহার বিজ্ঞানের উৎকর্ষের যুগেও আধুনিক বিশ্বে নানাবিধ কাজে লাক্ষার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এর ব্যবহারের গুরুত্বের দিকটি ব্যাপক জনগোষ্ঠির নজরে না এলেও বিজ্ঞানের কৃতকৌশলের সুবিধাভোগী মানুষদের জন্য লাক্ষা নামক সম্পদ (অতি ক্ষুদ্র পোকা) পর্দার অন্তরালে থেকে জীবন দিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে সেবাদান করে যাচ্ছে। পৃথিবীতে কোটি কোটি জীব, অনুজীবসহ অতিশয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় একে অপরের পরিপূরক হিসেবে জীবনসাধন করলেও পৃথিবীতে অতি ক্ষুদ্রাকার পোকা লাক্ষার পরিচয় শিল্প পোকা হিসেবে। পোকা বলতে অনেকের কাছে বিরক্তিকর কিছু। কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোকারাও যে মানুষের জীবনের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে অর্থনৈতিক উৎপাদনের উপকরণ হতে পারে এটি কখনও মানুষ গভীরভাবে তার নিজস্ব অনুভূতি দিয়ে এখনও বিবেচনা করেনা। পৃথিবীতে হাজারো কীটপতঙ্গ আছে যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের জীবন রক্ষার কাজে তারা অনুসর্গ হিসেবে কাজ করছে। অথচ পৃথিবীর সকল জীবের ওপর প্রাধান্য বিস্তারকারী মানুষের কাছে সৃষ্টিজগতের এমন অনেক রহস্য এখনও অজানা রয়েছে। আদিকাল থেকেই বঙ্গদেশে লাক্ষা ও রেশমের চাষ ছিল লাক্ষা পোকার মত আদিকাল থেকেই আমাদের দেশে রেশম পোকার চাষ ছিল। সে কারনে ঐ পোকার জীবন চক্রের অবদানকে ঘিড়ে বঙ্গভূমিতে রেশম চাষ, রেশম সুতা তৈরী ও রেশমী কাপড় উৎপাদনের ধারা আজও আমাদের মাঝে টিকে রয়েছে। আর এ কারনেই রেশম শিল্পের আদি ঐতিহ্যের দাবিদার বাঙালিরা। আমাদের রক্তের ধারার সাথে মিশে রয়েছে রেশম ও লাক্ষা চাষের বহুবিধ বৈচিত্রের ধারাবাহিকতার ইতিহাস। বহুকাল পূর্ব থেকে এ ভূ-ভারতে তৈরী রেশম সূতা ও রেশমী কাপড়ের কদর ছিল পৃথিবীময় । মোঘল শাসনামলে বঙ্গদেশে রেশমের ব্যাপক চাষ ও রেশমী কাপড় তৈরী হতো ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এমনটা জানা যায়। সম্রাট আকবরের আমলে বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের বর্তমানের পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল (চলনবিল এলাকা হিসেবে পরিচিত) এলাকাসহ এর আশে পাশের বৃহত এলাকাজুড়ে রেশমচাষ হতো। ইতিহাসের ধারা আমাদের সে কথাই বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। মোঘল শাসনামলে ঐ এলাকায় একজন সুবেদার ও একজন কাজী থাকতেন। তখন সুবেদারের অধীনে পাঁচ হাজার মোঘল ফৌজ ছিল। তাঁরা এলাকার বিভিন্ন কেল্লায় বসবাস করতো। পরবর্তীতে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী আমলে হান্ডিয়াল প্রসিদ্ধ বানিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিনত হয়। তখন সমগ্র ভারতে যত রেশম উৎপন্ন হতো তার পাঁচ ভাগের চার ভাগ হান্ডিয়াল বন্দরে পাওয়া যেত। হান্ডিয়াল থেকে ইংল্যান্ড ও অন্যান্য দেশে তুলা,সূতা ও রেশমী বস্ত্র রপ্তানী হতো। সে সময়ে বঙ্গদেশে রেশম চাষ হতো বলেই এলাকায় রেশম বস্ত্রের আমদানী ছিল। এর ধারাবাহিকতায় এখনও রাজশাহীতে রেশম পোকা ও রেশম শিল্প অত্যান্ত ক্ষয়িষ্ণু আকারে টিকে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী রেশমী সূতার বিকল্প হিসেবে সেনথেটিক নানা সূতা ও বস্ত্র তৈরীর ফলে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় রেশম শিল্প পিছিয়ে পড়েছে। এ কারনে বাংলাদেশ রেশম চাষের আদিভূমি হলেও রেশম চাষের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী ধারা টিকিয়ে রাখতে পারছেনা। লাক্ষার প্রয়োজনীয়তায় এর বিকল্প নেই কিন্তু পৃথিবী জুড়ে লাক্ষার বিকল্প অন্য কোন কিছু আবিস্কার হয়েছে এমনটা এখনও জানা যায়নি। এ কারনে ব্যাবসায়ীক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে লাক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। সারা পৃথিবীর সবদেশে লাক্ষার চাহিদা রয়েছে। দিন দিন এ চাহিদার ব্যাপ্তি ঘটছে। কিন্তু পর্যাপ্ত উৎপাদন নেই। বর্তমান বিশ্বে ভারত একচেটিয়ভাবে লাক্ষার উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজার দখল করে রেখেছে। পৃথিবীর শতকরা ৭০ ভাগ লাক্ষাই ভারতে উৎপাদিত হয়। ভারতের পশ্চিমবাংলা, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও আসাম প্রদেশেই বেশীরভাগ লাক্ষা উৎপাদন হয়। ভারতের পরেই দ্বিতীয় উৎপাদান কারী দেশে হিসেবে রয়েছে থাইল্যান্ড। লাক্ষার বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারে থাইল্যান্ড ভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। এ ছাড়াও সমগ্র বার্মায়, দক্ষিন চীনে, পাকিস্থানের সিন্ধু প্রদেশে লাক্ষার চাষ হয়ে থাকে। তাইওয়ানের কিছু অঞ্চলে অল্প পরিমানে লাক্ষার চাষ হয়। লাক্ষার আর্ন্তজাতিক চাহিদা লক্ষ করে বেশ কয়েকটি দেশ নতুন করে লাক্ষা উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে। এর মধ্যে ভিয়েতনাম অন্যতম। বর্তমান প্রেক্ষপটে বাংলাদেশে লাক্ষা চাষ একটি অত্যান্ত সম্ভাবনাময় ও অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচিত হলেও শুধুমাত্র আমাদের দেশের সরকারগুলোর উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব এবং গনকল্যাণমুখী চিন্তার সাথে যোগসূত্র না থাকার কারনে সঠিক পথে এগুতে পারছেনা। কৃষি ক্ষেত্রে পরিবেশ বান্ধব জ্ঞান চর্চা বিকোশিত না হওয়ার কারনে লাক্ষা চাষ আমাদের দেশে অনেকটাই অবহেলিত রয়েছে। 30bus01 লাক্ষা চাষের সুবিধাসূমহ লাক্ষা চাষের সবচেয়ে সুবিধাজনক দিক হচ্ছে এর জন্য পৃথক কোন চাষের জমির প্রয়োজন পড়েনা। লাক্ষার পোষক গাছসূমহ জমির আইল, বসতবাড়ীর আশেপাশে, খালের পাড়,রাস্তা ও রেল লাইনের পাশে পরিত্যাক্ত স্থানসমূহে লাগানো যায়। যে সকল প্রজাতির গাছে লাক্ষা ভাল জন্মায় সেগুলোকে লাক্ষার পোষক গাছ বলে। প্রায় একশত প্রজাতির গাছে লাক্ষা জন্মাতে পারে। এর মধ্যে কিছু প্রজাতির গাছে লাক্ষাপোকা ভালোভাবে বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। বাংলাদেশে বরই,শিরিষ,বট, পাকুর, পলাশ,খয়ের, বাবলা, ডুমুর, অড়হড়,কুসুম প্রভৃতি গাছে লাক্ষা ভাল জন্মে। বর্তমানে বাংলাদেশে বাৎসরিক প্রায় ৩’শ হেক্টর জমিতে লাক্ষার চাষ হয়। ঐ চাষ থেকে মাত্র ১’শ ৮০ টনের মত ছাড়ানো লাক্ষা উৎপাদিত হয়। কিন্তু শুধুমাত্র বাংলাদেশেই লাক্ষার চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ২’শ টনের বেশী। এ ছারাও লাক্ষার বহুবিধ ব্যবহারের কারণে দেশেও যেমন লাক্ষার চাহিদা বাড়ছে তেমনি পৃথিবীর অনেক দেশেই লাক্ষা রপ্তানীর সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশসমুহের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় ও কাঠের আসবাবপত্র বার্নিশের কাজে ব্যাপকভাবে লাক্ষার ব্যবহার হওয়ায় উক্ত দেশসমুহে একটি বড় ধরনের লাক্ষার বাজার রয়েছে। এ ছারাও বিভিন্ন ধরনের বার্নিশ তৈরী ও পিতল বার্নিশ করার কাজে, অস্ত্র ও রেলওয়ে কারখানায়, বৈদ্যুতিক শিল্প কারখানায় অপরিবাহি বার্নিশ পদার্থ হিসেবে, বিভিন্ন অটোমোবাইল ইঞ্জিন মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষণে আঠালো বন্ধনকারী পদার্থ হিসেবে, চামড়া রং করার কাজে, স্বর্নালংকারের ফাঁপা অংশ পূরণে, লবনাক্ত পানি হতে জাহাজের তলদেশ রক্ষা করার কাজে বার্নিশ হিসেবে, ডাকঘরের চিঠি,পার্সেল ইত্যাদি সীলমোহর কাজে, লাক্ষার আবরণযুক্ত কয়লা অত্যন্ত উঁচু স্থানসমূহে রান্নার কাজে লাক্ষার ব্যাবহার রয়েছে। এ ছারাও পুতুল,খেলনা, আলতা, নখরঞ্জন, শুকনা-মাউন্টিং টিসুপেপার ইত্যাদি তৈরী কাজে যেমন লাক্ষা ব্যাবহার হয়ে থাকে তেমনি লাক্ষার উপাদান, আইসো এমব্রিটোলিডি পারফিউম শিল্পে এবং লাক্ষা হতে নির্গত আরেকটি উপাদান এ্যালুউরিটিক এসিড পারফিউম শিল্পে, পোকার যৌন আকৃষ্টকরণ পদার্থ (Sex pheromone) তৈরীতে এবং অনেক ঔষধ প্রস্তুুতের রানায়নিক তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। লাক্ষা চাষের উপযোগি এলাকা শীতপ্রধান দেশ হওয়ার কারণে ইউরোপ আমেরিকার মত দেশেগুলোতে লাক্ষাচাষ সম্ভব নয়। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া লাক্ষা চাষের উপযোগি। যে সকল অঞ্চলে গ্রীষ্ণকালে অত্যন্ত গরম (সর্বোচ্য সহনশীল তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেঃ) ও শীতকালে অত্যধিক ঠান্ডা (সর্বনিু সহনশীল তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেঃ) এবং বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমান ৭৫ সেঃ মিঃ পর্যন্ত হয়, সে সকল অঞ্চলে লাক্ষার চাষ ভালো হয়। গ্রীষ্ণকালে যদি তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেঃ এবং শীতকালে ১৫ ডিগ্রি সেঃ এর নীচে নেমে যায় সে ক্ষেত্রে স্ত্রী পোকা ডিমপাড়া বন্ধ করে দেয়। লাক্ষা নিঃসরণ বন্ধ হয়না। এ কারনে আবহাওয়া ও পরিবেশের দিক থেকে সমগ্র বাংলাদেশ লাক্ষা চাষের উপযোগি। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্নস্থানে লাক্ষার পোষক গাছ অযতেœ অবহেলায় যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। উক্ত গাছগুলিকে লাক্ষা চাষের আওতায় এনে প্রচুর পরিমাণে লাক্ষা উৎপাদনই সম্ভবপর নয় ,একই সাথে বিশাল কর্মহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানও করা সম্ভব। আমাদের দেশে কেবলমাত্র নবাবগঞ্জ জেলায় শিবগঞ্জ উপজেলার বিরোদপুর,মনাকষা ও দাদনচক লাক্ষা চাষের আদি এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। এ ছারাও বর্তমানে বরেন্দ্র এলাকার তানোর উপজেলার মুন্ডমালা, এবং পোরশা ও সাপাহার উপজেলা এলাকাতেও কিছু কিছু লাক্ষার চাষ রয়েছে। নানা প্রতিকুলতার মাঝেও লাক্ষা চাষের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে বর্তমানে নানা প্রতিকুলতার কারনে দেশে লাক্ষার চাষ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার উদ্যোগী হলে লাক্ষা চাষ সম্প্রসারণে এবং প্রক্রিয়াজাত শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে নতুন কৃষি বিনিয়োগের দুয়ার খুলে দিতে পারে। সাম্প্রতিক SANFEC (South Asian Network Food Ecology & Culture) পরিচালিত U D (Using Diversity Research Awards Program) গবেষনা রিপোর্টে যমুনা নদী চর এলাকায় লাক্ষা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফুলছরি থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত প্রায় ১৬০ কিলোমিটার জুড়ে যমুনা নদীর বুকে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। ইতিমধ্যেই জেগে ওঠা কিছু কিছু চর এলাকায় জনবসতি গড়ে ওঠেছে। সেখানে বসবাস করছে হাজার হাজার প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষক পরিবার। রয়েছে আবাদি অনাবাদি লাখ লাখ হেক্টর চরাভূমির খোলা মাঠ। চরাভূমিতে লাক্ষার পোষক গাছ, স্থানীয় নাম বড়ই/ কূল, ইংরেজি নাম- Jujube, বৈজ্ঞানিক নাম-Ziziphus Jujuba  লাগিয়ে ব্যাপক ভিত্তিক লাক্ষা চাষ সম্ভব। এর সুবিধাজনক দিক হচ্ছে এটি আপনজালা গাছ এবং বন্যার পানিতে মারা যায়না। এ ছারাও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নদীতে জেগে ওঠা চরগুলিতে লাক্ষার পোষক গাছ লাগিয়ে লাক্ষা চাষ সম্প্রসারনের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের চাহিদা পুরন করে বিদেশে রপ্তানীর মাধ্যমে,যেমন বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্র অর্জন সম্ভব তেমনি বিপুল সংখ্যক প্রান্তিক ভূমিহীন জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা অত্যন্ত সহজ। এ ছাড়াও লাক্ষা চাষকে ঘিড়ে বৃক্ষশুন্য চর এলাকায় একদিকে যেমন বৃক্ষের সংখ্যা বাড়বে অন্যদিকে পাখির কলকাকলীতে ভবে উঠবে চর এলাকা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির সাথে সাথে চরএলাকার তাপমাত্রা কমে আসার পাশাপাশি দ্রুত ফিরে আসবে কৃষি পরিবেশ। বৃদ্ধিপাবে জমির উর্বরতা শক্তি। এ ছারাও বরই গাছ বনায়নের মাধ্যমে এর সংরক্ষন ও সম্প্রসারন করা হলে একদিকে লাক্ষা চাষ করে কৃষকেরা যেমন লাভবান হবেন অন্যদিকে ক্রেপ্ট গ্রাপ্টিং এর মাধ্যমে বরইয়ের জাত উন্নয়ন করে নানা জাতের সুমিষ্ট বরই/ কূল উৎপাদন করে ঐ গাছ থেকে এলাকার জনগোষ্ঠি আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ঘটাতে পারবেন বলেও ঐ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারনী গবেষনা) নামক একটি বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান এ গবেষনা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চর সোনাতনী ইউনিয়ন এলাকার বৈষয়িক,প্রাকৃতিক ও প্রান সম্পদ রক্ষা,বিকাশ ও সমৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে উবিনীগ এ গবেষনা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউনিয়ন এলাকায় ১২ টি গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় সাড়ে সাত হাজার আপনজালা (নিজ থেকে জন্মা) বরই গাছ রয়েছে। প্রতিটি বরই গাছ থেকে প্রতি বছর ২০ কেজি ছাড়ানো লাক্ষা উৎপাদন সম্ভব হবে। প্রতিগাছ থেকে কৃষকের আয় হবে ১৫০০/- টাকা, খরচ হবে ৪৫০/- টাকা, নীট লাভ হবে ১০৫০/- টাকা। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা এ কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন। এ কাজে এলাকার নারীপরুষদের উদ্বুদ্ধ করণ সহ লাক্ষা চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষন দেয়া অত্যান্ত জরুরী। সরকার ও সরকারের কৃষিবিভাগ লাক্ষা চাষকে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় এনে বানিজ্যিক ভিত্তেতে বড় আকারের লাক্ষা চাষের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে তরান্বিত করবেন এ বিষয়ে গবেষকদের পরামর্শ রয়েছে। দেশের কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যঃ কৃষি তথ্যসূত্রে জানাযায়, দেশে লাক্ষা চাষের সম্প্রসারণ ঘটানোর জন্য ১৯৬১ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্থানে বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাপাই নবাগঞ্জ জেলা শহরের পাশে “Brood Lac Multiplication Farm” নামে একটি লাক্ষা ফার্ম প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। মূলত ঐটিই ছিল দেশের বৃহৎ আকারের লাক্ষা গবেষনা কেন্দ্র। দেশ স্বাধীনের পর নানা প্রতিকুলতার কারনে এলাকায় লাক্ষাচাষ ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হতে থাকে। ১৯৮৪ সালে লাক্ষা ফার্ম এলাকাটিকে আম গবেষনা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে নবাবগঞ্জের কল্যানপুরস্থ হটিকালচার সেন্টারে ১১.০৪ হেক্টর জমির ওপর লাক্ষা গবেষনা কেন্দ্র স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানে লাক্ষা চাষ নিয়ে ক্ষুদ্র আকারে গবেষনা কার্যক্রম চলছে। গবেষক ও কৃষি অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দেশের সকল চরাঞ্চলে লাক্ষা গবেষনা সম্প্রসারণের জন্য জেলাভিত্তিক লাক্ষা গবেষনা কেন্দ্র স্থাপন ও কৃষকদের প্রশিক্ষন ও চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করনের জন্য সরকার উদ্যোগী হলে আগামি দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ লাক্ষা রপ্তানীকারক দেশে হিসেবে বিশ্বে স্থান করে নিতে পারবে। দেশে প্রতি কেজি পরিশোধিত লাক্ষার মূল্য প্রায় ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। লাক্ষা উৎপাদনের মৌসুম দুই ধরনের লাক্ষা পোকা বিভিন্ন ধরনের লাক্ষা ফসল উৎপাদনের সাথে জড়িত। বরই,পলাশ,বাবলা ইত্যাদি পোষক গাছসমূহে যে সমস্ত পোকা লাক্ষা উৎপাদন করে তাদের রং লাল বলে এদের রঙ্গিনী পোকা বলে। অন্য আর এক ধরনের লাক্ষা কীট কেবলমাত্র কুসুমগাছে ভালভাবে বৃদ্ধি লাভ ও বংশ বিস্তার করতে পারে এবং যে লাক্ষা উৎপাদন করে তাদের রং হলদে বা কুসুমী বলে এরা কুসুমী পোকা নামে পরিচিত। প্রতি বছর প্রত্যেক প্রকারের লাক্ষা পোকা দুইবার ফসল দিতে পারে। রঙ্গিনী পোকার ক্ষেত্রেঃ- কার্তিকী ফসল ‘অক্টোবর-নভেম্বর’ মাস(ফসল সংগ্রহের সময়) । বীজ লাক্ষা লাগানোর সময় জুন-জুলাই(আষাঢ়) মাস। বৈশাখী ফসল-‘এপ্রিল-মে(ফসল সংগ্রহের সময়)। বীজ লাক্ষা লাগানোর সময়- অক্টোবর-নভেম্বও (কার্তিক)মাস। আবার কুসুমী পোকার ক্ষেত্রেঃ- অগ্রহণী ফসল- ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাস(ফসল সংগ্রহের নময়)। বীজ লাক্ষা লাগানোর সময় জুন-জুলাই (আষাঢ়) মাস। জেঠুই ফসল- জুন-জুলাই (ফসল সংগ্রহের সময়)। বীজ লাক্ষা লাগানোর সময় জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী (মাঘ) মাস। এভাবে বাংলাদেশে বছরে মোট ৪টি লাক্ষা ফসল পাওয়া সম্ভব।  

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরের সাবেক এমপি কবিতা ও চয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা

রাজনীতি

শাহজাদপুরের সাবেক এমপি কবিতা ও চয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। ঘটনার দুই বছর পর বৃহস্পতিব...

শাহজাদপুরে ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে প্রাণ গেল শিশু হোসাইনের

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে প্রাণ গেল শিশু হোসাইনের

ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে মহাসড়ক পাড়ি দেয়ার সময় পাবনা থেকে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাস চাপায় হোসাইন সরদার নামের এক ৯ বছরের শ...

নগ্ননৃত্য ও দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত ১১ নারী ও ৫ ব্যবসায়ী গ্রেফতার

অপরাধ

নগ্ননৃত্য ও দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত ১১ নারী ও ৫ ব্যবসায়ী গ্রেফতার

শাহজাদপুরে বিভিন্ন নদী-বিলে নৌকায় পিকনিক ও বিনোদনের...

সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে শাহজাদপুরে মানববন্ধন

শাহজাদপুর

সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে শাহজাদপুরে মানববন্ধন

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরের পোরজনা ইউনিয়নের হরিনাথপুর(পাঠার মোর) গ্রামে সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে এলাকাবাসী ও পোরজনা উচ্চ...

শাহজাদপুরে পানিতে চেতনানাশক মিশিয়ে ৫ বাড়িতে চুরি! আটক ৪

অপরাধ

শাহজাদপুরে পানিতে চেতনানাশক মিশিয়ে ৫ বাড়িতে চুরি! আটক ৪

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে দুটি টিউবওয়েলের পানিতে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে ৫ বাড়ির পরিবারের সবাইকে অচেতন করে নগদ টাকা ও স্বর্ণলংক...

শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ‘মামলা না হওয়ার কারণ’ খুঁজছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি

শাহজাদপুর

শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ‘মামলা না হওয়ার কারণ’ খুঁজছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি

আওয়ামী লীগ–সমর্থিত সাবেক সংসদ সদস্য, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কি না, না হ...