শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
Abul Basar Picture ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ দিনে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বীধনতার ৪৩ তম বিজয় দিবস পালিত হবে। এ দিবসের প্রাক্কালেও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক সজ্ঞা যেমন নির্ধরণ করা হয়নি তেমনি  মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকাও সম্পন্ন করা যায়নি। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সামান্যতম সুযোগ-সুবিধা দেয়ায় এখন অনেকেই নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে দাবীদার হচ্ছেন।  জাতীগতভাবে আমরা কতটা দেউলিয়া এবং বিবেক ও আত্মসম্মানবোধ হারিয়ে ফেলেছি সেটা আমাদের কর্মকান্ড বিশ্লেষণেই প্রমানিত হবে।রাজনৈতিক ক্ষমতার আষ্টেপৃষ্ঠে থেকে  সরকারেরভীতরে এবং বাইরে অবস্থানকারী সরকারী আমলা, রাজনীতিবিদ, রজনৈতিক নেতা/ কর্মি ও সমর্থক সুযোগ সন্ধানীরা সবাই মুক্তিযুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধা  তালিকাভুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধার সুযোগ সুবিধা গ্রহন করছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে আমরা আমাদের নিজেদের পরিচয়টাও পাল্টিয়ে ফেলেছি। আমাদের সবারই ধান্দা  লুটপাটের। আমরা যেমন ভুয়া পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ, শিক্ষা অর্জন না করেও ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদসহ নানা পেশার সনদ সংগ্রহ করে ধান্দাবাজীর মাধ্যমে মানুষকে  যেমন প্রতারণা করছি তেমনি অবৈধ অর্থ আয় করে সম্পদের পহাড় গড়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছি। সকল ক্ষেত্রে আমাদের ধর্ম-কর্ম, ন্যায়-অন্যায়, বিবেকবোধ কোনটাই  কাজ করছে না। এক অজানা অন্ধকার পথে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। এ গন্তব্যের শেষ কোথায় ? এ প্রশ্ন জনমনে থাকলেও রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি এবং রাজনীতি হীনতা  জনগনকে উঠে দাঁড়াবারমত পথ ও পাথেও সৃষ্টি করতে পারছে না। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বহিঃপ্রকাশ যেভাবে ঘটানো হচ্ছে সেটি সম্পূর্নভাবে মুল চেতানার সাথে সাংঘর্ষিক। এ ক্ষেত্রে ভুয়া-মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধারও পিছিয়ে নেই। এ ধরনের ভুয়া সনদের কারখানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ দু’সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এর দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারবেন না। এবার মুল বিষয়ে তথ্য জানা যাকঃ   মুক্তিযুদ্ধকালীন কৌশলগত কারনে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে(১০টি ভৌগলিক অঞ্চল) এবং একটি অঞ্চলবিহীন (বিশেষ সেক্টরে) ভাগ করা হয়েছিল। ১ নং সেক্টরঃ- বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা, বৃহত্তর পাবর্ঞ্চত্য চট্টগ্রাম এবং নোয়াখালী জেলার কিছু অংশ (মুহুরী নদীর পূবর্ঞ্চ অঞ্চল) নিয়ে গঠিত হয়েছিল ১ নং সেক্টর। এর সাব-সেক্টরের সংখ্যাছিল- ৫। সেক্টর বাহিনীর সদস্য সংখ্যাছিল- ২,১০০ (যার মধ্যে- ১,৫০০ জন ইপিআর সদস্য, ২০০ জন পুলিশ, ৩০০ সেনা সদস্য, ১০০ জন নিৗ এবং বিমানবাহিনী সদস্য ছিল)। গেরিলা যোদ্ধার সংখ্যা ছিল- ২০,০০০ জন( যার মধ্যে ৮,০০০ জনকে সংগঠিত করা হয়েছিল বিভিন্ন দলে) ৩৫ শতাংশ গেড়িলা এবং সেক্টরবাহিনীর সবাইকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ঃ- ক্যাপটেন (পরবর্তীকালে মেজর) রফিকুল ইসলাম। ২ নং সেক্টরঃ- ফরিদপুরের পূর্বাঞ্চল, ঢাকা জেলার দক্ষিণাঞ্চল ও ঢাকা শহর, কুমিল্লা জেলা (আখাউড়া-আশুগঞ্জ রেল লাইনের পূর্বাঅংশ ব্যতিত) এবং নায়াখালী জেলা (মুহুরী নদীর পূর্বাঞ্চল ব্যতিত)। নিয়ে গঠিত হয়েছিল ২ নং সেক্টর। এর সাব সেক্টও সংখ্যাছিল- ৬। সেক্টর বাহিনী সদস্যসংখ্যা ছিল- ৪,০০০ জন। গেরিলা যোদ্ধার সংখ্যা ছিল- ৩০,০০০। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ঃ- মেজর ( পরবর্তীকালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) খালেদ মোশারফ। ৩ নং সেক্টরঃ- কুমিল্লা জেলার কিছু অংশ (আখাউড়া-আশুগঞ্জ রেল লাইনের উত্তর অংশে), সিলেট জেলার কিছু অংশ (চুরামনিকাটিলাখাই-শায়েস্তাাগঞ্জ অক্ষের দক্ষিণ অংশ), ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ সাব-ডিভিশন ও ঢাকা জেলার উত্তরাঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছিল ৩ নং সেক্টর। এর সাব-সেক্টর সংখ্যাছিল-১০। সেক্টরবাহিনী সদস্য সংখ্যা- ২,৫০০। গেরিলা যোদ্ধার সংখ্যাছিল- ২৫,০০০। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন- মেজন ( পরবর্তীকালে মেজর জেনারেল ) কে এম শফিউল্লাহ। ৪ নং সেক্টরঃ- সিলেট জেলার পশ্চিম সীমান্ত তামাবিল-আজমিরিগঞ্জ-লাখাই অক্ষ, দক্ষিণ সীমান্ত লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ অক্ষ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ৪ নং সেক্টর। এর সাবসেক্টর সংখ্যাছিল- ৬। সেক্টও বাহিনীসংখ্যা ছিল- ২,০০০। গেরিলাযোদ্ধা সংখ্যা ছিল- ৮,০০০। ক্টেও কমান্ডার ছিলেন ঃ- মেজর ( পরবর্তীকালে মেজর জেনারেল ) সি, আর ,দত্ত। ৫ নং সেক্টরঃ- তামাবিল-আজমিরিগঞ্জ অক্ষ বরাবর সিলেট জেলার পশ্চিমের বাকি অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ৫ নং সেক্টর। এর সাব-সেক্টও সংখ্যা ছিল- ৬। সেক্টও বাহিনী সদস্য সংখ্যা ছিল- ৮০০। গেরিলাযোদ্ধার সংখ্যা ছিল- ৭,০০০। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন- মেজর ( পরবর্তীকালে লেঃ জেনারেল ) মীর শওকত আলী। sector ৬ নং সেক্টরঃ- যমুনার পশ্চিমে রংপুর ও দিনাজপুর জেলা, রাণীশঙ্কাইল-পীরগঞ্জ-বীরগঞ্জ লাইনের উত্তরাংশ ও রংপুর জেলার পীরগঞ্জ-পলাশবাড়ী লাইনের উত্তর ও পূবর্াাঞ্চল নিয়ে ৬ নং সেক্টর গঠিত হয়েছিল। দিনাজপুরের রাণীশঙ্কাইল, পীরগঞ্জ, বীরগঞ্জ ও রংপুরের পীরগঞ্জ, পলাশবাড়ী ৭ নম্বর সেক্টরের অন্তভুর্ঞ্চক্ত করা হয়েছিল। সাব-সেক্টও সংখ্যা ছিল- ৫। সেক্টরবাহিনী সদস্য সংখ্যা ছিল- ১,২০০। গেরিলাযোদ্ধার সংখ্যা ছিল- ৬,০০০। সেক্টও কমান্ডার ছিলেন ঃ- উইং কমান্ডার ঃ- (পরবর্তীকালে, এয়ার ভাইস মার্শাল ) এম, কে, বাশার। ৭ নং সেক্টরঃ- সমগ্র রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া জেলা, দিনাজপুর ও রংপুরের অংশবিশেষ (দিনাজপুরের রাণীশঙ্কাইল-পীরগঞ্জ লাইনের দক্ষিণাংশ ও রংপুরের পলাশবাড়ী-পীরগঞ্জ লাইনের দক্ষিণাংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ৭ নং সেক্টর। সাব-সেক্টর সংখ্যাছিল- ৮। সেক্টর বাহিনী সংখ্যাছিল- ২,০০০। গেরিলাযোদ্ধার সংখ্যাছিল- ১০,০০০ জন। সেক্টও কমান্ডার ছিলেনঃ- মেজর (পরবর্তীকালে লে: কর্নেল ) কিউ, এন, জামান। ৮ নং সেক্টরঃ- কুষ্টিয়া ও যশোহরের সমগ্র এলাকা, ফরিদপুর জেলার অংশবিশেষ, খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমা। সীমানাঃ উত্তরে পদা নদী। পদা-যমুনার মোহনা থেকে মাদারীপুর পর্যন্ত এর পূর্বে সীমান্ত এবং মাদারীপুর-সাতক্ষীরা কাল্পনিক লাইন ছিলো দক্ষিণ সীমান্ত ৮ নং সেক্টরভুক্ত ছির। ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর ৯ নং সেক্টরে অর্ন্তর্ভুক্ত ছিল। সাব-সেক্টর সংখ্যা ছিল- ৭ । সেক্টও বাহিনী সদস্য সংখ্যাছিল- ২,০০০ জন। গেরিলাযোদ্ধার সংখ্যাছিল- ৭,০০০ জন। সেক্টও কমান্ডার ছিলেন ঃ- মেজর (পরবর্তীকালে মেজর জেসারেল) এম এ মঞ্জুর। এই সেক্টরের দায়িত্ব মেজর এম এ মঞ্জুর বুঝে নেয়ার আগে মেজর (পরবর্তীকালে, লেঃ কর্নেল) এম এ ওসমান চৌধুরী অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। ৯ নং সেক্টরঃ- সমগ্র বরিশাল, পটুয়াখালী ও খুলনা জেলা (সাতক্ষীরা বাদে), ফরিদপুর জেলার অংশ বিশেষ এবং গোপালগঞ্জ এলাকা নিয়ে ৯ নং সেক্টর গঠিত হয়েছিল্। এর সাব-সেক্টর সংখ্যাছিল- ৮ টি। সেক্টরবাহিনী সদস্য সংখ্যা ছিল- ৭০০ জন। গেরিলাযোদ্ধার সংখ্যা ছিল- ১০,০০০ জন। সেক্টও কমান্ডার ছিলেন ঃ- ক্যাপটেন (পরবর্তীকালে মেজর) এম এ জলিল। ১০ নং সেক্টরঃ- এই সেক্টরের জন্য কোন এলাকা নির্দিষ্ট করাা হয়নি। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং নৌ-বাহিনীর কমান্ডোদের সমন¡য়ে এই সেক্টর তৈরি করা হয়েছিল। যাতে করে স¡াধীন এলাকাগুলোকে রক্ষা করা যায় এবং বাংলাদেশের অর্ন্তবতীকালীন সরকার এই সকল এলাকায় প্রধান কার্র্যালয় স্থাপন করে কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারে। সৈন্য বাহিনী কমান্ডদের বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানো পাকিস্তানী নৌযান ধ্বংস ও বন্দর এলাকাগুলোতে আক্রমন চালানোর জন্য এই সেক্টও পরিচালিত হতো।। অভিযান পরিচালনার সময় কমান্ডোরাা ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডারদের তত্ত্বাবধানে ও পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করতেন। মিশন শেষে তারা ফিরে এসে ১০ নং সেক্টরের সদস্য হিসাবে অবস্থান করতেন। ১১ নং সেক্টরঃ- কিশোরগঞ্জ মহকুমা বাদে সমগ্র ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা। উত্তরে যমুনা নদীর তীরে বাহাদুরাবাদ ঘাট ও ফুলছড়িঘাট এই সেক্টরের অর্ন্তভুক্ত ছিলো। এর সাব-সেক্টও ছিল- ৮ টি। সেক্টরবাহিনী সদস্য সংখ্যা ছিল এক ব্যাটেলিয়ান। গেরিলাযোদ্ধার সংখ্যা ছিল- ২০,০০০। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ঃ-মেজর ( পরবর্তীকালে লে কর্নেল) এ তাহের। পরবর্তীকালে তিনটি রেগুলার আর্মি ব্রিগেড গঠনের সিন্ধান্ত নেয়া হয়। প্রত্যেক ব্রিগেডকেই ফোর্স' নামে অভিহিত করা হয়। এগুলো ছিল- মেজর জিয়াউর রহমানের তত্ত্বাবধানে 'জেড' ফোর্স, মেজর কে. এম, শফিউল্লাহ’র তত্ত্বাবধানে 'এস' ফোর্র্স এবং মেজর খালেদ মোশারফের তত্ত্বাবধানে 'কে' ফোর্স। 'কে' ফোর্স গঠন করা হয়েছিল ২ নং সেক্টরে। মেজর খালেদ মোশারফ সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালনের সাথে এই ফোর্সের নেতৃত্ব দেন। 'এস' পৈার্র্স গঠন করা হয় ৩ নং সেক্টরে। মেজর কে. এম. শফিউল্লাহ’র সেক্টও কমান্ডারের দায়িত্ব¡ পালনের সাথে এই ফোর্সেও নেতৃত্ব দেন। 'জেড' ফোর্স মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সিলেট ও ময়মনসিংহের জেলার উত্তরে ভারত সীমান্ত এলাকায় এই ফোর্স গঠন করা হয়। মেজর জিয়াকে কোন সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তিনি শুধুমাত্র 'জেড ফোর্সের কমান্ডার ছিলেন। অন্যদিকে, মেজর কে. এম. শফিউল্লাহ ৩ নং সেক্টর এবং 'এস' ফোর্স এবং মেজর খালেদ মোশারফ ২ নং সেক্টর এবং 'কে' ফোর্স ছিলেন একইসাথে সেক্টর ও ফোর্স কমান্ডার। সেক্টর সমূহের সীমানা নির্ধারন ও কমান্ডার নিয়োগের পর সেনাবাহিনী, ইপিআর ও পুলিশবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে একটি নতুন নিয়মিত যোদ্ধাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে একটি গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলার ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনাা ও চ’ড়ান্ত সিন্ধান্ত গৃহীত হয়। অসামরিক জনগণের মধ্য থেকে সে¡চ্ছাসেবকদের অল সময়ের মধ্যে প্রয়োজণীয় প্রশিক্ষণ দিয়েয় এক বিশাল গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলারর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। 'আক্রমণ কর, সরে পড়'- এই কৌশল অবলম্বণ করে গেরিলারা সারাদেশব্যাপী পাকিস্তানীদের উপর আক্রমণ চালাতে থাকবে। প্রতিদিন এমনি অসংখ্য ছোট-বড় আক্রমণে পাকিস্তানীদের হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলবে, তাদের লোকক্ষয় হতে থাকবে অব্যাহতভাবে এবং ক্রমান্বয়ে ভেঙ্গে পড়তে থাকবে তাদের মনোবল্। এমনি করে আঘাতের পর আঘাতে পর্যুদস্ত ও মনোবল ভেঙ্গে পড়া পাকিস্তানী সৈন্যদের উপরে সঠিক সময়ে বিদ্যুৎ গতির ক্ষিপ্র ও তীব্র, স্বল্প মেয়াদি আক্রমণ পরিচালনা করলে যুদ্ধের মাঠে তাদের পরাজয় অনিবার্য - এটাই ছিলো চূড়ান্ত ও কৌশল। পনের জুলাই সন্ধ্যায় সেক্টর কমান্ডার ও ফোর্স কমান্ডারগণ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সেখানে অবশ্য কোন প্রকার মত বিনিময় বা সেক্টর সমূহের পরিস্থিতি নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। এটি ছিলো কেবলই শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতামাত্র। সেক্টর এবং ফোর্র্স কমান্ডারগণ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির নিকট শপথ গ্রহণ করেন এবং আনুষ্ঠানকিভাবে বাংলাদেশ সরকারে প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। সেক্টর কমান্ডার এবং তিনটি ফোর্সের কমান্ডারগণ নিয়োগলাভ করেছিলেন বাংলাদেশ সরকারের নিকট থেকে। সাব-সেক্টর কমান্ডারগণের নিয়োগ বাংলাদেশ সরকার কিংবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে দেয়া হয়নি। তারা নিয়োগ লাভ করেছিলেন স¡-স¡ সেক্টর কমান্ডারগণের কাছ থেকে। মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতা এটাই যে,স্বশস্ত্র লড়াই ও আতœহুতির মধ্যদিয়েই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। সেখানে আবেগের কোন স্থান ছিল না। পাকবাহিনী ইচ্ছে করে স্বেচ্ছায় সারেন্ডার করেনি। যারা বিভিন্ন সেক্টরের অধীনস্থ হয়ে স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন কেবল তারাই মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবীদার হওয়ার যোগ্য। এ ক্ষেত্রে মুক্তিসেনাদের তথা গেড়িলাবাহিনীর তালিকা ভারত সরকারের কাছে রয়েছে। সেখান থেকে তালিকা সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করা যেত। ভুয়া এবং রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় এনে ইতিহাস বিকৃত করার জন্য জিয়া এরশাদ সরকার আমল থেকে শুর হয়েছিলু মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রনয়নের কাজ। এ কার্যক্রম রাজনৈতিক বিবেচনায় এখনও চলছে। প্রতিবার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের নামে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেডেই চলেছে। সুবিধাভোগী লোভীরা নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা সাজছে। এ থেকে পরিত্রান পাবার উপায় মিলছে না। অনেকেই দাবী করছেন, তারা দেশের মধ্যে থেকে যুদ্ধ করেছেন। প্রশিক্ষণ দেশের অভ্যন্তরেই নিয়েছেন। কথাটি এক ধরনের মিথ্যচার। দেশের মধ্যে কোন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছিল না এমনকি অস্ত্র গোলাবারুদ সরবরাহ দেয়ার মত কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। তবে দেশের অভ্যন্তরে একমাত্র রাজাকাররাই প্রশিক্ষণ নিয়েছে । পাকবাহিনীর নিকট থেকে অস্ত্র গোলাবারুদ পেয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তারা পাকিস্থান রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের স্বাধীনতা ও বাংগালি জাতীর মুক্তির জন্য লাড়াই করে আতœহুতি দিয়েছেন। দেশ আজ স্বাধীন হয়েছে। তথ্যমতে ১১ টি সেক্টরের অধীনে সেক্টর বাহিনীর সদস্য সংখ্যা- মোট-১৭’০০০ হাজার, গেরিলা যোদ্ধার সংখ্যা- মোট- ১,৪৩,০০০ হাজার সর্বমোট= ১,৬০,০০০ জন। বতমার্ন মুক্তিযোদ্ধার তালিকার বহর দেখলে হতভম্ব হতে হয়। আমি ৭ নং সেক্টরের একজন গেড়িলা যোদ্ধা। এ সেক্টরে সেক্টরবাহিনী ও গেড়িলাযোদ্ধা মিলিয়ে মোট =১২,০০০ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিল। বর্তমানে শুধু মাত্র সিরাজগঞ্জ জেলাতেই প্রায় ৫,০০০ মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত রয়েছে। এদের মধ্যে ২,৭০৭ জনের নাম মুক্তিবার্তা (লাল বই) তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শাহজাদপুর উপজেলাও পিছিয়ে নেই। প্রায় ৫ শতাধিক ব্যাক্তি মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪০৯ জন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা গ্রহণ করছেন। মুক্তিবার্তা (লাল বই) তে নাম রয়েছে- ৩১৯ জনের। ভয় পাবেন না আমরা শুধু মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট বিক্রি করি নাই এর সাথে সাথে নিজেদের পরিচয় এবং ইজ্জতও বিক্রি করেছি। এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাণনীয় মন্ত্রী মহোদয় দুঃখভরে তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, নিজের স্ত্রীর ভাগ যেমন অন্যকে দেয়া যায় না, তেমনি মুক্তিযুদ্ধ কিম্বা মুক্তিযোদ্ধার অংশীদারিত্ব অন্যকে দেয় যায় না। যারা দিয়েছেন বা দিচ্ছেন তারা ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পাবেন। আমি আমার মুক্তিযোদ্ধার অংশিদারিত্ব জানামতে কাউকে দেব না। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্যের সাথে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা একমত হবেন, একমত থাকবেন এটাই প্রত্যাশা।

সম্পর্কিত সংবাদ

গাজা  প্রশ্নে ব্রিটিশ মন্ত্রী ওয়ার্সির পদত্যাগ

আন্তর্জাতিক

গাজা প্রশ্নে ব্রিটিশ মন্ত্রী ওয়ার্সির পদত্যাগ

সিরাজগঞ্জের শ্রেষ্ঠ সার্কেল অফিসার ফাহমিদা হক শেলী

ফটোগ্যালারী

সিরাজগঞ্জের শ্রেষ্ঠ সার্কেল অফিসার ফাহমিদা হক শেলী

শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম, বিশেষ প্রতিবেদক, বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ : সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয় সন্মেলন ক...

শাহজাদপুরে ভূমি সপ্তাহ শুরু

শাহজাদপুরে ভূমি সপ্তাহ শুরু

ভূমি সংক্রান্ত নাগরিক সেবা আরও জনমুখী, তথ্য প্রযুক্তি নীর্ভর ও গ্রাহক বান্ধব করে তোলার লক্ষে গতকাল শনিবার উপজেলা ভূমি অফ...

মন্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আবদুল মজিদ মন্ডল আর নেই

রাজনীতি

মন্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আবদুল মজিদ মন্ডল আর নেই

সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবদুল মজিদ মন্ডল (৭২) আর ন...

শাহজাদপুরে এমপি’ র ডিও লেটার জাল করার  অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতে যুবকের ৬ মাসের কারাদন্ড

অপরাধ

শাহজাদপুরে এমপি’ র ডিও লেটার জাল করার অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতে যুবকের ৬ মাসের কারাদন্ড

এম এ হান্নান শেখঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব হাসিবুর রহমান স্বপন এর ডিও লেটার জাল করার অপরাধে রবিবার দ...