বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
শামছুর রহমান শিশির : জনগুরুত্বপূর্ণ শাহজাদপুর-সিরাজগঞ্জ রোড-ঢাকা মহাসড়কে ওভারলোডবাহী যানবাহন নিয়ন্ত্রন কেবলই সাইনবোর্ড সর্বস্ব হয়ে পড়েছে ! এ মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলা পূর্বদেলুয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক ঝূঁকিপূর্ণ একটি সেঁতুর ওপর দিয়ে ১০ টনের অধিক পন্যবাহী যানবাহন চলাচলে নিষেধমূলক সতর্কবাণী সম্বলিত সাইনবোর্ড দেওয়া থাকলেও তদারকীর অভাবে ওই সেঁতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শত শত যানবাহনের চালকেরা ২০ টন,২৫ টন,৩০ টন এমনকি ৩৫ টনেরও অধিক লোড নিয়ে এ নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে প্রতাপ ও দোর্দন্ড দাপটের সাথে যানবাহন চালনা করছে। পূর্বদেলুয়া ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কে এরূপ আরও বেশ কটি ঝূঁকিপূর্ণ সেঁতুর ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত গাঁয়ের জোড়ে যানবাহন চালকেরা দ্রুতগতিতে যানবাহন পরিচালনা করছে। ফলে যে কোন সময় পূর্বদলুয়ার ওই ঝূঁকিপূর্ণ সেঁতু ভেঙ্গে গিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে এবং বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে শংকা প্রকাশ করা হচ্ছে। আর ওই সেঁতু এলাকায় ‘সওজ’র সাইনবোর্ডই বলে দিচ্ছে সেঁতুটি কতটুকু ঝূঁকি বহন করছে। পাশাপাশি এ মহাসড়কসহ উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য স্থানে মহাসড়কের ঝূঁকিপূর্ণ সেঁতু এলাকাগুলোতে লোড নিয়ন্ত্রন করা না গেলে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে বিজ্ঞ মহল ধারনা করছেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ মহাসড়কে সতর্কতা ও নিষেধাজ্ঞামূলক নামসর্বস্ব সাইনবোর্ড মহাসড়কের উভয় পার্শ্বে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করলেও প্রকৃত অর্থে ওই ঝূঁকিপূর্ণ সেঁতু এলাকায় নিয়মিত তদারকীতে কোন জনবল না থাকায় ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে গোহালে নেই’-এ চিত্র বাস্তবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। ওই মহাসড়ক পরিদর্শন করে ও যানবাহন মালিক ও চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ মহাসড়কের র্পূবদেলুয়া এলাকায় (নগরবাড়ী ৫২ কিঃমিঃ ও বগুড়া ৬২ কিঃমিঃ মিটার ফলক) তীব্র দুইটি বাঁকের মুখে অত্যন্ত ঝূঁকিপূর্ণ একটি সেঁতুর ওপর দিয়ে শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর এলাকা থেকে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, নাটোর, নওগাঁ, রাজশাহী, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার বাঘাবাড়ী,পার্বতীপুর, রংপুর, পুলহাট, চরকাই, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, চাপাই নবাবগঞ্জ, মহেন্দ্র নগর, শান্তাহার, কুড়িগ্রাম এ ১৪টি বাফার স্টকে ইউরিয়া, এমওপিসহ সব ধরনের রাসায়নিক সার শত শত ট্রাকযোগে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া ঝূঁকিপূর্ণ এ স্থান দিয়ে বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানী তেল,কয়লা,খাদ্যশষ্যসহ বিভিন্ন ধরনের পন্য সরবরাহ করা হচ্ছে। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে সরকারিভাবে ধান, চাউল সংগ্রহ করে ওই সড়কপথে বাঘাবাড়ী খাদ্যগুদামসহ বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দরের জেটি এলাকায় নোঙ্গর করা কার্গো জাহাজে লোড করে নৌ-পথে সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে ও আরিচা ফেরিঘাটে ফেরিযোগে যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে ওভারলোড নিয়ে এ মহাসড়কে প্রতিদিন শত শত মালবাহী পরিবহন বেপোরোয়া গতিতে নিয়মিত চলাচল করছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, শাহজাদপুর-সিরাজগঞ্জ রোড-ঢাকা মহাসড়কের পূর্বদেলুয়ার ঝূঁকিপূর্ণ সেঁতুর ওপর দিয়ে ১০ টনের ওপর লোডবাহী যানবাহন চলাচলে সতর্কতা জারি করা হলেও ওভারলোডবাহী যানবাহন চালকেরা এ নিয়ম অবজ্ঞা করে মাত্রাতিরিক্ত পন্যের লোড নিয়ে চলাচল করায় সড়ক দূর্ঘটনার ঝূঁকি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝূঁকিপূর্ণ এ সেঁতুর ওপর দিয়ে ১৫ টন থেকে ৪০ টন পর্যন্ত লোডবাহী যানবাহন চলাচল করায় সেঁতুটির ঝূঁকিস্থানে লোহার পাটাতনেও ফাঁটল ধরছে ও আঁকাবাঁকা হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে,‘ এ মহাসড়কে গড়ে ১৫ থেকে ২০ টন পন্য পরিবহনের নিয়ম রয়েছে। এ মহাসড়কে চলাচলকারী পন্যবাহী যানবাহনের লোড ক্যাপাসিটি মূলত যানবাহনের পেছনের চাকার ওপর নীর্ভর করে। অর্থাৎ যানবাহনের চাকা যত বেশী হবে মহাসড়কে ট্রলির লোডপার্মিটও তত বেশী হবে। একটি মালবাহী ট্রলির পেছনে যদি দুই দুই অর্ধাৎ চার চাকা থাকে তাহলে ওই ট্রাকে সর্বোচ্চ ২০ টন পন্য ও মালামাল পরিবহন করা যাবে। আর যদি পন্যবাহী যানবাহনের পেছনে চার চার অর্থাৎ আট চাকা থাকে তাহলে মহাসড়কে অতিরিক্ত আরও ১০ থেকে ১৫ টন মালামাল বেশী পরিবহন করতে পারবে। পেছনের আট চাকার একটি যানবাহনে সর্বোচ্চো ৩৫ টন পর্যন্ত মালামাল ও পন্য মহাসড়কে পরিবহন করতে পারবে। চাকার ক্যাপাসিটি অনুযায়ী ট্রলির পেছনের ৪ চাকা থাকলে ২০ টনের ওপরে ও যানবাহনের পেছনের ৮ চাকা থাকলে ৩৫ টনের বেশী মালামালবাহী কোন যানবাহন মহাসড়কে চলার নিয়ম নেই। তবে মহাসড়কে চাকার সংখ্যানুপাতে লোড ক্যাপাসিটি বাড়লেও ওই ঝূঁকিপূর্ণ সেঁতুর ওপর দিয়ে ১০ টনের অধিক লোড নিয়ে প্রতিদিন শতশত যানবাহন কিভাবে চলাচল করছে?’ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট এমন এক প্রশ্ন করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ‘সওজ’র জনৈক্য ওই কর্মকর্তা কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। এদিকে, ঝূঁকিপূর্ণ এ স্থান দিয়ে ওভারলোড নিয়ে নিয়মিত অসংখ্য যানবাহন চলাচল করায় নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনা লেগে থাকার পাশাপাশি যানবাহনেরও ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। অথচ এ মহাসড়কের ঝূঁকিপূর্ণ সেঁতু এলাকায় অবিলম্বে নিয়মিত তদারকীর স্থায়ী বন্দোবস্ত করা না গেলে উত্তরাঞ্চলের সব ধরনের যানবাহন চলাচলে তীব্র ঝুঁকি বৃদ্ধি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও দিন দিন বাড়তেই থাকবে।

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরে মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশারের নামে সড়কের নামকরণ’র উদ্বোধন

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশারের নামে সড়কের নামকরণ’র উদ্বোধন

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম এর প্রধান সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার-এর নামে সড়ক নামকরণের উদ্বোধন...

এইডস আতঙ্কের ব্যাপ্তি, প্রতিরোধেই মিলবে মুক্তি

সম্পাদকীয়

এইডস আতঙ্কের ব্যাপ্তি, প্রতিরোধেই মিলবে মুক্তি

লাইট হাউস শাহজাদপুর ডিআইসি আয়েজিত প্রজেক্ট ফ্যসিলিটেশন টিমের ২০১৫ সালের ১ম সভায় উপস্থাপি...