রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
শামছুর রহমান শিশির, শাহজাদপুর থেকে : সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার পৌরসদরসহ ১৩ টি ইউনিয়নের অসংখ্য গ্রামাঞ্চলে শতশত বেকার এলাকাবাসী বানিজ্যিক ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ে অল্প টাকা বিনিয়োগে ৬ থেকে ১০ মাসের মধ্যে দেশী ও বিদেশী জাতের গরু মোটাতাজাকরণ করে দারিদ্র জয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এক সময়ে কিছুই ছিলনা তাদের।একে অন্যের দেখাদেতিতে দেশী ও বিদেশী জাতের বাছুর লালন পালন করে তারা আজ স্বনির্ভরশীল।কারো কাছে টাকার জন্য হাত পাততে হচ্ছেনা তাদের। বরং তারাই বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে অন্যের হিত সাধনে হাত বাড়িয়ে দিয়ে অন্যকেও স্বাবলম্বী হতে সহযোগীতা করছেন। মাত্র ৬ থেকে ১০ মাসে বাড়ির অন্যান কাজের পাশাপাশি মাত্র ৩/৪ টি ষাঢ় গরু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মোটাতাজাকরন করে ৫০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করে বেকার গ্রামবাসী এক দৃষ্টান্তমূলক নজির স্থাপন করেছেন। তাদের সাফল্যগাথা বাস্তব এ কাহিনী শুনতে কল্পবাক্য মনে হলেও অনেক সময় বাস্তবতা কল্পনাকেও হার মানায় ,তারই প্রমাণ মিললো উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গরু মোটাতাজাকরন খামার ঘুরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহজাদপুর উপজেলা পৌরসদরসহ ১৩ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বনে বানিজ্যিক ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশী গরু মোটাতাজাকরন করা হয় টেপরি ও পুরান টেপরি গ্রামে। এছাড়া উপজেলার পোতাজিয়া, রেশমবাড়ী, আঙ্গারু, বাড়াবিল, রুপবাটি, রাউতারা, পোরজনা, পুঠিয়া, ডায়া, নগরডালা, কাকুরিয়া, কাদাইবাদলা, চিথুলিয়া, কাশিনাথপুর, বনগ্রাম, সরিষাকোল, মশিপুর, নুকালী, শেলাচাপড়ী, চরাচিথুলিয়া, ভাইমারা,বহলবাড়ী, আহম্মদপুর, বিন্নাদায়ের, মাদলা, টিয়ারবন্দ, শাকতোলা, বিলকলমীসহ বিভিন্ন বসতবাড়ী ও গো-খামারে বানিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে । অনেক বেকার এলাকাবাসী মাত্র ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে দেশী ও বিদেশী জাতের ফ্রিজিয়ান, শাহীওয়াল, দেশী শংকর, অষ্ট্রেলিয়ান, জার্সিসহ বিভিন্ন জাতের এঁেড় বাছুর ক্রয় করে মোটাতাজাকরণ করছেন। এসব বাছুর ও এঁড়ে গরু ৬ থেকে ১০ মাস লালন পালন করে দ্বিগুন দামে এমনকি তার চাইতেও বেশী দামে বিক্রি করছেন। এ কাজে তাদের খুব একটা বেশী বেগ ও খরচ করতে হচ্ছে না। কারণ হিসাবে গরু মোটাতাজাকরন করা খামারীরা জানিয়েছেন শাহজাদপুরে এমনিতেই প্রচুর দুর্বা ঘাস জন্মে থাকে। গরুকে এসব ঘাস খাওয়াতে বাড়তি কোন খরচ করতে হয় না। ফলে একজন লোক ৩/৪ টি গরু খুব সহজেই বাড়ির অন্যান্য কাজের পাশাপাশি গরু মোটাতাজাকরন করার জন্য গরু প্রতিপালন করতে পারে। বানিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরন করা অনেক খামারীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ১৮ হাজার টাকার একটি গরু ৬ থেকে ১০ মাস লালন পালন করে অনায়াসে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। ৫০/৫৫ হাজার টাকার একটি ষাঢ় ৬ মাস থেকে ১ বছর লালন পালন করে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষাধিক টাকায় বিক্রয় করা হয়। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মুসলিম দেশ হওয়ায় প্রতি বছর কোববানীর ঈদে এসব গরুর ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফলে বেশ ভালো দামে গরুগুলো বিক্রি করা হয়ে থাকে। অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় ও অনেক বেকারদের দেখাদেখীতে বানিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরন করে শত শত বেকার স্বাবলম্বী হয়েছেন। বানিজ্যিক ভিত্তিতে সবচাইতে বেশী গরু মোটাতাজাকরন গ্রাম পুরান টেপরি গ্রাম রয়েছে মোটাতাজাকরণে অনেক গো-খামার। ওই গ্রামের স্বাবলম্বী অনেক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে ওই গ্রামবাসী বংশপরম্পরায় শিখে আসা মান্ধাতা আমলের পদ্ধতি অনুসরণ করে গরু মোটাতাজাকরণ করতে শুরু করেন। প্রথম থেকেই অনেক বেকার কৃষক সফলতা লাভ করেন। পরবর্তীতে অধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির অবলম্বনে অত্যন্ত লাভজনক এ পেশাকে অনেক বেকারই অনুসরণ করতে থাকেন। ওই গ্রামে বৃদ্ধি পেতে থাকে গরু মোটাতাজাকরণ করে স্বাবলম্বী এলাকাবাসীর সংখ্যা । ওই গ্রামের জনৈক হতদরিদ্র কৃষক মাজেদ আলী বিগত সময়ে অন্যান্যদের দেখাদেখিতে মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি ষাঁড় ক্রয় করে মোটাতাজাকরণের পর তা ২৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে নিজেই অবাক হয়েছেন এমন নজিরও ওই গ্রামে রয়েছে। বিশিষ্ট পশুবিজ্ঞানী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাকিবুল ইসলাম খানের বলেন,আগেকার মানুষ দু’একটি গরু পালতো শখ করে। বলদ গরু হলে হাল চাষের ক্ষেত্রে ,আর ষাঁড় গরু হলে তাকে অনেক কৃষক মাংসের জন্য তৈরি করতো। গোমাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে।অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশে গরুর সংখ্যা বেশী হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠইা জীর্ণশীর্ণকায় গরু। অথচ সামান্য যতœ নিলেই মোটাকাতাজকনের মাধ্যমে অধিক মাংস উৎপাদন করা সম্ভব । যা দেশে মাংসের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে শাহজাদপুরের গরু মোটাতাজাকরন করা শত শত স্বাবলম্বী জনগোষ্ঠির গরু মোটাতাজাকরন গো-খামার। উপজেলার পুরানটেপরি গ্রামে গরু মোটাতাজাকরন খামারীরা জানান,বংশপরম্পরায় আদি পুরুষের কাছ থেকে গ্রামের হাতে গোনা মুষ্টিমেয় কৃষক অতীত সময় হতেই ষাঁড় ও বলদের মোটাতাজাকরণের কাজ করতে থাকেন। ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ও পেশাটি লাভজনক বিবেচিত হওয়ায় ওই গ্রামের মুকুল শেখ, গোলাম মওলা, জহুরুল হক, মিজানুর রহমান, বাবলু মিয়া, সাখাওয়াত হোসেন, মো: আইয়ুব আলী, দুলাল মিয়া, নজরুল ইসলাম, গোলবার হোসেন, আলম মিয়া, আব্দুল বারেক, আমজাদ হোসেন, নিজাম উদ্দিন, আব্দুল কুদ্দুস, ঠান্ডু মিয়া, আনছার মিয়া, গোলাম হোসেন, আবু সাইদ, আবু তালেব, ভোলা মিয়া, আব্দুল আজিজ, শহীদ আলী, নূর মোহাম্মদ, নজরুল ইসলাম(২), খয়বার আলী, মোজাহার আলী, বাবলু মিয়া, ইদ্রিস আলী, আমির হোসেন, ইছা , সরোয়ার হোসেন, আবুল কালাম, কুরমান আলী, আজিজল হক, জহুরুল(২), ইনসাফ আলী, গাজীউর রহমান, রহম আলী, এরশাদ আলম, শাকাওয়াত হোসন, হান্নান প্রামানিক, আব্দুল মান্নান, জামাল হোসেন, ছাকের আলী, দেলওয়ার হোসেনসহ শতাধিক বেকার গ্রামবাসী মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন।তাদের ধারাবাহিক সাফল্য উপজেলার অন্যান্য গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী জানান,ফসলের মাঠে কৃষিকাজ বা বাড়ির অন্যান্য কাজের পাশাপাশি গরু মোটাতাজাকরণ করে অতি অল্প সময়ে বেকার আতœপ্রত্যয়ীরা শত শত বেকার এলাকাবাসী স্বাবলম্বী হরার পাশাপাশি,দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবাদন রাখছেন। তাদের মতো বেকার জনগোষ্ঠী ব্যাপক ভাবে বানিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরন করে প্রতি বছর দেশের গোমাংসের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে শত শত কোটি টাকা আয় করতে পারেন।এতে দেশের বেকারদের সংখ্যা একদিকে যেমন কমে যাবে,অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠে দারিদ্রতাকে জয় করে সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করতে পারেন ।

সম্পর্কিত সংবাদ

কালের নব যাত্রাপথে ইব্রাহিম মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়

শিক্ষাঙ্গন

কালের নব যাত্রাপথে ইব্রাহিম মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়

শাহজাদপুরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দেখতে চান ইউটিউবার শাহরিয়ার

তৃতীয় প্রজন্মের ভাবনা

শাহজাদপুরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দেখতে চান ইউটিউবার শাহরিয়ার

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের নাম মানুষের কাছে বেশ পরিচিত। তবে এখানে ঘুরে দেখার মতো আকর্ষণীয় অনেক জায়গা রয়েছে সেটি অনেকেই...

শাহজাদপুরে ৯৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য

শিক্ষাঙ্গন

শাহজাদপুরে ৯৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, শাহজাদপুর : শাহজাদপুর উপজেলায় ৯৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদ...

শাহজাদপুর-ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ রুটে বাস চলাচল বন্ধ

সিরাজগঞ্জ জেলার সংবাদ

শাহজাদপুর-ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ রুটে বাস চলাচল বন্ধ

বিশেষ প্রতিবেদক, শাহজাদপুর : সিরাজগঞ্জ জেলা মটর মালিক সমিতির অাওতাভূক্ত ৪টি বাসের স্টার্টিং পয়েন্ট শাহজাদপুর করার দাবী শ...

খানা-খন্দে ভরা বাঘাবাড়ী বড়াল সেতুর ওপর দিয়ে ঝূঁকিপূর্ণ চলাচল

জীবনজাপন

খানা-খন্দে ভরা বাঘাবাড়ী বড়াল সেতুর ওপর দিয়ে ঝূঁকিপূর্ণ চলাচল

শামছুর রহমান শিশির ও রাজীব রাসেল, শাহজাদপুর থেকে : সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দর এলাকার বড়াল সেতু...