শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
চন্দন কুমার আচার্য, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা পৃথিবীর মধ্যেই বাংলাদেশে সবচাইতে বেশী। সম্প্রতি সারাদেশে এই দুর্যোগে বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন। দুর্যোগের বলয়ে বন্দি বাংলাদেশের বুকে এই বজ্রদুর্যোগ দীর্ঘ করছে মৃত্যুর মিছিল। চলতি মাসে গত কয়েক দিনে বজ্রঝড়ে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৭৫ জন। গত সাত বছরে বজ্রপাতে বাংলাদেশে মারা গেছে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৮০ থেকে ১২০ দিন বজ্রপাত হচ্ছে বলে গবেষণায় প্রকাশ। বজ্রপাতের কারণে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তেমনি পরিবেশ দূষণের কারণেও বজ্রপাতের হার বেড়ে গেছে। হঠাৎ এই বজ্রপাত বৃদ্ধি এবং এতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে কেন? আবহাওয়াবিদদের কাছে বজ্রপাতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকলেও নেই কোনো প্রস্তুতি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের মাথাব্যথা না থাকলেও বজ্রপাত গবেষণায় বিশ্ব থেমে নেই। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বজ্রপাতের পেছনে বায়ুদূষণ অন্যতম কারণ। বজ্রপাতকে আবহাওয়া সম্পর্কিত দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কেউ কেউ। বাংলাদেশে বছরের দুটি মৌসুমে বজ্রপাত বেশি হয়। জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সাপ্তাহিক ও দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে বজ্রঝড়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব জিওগ্রাফির অধ্যাপক ড. টমাস ডব্লিউ স্মিডলিনের “রিস্ক ফ্যাক্টরস অ্যান্ড সোশ্যাল ভালনারেবেলিটি' শীর্ষক গবেষণা থেকে দেখা যায়, প্রতি বছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৪০টি বজ্রপাত হয়। গবেষণায় তিনি বলেন, বজ্রপাতে বছরে মাত্র দেড়শ'র মতো লোকের মৃত্যুর খবর বাংলাদেশের পত্রিকায় ছাপা হলেও আসলে এ সংখ্যা ৫০০ থেকে এক হাজার। গবেষণায় টমাস দেখান যে, ঝড় ও বজ্রঝড়ে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটছে বাংলাদেশে। বজ্রপাতের ভয়াবহতা ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে গবেষণার জন্য ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সার্ক মিটিওরোলজিক্যাল রিসার্চ সেন্টার (এসএমআরসি)। যোগাযোগ করা হলে এসএমআরসির গবেষণা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেছেন, “বজ্রপাতের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা দুটোই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের বজ্রপাতের প্রবণতা নিয়ে সার্ক স্টর্ম প্রজেক্ট নামে আমাদের গবেষণা চলছে।” তিনি বলেন, বাংলাদেশ বজ্রপাত-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। গত ১২ এপ্রিল বজ্রপাতে টাঙ্গাইল, গাইবান্ধা, হবিগঞ্জ, মাদারীপুর ও রাজবাড়ীতে ১২ জনের মৃত্যু হয়। পরদিন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় মারা যায় একজন। এর আগে গত ৬ এপ্রিল মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী ও বজ্রপাতে বাংলাদেশের ১৯টি জেলায় ২৮ জনের মৃত্যু ঘটে। আহত হয় অর্ধ শতাধিক। পরদিন ৭ এপ্রিল ১১ জন ও ৮ এপ্রিল মারা যায় সাত জন। ৯ এপ্রিল দেশের একাধিক স্থানে বজ্রপাতে শিশুসহ অন্তত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মহাভারতের দেবরাজ ইন্দ্রের অব্যর্থ অস্ত্রের নাম ছিল “বজ্র”। অসুরদের পরাস্ত করতে দধীচি মুনির বুকের অস্থিতে বানানো হয়েছিল এই অস্ত্র। সেসব পুরাণের কথা। জলবায়ু পরিবর্তন আর দুর্যোগের এই যুগে বজ্রের সংজ্ঞা “ঝড়বৃষ্টির সময় আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানির সঙ্গে সৃষ্ট প্রচ শব্দ”। প্রশ্ন ওঠে কীভাবে হয় এই বজ্রপাত? ইণ্টারন্যাশনাল ফোরাম অন টনর্নেডো ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন ফর বাংলাদেশ সূত্রে জানা যায়, প্রাকৃতিকভাবেই বায়ুমন্ডলে বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়ে মেঘে জমা থাকে। এই বিদ্যুৎ মেঘে দুটি চার্জ ধনাত্মক ও ঋণাত্মক হিসেবে থাকে। বিপরীত বিদ্যুশক্তির দুটো মেঘ কাছাকাছি এলেই পারস্পরিক আকর্ষণে চার্জ বিনিময় হয়। ফলে বিদ্যুৎ চমকায়। মেঘের নিচের অংশ ঋণাত্মক চার্জ বহন করে। আবার ভূপৃষ্ঠে থাকে ধনাত্মক চার্জ। দুই চার্জ মিলিত হয়ে তৈরি করে একটি ঊর্ধ্বমুখী বিদ্যু প্রবাহ রেখা, যা প্রচন্ড বেগে উপরের দিকে উঠে যায়। ঊর্ধ্বমুখী এই বিদ্যুৎ প্রবাহ উজ্জ্বল আলোর যে বিদ্যুৎ প্রবাহের সৃষ্টি করে তা-ই বজ্রপাত। বজ্রপাতের তাপ ৩০ থেকে ৬০ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, আকাশে যে মেঘ তৈরি হয়, তার ২৫ থেকে ৭৫ হাজার ফুটের মধ্যে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে বেশি। বজ্রপাতের গতি প্রতি সেকেন্ডে ৬০ হাজার মিটার বেগে নিচে নেমে যায়। এই বিপুল পরিমাণ তাপসহ বজ্র মানুষের দেহের ওপর পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার মৃত্যু হয়। বজ্রপাতের স্থায়িত্বকাল এক সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ। ঠিক এই সময়েই বজ্রপাতের প্রভাবে বাতাস সূর্যপৃষ্ঠের পাঁচ গুণ বেশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রচন্ড শব্দে কেঁপে ওঠে চারপাশ। শব্দের গতি আলোর গতির থেকে কম হওয়ায় বজ্রপাতের পরই শব্দ শোনা যায়। বজ্রপাত ভূমিকম্পের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী। একটি বজ্রপাতে প্রায় ৫০ হাজার অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ শক্তি থাকে। অথচ বাসাবাড়ির বিদ্যুৎ চলে গড়ে ১৫ অ্যাম্পিয়ারে। একটি বজ্র কখনও কখনও ৩০ মিলিয়ন ভোল্ট বিদ্যুৎ নিয়েও আকাশে জ্বলে ওঠে।

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরে গরু লালন পালন করে স্বাবলম্বী জোবেদা খাতুন

অর্থ-বাণিজ্য

শাহজাদপুরে গরু লালন পালন করে স্বাবলম্বী জোবেদা খাতুন

শাহজাদপুরে পোতাজিয়া গ্রামে ব্যবসায়ী আব্দুস সালামের শতাধিক গরু দেখাশোনা করেন তারই সহধর্মিণী জোবেদা খাতুন। মৌসুমী, বৃষ্টি,...

শাহজাদপুরে ১৪৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ বিতরণ

পড়াশোনা

শাহজাদপুরে ১৪৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ বিতরণ

নিজস্ব প্রতিনিধি: ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করে শ্রেণি পাঠদানের জন্য শাহজাদপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ বিতরণ কর...

শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্য আটক

অপরাধ

শাহজাদপুরে অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্য আটক

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে ছিনতাই হয়ে যাওয়া দুটি অটোবাইক উদ্ধারসহ অটোবাইক ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করেছে থানা পুলিশ। সোমবার...

মহান ওস্তাদজী শাহ্ সামসুদ্দীন তাবরেজি (রহ.)'র দিনব্যাপী বাৎসরিক ওরশ শুরু

ধর্ম

মহান ওস্তাদজী শাহ্ সামসুদ্দীন তাবরেজি (রহ.)'র দিনব্যাপী বাৎসরিক ওরশ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ (বুধবার) সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর পৌরসদরের দরগাহপাড়া মহল্লাস্থ করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত মখদুমিয়া...

কবিগুরুর ভাষ্কর্য ভালে পাকুড় বৃক্ষ জন্মেছে!

জানা-অজানা

কবিগুরুর ভাষ্কর্য ভালে পাকুড় বৃক্ষ জন্মেছে!

শামছুর রহমান শিশির: ঊনবিংশ শতাব্দিতে বাংলার সাহিত্য গগণে ও বিশ্ব জ্ঞান পরিমন্ডলে 'ভারস্যাটাইল জিনিয়াস' খ্যাত কবিগুরু রবী...

শাহজাদপুরে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষ! নিহত ২

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষ! নিহত ২

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাটি পরিবহনের ড্রাম ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে সিএনজির চালকসহ ২ জন...