শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
taj-mujib -স্বাধীন বাংলাদেশের বীর ভাই-বোনেরা- বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মুক্তিপাগল গণ-মানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সরকারের পক্ষ থেকে আমি আপনাদেরকে আমার সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমরা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি তাদের যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে গিয়ে মূলবান জীবন আত্নহুতি দিয়েছেন। যতদিন বাংলারে আকাশে চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা রইবে, যতদিন বাংলার মাটিতে মানুষ থাকবে, ততদিন মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামের বীর শহীদদের অমর স্মৃতি বাঙালির মানষপটে চির অম্লান হয়ে থাকবে। ২৫ মার্চ মাঝ রাতে ইয়াহিয়া খান তার রক্তলোলুপ সাঁজোয়া বানিনীকে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর লেলিয়ে দিয়ে যে নর-হত্যাযজ্ঞের শরু করেন তা প্রতিরোধ করার আহবান জানিয়ে আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আপনার সবকালের সব দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী মানুষের সাথে আজ একাত্ন। পশ্চিম-পাকিস্তানী হানাদার দস্যুবাহিনীর বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ আপনার গড়ে তুলেছেন। তা এমন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে যে,পৃথিবীর সমস্ত স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে আপনাদের এ অভূতপূর্ব সংগ্রাম সর্বকালের প্রেরণার উৎস্য হয়ে রইলো। প্রত্যেকদিনের সংগ্রামের দিনপুঞ্জি আমাদের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করছে, বিশ্বের কাছে আমাদের গৌরব বৃদ্ধি করছে। আপনাদের অদম্য সাহস ও মনোবল, যা দিয়ে আপনারা রূখে দাঁড়িয়েছেন ইহাঞিয়ার ভাড়াটে দস্যূদের বিরুদ্ধে, তার মধ্য দিয়ে ধুলি-কাঁদা আর রক্তের ছাপ মুছে একনতুন বাঙালি জাতি জন্ম নিল। পৃথিবীর কাছে আমরা ছিলাম শান্তি প্রিয় মানুষ বন্ধু,বাৎসল্য ও হাসিকান্যায়, গান, সংস্কৃতি আর সৌন্দের্যের ছায়ায় গড়ে ওঠা আমরা ছিলাম পল্লী-বাংলার মানুষ। পৃথিবী ভাবতো, আমরাও ভাবতাম, যুদ্ধ রণডংগা আমাদের থেকে অনেক দূরে, কিন্তু আজ ? আমাদের মানবিক মূল্যবোধ ও আদর্শের পতাকা সমুনুত রেখে আমরা আবার প্রমান করেছি যে, আমরা তীতুমীর-সূর্য সেনের বংশধর। স্বাধীনতার জন্য যেমন আমরা জীবন দিতে পারি, তেমনি আমাদের দেশ থেকে বিদেশী শত্রু-সৈন্যদের চিরতরে হটিয়ে দিতেও আমরা সক্ষম। আমাদের অদম্য সাহস ও মনোবলের কাছে শত্রু যত প্রবল ও পরাক্রম হোক না কেন, পরাজয় বরণ করতে বাধ্য।আমরা যদি প্রথম আঘাত প্রতিহত করতে ব্যার্থ হতাম তাহলে নতুন স্বাধীন প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কিছুদিনের জন্য হলেও পিছিয়ে যেত। আপনারা শত্রু সেনাদের ট্যাঙ্ক ও বোমারু বিমানের মোকাবেলা করেছেন এবং তাদেরকে পিছু হটে গিয়ে নিজ শিবিরে আশ্রয় নিকত বাধ্য করেছেন। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন,বাংলাদেশ আজ মুক্ত। বৈদেশিক সাংবাদিকেরা আজ স্বাধীন বাংলাদেশের যে কোনো জায়গায় বিনা বাধায় ঘুরে ড়োতে পারেন এবং আপনাদের এ বিজয়ের কথা তারা বাইরের জগৎকে জানাচ্ছেন। আজ প্রতিরোধ আন্দোলনের কথা গ্রাম-বাংলার প্রতিটি ঘড়ে ঘড়ে পৌঁছে গেছে। হাজার হাজার মানুষ আজকের এই স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়েছেন। বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর এর বীর বাঙালি যোদ্ধারা এই স্বাধীনতা সংগ্রামের যে যুদ্ধ তার পুরোভাগে রয়েছেন। এবং তাদেরকে কেন্দ্র করে পুলিশ, আনছার, মোজাহিদ, আওয়ামীলীগ, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী,ছাত্র, শ্রমিক ও অন্যান্য হাজা হাজার সংগ্রমী মানুষ এই যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। অতি অল্প সময়ে মধ্যে এদেরকে সমর কৌশলে পারদর্শী করা হয়েছে ও শত্রুদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া অস্ত্র ও গোলা-বারুদ দিয়ে বাংলার মুক্তিবাহিনীকে শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সাগরপারের বাঙালি ভাইয়েরা যে যেখানে আছেন আমাদেরকে অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য পাঠাচ্ছেন। সিলেট কুমিল্লা অঞ্চলে বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর খালেদ মোশারফকে অামরা সমর পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছি। খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে আমাদের মুক্তিবাহিনী অসীম সাহস ও কৃতিত্বের সাথে শত্রুর সঙ্গে মোকাবেলা করছেন এবং শত্রু সেনাদের সিলেট ও কুমিল্লার ক্যোন্টনমেন্টের ছাউনিতে ফিরে যেতে বাধ্য করেছেন। আমাদের মুক্তিবাহিনী শীঘ্রই শত্রুকে নিঃশেষ করে দেবার সংকল্প গ্রহণ করেছে। চট্রগ্রাম ও নোয়াখালি অঞ্চলে সমর পরিচালনার ভার পড়েছে মেজর জিয়াউর রহমানের ওপর। নৌ, স্থল ও বিমান বাহিনীর আক্রমণের মুখে চট্রগ্রাম শহরে যে প্রতিরোধব্যুহ গড়ে ওঠেছে এবং আমাদের মুক্তিবাহিনী ও বীর চট্রলার ভাইবোনেরা যে সাহসিকতার সাথে শত্রুকে মোকাবেলা করেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই প্রতিরোধ স্ট্যলিনগ্রাডের পাশে স্থান পাবে। এই সাহসিকতাপূর্ণ প্রতিরোধের জন্য চট্রগ্রাম আজ শত্রুর কবলমুক্ত হয়েছে। চট্রগাম শহরের কিছু অংশ ছাড়া চট্রগ্রাম ও সম্পূর্ণ নোয়াখালি জেলাকে ‘মুক্ত এলাকা’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ময়মনসিং ও টাঙ্গাইল অঞ্চলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মেজর শফিউল্লার ওপর। ময়মনসিং ও টাঙ্গাইল এলাকা সম্পূর্ণ মুক্ত করে আমাদের মুক্তিবাহিনী ঢাকার দিকে আগ্রসর হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পূর্বাঞ্চলের এই তিনজন বীর সমর পরিচালক ইতেমধ্যে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন এবং একযোগে ঢাকা ঢাকা রওনা হবার পূর্বেই পূর্বাঞ্চলের শত্রুদের ছোট ছোট শিবিরগুলোকেসমূলে নিপাত করবার পরিবল্পনা গ্রহন করেছেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ইপিআর এর বীর সেনানী মেজর ওসমানের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কুষ্টিয়া ও যশোর জেলার। কুষ্টিয়ার ঐতিহাসিক বিজয়ের পর আমাদের মুক্তিবাহিনী সমস্ত এলাকা থেকে শত্রুবাহিনীকে বিতাড়িত করেছে এবং শত্রুসেনা এখন যশোর ক্যান্টনমেন্টে ও খুলনা শহরের একাংশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। মেজর জলিলের ওপর ভাড় দেয়া হয়েছে ফরিদপুর-খুলনা-বরিশাল ও পটুয়াখালির। উত্তরবঙ্গে আমাদের মুক্তিবাহিনীর মেজর আহমদের নেতৃত্বে রাজশাহীকে শত্রুর কবল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করেছেন। মেজর নজরুল হক সৈয়দপুরে ও মেজর নওয়াজেশ রংপুরে শত্রুবাহিনীকে সম্পূর্ণ অবরোধ করে বিব্রত করে তুলেছেন। দিনাজপুর,পাবনা ও বগুড়া জেলাকে সম্পূর্ণ মুক্ত করা হয়েছে। সৈয়তপুর ও রংপুর ক্যান্টমেন্ট এলাকা ছাড়া এলাকার বাকি অংশ এখন মুক্ত। স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের অভূতপূর্ব সাপল্য ভাবষ্যতে আরো নতুন সাফল্যের দিশারী। প্রতিদিন আমাদের মুক্তিবাহিনীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। আর একই সঙ্গে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসছে শত্রুর কেড়ে নেয়া হাতিয়ার। এই প্রাথমিক বিজয়ের সাথে সাথে মেজর জিয়াউর রহমান একটি বেতারকেন্দ্র গড়ে তোলেন এবং সেখান থেকে আপনার শুনতে পান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম কন্ঠস্বর। এখানেই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশে সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়। আপাতত আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান কার্যালয় স্থাপিত হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মুক্ত এলাকায়।পূর্বাঞ্চালরে সরকারি কাজ পরিচালনার জন্য সিলেট কুমিল্লা এলাকায় বাংলাদেশ সরকারের আরেকটি কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। আমরা এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্রের প্রতিনিধি, কূটনৈতিক,রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, তারা যেন স্বচক্ষে এবং সরোজসিনে দেখে যান যে, স্বাধীন বাংলাদেশ আজ সত্যে পরিনত হয়েছে। সাথে সাথে আমরা সমস্ত বন্ধু রাষ্ট্র ও পৃথিবীর সমস্ত সহানভূতিমীল ও মুক্তিকামি মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।যারা আমাদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক, অথচ বর্বর ইসলামাবাদ শক্তি যাদের এই মানবিক কাজটুকু করবার বিরুদ্ধে নিষেধ ইঁচিয়ে দাঁড়িয়েছে তারা এখন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারেরসাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন। আমরা যদিও বিদেশ থেকে পাঠানো ত্রাণসামগ্রীর জন্য কৃতজ্ঞ, কিন্তু এটা ভুলে গেরে চলবে না যে, আজকের দিনে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ত্রাণের বাণী বয়ে আনেতে পারে উপযুক্ত এবং পর্যাপ্ত হাতিয়ার, যা দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে এবং রক্ষা করতে পারে তার প্রিয় পরিজনের জান, মান আর সম্ভ্রব। বৃহৎ শক্তিবর্গের অস্ত্রাগারে আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত জেনারেল ইয়াহিয়ার হানাদারবাহিনী আজ আমাদের শান্তিপ্রিয় ও নিরস্ত্র বাঙালির কন্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার এক পৈশাচিক উন্মত্ততায় মত্ত। আমরা নেইসব বৃহৎ শক্তিবর্গের কাছে মানবতার নামে আবেদন জানাচ্ছি যেন এই হত্যকারীদের হাতে আর অস্ত্র সরবরাহ করা না হয়। এ সমস্ত অস্ত্র দেয়া হয়েছিল বিদেশী শত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য- বাংলার নিস্পাপ শিশুদেরকে ও নিরাপোরাধ নর-নারীকে নির্বিচারে হত্যার করার জন্য নিশ্চয়ই এ অস্ত্র তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়নি। বাংলাদেশের কৃষক শ্রমিকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্টার্যিত বৈদেশিক মূদ্রার বিনিময়ে যে আস্ত্র কেনা হয়েছে এবং যাদের টাকায় ইয়াহিয়া খানের এই দস্যুবাহিনী পুষ্ট, আজ তাদেরকেই নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। আমরা অস্ত্র সরবরাহকিারী শক্তিবর্গের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে, শুধু আস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করলেই চলবে না, যে অস্ত্র তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে সে অস্ত্র দিয়ে সাড়ে সাতকোটি বাঙালিকে স্তব্ধ করে দেয়ার প্রয়াস বন্ধ করতে হবে। পৃথিবীর জনমতকে উপেক্ষা করে আজও ইয়াহিয়ার ভাড়াটে দস্যুরা বাংলাদেশের বুকে নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা সমস্ত দেশের কাছে অস্ত্র সাহায্য চাচ্ছি এবং যারা জাতীয় জীবনে স্বাধীনতাকে সর্ব্বোচ্য মূল্য দিয়ে এসেছেন ও নিজেদের দেশেও হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তারা আমাদের এ ডাকে সাড়া না দিয়ে পারবে না, এ বিশ্বাস আমরা রাখি। বিদেশি বন্ধু ও রাষ্ট্রসমূহের কাছে যে আস্ত্র সাহায্য আমরা চাইছি তা আমরা চাইছি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে- একটি স্বাধীন দেশের মানুষ আর একটি স্বাধীন দেশের মানুষের কাছে। এই সাহায্য আমরা চাই শর্তহীনভাবে এবং াামাদের স্বাধীন সংগ্রামের প্রতি তাদের শুভেচ্ছা ও সহানুভূতির প্রতিক হিসেবে।–হানাদারদের রূখে দাঁড়াবার এবং আত্নরক্ষার অধিকার হিসেবে, যে অধিকার মানব জাতির শ্বাশ্বত অধিকার। বহুবছরের সংগ্রাম, ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে আমরা াাজ স্বাধীন বাংলাদেশের পত্তন করেছি। স্বাধীনতার জন্য যে মূল্য আমরা দিয়েছি তা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্র হবার জন্য নয়। পৃথিবীর বুকে স্বাধীন সার্বভৌম একটি শান্তিকামী দেশ হিসাবে রাষ্ট্র পরিবারগোষ্ঠিতে উপযুক্ত স্থান আমাদের প্রাপ্য। এ অধিকার বাংলাদেশের সাড়ে সাতকোটি মানুষের অধিকার। আমাদের বাঙালি আইয়েরা, আপনার পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে থাকুন না কেন, আজকে মাতৃভূমির এই দূর্দিনে সকল প্রকার সাহায্য নিয়ে আপনাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে অস্ত্র কিনে আমাদের মুক্ত এলাকায় পাঠিয়ে দিন, যাতে করে আমাদের মুক্তিবানিীর সৈন্যরা আতি সত্ত্বর সে অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে তার মাতৃভূমির রক্ষা করবার কাজে। ইতোমধ্যেই আমাদের বাংলাদেশের ঘরে ঘরে প্রত্যেকেই নিজেদের হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন। যাদের হাতে আজও আমরা আধুনিক অস্ত্র তুলে দিতে পারিনিতাদের আহবান জানাচ্ছি, যার হাতে যা আছে তাই নিয়ে লড়াইতে অংশ নিন। আমাদের স্থির বিশ্বাস যে, শীগ্রই আপনাদের হাত আমরা আধুনিক অস্ত্র তুলেদিতে পারবো । ইতোমধ্যে সব আধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের ট্রেনিং নেবার জন্য নিকটবর্তী সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। যাদের হাতে আধুনিক অস্ত্র নেইতাদেরও এই জণযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও ক্ষমতা রয়েছে। শত্রুর ছত্রী ও গুপ্তবাহিনীকে অকেজো করে দেয়ার কাজে আপনি সক্রিয় অংশ গ্রহণ করতে পারেন।সম্মুখ সমরে কাজ করতে না পারলেও রাস্তা কেটে পুল উড়িয়ে দিয়ে এবং আরো নানাভাবে আপনার উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে শত্রুকে হয়রান ও কাবু করতে পারেন। নদী পথে শত্রু যাতে না আসতে পারে তার সম্ভাব্য সমস্ত ব্যবস্থা আপনাকেই গ্রহণ করতে হবে ও সবদিকে কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে। নদী পথে সমস্ত ফেরি, লঞ্চ ও ফ্লাট অকেজো করে দিতে হবে। এ সমস্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য স্থানীয় এলাকার সমর পরিচালকদের সাথে সংগ্রাম পরিষধের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হবে, এবং তার আদেশ ও নির্দেশাবলি মেনে চলতে হবে। যুদ্ধে অংশ নেয় চাড়াও বাংলাদেশকে সবদিক থেকে বাঁচিয়ে রাখবার দায়িত্বকেও অবহেলা করলে চলবে না। শাসনকার্য়ে অভিজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট বাঙালি অফিসারদের মধ্যে যারা এখনো আমাদের সাথে যোগ দিতে পারেন নি, তারা যে যেখানেই থাকুন না কেন, আমরা তাদেরকে মুক্ত এলাকায় চলে আসার আহবান জানাচ্ছি। অনুরূপভাবে আমরা অহবান জানাচ্ছি, সমস্ত বুদ্ধিজীবি, টেকনিশিয়ান,ইঞ্জিনিয়ার,,সংবাদপত্রসেবী, বেতার শিল্পী. গায়ক ও চারুশিল্পিদের, তারা যেন অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। আমাদের সামনে বহুবিধ কাজ-তার জন্য বহু পারদর্শির প্রয়োজন এবং আপনারা প্রত্যেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের সেবায় আত্ননিয়োগ করার সুযোগ পাবেন। আমরা বিশেষ করে সম্স রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাংলাদেশের এই সংঘবদ্ধ জনযুদ্ধে সামিল হতে আহবান জানাচ্ছি। হানাদার শত্রুবাহিনীর সাথে কোনো প্রকার সহযোগিতা বা সংচ্রব রাখা চলবে না। বাংলাদেশে আজ কোন মীরজাফরের স্থান নেই। যদি কেউ হঠাৎ করে নেতা সেজে শত্রু সৈন্যের ছত্রছায়ায় রাঝনৈতিক গোর থেকে গাত্রোত্থান করতে চায়, যাদেরকে গত সাধারণ নির্বাচণে বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণ্যভাবে প্রত্যাখান করেছে, তারা যদি এই সুযোগে বাংলাদেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, বাংলাদেশের স্বাথুবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়, তবে বাংলাদেশের মানুষ তাদের সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেবে, তারা সাড়ে সাতকোটি বাংলাদেশবাসীর রোষবহ্নিতে জ্বলে খাক হয়ে যাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের দেশের ওপর একটা যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় হয়েছে। কাজেই স্বাধীন জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে বাধ্য। হয়তো কোথাও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি দেখা যেতে পারে। আমাদের উচিত হবে যতদুর সম্ভব ব্যায়সংকোচ করা এবং জিনিসপত্র কম ব্যবহার করা। দোকানদার ওব্যবসায়ীদের কাছে বিশেষ অনুরেধ তারা যেন মজুতদারী ও কালোবাজারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং জিনিষ পত্রের দাম যাতে সাধারণ লোকের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে না যায় তার দিকে দৃষ্টি রাখেন। এ যুদ্ধে আমাদের জয় অবশ্যম্ভাবী তাতে সন্দেহের কারণ নেই। আপনা ইতোমধ্যে সাহস ও ত্যাগের বিনিময়ে যে জিয় অর্জন করেছেন শত্রুপক্ষ তা আজ পষ্টই বুঝতে পেরেছে। তারা ভেবেছিল যে, আধুনিক সমর সজ্যায় ও কামানের গর্জনের নীচে স্তব্ধ করে দেবে বাঙালির ভবিষ্যত আশা-ভরসা। আর চোখ রাঙিয়ে ভয় দেখিয়ে বাঙালিকে তারা বুটের নিচে নিস্পেষণ করবে। কিন্তু তাদের সে আশা আজ ধুলিস্যাত হয়ে গেছে। আমরা তাদের মারমুখী আক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে এবং তাদেরকে প্রতিনিয়ত হটিয়ে দিচ্ছি এতে তাদের সমস্ত ষঢ়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে গেছে। তাদের খাদ্য সরবরাহের সকল পথ আজ বন্ধ- ঢাকার সাথে আজ তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। উড়ো জাহাজ থেকে খাবার ফেরে এদরকে ইয়াহিয়া খান আর বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারবেন না। ওদের জ্বালানি সরবরাহের লাইন আমাদের মুক্তিবাহিনী বন্ধ করে দিয়েছে। ইয়াহিয়ার উড়োজাহাজ আর বেশিদিন বাংলাদেশের আকাশে দেখা যাবে না। বাংলাদেশের সাড়ে-সাতকোটি উত্তাল জনসমুদ্রের মাঝখানে ওরা াাজকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত। বাংলাদেশের আকাশে শীঘ্রই ঝড়ের মাতম শুরু হচ্ছে। ওরা জানে ওরা হানাদার। ওরা জান্ ওেদের বিরুদ্ধে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের ভ্রুকুটি ও ঘৃণা। ওরা-ভীত- ওরা সন্ত্রস্থ-মৃত্যু ওদের সামনে পরাজয়ের পরোয়ানা নিয়ে হাজির। তাই ওরা উন্মাদের মতো ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছে। পৃথিবী আজ সজাগ হয়েছে। পৃথিবীর এই অষ্টম বৃহৎ রাষ্ট্র বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্বের মানুষ যেখানে ওরা ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। বিশ্বর মানুষ আজ আর ইসলামাবাদ সরকারের আইন-শৃংখলা রক্ষার সমথ্যা যুক্তি আর অজুহাত স্বীকার করে নিতে রাজি নয়। যে সমস্ত সাংবাদিক বাংলাদেশের এই যুদ্ধের ভয়াবহতা ও নৃশংসতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তারা ইয়াহিয়ার এই অন্যায় ও অমানবিক যুদ্ধ আর ধ্বংসলীলার বিরদ্ধে নিন্দা জানাচ্ছেন। অপরপক্ষে যে সমস্ত সাংবাদিক আমাদের মুক্ত এলাকা পরিদর্শণ করেছেন তারা বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের মানুষের এই বীর প্রতিরোধ যুদ্ধের খবর আর বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ইয়াহিয়া সরকারের ধ্বংস ও তান্ডবলীলার চাক্ষুস প্রমাণ। ইতোমধ্যে সোভিয়েট রাশিয়া এবং ভারতবর্ষ এই নির্বিচার গণ-হত্যার বিরুদ্ধে তাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে এবং সোভিয়েট রাশিয়া অবিলম্বে এই হত্যাযজ্ঞ ও নিপীড়ণ বন্ধ করার আহব্বান জানিয়েছে। গ্রেট বৃটেনও বাংলাদেশের এ অবস্থা সম্পর্কে সজাগ হয়ে উঠেছে। যে সমস্ত পাকিস্থানি বিমান মুত্যুর সরঞ্জাম নিয়ে ঢাকা াাসার পথে জ্বালানি সংগ্রহ করছিলো, তাদেরকে জ্বালানি সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র সিংহল ও ব্রহ্মদেশ। যদি কোন কোন দেশ বাংলাদেশের ঘটনাবলিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যপার বলে অভিহিত করেছেন, তবুও এ কথা এখন দিবালোকের মতো সত্য হয়ে গেছে যে, সাড়ে-সাতকোটি মানুষকে পিষে মারার চেষ্টা, তাদের তাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ব্যার্থ করে ষঢ়যন্ত্র একটি আন্তর্জাতিক ব্যাপারে পরিগনিত হয়েছে এবং এই সমস্যা আজ পৃথিবীর সমস্ত মানুষের বিবেককে নাড়া দিচ্ছে। বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে আমরা বিদেশে অবস্থানরত বাঙালি ভাইদের বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি ও পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অনুরোধ জানিয়েছি। পৃথিবীর বিভিন্ন রাজধানীতে আমরা আমাদের স্বাধীনতা ও আত্নরক্ষার সংগ্রামে সাহায্য ও সহানুভূকত চেয়ে পাঠিয়েছি। আমাদের যে সমস্ত ভাইবোন শত্রুকবলিত শহরগুলোতে মুত্যু ও অসম্মানের নাগপাশে আব্দ্ধ,আদিম নৃশংসতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে শাহস ও বিশ্বাসের সাথে মুক্তির পথ চেয়ে আছেন তাদেরকে আমরা এক মুহুর্তের জন্য ভুলতে পারিনা। যারা আমাদের সংগ্রামে শরীক হতে চান তাদের জন্য রইলো আমাদের আমন্ত্রণ। যাদের পক্ষে নেহাতই মুক্ত এলাকায় আসা সম্ভব নয় তাদেরকে আমরা আশ্বাস ও প্রেরনা দিচ্ছি য়ে বাংলাদেশের সাড়ে-সাতকোটি মানুষের পক্ষ থেকে, শহীদ ভাইবোনদের বিদেহী আত্নার পক্ষ থেকে। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারেনা। ইনশাআল্লাহ জয় আমাদের সূনিশ্চিত। অামাদের যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে আমাদের স্থির বিশ্বাস, কারণ প্রতিদিনই আমাদের শক্তি বৃদ্ধি হচ্ছে এবং অমাদের এ সংগ্রাম পৃথিবীর স্বীকৃতি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের মুক্তিবাহিনীর হাতে শেষ পরাজয় মেনে নেয়ার আগে শত্রুরা আরো অনেক রক্ত ক্ষয় আর ধ্বংসলীলা সৃষ্টি করবে। তাই পুরাতন পূর্ব পাকিস্তানের ধ্বংসাবশেষের ওপর নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলবার সংকল্পে আমাদের সবাইকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। আমাদের এই পবিত্র দায়িত্ব পালনে একমুহুর্তের জন্যও ভুলে গেলে চলবে না যে, এ যুদ্ধ গণযুদ্ধ এবং সত্যিকার অর্থে এ কথাই বলতে হয় যে, এ যুদ্ধ বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের যুদ্ধ। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, কৃষক,শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, ছাত্র-জনতা,তাদের সাহস ও তাদের দেশপ্রেম,তাদের বিশ্বাস, স্বাধীন বাংলাদেশের চিন্তায়তাদের নিমগ্নপ্রাণ , তাদের আত্নহুতি, তাদের ত্যাগ ও তিতিক্ষায় জন্ম নিল এই স্বাধীন বাংলাদেশ। সাড়ে-সাতকোটি মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ফলপ্রসু হয়ে উঠুক আমাদের স্বাধীনতার সম্পদ। বাংলাদেশের নিরন্ন দুঃখী মানুষের জন্য রচিত হোক এক নতুন পৃথিবী, যেখানেমানুষ মানুষকে শোষণ করবে না। আমাদের প্রতজ্ঞিা হোক ক্ষুধা, রোগ, বেকারত্বে আর অজ্ঞানতার অভিষাপ থেকে মুক্তি। এই পবিত্র দায়িত্বে নিয়েজিত হোক সাড়ে-সাতকোটি বীর বঙালি ভাইবোনের সম্মিলিত মনোবল ও অসীম শক্তি। যারা আজ রক্ত দিয়ে উর্বর করেছে বাংলাদেশের মাটি যেখানে উৎকর্ষিত হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন মানুষ, তাদের রক্ত আর ঘামে ভেজা মাটি থেকে গড়ে উঠুক নতুন গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা; গণমানুষের কল্যাণে সাম্য আর সুবিচারের ভিত্তি প্রস্তরে লেখা হোক ‘জয় বাংলা’, ‘জয় স্বাধীন বাংলাদেশ’। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে প্রচারিত হয়েছিল।

সম্পর্কিত সংবাদ

উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার

উল্লাপাড়া

উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার

তানিম তূর্যঃ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর পুকুর থেকে ইয়াম ইসলাম( ৮) নামের এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে...

উপজেলা কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

অর্থ-বাণিজ্য

উপজেলা কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

শাহজাদপুর উপজেলা সংবাদদাতাঃ শাহজাদপুর উপজেলার কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির নব-নির্বাচিত ক...

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা

উপ-সম্পাদকীয়

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা