বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

(২০০৯ সাল থেকে আওয়ামীলীগ সরকার ৬ষ্ঠ বারের মত মু্ক্তিযোদ্ধা কার্যক্রম শুরু করে)

Abul-Basar-Picture আবুল বাশার গত ২০০৯ সাল থেকে ৬ষ্ঠ বারের মত আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার মক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করণের উদ্যোগ গ্রহন করেছিল। ২০১৫ সাল অবধি এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০০৯ সালের ২৮ আগষ্ট মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক স্মারকপত্রে “প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করণ ও তালিকাভুক্ত অমুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠনের দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। ঐ সার্কুলার অনুযায়ী উভয় কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এমসিএ অথবা তাহার অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আস্থাবান বর্তমান সংসদ সদস্যগন কাজ করবেন”। “উপদেষ্টাগন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনাক্রমে কমিটির সদস্যদের মনোনীত করবেন”। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানাযায়, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মন্ত্রনালয়ে আদেশ অমান্যকরে এমনকি সাবেক এমসিএদের বিষয়টি অবহিত না করেই গোপনে যোগসাজসে উপজেলা ও জেলা যাচাই-বাছাই কমিটি গঠিত হয়েছিল। এসময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাকরীর মেয়াদ বৃদ্ধি পুত্র-কন্য, নাতি-পুতিদের চাকরির কোঠা সহ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধির বিষেশ সুযোগ সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দেয়। এরপর থেকেই নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধা সাজার হিড়িক পড়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরীর মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগে চাকরীজীবিরিা মুক্তিযোদ্ধা সাজার জন্য ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। তেমনি ভাবে সুযোগ সন্ধানীরাও অর্থের বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা সাজে। এভাবেই তারা যেনতেন প্রকারে অর্থের বনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছেন অন্যরা তৎপরতা চালাচ্ছেন। তারা মনে করছেন মুক্তিযোদ্ধা অমুক্তিযোদ্ধ যাচাই-বাছাই করতে করতে দুই বছর পার হয়ে যাবে তখন আর ঠেকায় কে ? আর এভাবেই, কেরানী, ডাক্তার, প্রকৌশলী, ম্যজিষ্ট্রেট, জজ, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, অমুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সদস্যরা সবাই ঢালাওভাবে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুযোগ করে নিয়েছেন। পুনরায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন জমা নেয়ায় সুযোগ সন্ধানীরা আবেদন করেছেন। তারা নানা কায়দায় দলবাজী আতœীয়তার বন্ধনে ও মোটা অংকের অর্থকরির বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা সাজার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন। এখন এদেরকে বেছে বের করবে কে ? সরকারের উচিৎ হবে যে কমিটির মাধ্যমে যাচাই বাছাই সম্পন্ন হবে সে কমিটির যিনি মুক্তিযোদ্ধ হিসেবে সদস্য হবেন তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিনা সেটা প্রথমে যাচাই-বাছাই করা। এমন অনেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত রয়েছেন যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন এমন কোন প্রমান নেই। সে কারনে যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি হিসেবে সংসদ সদস্যকে মনোনীত করারর প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। এর ফলে দলীয় প্রভাবে তৈরী তালিকা অনেকাংশেই বিতর্কিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাবে। জানামতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অনেক উপজেলা কমান্ডার ও কমান্ডের অনেক সদস্য এবং জেলা ইউনিট কমান্ডার ও কমান্ডের অনেক সদস্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এমন অভিযোগ রয়েছে। ইতিপূর্বে তারা বিভিন্ন সরকারের সময়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য থেকে ঢালাওভাবে ভুয়া ব্যক্তি এমনকি রাজাকারদেরও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। একটি জাতীয় কমিটির আওতায় প্রায় দু’বছর কার্যক্রম চালিয়ে ১৯৮৬-৮৭ সালে প্রথম বারের মত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এ তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৪ ‘শ’ ৫৮ জন। এটি জাতীয় তালিকা হিসেবে পরিচিত। এ তালিকাতেও বিপুল সংখ্যক অমুক্তিযোদ্ধা যোগ হয়। দ্বিতীয়বার ১৯৮৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাষ্টের তৎকালীন ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার আমিন আহমদ চৌধুরী বীর বিক্রম (পরবর্তীকালে মেজর জেনারেল) চট্রগ্রামস্থ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার থেকে রেকর্ড সংগ্রহ করে ৬৯ হাজার ৮’শ ৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি তালিকা প্রণয়ন করেন। এ তালিকা পরে ৮(আট) খন্ড বই আকারে প্রকাশিত হয়। ভারতে প্রশিক্ষনকালীন মুক্তিযোদ্ধারা নিজেরাই যে ফরম পূরণ করেছিলেন সে সব ফরম ভারতের সেনাবাহিনী সংরক্ষন করেছিল। ১৯৭৪ সালে ভারত সরকার এই ফরমগুলো সেনাবাহিনীর ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কাছে হস্তান্তর করে। এ তালিকাটি কল্যান ট্রাষ্টের তালিকা হিসেবে পরিচিত। পরবর্তীতে কল্যান ট্রাষ্টে সংরক্ষিত এ ভলিউম বইয়ের পাতা কেটে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা সরিয়ে তদস্থলে অমুক্তিযোদ্ধাদের নাম বসানো হয়েছে এমন অভিযোগও রয়েছে। তৃতীয়বার ১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকার আমলে মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের তৎকালীন আহবায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আজম আমিনুল হক বীর উত্তম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি তালিকা প্রণয়ন করেন। ঐ তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৬ হাজার। যা ভোটার সূচক তালিকা হিসেবে পরিচিত। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চতুর্থ বারের মত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়ন করা হয়। ঐ তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাড়ায় ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭’শ ৯০ জন। এ তালিকাতেও অমুক্তিযোদ্ধারাই সংখ্যাগরিষ্টতা লাভ করে। এ তালিকাকে কাটছাট করে মুক্তিবার্তা পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। এটিই এখন লালবই নামে পরিচিত। এতে ১ লাখ ৫৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে জামাত বিএনপি জোট সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় গঠন পরবর্তী মন্ত্রী পরিষদ সচিব ড. সাদত হুসাইনকে আহবায়ক এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন সচিব মোঃ মমতাজ উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় কমিটি করে পঞ্চমবারের মত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়। সে সময়ে আগের নীতি বাদ দিয়ে এই কমিটির সুপারিশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে বাদ রেখে ইউএনও ও ডিসিদের নিয়ে উপজেলা ও জেলা যাচাই-বাছাই কমিটি করা হয়। আগের যে কোনো দুটি তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদেরই সুপারিশ করে কমিটি। তাদের সুপারিশের ব্যক্তিরাই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যান। এভাবে ২০০৩ ও ২০০৪ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার দুটি গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর একটি ছিল বিশেষ গেজেট; যেখানে সামরিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার এবং অপর গেজেটে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৫৯ হাজার। দুটি মিলে তখন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৮ হাজার জনে। অর্থাৎ জোট সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ হাজার, যা ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভুয়া বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরও নানা সময়ে নানা সপারিশে পর্যায়ক্রমে অনেকগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের নামীয় গেজেট প্রকাশ পেয়েছে। যার সিংহভাগই ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিল। অবশ্য মহাজোট সরকারও ক্ষমতায় এসে বিএনপির নীতিমালা মেনে ১১ হাজার ৫০০ জনকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেয়। ফলে বর্তমানে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ৯ হাজার ৫০০ জনে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন তালিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার লে. ক. (অব.) মো. আবু ওসমান চৌধুরী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি হওয়ার কথা নয় বলে মত প্রকাশ করেছেন। যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক,কলামিষ্ট ও গবেষক প্রধান সম্পাদক শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম মোবাইলনং- ০১৮৫৫-৬৯৪৯৪৬ তারিখ- ১১ মার্চ, ২০১৫ ইংরেজি।

সম্পর্কিত সংবাদ

কাল থেকে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

জাতীয়

কাল থেকে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

আগামীকাল রোববার (৬ নভেম্বর) থেকে সারা দেশে একযোগে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

কৃষি

দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল, হচ্ছে ভাত-পোলাও

ধান থেকে উৎপাদিত চালের মতো হুবহু এই বাঁশ ফুলের চাল। ভাত, পোলাও, আটা কিংবা পায়েস সব কিছু তৈরি হচ্ছে বাঁশ ফুলের চাল থেকে।...

সুরা আল ইমরানের বিষয়বস্তু

ধর্ম

সুরা আল ইমরানের বিষয়বস্তু

সুরা আলে ইমরানে ইমরান পরিবারের কথা বলা হয়েছে। পরিবারটি আল্লাহর ওপর অবিচলতা, পরিশুদ্ধতা এবং ধর্মের সেবার এক উজ্জ্বল নিদর্...

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

খেলাধুলা

মোস্তাফিজকে হারাতে হবে বলে মন খারাপ ধোনিদের

তাই তাঁর পারফরম্যান্সে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে চেন্নাইয়ের ব্যাটিং কোচ মাইক হাসি। আজ আবার মাঠে নামছে চেন্নাই। আজ...

দেশের যে গ্রামে যাকাত-ফিতরা নেওয়ার মানুষ নেই

বাংলাদেশ

দেশের যে গ্রামে যাকাত-ফিতরা নেওয়ার মানুষ নেই

একটি সংগঠনের উদ্যোগে বদলে গেছে গ্রামের চিত্র। গ্রামের সকল পরিবার হয়েছে এখন সচ্ছল। এই গ্রামে এখন ফিতরা ও যাকাত নেওয়া মানু...

বগুড়ায় ৬ টাকায় এক কেজি কাঁচা মরিচ

বাংলাদেশ

বগুড়ায় ৬ টাকায় এক কেজি কাঁচা মরিচ

চাষিরা বলছেন, খেত থেকে হাটে নেওয়া পর্যন্ত প্রতি কেজি কাঁচামরিচে গড়ে তিন টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া রয়েছে খাজনা ও অন্যান্য খরচ,...