রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
dsdsd নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) পশ্চিমবঙ্গকে তাদের 'নিরাপদ ঘাঁটিতে' পরিণত করে সেখান থেকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার বিরাট এক জঙ্গি ছক তৈরি করছিল বলে ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। এরমধ্যে বাংলাদেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দল দুটির শীর্ষ নেতাদের হত্যার পরিকল্পনাও ছিল। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন বাংলাদেশে পাঠানো হবে বলে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, 'তদন্তে প্রতিদিনই আমরা নতুন তথ্য পাচ্ছি। আমাদের মনে হচ্ছে, এ বিষয়গুলোও প্রতিবেদনে যোগ করা উচিত। কেননা, এসব বিষয় আমাদের মতো বাংলাদেশের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে কিছুটা সময় লাগছে।' গত ২ অক্টোবর বর্ধমানে বিস্ফোরণ ঘটনার পর ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) অনুসন্ধানে পশ্চিমবঙ্গে ৫৮টি জঙ্গি ঘাঁটির সন্ধান পাওয়ার তথ্যও ওই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জানানো হবে। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এনআইএ এবং গোয়েন্দা সংস্থা 'র' ও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর সরবরাহ করা তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন তৈরির কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। এসব বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আজ কলকাতায় পৌঁছাচ্ছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডসের প্রধান জেএন চৌধুরী এবং ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধান সৈয়দ আসিফ ইব্রাহিম। বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্তে আরো সমন্বয়ের বিষয়েও তারা কথা বলবেন বলে জানা গেছে। মমতার তৃণমূল সরকার শুরুতে এ ঘটনায় এনআইএর তদন্তের বিরোধিতা করে বলেছিল, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি রাজ্য সরকারেরই দেখার কথা। 'কিন্তু বিষয়টি নিছক আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়। এটা এমন নয় যে, একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীরা প্রতিপক্ষকে মারবে বলে হাতবোমা বানাচ্ছিল। এর সঙ্গে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং আমাদের প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিষয় জড়িত'_ বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'রাজ্য সরকারকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। যে জঙ্গি পরিকল্পনা আমরা উদ্ঘাটন করেছি, তা তাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।' পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসত বিস্ফোরক! অন্যদিকে আনন্দবাজার জানায়, চোরাই পথে সীমান্ত পেরিয়ে আসা গাঁজা এবং সোনার বিস্কুট বিক্রি করে পাওয়া টাকা দিয়ে কেনা হতো বিস্ফোরক। খরচ হতো জঙ্গি প্রশিক্ষণেও। বিভিন্ন জঙ্গি ঘাঁটির লোকেরা নির্দিষ্ট একটি জায়গায় গিয়ে নিয়ে আসত সেই টাকা। আবার একই জায়গা থেকে বাংলাদেশে পাচার করা হতো পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ঘাঁটিতে তৈরি হওয়া মারণাস্ত্র। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) মতে, মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলার মকিমনগরে ঘাঁটি গেড়ে বসে এই দ্বিমুখী দায়িত্ব নিপুণভাবে সামলাচ্ছিল জামা'আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের এক সদস্য। নাম সাজিদ। শুক্রবারই এনআইএ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জামা'আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরাই আইইডি তৈরি করে সেগুলো বাংলাদেশে পাচার করে আসছিল। বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে জেএমবির বিভিন্ন দিক, বিশেষ করে জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য অর্থের জোগান কোথা থেকে আসত, তা খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সূত্রের দাবি, মকিমনগরের একটি মাদ্রাসা থেকেই পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামে জেএমবির কার্যকলাপের জন্য অর্থ বণ্টন করা হতো। দুই রাজ্যে জেএমবির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা হতো ওই মাদ্রাসা থেকেই এবং সেখানেই প্রমীলা বাহিনীকে আগ্নেয়াস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন ধরনের জেহাদি প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, খাগড়াগড় কিংবা বেলডাঙার গবেষণাগারে তৈরি হওয়া গ্রেনেড এবং সকেট বোমা বাংলাদেশে ঢোকার ঠিক আগে এসে পেঁৗছানো হতো মকিমনগরে সাজিদের কাছে। সাজিদ নিজস্ব যোগাযোগের মাধ্যমে সেসব বিস্ফোরক সীমান্ত পার করাত। আবার জঙ্গি ডেরা, পরীক্ষাগার, প্রশিক্ষণকেন্দ্র অথবা আইইডি মজুদ রাখার গোপন গুদাম কেনা ও ভাড়া নেয়ার টাকা বণ্টনের দায়িত্বে সে-ই ছিল। জেহাদিদের মাসোয়ারাও সাজিদ দিত। তার কাছ থেকে টাকা আনতে ইউসুফ, কাওসার, কদর, কালামরা মকিমনগর যেত বলে এনআইএর দাবি। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, সাজিদের কাছ থেকে চোরাচালানের টাকা জেহাদি কার্যকলাপের জন্য বর্ধমানের খাগড়াগড়, শিমুলিয়া ও কৃষ্ণবাটী, নদিয়ার করিমপুরের বারবাকপুর, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বড়ুয়া মোড়, বীরভূমের কীর্ণাহার ও আসামের বরপেটায় পৌঁছেছে। ইউসুফ, কাওসারদের মতো সাজিদও এখন ফেরার। বিস্ফোরণের দুই দিন পর লালগোলা থেকে লাপাত্তা হয়ে যায় ওই বাংলাদেশি। তদন্তকারীদের বক্তব্য, বিস্ফোরণে নিহত শাকিল আহমেদ যেমন বছর সাতেক আগে এ দেশে ঢুকে নদিয়ার করিমপুরের তরুণী রাজিয়া বিবিকে বিয়ে করেছিল এবং ভুয়া পরিচয়পত্র জোগাড় করেছিল, সাজিদও তেমনি বাংলাদেশ থেকে তাড়া খেয়ে প্রায় একই সময়ে ভারতে ঢুকেছিল। এনআইএ জানিয়েছে, শাকিলের মতো সাজিদও ভোটার কার্ড, এমনকি ভারতীয় পাসপোর্টও জোগাড় করেছিল। তবে তার নাম সত্যিই সাজিদ নাকি অন্য কিছু, সে ব্যাপারে তদন্তকারীদের সন্দেহ আছে। এক অফিসার বলেন, 'বাংলাদেশে জেএমবির চাঁইদের অনেকেরই ৩-৪টি নাম আছে। কোনটা তাদের আসল নাম, বের করা মুশকিল। মনে হচ্ছে, সাজিদ ওই লোকটির আসল নাম নয়।' এনআইএর দাবি, জেরায় আলিমা ও রাজিয়া বলেছে, 'সাজিদ সাহেব' ছিল আসল 'আদমি'। তাদের বক্তব্য, বিস্ফোরণে নিহত শাকিল এবং সুবহান বার বার সাজিদের কথাই বলত। তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে কিছু টাকা আসত। পাশাপাশি চোরাই পথে গাঁজা এবং সোনার বিস্কুট বাংলাদেশ থেকে এনে বিক্রি করেও তোলা হতো টাকা। গত কয়েক বছর ধরে লালগোলা সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণ গাঁজা এবং সোনা এ দেশে ঢুকেছে। যদিও বিএসএফ বাংলাদেশ থেকে এপারে ঢোকা বিপুল পরিমাণ গাঁজা এবং সোনার বিস্কুট বাজেয়াপ্ত করেছে। তবে এনআইএর বক্তব্য, যে পরিমাণ গাঁজা এবং সোনার বিস্কুট চোরাই পথে ঢোকে, তার সামান্য অংশই ধরা পড়ে। লালগোলা সীমান্তে বিএসএফের ভূমিকাও এক্ষেত্রে খতিয়ে দেখা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। গোয়েন্দারা বলছেন, এক যুগেরও বেশি আগে ২০০১ সালে সিআইডির তদন্তে বেরিয়েছিল, খাদিম কর্তা পার্থ রায় বর্মণের মুক্তিপণের টাকার অংশ ৯/১১-এর চাঁই মুহাম্মদ আটার কাছে পেঁৗছেছিল। অপহরণকারীদের মতো খুচরা অপরাধীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের আঁতাতের কথা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল সে সময়ে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণে জেএমবির কার্যকলাপ প্রকাশ্যে আসায় একই ভাবে সেই অপরাধ জগৎ ও সন্ত্রাসবাদীদের যোগসাজশের কথা জানা যাচ্ছে। তবে এবার অপহরণকারীদের সঙ্গে নয়, জঙ্গিরা হাত মিলিয়েছে চোরাকারবারিদের সঙ্গে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বার্তাসংস্থা এই খবরটি পরিবেশন করেছে বলে দেখা গেছে।

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরের সাবেক এমপি কবিতা ও চয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা

রাজনীতি

শাহজাদপুরের সাবেক এমপি কবিতা ও চয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। ঘটনার দুই বছর পর বৃহস্পতিব...

শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ!

অর্থ-বাণিজ্য

শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ!

এম এ হান্নান শেখঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের পূর্ব পাশে অবস্থিত পিডিবির ৩টি ও বেসরকারি ১টি মিলে মো...

নগ্ননৃত্য ও দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত ১১ নারী ও ৫ ব্যবসায়ী গ্রেফতার

অপরাধ

নগ্ননৃত্য ও দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত ১১ নারী ও ৫ ব্যবসায়ী গ্রেফতার

শাহজাদপুরে বিভিন্ন নদী-বিলে নৌকায় পিকনিক ও বিনোদনের...

শাহজাদপুরে ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে প্রাণ গেল শিশু হোসাইনের

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে প্রাণ গেল শিশু হোসাইনের

ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে মহাসড়ক পাড়ি দেয়ার সময় পাবনা থেকে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাস চাপায় হোসাইন সরদার নামের এক ৯ বছরের শ...

শাহজাদপুরে দুই মেয়েকে বিষ পান করিয়ে মায়ের আত্মহত্যা

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে দুই মেয়েকে বিষ পান করিয়ে মায়ের আত্মহত্যা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ইসলামপুর ডায়া নতুনপাড়া গ্রামে স্বামীর সাথে ঝগড়া করে বিষপান করে ম...

ভারত, ভুটানের পর এবার চীনের নজরে তাজাকিস্তান

আন্তর্জাতিক

ভারত, ভুটানের পর এবার চীনের নজরে তাজাকিস্তান

ভারত, ভুটানের পর এবার চীনের নজর তাজাকিস্তানের দিকে। বেইজিংয়ের নজর পড়েছে পৃথিবীর ছাদ অর্থাৎ পামির মালভূমির দিকে। চীনের ই...