শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম : জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাকে গণমাধ্যমের জন্য ‘কালো অধ্যায়’ আখ্যায়িত করে তা না মানার ঘোষণা দিয়েছেন সাংবাদিকরা। একই সঙ্গে প্রেসক্লবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল ইনুকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার আহ্বান করা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবিত জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার কপিতে আগুন লাগিয়ে প্রতিবাদও জানিয়েছে তারা।একই সঙ্গে এই নীতিমালা না মানার ঘোষণা দিয়েছে সাংবাদিকদের দুটি সংগঠন। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকার সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশ এক সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেয়। অনুমোদিত এ নীতিমালার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশের আগে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশ থেকে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে গণমাধ্যমের ‘স্বাধীনতার শত্রু’ বলে ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে পাস হওয়া নীতিমালা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত যাতে তথ্যমন্ত্রীকে জাতীয় প্রেসক্লাবে দেখা না যায়, এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রেসক্লাবের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, এই নীতিমালা প্রতিহত করতে না পারলে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা বলতে কিছু থাকবে না। তাই রক্ত দিয়ে হলেও তাঁরা এই নীতিমালা প্রতিহত করবেন। সরকার এই নীতিমালা করার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে চায়। তাই এটা কোনোভাবেই মানা হবে না। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ করেন সাংবাদিক নেতারা। এরপর তাঁর নীতিমালার কপিতে আগুন দিয়ে তা না মানার ঘোষণা দেন। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা। গতকালই এটি সংশোধনের দাবি উঠেছে। বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) কাল বুধবার সম্প্রচার নীতিমালা পর্যালোচনার জন্য সভা ডেকেছে।নীতিমালায় সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠনের কথা বলা হলেও কবে তা করা হবে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ নেই। বরং বলা হয়েছে, কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রচার-সম্পর্কিত সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে এটাই সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়। সম্প্রচার নীতিমালার অপপ্রয়োগ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে : গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালায় সশস্ত্র বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন বিষয় প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটতে পারে এমন তথ্য প্রচার করা যাবে না। কিন্তু কোন ধরনের তথ্যে রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটতে পারে তা ব্যাখ্যা করা হয়নি নীতিমালায়। গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই সুযোগে যে তথ্যটি সরকারের বিরুদ্ধে যাবে সেটিকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নকারী আখ্যা দিয়ে সংশ্লিষ্ট সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে সরকারের। এসব নিয়ে বেসরকারি সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলোতে কণ্ঠরোধ হওয়ার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর গণমাধ্যমকর্মীদের মুখে সম্প্রচার নীতিমালার অপপ্রয়োগ হওয়ার আশঙ্কার কথা শুনে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের প্রশ্নই আসে না। সংবাদপত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একটা নীতিমালা থাকা দরকার। সরকার এ ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে চায়। বাংলাদেশে এত দিন সম্প্রচার মাধ্যমের জন্য পূর্ণাঙ্গ কোনো নীতিমালা না থাকায় সম্প্রচার মাধ্যমের লাইসেন্স দেওয়া এবং তাদের পরিচালনা পদ্ধতি নিয়ে বেশ সমালোচনা ছিল। এ নীতিমালার আলোকে একটি আইন করা হবে, যার আলোকে একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হবে। স্বাধীন এই কমিশন লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্স ফি নির্ধারণ, সম্প্রচার কার্যক্রম তদারকি করবে। এই কমিশনে সাংবাদিকরাও থাকবেন। সম্প্রচার কমিশন ও আইন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রচার সম্পর্কিত সব সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এটা সাময়িক হবে বলে তিনি জানান। সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্বেগ ফুটে উঠেছিল মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর দেওয়া মন্ত্রিপরিষদসচিবের প্রেস ব্রিফিংয়েও। ওই সময় গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চান, কেউ নীতিমালা ভঙ্গ করলে শাস্তির কী বিধান রাখা হয়েছে। জবাবে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, কমিশন গঠন হওয়ার পর এই কোড অব গাইডেন্স তৈরি করবে, সেখানে বিস্তারিত থাকবে। এ পর্যায়ে বেসরকারি টেলিভিশনের এক সংবাদকর্মী জানতে চান, কোনো অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার পরিপন্থী কি না কিংবা কোনো রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার মতো কি না, তা কিভাবে নির্ধারণ করা হবে। সচিব বলেন, ‘সে জন্যই তো স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হবে। তারাই স্থির করবে, তারাই তা নির্ধারণ করবে। সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে তারা বিচার করবে। কোনো কোনো বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা সরকারকে সুপারিশ করবে। সম্প্রচার কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে নীতিমালা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।’কবে নাগাদ আইন হবে- জানতে চাইলে মোশাররাফ হোসাইন বলেন, খুব শিগগির এ আইন হবে। আইন হওয়ার পর এই কমিশনের চেয়ারম্যান ও আইনের দ্বারা নির্ধারিত সদস্য নিয়োগ করা হবে এবং সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন করতে হবে। সদস্যদের মধ্যে সিনিয়র সাংবাদিক, সম্প্রচার মাধ্যমের ব্যক্তিত্ব এবং বিশেষজ্ঞসহ অন্যরা থাকবেন। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা করার আগে তথ্য মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত কমিটি গঠন করেছিল। কমিটিতে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সাব-কমিটি গঠন করে আবার একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া তৈরি করা হয়। পরে তথ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটি পর্যালোচনা করে তা মন্ত্রিসভায় পাঠিয়েছে। বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিনিধিরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সম্প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা যাতে সংকুচিত না হয়, তার ওপর জোর দেন। নীতিমালার বিভিন্ন ধারা নিয়ে বেসরকারি টিভির প্রতিনিধিদের মধ্যে অস্বস্তি ছিল।সম্প্রচার নীতিমালা অনুযায়ী ১৩টি বিষয় সম্প্রচার করা যাবে না বা সম্প্রচারের সময় কঠোরভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। এসবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী বা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ, অবমাননা বা বিদ্রৃপ করে কিছু প্রচার করা যাবে না বা তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা যাবে না। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে- এমন সামরিক, বেসামরিক ও সরকারি তথ্য প্রচার করা যাবে না। জাতীয় আদর্শ ও উদ্দেশ্যের প্রতি ব্যঙ্গ-বিদ্রৃপ করা, জনগণের প্রতি অবমাননা, স্বাধীন অখণ্ড বাংলাদেশের সংহতি ক্ষুণ্ন হতে পারে- এমন বক্তব্য প্রচার করা যাবে না, যাতে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে। বিভিন্ন শ্রেণি ও ধর্মের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে পারে বা ধর্মের প্রতি অবমাননা হয়- এমন কিছু প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যক্তির গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন করে- এমন কিছু প্রচার করা যাবে না। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে কিংবা ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আঘাত করতে পারে, আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি করতে পারো- এমন ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের অনুকূলে যায়, যাতে অন্য কোনো বিদেশি রাষ্ট্র আঘাত পায় কিংবা যাতে বন্ধুভাবাপন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে রকম কিছু প্রচারে বিধি-নিষেধ রয়েছে। কোনো জনগোষ্ঠী বা জাতির জন্য ক্ষতিকর দৃশ্য প্রচার করা যাবে না। জনস্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে- এমন কোনো বিদ্রোহ, নৈরাজ্য, হিংসাত্মক ঘটনা প্রদর্শন পরিহার করতে হবে। দুর্নীতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎসাহ প্রদান করে- এমন কিছু প্রচার করা যাবে না। অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপন দেশের প্রচলিত আইন, রীতি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এসব বিষয় সম্প্রচার নীতিমালার পঞ্চম অধ্যায়ে রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেছেন, ‘আলোচনা অনুষ্ঠানে (টক শো) কোনো বিভ্রান্তিকর বা অসত্য তথ্য প্রচার পরিহার করতে হবে। এ ধরনের অনুষ্ঠানে সব পক্ষের যুক্তি যথাযথভাবে উপস্থাপনের সুযোগ থাকতে হবে।নতুন নীতিমালায় সাতটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে পটভূমি, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও নীতিমালা বাস্তবায়নের কৌশল উল্লেখ রয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে সম্প্রচার লাইসেন্স প্রদান ও পদ্ধতি এবং সম্প্রচার কমিশনের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারের বিষয়ে বলা হয়েছে তৃতীয় অধ্যায়ে। কী কী বিষয় অনুসরণ করে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে, সে বিষয়ে বলা হয়েছে চতুর্থ অধ্যায়ে। পঞ্চম অধ্যায়ে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে আরো কিছু বিবেচ্য বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। কোন কোন বিষয় সম্প্রচার করা যাবে না, করা সমীচীন হবে না, তার উল্লেখ রয়েছে এখানে। ষষ্ঠ অধ্যায়ে সম্প্রচার কমিশন সম্পর্কে বলা হয়েছে। কমিশন গঠন, আইনি কাঠামো, দায়িত্ব, কাজের পদ্ধতি, কী কী অভিযোগ কমিশন গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করবে এ বিষয়গুলো এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। সপ্তম অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে সম্প্রচার কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত কিভাবে কার্যক্রম পরিচালিত হবে সে বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়।
সম্পর্কিত সংবাদ
শাহজাদপুর
শাহজাদপুরে ১৬ হাজার টাকার জন্য জবাই করে হত্যা! আটক ২
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে পৌর এলাকার নলুয়া বটতলার মুদি দোকানী রইচ উদ্দিনের নিখোঁজের ১৫ দিন পর প্রতিবেশি শফিকুলের বাড়ির পাশের...
শাহজাদপুর
শাহজাদপুরে মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশারের নামে সড়কের নামকরণ’র উদ্বোধন
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম এর প্রধান সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার-এর নামে সড়ক নামকরণের উদ্বোধন...
মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা বাংলাদেশের ইতিহাসের পবিত্র স্থান//১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথগ্রহণ করে// স্থানটির নামকরণ হয় মুজিবনগর
ডেস্ক নিউজ: আওয়ামী লীগ-বিএনপি দলীয়ভাবে মনোনয়ন চূড়ান্তের পরই প্রার্থীর সমর্থক ও দলীয় কর্ম... পাবনা প্রতিনিধি :-নানা অব্যবস্থাপণার মধ্যদিয়ে চালু রয়েছে পবনা সেচ প্রকল্প। অবহেলা ও অনিয়মের কারণে সেচ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ...রাজনীতি
সিরাজগঞ্জে নৌকা-ধানের শীষের লড়াই শুরু
নানা অব্যবস্থাপণায় চলছে পাবনা সেচ প্রকল্প
সম্পাদকীয়
এইডস আতঙ্কের ব্যাপ্তি, প্রতিরোধেই মিলবে মুক্তি
লাইট হাউস শাহজাদপুর ডিআইসি আয়েজিত প্রজেক্ট ফ্যসিলিটেশন টিমের ২০১৫ সালের ১ম সভায় উপস্থাপি...