রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

image_88911_0

শাহজাদপুর সংবাদঃ বেতার ও টেলিভিশনের জন্য জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার। আগামীকাল সোমবার এই নীতিমালার খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করার কথা আছে। সশস্ত্র বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ বা অবমাননাকর দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। অপরাধীদের দণ্ড দিতে পারেন এমন সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার মতো দৃশ্য বা বক্তব্যও প্রচার করা যাবে না। জনস্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে এমন কোনো বিদ্রোহ, নৈরাজ্য ও হিংসাত্মক ঘটনা প্রচার করা যাবে না। এমন সব বিধান রেখে বেতার ও টেলিভিশনের জন্য জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার। সরকারি টেলিভিশনের প্রতিনিধিরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সম্প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতা যাতে সংকুচিত না হয়, তার ওপর জোর দিয়েছেন। এখন এই ধারাগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে অস্বস্তি আছে। খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও নীতিমালা সমুন্নত রাখতে হবে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন সামরিক, বেসামরিক বা সরকারি তথ্য প্রচার করা যাবে না।অনুমোদন হলে এই নীতিমালার আলোকে সম্প্রচার কমিশন এবং এ-সম্পর্কিত আইন করা হবে। তবে কমিশন ও আইন না হওয়া পর্যন্ত সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রচার-সম্পর্কিত সব সিদ্ধান্ত নেবে। আবার কমিশন হলেও তার কাজ হবে তদন্ত করে সুপারিশ করা। শাস্তির ক্ষমতা সরকার তার নিজের হাতেই রাখছে। ফলে তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে শেষ কথা সরকারেরই। সম্প্রচার কমিশন গঠনের পর সেই কমিশনই নীতিমালা করবে। কিন্তু সরকার সম্প্রচার কমিশন কীভাবে গঠন করবে, সেটিই ঠিক করছে না। ফলে এখন যেভাবে বলা হচ্ছে, তাতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়বে।’

তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, কয়েক মাসের প্রক্রিয়ায় খসড়াটি তৈরি করা হলেও তা নিয়ে উচ্চবাচ্য ছিল না। গত ১৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য মন্ত্রণালয়ে অফিস করার দিন সম্প্রচার নীতিমালা করার ওপর জোর দেন। এরপর বিষয়টি গতি পায়। এবিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু  জানান, আগামীকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদনের জন্য উঠবে।

প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, আলোচনামূলক অনুষ্ঠানে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য-উপাত্ত পরিহার করতে হবে। বেতার, টেলিভিশনসহ সম্প্রচারমাধ্যমকে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের ভাষণসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান যথাযথভাবে প্রচার করতে হবে। সরাসরি বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশবিরোধী বা জনস্বার্থবিরোধী বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে। সব সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানকে সরকার বা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। গত মহাজোট সরকারের আমলে গত বছর এই নীতিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে একটি প্রাথমিক খসড়া করে তথ্য মন্ত্রণালয়। পরে তা অংশীজন ও সর্বসাধারণের মতামতের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। পরে মন্ত্রণালয়ের করা কমিটি খসড়াটি চূড়ান্ত করে।রেডিও এবং টেলিভিশন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নীতিমালার কয়েকটি ধারা বেশ স্পর্শকাতর। সেগুলো অপব্যবহারের আশঙ্কা আছে। এই ধারাগুলোর কোনো ব্যাখ্যা না থাকায় তাঁরা এই আশঙ্কা করছেন।বিজ্ঞাপন সম্প্রচার: খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণ সনদ নেই, সেগুলোর বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) তালিকাভুক্ত পণ্যসামগ্রীর বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের মাননিয়ন্ত্রণ সনদ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাননিয়ন্ত্রণ সনদ উপস্থাপন করতে হবে। বিজ্ঞাপনে এমন কোনো বর্ণনা বা দাবি প্রচার করা যাবে না, যাতে জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতারিত হতে পারে।ওষুধজাতীয় পণ্য, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন বা ছাড়পত্র বিজ্ঞাপনদাতার কাছে আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে। বিজ্ঞাপনচিত্রে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ, বিশেষ করে ওষুধপথ্য ও চিকিৎসাবিষয়ক পণ্যের বিজ্ঞাপনে চিকিৎসকদের পরামর্শ ও তাঁদের পরিচয় ব্যবহার পরিহার করতে হবে। তবে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপনে অনুমতিক্রমে পরিচয়সহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দেখানো যেতে পারে। রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ ভবন, স্থাপনা, কার্যালয় যেমন: জাতীয় সংসদ ভবন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আদালত ও আদালতের কার্যক্রম, সেনানিবাস এলাকা, শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্রে প্রদর্শন করা যাবে না।এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাড়পত্রবিহীন অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান, লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড, কর্মসংস্থান প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন প্রচারযোগ্য বিবেচিত হবে না। অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপন দেশের প্রচলিত আইন, রীতিনীতি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারবে না।সম্প্রচার কমিশন: এই নীতিমালার আলোকে একটি স্বাধীন ‘সম্প্রচার কমিশন’ গঠন করা হবে। তবে কত দিনের মধ্যে কমিশন গঠিত হবে, তা নির্দিষ্ট করা নেই। এ কমিশনে একজন চেয়ারম্যান ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য থাকবেন। সম্প্রচার নীতিমালা ও কমিশনের জারি করা নিয়মাবলি যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কি না, তা পরিবীক্ষণ করবে এই কমিশন। সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের কোনো অনুষ্ঠান, সংবাদ বা বিজ্ঞাপন যদি কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের অধিকার ক্ষুণ্ন করে, তাহলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কমিশনের কাছে অভিযোগ করতে পারবেন। কমিশন অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত ও শুনানি করে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সরকার আইন বা বিধি দ্বারা নির্ধারিত শাস্তির বিধান করবে।

এ নীতিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন এটকোর সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের ভাষণসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান বাধ্যতামূলকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা না রাখা এবং লাইসেন্স স্থগিতসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমরা মতামত দিয়েছি। আশা করব, আমাদের মতামতের ভিত্তিতেই নীতিমালাটি করা হবে, যা সম্প্রচারমাধ্যমকে আরও এগিয়ে নেবে। তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকতে হবে; কিন্তু স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারী হওয়া উচিত না।’প্রসঙ্গত, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি পত্রিকার প্রকাশনা বাতিলের ক্ষমতা সন্নিবেশিত করে দ্য প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস (ডিক্লারেশন অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ সংশোধনেরও উদ্যোগ নিয়েছিল। এতে পত্রিকার প্রকাশনা বাতিলের ক্ষমতা জেলা প্রশাসককে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। যদিও তথ্যমন্ত্রী এই উদ্যোগের কথা অস্বীকার করেছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা বাংলাদেশের ইতিহাসের পবিত্র স্থান//১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথগ্রহণ করে// স্থানটির নামকরণ হয় মুজিবনগর

মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা বাংলাদেশের ইতিহাসের পবিত্র স্থান//১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথগ্রহণ করে// স্থানটির নামকরণ হয় মুজিবনগর

নানা অব্যবস্থাপণায় চলছে পাবনা সেচ প্রকল্প

নানা অব্যবস্থাপণায় চলছে পাবনা সেচ প্রকল্প

পাবনা প্রতিনিধি :-নানা অব্যবস্থাপণার মধ্যদিয়ে চালু রয়েছে পবনা সেচ প্রকল্প। অবহেলা ও অনিয়মের কারণে সেচ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ...

শাহজাদপুরে ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে প্রাণ গেল শিশু হোসাইনের

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে প্রাণ গেল শিশু হোসাইনের

ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে মহাসড়ক পাড়ি দেয়ার সময় পাবনা থেকে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাস চাপায় হোসাইন সরদার নামের এক ৯ বছরের শ...

মিল্কভিটা'র চেয়ারম্যানের শাহজাদপুর বাথান পরিদর্শণ; কোর্ডায়াল রিসিপশান

ফটোগ্যালারী

মিল্কভিটা'র চেয়ারম্যানের শাহজাদপুর বাথান পরিদর্শণ; কোর্ডায়াল রিসিপশান

শামছুর রহমান শিশির,বিশেষ প্রদিবেদক, শাহজাদপুর : আজ (সোমবার) বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড (মিল্কভিটা) এ...

বেলকুচিতে তিনদিন ব্যাপি উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন

বেলকুচিতে তিনদিন ব্যাপি উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন

বেলকুচি প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় তিন দিন ব্যাপি উন্নয়ন মেলার শুভ উদ্বোধন,...