শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
শামছুর রহমান শিশির : মসলা জাতীয় ফসল রসুন উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত দেশের চলনবিল অঞ্চলে চলতি রবি মওসুমে রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৭৬০ হেক্টরে। তবে দেশে সারা বছর রসুনের বাজার দর চড়া থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাত হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে রসুন আবাদ হয়েছে। যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তা হলে এবার রসুনের আশাতীত ফলন হবে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। চলতি রবি মওসুমে নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছিল ২১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার টন। এবার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাত হাজার হেক্টরের বেশী জমিতে রসুন আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৬ হাজার টন বেশী রসুন উৎপাদন হবে। গত বছরে রসুনের আবাদ কম হওয়ায় বাজারে রসুনের দাম বেশী হয়েছে। অর্থৎ রসুনের দাম চারগুন হয়ে যায়। এবছর চলনবিল অঞ্চলে রেকর্ড পরিমান ২৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ৩২ হাজার টন। নাটোর কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ সুত্রে জানা যায়, দেশের উত্তরের চলনবিল অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি রসুন আবাদ হয়। রসুন এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান ফসলে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় ১০ হাজার ৫৬০ হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার টন, গুরুদাসপুরে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টরে ৭০ হাজার ৫০০ টন, বাগাতিপাড়ায় ৪০০ হেক্টরে তিন হাজার ২০০ টন, সিংড়ায় ৩০০ হেক্টরে দুই হাজার ৪০০ টন সিরাজগঞ্জের তারাশ উপজেলায় এক হাজার ২০০ হেক্টরে নয় হাজার ৬০০ টন, পাবনার চাটমোহরে সাত হাজার ২০০ হেক্টরে ৫৭ হাজার ৬০০ টন, পাবনা সদর, সুজানগর, বেড়া, সাঁথিয়া, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী, ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ৪০০ হেক্টরে তিন হাজার ২০০ টন রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এসব এলাকায় প্রতি বছরই রসুন আবাদের পরিমান বাড়ছে। চলনবিল অঞ্চলে বিনা চাষে রসুন আবাদ হয়ে থাকে। তবে রসুনের সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে বড়াইগ্রামের বাজিতপুর, মাড়িয়া, ইকড়ি, জালশুকা, তারানগর, শ্রীরামপুর, মানিকপুর, চকপাড়া, রয়না ভরট, মামুদপুর, রয়না, রোলভা, খাকসা, চড়ইকোল, গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা, কাছিকাটা, হাঁসমারী, দড়ি হাঁসমারী, শিধুলী, চড়কাদহ, মশিন্দা, চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা, কাটেঙ্গা, কোকড়াগাড়ি, ধানকুনিয়া, লাঙ্গলমোড়া, বরদানগর, ধুলাউড়ি, বোয়ালমারি, গৌরনগর, বিন্যাবাড়ি, নিমাইচড়া এলাকায়। চলনবিল অঞ্চলে বণ্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পলিযুক্ত দোঁ-আশ ও এঁটেল দোঁ-আশ মাটি রসুন রোপন করা হয়। যদি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হয়, তা হলে চলনবিল অঞ্চলে এ বছর রসুনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৫-৯৬ সালে নাটোরের বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোর কৃষকেরা স্ব-উদ্যোগে প্রথম বিনা চাষে রসুন আবাদের প্রচলন করেন। এই রসুনের আবাদ বা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বড়াইগ্রাম উপজেলার জালশুকা গ্রামের কৃষক খোরশেদ আলম পূর্ণি জানান, চলনবিল অঞ্চলের জমিতে সাধারণত কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে নরম জমিতে বিনা চাষে রসুনের কোয়া রোপণ করা হয়। এ জন্য প্রচলিত নিয়মে জমি চাষ করার প্রয়োজন পড়ে না। এ পদ্ধতিতে ক্ষেতে আগাছা কম জন্মে। সার প্রযোগ করতে হয় কম। রোপণ থেকে উৎপাদণ পর্যন্ত ১২০ দিনের এই রসুন উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে পুরনো পদ্ধতির রসুন আবাদের চেয়ে অনেক কম। বিনা চাষ পদ্ধতিতে রসুনের ফলন বেশি হয়। প্রতি বিঘা জমিতে রসুনের ফলন হয় ২৫ থেকে ৩০ মণ। সাধারণত চৈত্র মাসে জমি থেকে রসুন তুলে আনা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাটোরের লক্ষীকোল বাজার, রয়না ভরট হাট, মৌখাড়া হাট, জালশুকা হাট, চাঁচকৈড় হাট, চাটমোহরের অমৃতকুন্ডা হাট, মির্জাপুর হাট, ছাইকোলা হাট রসুন বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। রসুন বেচাকেনার জন্য বিভিন্ন হাট-বাজারে গড়ে উঠেছে অসংখ্য আড়ৎ। চট্রগ্রাম, সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেপারী আরৎদারের মাধ্যমে চাহিদা অনুয়ায়ী রসুন কিনছেন। পরে রসুন বস্তায় ভরে ট্রাকে করে সড়ক পথে নিজ নিজ গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বতমানে হাট-বাজারে মান ভেদে প্রতি মণ শুকনা রসুন ছয় হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, দোঁ-আশ ও এঁটেল দোঁ-আশ মাটি রসুন চাষের জন্য বেশি উপযোগী। এ কারণেই নাটোর জেলায় বিশেষ করে বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলায় সর্বাধিক জমিতে রসুন চাষ হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ৩০ কেজি টিএসপি, ২৫ কেজি পটাশ ও ১৫ কেজি জিপসাম ছিটানোর দুই-একদিনের মধ্যে নরম জমিতে সারিবদ্ধভাবে রসুন বীজ রোপণ করতে হয়। রোপণের জন্য প্রতি বিঘা জমিতে দুই মণ রসুনের প্রয়োজন হয়। জমিতে রসুন রোপণের দিনই খড় বা বিচালী দিয়ে জমি ঢেকে দিতে হয়। বীজ রোপণের একমাস পরে পানি সেচ দিয়ে বিঘায় ১০ কেজি হারে ইউরিয়া ও পাঁচ কেজি হারে এমওপি ছিটিয়ে দিলে ফলন ভালো হয়।

সম্পর্কিত সংবাদ

উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার

উল্লাপাড়া

উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার

তানিম তূর্যঃ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর পুকুর থেকে ইয়াম ইসলাম( ৮) নামের এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে...

উপজেলা কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

অর্থ-বাণিজ্য

উপজেলা কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

শাহজাদপুর উপজেলা সংবাদদাতাঃ শাহজাদপুর উপজেলার কাপড়ের হাট আড়ৎ মালিক সমিতির নব-নির্বাচিত ক...

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা

উপ-সম্পাদকীয়

নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কথা