বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

লাইট হাউস শাহজাদপুর ডিআইসি আয়েজিত প্রজেক্ট ফ্যসিলিটেশন টিমের ২০১৫ সালের ১ম সভায় উপস্থাপিত প্রবন্ধ।

( তারিখঃ- ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, স্থানঃ- মঞ্জুয়ারা ম্যানসন, রুপপুর, শাহজাদপুর।)

এইডস পরিচিতিঃ- এইডস এক আতঙ্কের নাম, এক মরণ ব্যাধি, এক সংক্রামক রোগ। সারা বিশ্বেই আজ এই রোগের ছড়াছড়ি, এমনকি মহামারী। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক কোষ যেমন হেলপার টি সেল, মনোসাইট, ম্যাক্রফেজ, ডেনড্রাইটিক সেল, চর্মের ল্যাঙ্গারহেন্স সেল, মস্তিষ্কে ও গায়াল সেল ইত্যাদিকে আক্রমণ করে এবং সেগুলোকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়। ফলে মানবদেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তখন যে কোন সংক্রামক জীবাণু সহজেই এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে পারে। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার এই অবস্থাকে এইডস বলে। এই অবস্থায় শরীরে প্রতিরোধ করার মতো কোন কার্যকরী কোষ না থাকায় যে কোন রোগ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরীরে নানা উপসর্গসহ এর বিস্তার ঘটে। যেভাবে এইডস রোগটিকে সনাক্ত করা হয়েছিলঃ ১৯৮০ সালে সর্বপ্রথম রোগটিকে শনাক্ত করা হয়। ১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু নিউমোনিয়ার রোগী পাওয়া যায়, যার কারণ নিউমোসিস্টিস ক্যারিনিয়াই নামক একটি জীবাণু, যার বর্তমান নাম নিউমোসিস্টিস জিরোভেসি। পরে আফ্রিকায় প্রাদুর্ভাব ঘটে ক্যাপোসিস সারকোমা নামক একটি টিউমারের। এ টিউমার থেকেই রোগটি সনাক্ত করা হয়েছিল। মরণব্যাধি এইডসের উৎপত্তিভূমি চিহ্নিত করার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ১৯২০ এর দশকে কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসায় (তৎকালীন লিওপোল্ডভিল) অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচারের ফল হিসেবে এইডসের সৃষ্টি হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিখ্যাত সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধে গবেষকরা দাবি করেছেন, কিনশাসায় লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সেই সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত যৌনাভ্যাসই এইডস সৃষ্টির মূল কারণ। অক্সফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও বেলজিয়ামের লিউভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল এইচ আইভি ভাইরাসের জেনেটিক কেডে বিশ্লেষণ করে এইডসের মূলবক্ষ শনাক্তের চেষ্টা চালান। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক অলিভার পাইবাস বলেন, এইচআইভি সংক্রমণের ঐতিহাসিক পরিবর্তন ও পরিব্যাপ্তি ফুটপ্রিন্টের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সেসব নিদর্শন পরীক্ষা করে আমরা মূলে পৌঁছাতে চেষ্টা করেছি। তখনকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে আক্রান্ত এক রোগীর জন্য ব্যবহৃত সিরিঞ্জ অন্য রোগীর জন্যও ব্যবহার হতো উল্লেখ করে গবেষকরা বলেছেন, এসব সিরিঞ্জের মধ্য দিয়েই একজন থেকে অনেকের মধ্যে এইডস ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীদের দাবি, কঙ্গোর রাজধানী থেকে বাইরের এলাকায় এবং অন্য দেশে মরণব্যাধি এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পেছনে কিনশাসার তৎকালীন রেল যোগাযোগই প্রধান ভূমিকা রাখে। প্রসঙ্গত, ১৯৪০ এর দশকে প্রায় দশ লাখ মানুষ কিনশাসার রেলপথ ব্যবহার করতেন।

এইচআইভির উৎপত্তিস্থলের সন্ধান ভোবে পাওয়া গিয়েছিলঃ

মারণব্যাধি এইচআইভি/এইডস প্রথম ধরা পড়ে ৩০ বছর আগে। তবে এতোদিন জানা ছিল না, কোথায়, কখন এই ঘাতক ভাইরাসের জন্ম। সম্প্রতি এর উৎপত্তিস্থলের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। হাজার-হাজার জীবাণুর জিন বিশ্লেষণের পর এইচআইভির উৎপত্তিস্থলের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। হিউম্যান ইমিউনোডিফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি) আবিষ্কারের তিন দশক পরে এসে এর উৎপত্তিস্থল খুঁজে বের করার দাবি করেছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা দাবি করেছেন, গত ৩০ বছরেরও বেশি সময়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত ঠিক কোথা থেকে এইচআইভি ভাইরাস এসেছে, তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। গবেষকেরা বলেন, আফ্রিকার বেলজিয়ান কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসা থেকে ১৯২০ সালের দিক প্রথম এইচআইভি ছড়ানোর প্রমাণ মিলেছে। হাজারো মানুষের জেনেটিক বিশ্লেষণ করে এই প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছেন তাঁরা। মধ্য আফ্রিকার দেশ বেলজিয়ান কঙ্গো। ১৯০৮ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত বেলজিয়ানদের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল। এখান থেকে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক মাধ্যমে মধ্য আফ্র্রিকায় এইচআইভি ছড়িয়ে পড়েছে বলে গবেষকেরা দাবি করেন। গবেষকেরা বলছেন, ‘ঔপনিবেশিক একটি শহর থেকে মারাত্মক এইডসের উৎপত্তি হয়। এখনকার কিনসাসা তখন লিওপোল্ডভিল নামে পরিচিত ছিল, পরে মধ্য আফ্রিকার বৃহত্তম শহুরে এলাকা হয়ে দাঁড়ায়। এখানে নিকটস্থ বন থেকে সংগৃহীত বন্য পশুর মাংস বিখ্যাত ছিল। অক্সফোর্ডের গবেষকেরা দাবি করেছেন, এইচআইভি-১ ভাইরাস আবিষ্কারের ৩০ বছর পর মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকারের এইচআইভি ছডেিয় পড়া, স্থানান্তরিত হওয়ার কারণ অজানাই ছিল। মধ্য আফ্রিকার এইচআইভি-১ সংক্রান্ত তথ্য-পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৯২০ সালের দিকে কিনসাসা থেকেই উৎপত্তি হয়েছিল এই ভাইরাসের। মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে সামাজিক পরিবর্তন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ভূমিকা রয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, নতুন ধরনের পদ্ধতিতে এইচআইভি ভাইরাসের জেনেটিক বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানা সম্ভব হয়েছে। শিম্পাঞ্জি, গোরিলা ও বানর থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ১৩টি ঘটনা নথিভুক্ত রয়েছে। কিন্তু এইচাইভি-১ এর ‘এম’ গ্রুুপটিই মানুষের মধ্যে বেশি ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। এইচআইভি-১ ভাইরাসের গ্রুুপ ‘এম’ এবং আরেকটি গ্রুুপ ‘ও’ ১৯৬০ সাল পর্যন্ত একই হারে বাড়লেও পরে ‘এম’ গ্রুুপটি তিন গুণ হারে বেড়েছে। এর কারণ হতে পারে সুচের একাধিকবার ব্যবহার ও যৌনকর্মীদের কাছে যাওয়ার হার বেড়ে যাওয়ায়। গবেষক অলিভার পাইবাস এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তাঁরাা প্রথমবারের মতো সব সহজলভ্য প্রমাণ ফাইলোজিওগ্রাফিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করেন। এতে ভাইরাসটি কোথা থেকে এসেছে তা পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ধারণা করা সম্ভব হয়েছে। এর অর্থ ভাইরাসের উৎপত্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেই বলা সম্ভব হয়েছে। গবেষক নুনো ফারিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, কিনসাসা ওই সময় দ্রুত এগিয়ে চলছিলো। মধ্য আফ্র্রিকার বৃহত্তম শহর হিসেবে পুরো কঙ্গোর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। ঔপনিবেশিক আমলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৪০ সালের শেষ নাগাদ প্রতিবছর রেলে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ কিনসাসায় যেতেন। জেনেটিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কঙ্গোতে দ্রুত এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ে। প্রসঙ্গত, এইডস একটি সংক্রামক রোগ, যা এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণের মাধ্যমে হয়। এটি মানুষের দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। এইচআইভি সংক্রমণের ফলে অন্যান্য রোগ যেমন-নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস এমনকি ক্যানসারও হতে পারে। এইচআইভি সংক্রমণের পরের ধাপকেই এইডস বলা হয়। বর্তমানে বিশ্বের ৩ কোটি ৫০ লাখ লোক এই ভাইরাসে সংক্রমিত।

যেভাবে এইডসর বিস্তার ঘটেঃ-

অসচেতনতা, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব, সুস্থ জীবনের অনুশীলন না করাটাই এই রোগের প্রধান ঝুঁকি। এইচআইভি সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হলোÑ এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে কনডম ছাড়া যৌন মিলনের মাধ্যমে। সমকামী, বহুগামী ব্যক্তি এবং বাণিজ্যিক ও ভাসমান যৌন কর্মীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শরীরে গ্রহণের মাধ্যমে। যুব সমাজের মধ্যে নেশার আধিক্য এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণ। আক্রান্ত ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন কিডনি, অস্থিমজ্জা, চোখের কর্নিয়া ইত্যাদি শরীরে সংস্থাপনের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত টুথব্রাশ ও ক্ষত সৃষ্টিকারী যন্ত্রপাতি যেমন সুচ, সিরিঞ্জ, কাঁচি, বেড, রেজার, ক্ষুর ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করা ডাক্তারি যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত না করে ব্যবহার করলে। এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের থেকে গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় অথবা প্রসবের পর বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর হতে পারে। এইচআইভি আক্রান্ত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিবিড় ভৌগোলিক অবস্থান, দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা। শ্রমিক অভিবাসন ও মানব পাচার। সর্বোপরি এইচআইভি স¤পর্কে সচেতনতা ও তথ্যের অভাব। মনে রাখতে হবে এইচআইভি রোগের কোন লক্ষণ প্রকাশ না করেও এই ভাইরাস মানুষের শরীরে বছরের পর বছর সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং এ সময় অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। কারও শরীরে এইচআইভি আছে কি-না তা বাইরে থেকে অনেক সময় বোঝা যায় না। শুধুমাত্র রক্ত পরীক্ষা করে এ ভাইরাসের সংক্রামণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই দেখা যায় অনেকে নিজের অজান্তেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। মনে রাখা দরকার কেউ এইচআইভিতে আক্রান্ত হলেই অন্য কাউকে ছড়ায় না। নিম্নে কিছু উদাহরণ দেয়া হলো, যার ফলে এইচআইভি ছড়ানোর সম্ভাবনা একেবারেই নাই। যেমন-আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে করমর্দন করলে বা একই ঘরে বসবাস করলে। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা, চলাফেরা ও খেলাধুলা করলে বা তাকে স্পর্শ করলে। একই পায়খানা এবং বাথরুম ব্যবহার করলে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত থালাবাসন, গাস, বিছানা, বালিশ ইত্যাদি ব্যবহার করলে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, থুথু বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে। মশা, মাছির বা পোকামাকড়ের কামড়ের মাধ্যমে। এইডস রোগীর সংস্পর্শে আসা কোন স্বাস্থ্যকর্মী যেমন-চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী। হাসপাতালে কমন ওয়ার্ডে এইডস আক্রান্ত রোগী ভর্তি থাকলে আশপাশে ভর্তিকৃত অন্য রোগীদের কোন অসুবিধা হবে না। যেহেতু এইচআইভির বিরুদ্ধে প্রতিষেধক কোন টিকা আবিষ্কৃত হয়নি, তাই প্রতিরোধ করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে এর থেকে নিস্তার পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ। কার্যকরী কোন ওষুধপত্র আবিষ্কৃত হয়নি। আক্রান্ত ব্যক্তি নিজে যেমন ভুগবেন, এর সঙ্গে পরিবার বা সমাজের অন্যদের জন্যও হুমকি হয়ে থাকবেন।

এইডস প্রতিরোধেই মুক্তি মিলতে পারেঃ-

এইচআইভি প্রতিরোধের মূল উপাদান হলো শিক্ষা, সচেতনতা, ঝুঁকি অনুধাবনের মাত্রা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও ধারণা। মানুষের চিন্তায় ও আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরী। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা এইডস প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুশাসন মেনে চলতে হবে। বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে হবে। শুধুমাত্র বিশস্ত একজন স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক রাখতে হবে। একাধিক যৌন সঙ্গী পরিহার করতে হবে। নিরাপদ যৌনক্রিয়ার অভ্যাসের মাধ্যমে অসংক্রামিত লোক এইচআইভি সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। নিয়মিত ও সঠিকভাবে কনডম ছাড়া যৌনমিলন থেকে বিরত থাকতে হবে। যারা শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ নেয় তাদের বেলায় উৎকৃষ্ট উপায় হলো ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ না নেয়া। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে এইচআইভি সংক্রামিত রোগীর সঙ্গে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য সুঁই, সিরিঞ্জ, বেড বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার পরিহার করতে হবে। যৌনরোগ বা প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ থাকলে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কারও যৌনরোগ বা প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ থাকলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। যৌনসঙ্গীর এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে অথবা নিয়মিত ও সঠিকভাবে কনডম ব্যবহার করতে হবে। এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের থেকে সন্তানের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা আছে। তবে যেসব মায়েরা প্রয়োজনীয় থেরাপি গ্রহণ করেন তাদের ক্ষেত্রে গর্ভস্থ সন্তান আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা শতকরা ৮৫ ভাগ রোধ করা সম্ভব। জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে প্রতিরোধমূলক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। নারী-পুরুষ যে কোন মানুষের শরীরে এইচআইভি পাওয়া গেলে তাকে ভয় পাওয়া, ঘৃণা করা বা তার কাছ থেকে দূরে থাকা উচিত নয়। তাকে সমবেদনা জানানো, যতœ করা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। রোগটি ঘৃণার হলেও মানুষতো আর কোন ক্রমেই ঘৃণার পাত্র নয়। তাই এইচআইভি অন্য কারও বা নিজের শরীরে পাওয়া গেলে কাউন্সেলিংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। এইচআইভি পজিটিভ হলে তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটবে না, তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে একজন রোগী দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারবেন। রোগীর আশা ও আত্মবিশ্বাস অত্যন্ত জরুরী। মনে রাখবেনÑ যে কোন প্রকার দুশ্চিন্তা পরিহার করে স্বাভাবিক জীবনযাপন চালিয়ে যেতে হবে। কোনভাবেই ভেঙ্গে পরলে চলবে না, বরং মানসিকভাবে ভেঙে না গিয়ে সহজভাবে এর মোকাবেলা করতে হবে। অবাধ ও অবৈধ যৌনমিলন পরিহার করতে হবে। যৌন মিলনের সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহার্য নিজের জিনিসপত্র যেমনÑ সেভিং রেজার, বেলড, ক্ষুর অন্যকে ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না। দৈনন্দিন চাকরি, ব্যবসা, স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে হবে। নিয়মিত বিশ্রাম ও প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে চলতে হবে। সুষম, পরিমিত, পুষ্টিকর ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। মহিলাদের ক্ষেত্রে বাচ্চা নিতে চাইলে বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে চাইলে সন্তান আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উন্নয়নশীল বিশ্বে বুকের দুধ পরিহার করা সম্ভব নয়, কারণ এটিই প্রধান পুষ্টি। যেহেতু এখন পর্যন্ত এইডসের কোন প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কার হয়নি, এবং চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, তাই এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো এইডস সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা, সে অনুযায়ী সচেতন হয়ে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ জীবনযাপন করা। ধর্মীয় ও সমাজিক অনুশাসন কঠোরভাবে পালন করা উচিত। মনে রাখা উচিত, এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা শুধুমাত্র এইডস হওয়ার সময়কে বিলম্বিত করে, পুরোপুরি নিরাময় করে না। জনগণের সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।

বাংলাদেশে ১৭২৬ এইডস রোগী শনাক্ত, মৃত্যু ৪৮২

সিলেটের ৪টিসহ বাংলাদেশের আরও কয়েকটি বিভাগে ১ হাজার ৭’শ ২৬ জনের এইচআইভি এইডস পজেটিভ শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত ৪’শ ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় সর্বাধিক ৫৯৪ জন এবং রংপুর বিভাগে সর্বনিম্ন ১২ জনের এইচআইভি পজেটিভ রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে ৪১৬, চট্রগ্রামে ৫৭৭, রাজশাহী ২৮, খুলনা ৫৭ ও বরিশাল বিভাগে ৩৭ জনের এইচআইভি পজেটিভ রয়েছে। চলতি ২০১৪ সালের মে মাস পর্যন্ত এই পরিসংখ্যান দিয়ে হবিগঞ্জে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এমন তথ্য প্রদান করেছেন সেভ দ্য চিলড্রেনের ব্যবস্থাপক (এ্যাডভোকেসি) ডাঃ মুর্শেদ বেলাল খান। হবিগঞ্জ জেলা আধুনিক সদর হাসপাতাল সভাকক্ষে সেভ দ্য চিলড্রেন ও আশার আলো সোসাইটি উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশ ও বিশ্বে এইচআইভ ও এইডস পরিস্থিতিঃ-

NASP- ২০১৪ এর তথ্যসূত্র অনুযায়ী ঃ- বাংলাদেশ পরিস্থিতি
                                     বিবরন                 সংখ্যা
             ২০১৪ সাল পর্যন্ত এইচআইভি ভাইরাসে সংক্রমিত              ৩৬৭৪ জন
              শুধুমাত্র ২০১৪ সালে নতুন এইচআইভি সংক্রমণ                ৪৩৩ জন
                   ২০১৪ সাল পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করেছে                ৫৬৩ জন
                  শুধুমাত্র ২০১৪ সালে মৃত্যু বরণ করেছে                  ৯১ জন
  Home/HIV/AIDS Basics/HIV/AIDS 101 : Global Statistics এর তথ্য সূত্র অনুযায়ী ঃ- বিশ্ব পরিস্থিতি ঃ-
 বিবরণ   সংখ্যা
 বিশ্বে মোট এইচআইভি পজিটিভের সংখ্য(২০১৩ সালের ডিসেম্ব পর্যন্ত)  ৩.৫ কোট
 ২০১৩ সালে এইচআইভিতে সংক্রামিত হয়েছে  ২১ লক্ষ
 ২০১৩ সালে এইচআইভি সংক্রমিত শিশির সংখ্যা ( ১৫ বছর পর্যন্ত)  ২৪০,০০০ জন
 ২০১৩ সালে প্রতিদিন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে  ৬ হাজার জন
 ২০১৩ সালে এইডস এ মারা গেছে  ১৫ লক্ষ
 এ পর্যন্ত এইডস এ মারা গেছে  প্রায় ৩.৬ কোটি
 বিশ্বে মোট এইচআইভি শিশুর সংখ্যা ( ১৫ বছর পর্যন্ত)  ৩২ লক্ষ
 প্রতিদিন নতুন কওে সংক্রমিত হচ্ছে (যার মধ্যে ৪০% যুবক-যুবতী বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে  ৬০০০
 প্রতিদিন এইডস এ মারা যাচ্ছে  ৪ হাজার ২০০ জন
 

এইচআইভির ‘বিকল্প টিকা’ আবিস্কারের চেষ্টা চলছে তিন দশক ধরেঃ-

প্রাণঘাতী এইডস রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস এইচআইভি প্রতিরোধের জন্য একটি কার্যকর টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে তিন দশকের বেশি সময় ধরে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক দাবি করছেন, তাঁরা একটি পরীক্ষামূলক ওষুধ তৈরি করেছেন, যা এইচআইভির একধরনের বিকল্প টিকা হিসেবে কাজ করে। মার্কিন বিজ্ঞানীদের এ সাফল্যে এইচআইভি প্রতিরোধের চেষ্টায় নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। ইতিমধ্যে পদ্ধতিটি বানরের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে প্রাণীটি এইচআইভি থেকে অন্তত ৩৪ সপ্তাহ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। নেচার সাময়িকীতে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণত শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে কোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন টিকা প্রয়োগ করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ওই গবেষকেরা একটি বিকল্প উপায়ে রোগের আক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। তাঁরা একদল বানরের ডিএনএ পরিবর্তন করে সেগুলোতে এইচআইভি-বিরোধী কিছু উপাদান যুক্ত করেন। মানুষের ক্ষেত্রে একই ধরনের পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে এ গবেষণায় যুক্ত নন এমন গবেষকেরা বলছেন, এ ব্যাপারে আরও গভীর চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন। নতুন এ পদ্ধতিতে সুস্থ পেশিকোষের মধ্যকার ডিএনএতে নতুন অংশ যুক্ত করার কাজে জিন থেরাপি ব্যবহার করা হয়। ডিএনএতে যুক্ত ওই বাড়তি অংশে এইচআইভিকে নিষ্ক্রিয় করার উপাদান তৈরির নির্দেশনা রয়েছে, যেগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে রক্তপ্রবাহে সঞ্চারিত হতে থাকে। গবেষকেরা আশা করছেন, ইতিমধ্যে এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রেও পদ্ধতিটি ফলপ্রসূ হতে পারে। শীর্ষ গবেষক অধ্যাপক মাইকেল ফ্যারজান বলেন, এইচআইভি থেকে সার্বিক সুরক্ষা দেওয়াার প্রচেষ্টায় তাঁরা অন্যদের চেয়ে বেশি এগিয়ে গেছেন। তবে কিছু বাধা এখনো রয়ে গেছে; যেমন নতুন পদ্ধতিটি বহুসংখ্যক মানুষের ওপর প্রয়োগ করাটা কতটা নিরাপদ হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এইচআইভি ভাইরাসটি অত্যন্ত দ্রুত বিকশিত হয়। তাই এটির টিকা তৈরি করাটা কঠিন। অধ্যাপক ফ্যারজান বলেন, তাঁদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিটি অন্য যেকোনো প্রতিষেধকের চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়।

নভেম্বরে এইডস নিয়ে ঢাকায় বৈজ্ঞানিক সম্মেলনঃ-

দেশের সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ বছরের নভেম্বরে। আইক্যাপ ১২ নামের এই সম্মেলনে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৬টি দেশের প্রতিনিধিরা এইডস নিয়ে আ ২০ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় তথ্যসূত্রে এ খবরটি জানা গেছে, এযাবৎকালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বৃহৎ আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন হবে এটি। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন।’ এতে ২৬টি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছারা উপস্থিত থাকবেন তিন হাজার মানুষ। আইক্যাপ এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৬টি দেশের একটি মোর্চা। এই মোর্চাটি এইডস নিয়ে প্রতি দুই বছর পরপর একটি সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে। এর আগের সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে। অনুষ্ঠানের ভেন্যুটি ঠিক হয় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সক্ষমতা বিবেচনায়। এ বছর ভারত ও ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ সম্মেলনটি আয়োজনের সুযোগ পেয়েছে। সম্মেলনটিতে সরকারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), পার্টনারস ইন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (পিপিডি),ইউএনএইডস, আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়, পিএলএইচআইভি নেটওয়ার্ক, এসটিআই নেটওয়ার্ক ও বন্ধু ওয়েলফেয়ার সোসাইটি।

এবার এইডস নির্ণয় করবে স্মার্টফোন

এতদিন স্মার্টফোন বলতে ইন্টারনেট, হোয়াটস এ্যাপ, ক্যামেরার কথা মাথায় আসত। কিন্তু এবার ডাক্তারের ভূমিকা পালন করবে স্মার্টফোন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়াররা এমনই এক স্মার্টফোন তৈরি করেছেন যার সাহায্য নিয়ে জানা যাবে আপনার শরীরে মরণ রোগ এইডস রয়েছে কিনা। তবে এই রোগ নির্ণয়ের জন্য আঙ্গুলে একটা ছোট্ট ফুটো করতে হবে। তারপর বাকি কাজটা করে দেবে এই স্মার্টফোন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন এলাইসার (ঊখওঝঅ) মাধ্যমে বিভিন্ন এসটিডির উপস্থিতি আছে কিনা তার হদিশ দেবে এই স্মার্টফোন। আবুল বাশার মুক্তিযোদ্ধা, কলামিষ্ট ও গবেষক প্রধান সম্পাদক শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম মোবাইল- 01855-694946 ইমেইল- abul.bashar.bashar@gmail.com, shahzadpursangbad@gmail.com ওয়েব- www.shahzadpursangbad.com

সম্পর্কিত সংবাদ

গাজা  প্রশ্নে ব্রিটিশ মন্ত্রী ওয়ার্সির পদত্যাগ

আন্তর্জাতিক

গাজা প্রশ্নে ব্রিটিশ মন্ত্রী ওয়ার্সির পদত্যাগ

শাহজাদপুরের কায়েমপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদককে কুপিয়ে ও জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা

শাহজাদপুরের কায়েমপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদককে কুপিয়ে ও জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা

সিরাজগঞ্জে ভূয়া সার্জেন্ট গ্রেফতার

আইন-আদালত

সিরাজগঞ্জে ভূয়া সার্জেন্ট গ্রেফতার

চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় নাঈমুল হাসান রনি (৩০) নামের...

উল্লাপাড়ায় নছিমন উল্টে বউ শ্বাশুড়ি নিহত, আহত ৭