বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শামছুর রহমান শিশির, শাহজাদপুর থেকে : বরেণ্য কন্ঠশিল্পী আব্দুল আলিমের লেখা ও তার কন্ঠে গাওয়া জননন্দিত ‘আর কতোকাল ভাসবো আমি, দুঃখের সারি গাইয়া’- এ সঙ্গীতের মতোই বহুমুখী সম্যস্যায় নিপতিত হয়ে দেশের সর্ববৃহৎ কুঁটিরশিল্প ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পে সম্পৃক্ত শাহজাদপুরের তাঁত শ্রমিকের হা-হুঁতাশ- ‘আর কতজ্বাল বুনমু তাঁতে, দুখ পাথারে ভাইস্যা !’ তাঁতবস্ত্রের বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করার কারণে দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরের হাজার হাজার তাঁত শ্রমিকদের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে । ‘হ্যান্ড টু মাউথ’ অর্থাৎ ‘দিন আনি দিন খাই’ -এমন পেশাজীবী ওইসব তাঁত শ্রমিকেরা তাদের পরিবার পরিজনের জীবনজীবিকা নিয়ে চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছে। এছাড়া লোডশেডিং, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের আকাশচুম্বি মূল্যবৃদ্ধি, তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল ও উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, বিভিন্ন এনজিও, সুদখেকো সুদ ব্যবসায়ী, সমিতি ও ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের বোঝা বহন, জীবনযাত্রা ব্যয় বৃদ্ধি, ক্রয়-ক্ষমতা হ্রাস, তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের নায্য মজুরি প্রাপ্তি বঞ্চিতসহ নানাবিধ কারণে ওইসব শ্রমিকদের ভাগ্যাকাশে বর্তমানে বিরাজ করছে কালো মেঘের ঘনঘটা । দেশের সর্ববৃহৎ কুটিরশিল্প ঐহিত্যবাহী তাঁতশিল্পের সাথে সম্পৃক্ত এসব হতভাগা তাঁত শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার অ-প্রাপ্তি ও ভাগ্যোন্নয়নে গৃহিত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের অভাব, সুষ্ঠু পরিকল্পনাসহ ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তির নিশ্চয়তার অভাবে ওই দুর্যোগ-দুর্ভোগ, দুর্গতি ক্রমেই ঘণীভূত হচ্ছে।ফলশ্রুতিতে ভাগ্যবিড়ম্বিত ওইসব চির অবহেলিত, চিরপতিত, চির অপাংক্তেয় হতদরিদ্র তাঁত শ্রমিকদের জীবনজীবিকার বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদছে (রূপকার্থে)! লোডশেডিং, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহত শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে তাঁতবস্ত্রের বিকিকিনিতে মন্দাভাবসহ বহুবিধ কারণে এলাকার প্রায় ২৫ ভাগ তাঁত বন্ধ হয়ে হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। হাঁড়ভাঙ্গা খাটুনি আর মেহনত করেও প্রয়োজনীয় অর্থ না পেয়ে অনেকে পেশা বদলাচ্ছে। আজ সোমবার শাহজাদপুর তাঁত শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তাঁতী ওমর ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক আল-মাহমুদ জানান, ‘ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে তাঁতবস্ত্রের বেচাকেনা একেবারেই নেই। এছাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্ধ্বগতি, শ্রমিকদের জীবনযাত্রার সার্বিক ব্যয় বৃদ্ধি, নায্য মজুরি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত, ঋনের কিস্তির ঘানি টানাসহ বহুবিধ কারণে হাজার হাজার তাঁতশ্রমিকেরা মানবেতর দিনযাপন করছে। ইতিমধ্যেই পুঁজি সংকটের কারণে এলাকার শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার তাঁত শ্রমিক। ফলে তাঁতীদের অবস্থা করুণ হবার পাশাপাশি শ্রমিক পরিবার পরিজনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ায় তারা অবর্ণনীয় দুর্ভোগ, দুর্গতিতে নিমজ্জিত হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে দিন কাটাচ্ছে। এ অবস্থা রোধে তাঁতবস্ত্রের আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি ও তাঁত মলিক-শ্রমিকদের ভাগ্যোন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অতীব জরুরী। ’ শাহজাদপুর তাঁত শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র শাহজাদপুরেই রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার তাঁত শ্রমিক। এদের মধ্যে স্থানীয় শ্রমিকের সংখ্যা ৪০ হাজার। আর উত্তরাঞ্চলের মঙ্গাপীড়িত এলাকার ২০ হাজার শ্রমিক এখানে নিযুক্ত রয়েছেন। ওইসব শ্রমিকের গড় আয় প্রায় ২০০ টাকা। চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্ধ্বগতিতে ওই সীমিত আয় দিয়ে বর্তমানে তাদের জীবন চালানো খুবই মুশকিল হয়ে পড়েছে। শাহজাদপুরে অনেক শ্রমিক রয়েছেন যাদের একার আয়ের ওপর সংসার পুরোপুরি নীর্ভরশীল। এমন একজন উপার্জনক্ষম শ্রমিক পরিবার বর্তমানে কিভাবে দিন কাটছে তা বাস্তবে না দেখলে বিশ্বাসের উপায় নেই। এ বিশাল জনগোষ্ঠি শ্রমিকের সিংহভাগই ‘দিন আনি দিন খাই’-এ নীতিতে চলছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় ওইসব শ্রমিকেরা পুঁজি ভেঙ্গে, সম্পদ বিক্রি করে, ধারদেনা করে বিশেষ করে স্থানীয় বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়াসুদে ঋণ নিয়ে কোনভাবে দিন অতিবাহিত করছে। ফলে তাদের ধারদেনা ও ঋণের মাশুল গুণতে হচ্ছে প্রতি ক্ষণে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূলের আকাশচুম্বি উর্ধ্বগতিতে এমনিতেই শ্রমিকদের বেহাল অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তার পরেও ‘মরার ওপার খাড়ার ঘা’-এর মতো ঋণের কিস্তি টানতে টানতে ঋণ শোধের পরিবর্তে নতুন করে তারা বিভিন্ন এনজিওর ঋণের অধৈ জলে আটকে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে আর হা-হুঁতাশ করছে। এদিকে, তাঁতীদের তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিসহ সার্বিক উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদিত তাঁতবস্ত্রের দামও আনুপাতিক হারে বেড়েছে। অন্যদিকে, বর্ধিত মূল্য দিতে নারাজ ব্যাপারী পাইকারেরা। ফলে কাপড়ের হাটে বেচাকেনা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। যেটুকু বিক্রি হচ্ছে তাতেও আশানুরূপ মুনাফা করতে না পেরে ও শ্রমিকদের মজুরি দিতে না পেরে তাঁতীরা তাঁত বন্ধ করে দিচ্ছে । হাটে তাঁতবস্ত্র বিক্রি হলে তাঁতীরা কারখানার শ্রমিকদের স্বতস্ফূর্তভাবে মজুরি প্রদান করে থাকেন। কিন্তু বিক্রির অবস্থা নাজুক হলে শ্রমিক বিল আটকে যায়। এতে শ্রমিকদের খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিন যাপন করতে হয়, নতুবা অথৈ ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে জীবন চালাতে হয়। এতে ওই শ্রমিক জনগোষ্ঠির জন জীবন ক্রমশ বিষিয়ে ও তেঁতো হয়ে উঠছে। এ অবস্থা হতে তাদের, তাঁত মালিক ও তাঁতশিল্পকে রক্ষায় দেশীয় তাঁতবস্ত্রের আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি ও তাঁতী এবং শ্রমিকদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অতীব জরুরী বলে বিজ্ঞমহল মনে করেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

পদত্যাগ করলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি

শাহজাদপুর

পদত্যাগ করলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে গত বৃহস্পতিবার আমরণ অনশনের আন্দোলনের মুখে পদ...

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আউয়াল মাস্টারের দাফন সম্পন্ন

শাহজাদপুর

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আউয়াল মাস্টারের দাফন সম্পন্ন

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আউয়াল মাস্টার (৭৩) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২৪ জুন) স...

বান্দরবানে জুম ঘর থেকে গলাকাটা মহিলার লাশ উদ্ধার

বাংলাদেশ

বান্দরবানে জুম ঘর থেকে গলাকাটা মহিলার লাশ উদ্ধার

জুম ঘর থেকে বান্দরবানে মহিলার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার(৩মার্চ) দিবাগত রাতে পাহাড়ের জুম ঘর থেকে উদ্ধার...

ঘুষি মারা সেই বৃদ্ধকে এবার নিজ হাতে চাল দিলেন কাদের মির্জা

বাংলাদেশ

ঘুষি মারা সেই বৃদ্ধকে এবার নিজ হাতে চাল দিলেন কাদের মির্জা

ঈদ উপহার নিতে যাওয়া সেই বৃদ্ধকে ঘুষি দেওয়ার এক দিন পর আজ রোববার তাঁকে নিজ হাতে সহায়তার চাল দিলেন নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভ...

বিশ্বকাপের ফাইনালে বাংলাদেশ

খেলাধুলা

বিশ্বকাপের ফাইনালে বাংলাদেশ

সুইজারল্যান্ডে লুজানে চলমান বিশ্বকাপ আর্চারি স্টেজ টুতে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ। রিকার্ভ মিশ্র ইভেন্টে বাংলাদেশকে ফাইনালে...

নামাজ পড়ে ১২০ জন পেল বাইসাইকেল

বাংলাদেশ

নামাজ পড়ে ১২০ জন পেল বাইসাইকেল

আড়াইহাজারে যুবসমাজকে ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান মিথিলা গ্রুপ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে। এসো ন...