রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫
13

‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার দাবি সাংবাদিকদের

শাহজাদপুর সংবাদ ডটকম সিলেট: এবার সাংবাদিকদের সম্পর্কে চরম আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। আদিবাসী দিবস উপলে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে গতকাল শনিবার আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মন্ত্রী বিভিন্ন মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সাংবাদিকদের ওপর প্তি। মঞ্চে ওঠেই তিনি মাইক নিয়ে সাংবাদিকদের অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগের নির্দেশ দেন; কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকেরা সেখানে থেকে গেলে বক্তৃতার সময় তিনি অকথ্য ভাষায় ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের ঠিক করতে নীতিমালা হয়েছে। ওই দিন কেবিনেট মিটিংয়ে আমি থাকলে সাংবাদিকদের... (অকথ্য শব্দ) দিয়ে বাঁশ ঢুকাতাম। সাংবাদিকদের এখন এমনভাবে ঠিক করা হবে, যাতে নিজের স্ত্রীকে পাশে নিয়েও শান্তিতে ঘুমাতে না পারে। সাংবাদিকেরা বদমাইশ, চরিত্রহীন, লম্পট।’ বক্তব্য চলাকালে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর শিষ্টাচারবহির্ভূত এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন উপস্থিত সাংবাদিকেরা। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে হট্টগোল শুরু হলে মহিলা সংসদ সদস্য কেয়া চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের কাছে করজোড়ে মাফ চান; কিন্তু সমাজকল্যাণমন্ত্রী তার অশ্লীল বক্তব্য চালিয়ে গেলে সাংবাদিকেরা অনুষ্ঠান বয়কট করে চলে আসেন।বক্তব্যের শুরুতে সাংবাদিকদের ছবি তুলে অনুষ্ঠানস্থল থেকে চলে যেতে বলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী। তিনি বলেন, যত দিন দুনিয়া থাকবে তত দিন ফজরের নামাজের পর মসজিদে কুরআন শরীফ পাঠ হবে। মাদরাসা শিক্ষাায় আরবির পাশাপাশি বাংলা-ইংরেজি শিক্ষাা না দিলে তারা পিছিয়ে পড়বে। মন্ত্রী বলেন, আমি একটি অনুষ্ঠানে এ রকম কথা বলেছিলাম; কিন্তু সাংবাদিকেরা আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রকাশ করেছে। একটি জাতীয় দৈনিকের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ ওই পত্রিকা লিখেছে তারা আমাকে লাল পানি খাওয়াবে। ওই পত্রিকা আমাদের গর্ব অর্থমন্ত্রী সম্পর্কেও আজেবাজে লিখেছে। মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা আমাকে ডেকে বলেছেন, হাসানুল হক ইনু ১৪ দলের নেতা, আর তুমি আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা। সাংবাদিকেরা যা ইচ্ছে লেখুক, তাতে কিছু যায় আসে না। তুমি চালিয়ে যাও। মন্ত্রিত্বের পরোয়া করেন নাÑ এমন দম্ভোক্তি করে মহসিন আলী বলেন, মন্ত্রিত্ব থাকলেই কী, আর না থাকলেই কী? জনগণ আমাকে ভালোবাসে, আমিও জনগণের ভালোবাসা নিয়ে বাঁচতে চাই। সাংবাদিকেরা অল্প শিতি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমার মেয়ে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স। আর যারা পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে লেখালেখি করে তারা দুই-এক কলম পড়ালেখা করেছে। আমি বলি একটা, তারা লিখে আরেকটা। দুই টাকা খেয়ে তারা আমার... (অকথ্য শব্দ) দিয়ে বাঁশ ঢুকাতে চায়। আমার শ্বশুরবাড়ি সিলেটে। সাংবাদিকদের পেছনে সিলেটের মানুষ লেলিয়ে দিতে আমার সময় লাগবে না। সাংবাদিকেরা আমার... (অকথ্য শব্দ) ছিঁড়তে পারবে না। এ দিকে, মন্ত্রীর অশালীন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকেরা তাৎক্ষণিক এক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসিন আলীকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ আখ্যায়িত করে তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সাংবাদিকরা। আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সাংবাদিক নেতারা এই দাবি জানান। গতকাল শনিবার বিকেলে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির আলোচনা সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাংবাদিকদের আক্রমণ করেন। তিনি বক্তব্য দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের ‘খবিশ’ ও ‘চরিত্রহীন’ বলে গালি দিয়েছেন। এ সময় সাংবাদিকেরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করে তার অনুষ্ঠান বর্জন করেন।ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে সমাবেশে সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী বলেন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী যেভাবে গালাগাল করেছেন, তাতে এই মন্ত্রিসভাকে সুস্থ মন্ত্রিসভা বলা যায় না। এই মন্ত্রীকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে ও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথা আন্দোলন চলতে থাকবে বলে হুমকি দেন তিনি।তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেও এই মহসিন সাংবাদিকদের আইনে বেঁধে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। এর পরপরই সম্প্রচার নীতিমালার নামে কালো আইন করা হয়েছে। গণমাধ্যমের গলা চেপে ধরতে, সাংবাদিকদের অনুগত বানানোর জন্য তথ্যমন্ত্রী এই আইন প্রণয়ন করেছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমানও সাংবাদিকদের গালাগালি করেছে।ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে ‘ভারসাম্যহীন’ আখ্যায়িত করে তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের সম্মান রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একই সঙ্গে তিনি জানান, তারা এ বিষয়ে আদালতে যাবেন এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। ডিআরইউ’র সভাপতি ইলিয়াস খান বলেন, ‘সংবাদপত্রের টুটি ধরার জন্য এই সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। মন্ত্রীরা একের পর এক গণমাধ্যম নিয়ে অশোভন কথাবার্তা বলে যাচ্ছে। দুর্বৃত্ত এই সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাংবাদিকদের সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে তাকে পদচ্যুত করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’প্রধানমন্ত্রীকে এমন দুষ্ট লোককে মন্ত্রিসভা থেকে বের করে দেওয়ার আহ্বান জানান প্রেস ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী।এই বিক্ষোভ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে সাংবাদিক নেতারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি আশপাশের রাস্তা ঘুরে প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।

সম্পর্কিত সংবাদ

শাহজাদপুরে দুস্থের মাঝে নগদ অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে দুস্থের মাঝে নগদ অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাইদুল ইসলাম মন্ডলের নিজস্ব অর্থায়নে দুস্থ ও হতদ...

শাহজাদপুরের হাবিবুল্লাহনগর ইউপিতে ভিজিএফ’র চাল বিতরণ

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরের হাবিবুল্লাহনগর ইউপিতে ভিজিএফ’র চাল বিতরণ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ৭নং হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দুঃস্থ ও অসহায় ম...

এখনই বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে: প্রধান উপদেষ্টা

জাতীয়

এখনই বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে: প্রধান উপদেষ্টা

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের কাছ থেকে প্রাপ্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনই বাস্তবায়ন...

শাহজাদপুরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

শাহজাদপুর

শাহজাদপুরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের সামাজিক ও মানবিক সংগঠন...

যমুনার পানি বিপদসীমার ৭৩ সে.মি. উপরে, বিপাকে বানভাসিরা

সিরাজগঞ্জ জেলার সংবাদ

যমুনার পানি বিপদসীমার ৭৩ সে.মি. উপরে, বিপাকে বানভাসিরা

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও তিস্তা...

পানিতে ৫’শ একর জমির পাঁকা ধানে পড়েছে মই: কৃষকের হা-হুঁতাশ বাড়ছে

বন্যা

পানিতে ৫’শ একর জমির পাঁকা ধানে পড়েছে মই: কৃষকের হা-হুঁতাশ বাড়ছে

শামছুর রহমান শিশির, শাহজাদপুর থেকে : উজানের ডল আর বর্ষনে সৃষ্ট বন্যার পানিতে শাহজাদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন স্থা...