চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত ১২টি শিশু থেকে পাওয়া নমুনার ওপর গবেষণা চালিয়েছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি
চট্টগ্রামে আক্রান্ত শিশুদের শতভাগই করোনার ভারতীয় ধরন ডেলটায় আক্রান্ত হচ্ছে। যদিও এ ক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুঝুঁকি কম। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া ১২টি শিশুর কাছ থেকে পাওয়া নমুনা পরীক্ষা করে এ তথ্য জানিয়েছে গবেষক দল।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ও গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ডা. আবদুর রব মাসুম জানান, তিন প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে করা এ গবেষণায় গত জুন থেকে চলতি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আক্রান্ত শিশুদের শরীরে পাওয়া নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। এই গবেষণা এখনো চলমান। গবেষণায় পাওয়া সিকোয়েন্স ডেটা জার্মানভিত্তিক ভাইরাসের আন্তর্জাতিক তথ্যভান্ডার ‘গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা’–তে প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে সংস্থাটি এ সম্পর্কিত তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।
আবদুর রব মাসুম বলেন, এই গবেষণায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনায় ভর্তি হওয়া ১২টি শিশু থেকে পাওয়া নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে। দেখা গেছে, আক্রান্ত শিশুদের শতভাগই ডেলটা ভেরিয়েন্টে সংক্রমিত হয়েছে।
গবেষণার নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, গবেষণায় নবজাতক থেকে শুরু করে ১৬ বছর বয়সী স্কুলগামী শিশুরাও রয়েছে। আক্রান্ত শিশুদের ৮০ শতাংশেরই বয়স ১০ বছরের নিচে। সর্বনিম্ন আট মাস বয়সের শিশুর মধ্যেও ডেলটা ভেরিয়েন্ট চিহ্নিত হয়েছে। গবেষণাধীন ৯৫ শতাংশ শিশুর মধ্যেই জ্বরের লক্ষণ এবং ৭০ শতাংশ শিশুর সর্দি ও কাশি ছিল। একটি শিশু পুরোপুরি উপসর্গহীন ছিল।
গবেষকদলের দুইজন। ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী, আবদুর রব মাসুম। ছবি: সংগৃহীত
হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, ‘আমাদের গত চার মাসের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রামে আলফা ও বিটা ভেরিয়েন্টের প্রকোপ ছিল মে মাস পর্যন্ত। কিন্তু জুন থেকেই ৯০ শতাংশ রোগীর মধ্যে ডেলটা ভেরিয়েন্ট দেখা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হচ্ছে, শিশুদের মধ্যেও ডেলটা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ।’
গবেষক দলের আরেক সদস্য চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘গত জুন মাস থেকে শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ও তীব্রতা বেড়ে গেছে। ডেলটা ভেরিয়েন্টের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে আমাদের ধারণা। তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে ছোট শিশুরা নিজের অনুভূতি কিংবা দুর্বলতা প্রকাশ করতে না পারায় অনেকেই কোভিড টেস্ট বা শনাক্তকরণের আওতায় আসছে না, যা চিন্তার বিষয়ও বটে।’
ডা. আব্দুর রব মাসুম বলেন, শিশুদের মধ্যে কোভিড হওয়ার মাত্রা বেড়ে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। এ ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের প্রয়োজন বেড়ে যেতে পারে সামনের দিনগুলোতে। ফলে পরিবারের সবাইকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
গবেষক দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চিকিৎসক ডা. নাহিদ সুলতানা, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. মিনহাজুল হক, রাজদীপ বিশ্বাস ও আকরাম হোসেন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ডা. ফাহিম হাসান রেজা। সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) ভাইরোলজি বিভাগের গবেষক দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান ও ড. মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন।