মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩
শামছুর রহমান শিশির: পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুর, বিন্দু সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লী ও বিভিন্ন স্কিন প্রিন্ট কারখানাগুলোতে উৎপাদিন ছোট, বড়দের বৈশাখী বস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে আবহমান গ্রাম বাংলার নানা ঐহিত্যের প্রতিক ঢোল, তবলা, ফুল, ফল, লতাপাতা, একতারা, বাশি, পালকির ছবি সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন ও বাহারী ডিজাইনের বৈশাখী তাঁতবস্ত্র তৈরি, প্রক্রিয়াকরণ, মোড়কজাত ও বিপনণে সিরাজগঞ্জের তাঁত মালিক ও তাঁত শ্রমিক এবং স্কিন প্রিন্ট কারখানার মালিক ও শ্রমিকেরা বর্তমানে মহাব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। দেশীয় গ্রে-তাঁতের কাপড়ের ওপর বৈশাখী উৎসবে নতুন আমেজ যুক্ত করতে তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ শাহজাদপুর,সিরাজগঞ্জ ও পাবনার পাশাপাশি টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, নরসিংন্দী, যশোর, ঢাকার মিরপুরসহ তাঁতপল্লীগুলোতে ও গ্রে-তাঁতের কাপড়ে প্রিন্ট করার জন্য সংশ্লিষ্টদের কর্মচাঞ্চ্যলতা আর তাঁতের খট্খট্ শব্দে মুখরিত ও প্রাঞ্জলিত হয়ে উঠেছে তাঁতসমৃদ্ধ জনপদ। পহেলা বৈশাখে দেশে বৈশাখী তাঁতের কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা ও কদর থাকায় তাঁতী ও শ্রমিকেরা বৈশাখী পোশাক উৎপাদনে সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। দেশে হস্তচালিত তাঁতে উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছার মোট চাহিদার সিংহভাগই শাহজাদপুর সহ পাবনা-সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নরসিন্দী জেলায় উৎপাদিত হয়ে থাকে। এখানে উৎপাদিত তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছার ব্যাপক কদর রয়েছে দেশ ও বিদেশে। সারা বছরের এ সময় বৈশাখী দেশীয় তাঁত ও প্রিন্ট বস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। আর সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে তাঁতী ও শ্রমিকরা নিত্যনতুন ডিজাইনের বৈশাখী কাপড় উৎপাদনে কোমড় বেঁধে কাজ করছেন। উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ তাঁতবস্ত্র বিক্রয়ের শাহজাদপুর কাপড়ের হাটের বিভিন্ন বস্ত্র বিপনন কেন্দ্র ও মণিরামপুর বাজারস্থ ইউসুফ প্লাজার বৈশাখী কাপড় পাইকারী বিক্রয়ের প্রতিষ্ঠান রাবেয়া বস্ত্র বিতান, মেরাজ বস্ত্র বিতান, হাজী বস্ত্রালয়, সেলিনা বস্ত্রালয়, ইউসুফ বস্ত্রালয় ঘুরে ও বিক্রেতা মেরাজ সরকার, রফিকুল ইসলাম রুবেলসহ বৈশাখী পোশাক তৈরি ও বিক্রয়কারী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে তারা বৈশাখী শাড়ি কাপড়ের যে মজুদ গড়ে তুলেছিলেন তা প্রায় শেষ পর্যায়ে। ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ছোটদের কাপড়ের। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, বেলকুচি, কামারখন্দ, চৌহালী, সিরাজগঞ্জসদর এবং পাবনা জেলার বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর ও পাবনা সদরের জালালপুরের শত শত সচল তাঁতকারখানায় পুরোদমে বৈশাখী তাঁতবস্ত্র উৎপাদন ও প্রিন্ট কারখানায় দ্রুতগতিতে বস্ত্র উৎপাদনের কাজ চলছে। তাঁতীদের তাঁত কারখানা ও প্রিন্টের কারখানায় উৎপাদিত তাঁতবস্ত্র দুই ঈদ, দুর্গাপূজা ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহত শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে বৈশাখী কাপড় দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে শাহজাদপুর, পাবনা-সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংন্দীসহ দেশের তাঁতসমৃদ্ধ এলাকার অসংখ্য তাঁত মালিক ও শ্রমিক দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ঈদ, পূঁজা ও নববর্ষ এলেই আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠার জন্য তাঁতীদের খরচ বৃদ্ধি পায়। আর ওই বর্ধিত খরচের টাকার যোগান দিতেই তাঁতীরা কোমড় বেধে কাজ করে থাকেন। কারণ অতিরিক্ত আয়ের অর্থ দিয়ে ঈদ ও দুর্গাপূঁজার মতোই বাংলা বর্ষবরণ উৎসবে তাদের পরিবারের সদস্যসহ স্বজনদের নতুন জামা কাপড় কিনে দেন। সেইসাথে ঈদ, পূঁজা মতো পহেলা বৈশাখের দিনটিতে পায়েশ, পোলাও, ফিরনি, নাড়–, খৈ, চিড়া, দই, মিষ্টিসহ সবাইকে নিয়ে একটু ভালো খাবারের আয়োজনে বাড়তি আয়ের এ অর্থ ব্যয় হয়। তারা জানায়, এতেই তাদের সুখ, এতেই তাদের শান্তি। এই সুখ শান্তি পরিবারের সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিতে তাঁতী ও শ্রমিকেরা এই বাড়তি পরিশ্রমে মেতে উঠেছে। প্রতিবছর দেশে ও বিদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ছাড়াও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী বাহারী ডিজাইনের ও মনকাড়া রঙের তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছাসহ নানা ধরনের তাঁত বস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এ সময় তাঁতবস্ত্রের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়েও দ্বিগুণ হয়ে থাকে। প্রাচীনকাল থেকেই শাহজাদপুর, পাবনা-সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিন্দী, ঢাকা, মিরপুরের বেনারসী পল্লীসহ দেশের তাঁতপল্লীতে উৎপাদিত তাঁতের শাড়ি লুঙ্গি দেশের তাঁতবস্ত্রের চাহিদার সিংহ ভাগ পূরণ করে আসছে। এ চাহিদা পূরণে শুধুমাত্র শাহজাদপুর উপজেলার পৌরসদরসহ ১৩ টি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রামে ছোট বড় অসংখ্য সচল তাঁত কারখানা ও প্রিন্টের কারখানাগুলোতে বৈশাখী কাপড় তৈরিতে সংশ্লিষ্টদের ব্যতিবস্ত সময় কাটছে। তাঁতের তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা বিক্রির জন্য উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে দেড় শতাধিক কাপড়ের আড়ৎ ও প্রায় দশ সহস্রাধিক তাঁতের শাড়ি ও লুঙ্গি বিক্রির পাইকারি, খুচরা দোকান ও শো-রুম রয়েছে। সপ্তাহের দুই দিন, রোববার ও বুধবার উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে তাঁতের শাড়ি লুঙ্গির হাট বসে। এ হাটে দেশের প্রায় সকল স্থান ও ভারত থেকে পাইকার আসছে বৈশাখী কাপড় ক্রয় করতে। ফলে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে পাবনা-সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লীর অগণিত নারী পুরুষ বৈশাখী কাপড় তৈরিতে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। তাঁতের কাপড়ের ধরন, মান ও বর্ণানুয়ায়ী ছোটদের তাঁতের কাপড় পাইকারী ১শ’ ৫০ টাকা থেকে ২শ’ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড়দের বৈশাখী কাপড় ধরন, মান ও রকম ভেদে ২শ’৫০ টাকা থেকে সহ¯্রাধিক টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বড়দের চেয়ে ছোটদের বৈশাখী কাপড়েরই চাহিদা বেশী বলে প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

সম্পর্কিত সংবাদ

সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে শাহজাদপুরও হতে পারে পর্যটন শহর

জাতীয়

সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে শাহজাদপুরও হতে পারে পর্যটন শহর

হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহ.) ২ দিনব্যাপী বাৎসরিক ওরশ শুরু

ধর্ম

হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহ.) ২ দিনব্যাপী বাৎসরিক ওরশ শুরু

শামছুর রহমান শিশির, শাহজাদপুর থেকে : আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর পৌর সদরের দরগাহপাড়াস্থ করতোয়া নদীর...

বসন্তের আগমনী বার্তা পরিবর্তনের আভাস

জাতীয়

বসন্তের আগমনী বার্তা পরিবর্তনের আভাস

“হে কবি , নিরব কেন ফাগুন যে এসেছে ধরায়, বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?” সত্যিই ফুঠে উঠেছে আজ কবি সুফিয়া কামালের...

২৪ জেলার যাত্রী ভোগান্তি: খানাখন্দে ভরা সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক

ফটোগ্যালারী

২৪ জেলার যাত্রী ভোগান্তি: খানাখন্দে ভরা সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জে মহাসড়কের বেহাল দশার কারনে প্রতিদিনই হাটিকুমরুল গোল চত্তর থেকে নলকা ব্রিজ পর্যন্ত বাড়ছে য...

শাহজাদপুরে মানহীন ২০ বোতল পানি ধ্বংশ

অপরাধ

শাহজাদপুরে মানহীন ২০ বোতল পানি ধ্বংশ

শাহজাদপুর প্রতিনিধি : গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকালমঙ্গলবার দুপুরে শাহজাদপুর পৌর এলাকার দ্বারিয়াপুর বাজার এলাকা থেকে ২০ বো...