বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও তিস্তা নদীতে ভারতের গজল ডোবা ব্যারেজের অধিকাংশ গেট খুলে দেয়ায় সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। এতে বিপাকে পড়েছে পানিবন্দি বানভাসিরা।

এদিকে বন্যা কবলিত মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা বন্যা কবলিত সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার চর পুঠিয়াবাড়ি ও কাটাওয়াপদা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কাটাওয়াপদা ক্রসবাঁধে আশ্রয় নেওয়া বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে তিনি ত্রাণ বিতরণ করেছেন। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের ডাটা অ্যান্টি অপারেটর আবুল কালাম আজাদ পরিবর্তন ডটকমকে জানান, বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চর পুঠিয়াবাড়ি এলাকার আকমল হোসেন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমার ঘরে ৮-৯ দিন হলো পানি ওঠেছে। আমি অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। পানিতে ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাজ কর্ম নাই। এখনও সরকার আমাদের কিছু দেয়নাই। এখন কিভাবে দিন চলবে বুঝতে পারছি না। খুব কষ্টের মধ্যে আছি। সরকারী ভাবে কিছু বরাদ্দ দিলে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারতাম। সিরাজগঞ্জ ক্রস বাঁধ- ৩ এ আশ্রয় নেওয়া আনোয়ারা বেগম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমি বাসা বাড়িতে কাজ করে খাই। আমার কোনো ছেলে মেয়ে নাই। পানির জন্য ঘরের মধ্যে যেতেও পারি না থাকতেও পারি না। আপনারা সহযোগিতা না করলে আমরা ত্রাণ পাবো না। ঘরে পানি উঠেছে তাই বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছি। এখন পর্যন্ত সরকারী ভাবে কিছু দেয়নি। আমরা পাইনি। সরকার চাল দিলে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবো। ক্রস বাঁধ- ৩ এ আশ্রয় নেওয়া রোকেয়া বেগম জানান, আমরা চাইনা বাঁধের (ক্রস বাঁধ) নিচে বাস করি। আমার ৭টা ঘর। ৫টা ঘর আছে। ২টা ঘর ভেসে গেছে। ৯টা ছেলে মেয়ে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি বাঁধে। পুলিশ এসে তাড়া হুড়ো করে ঘর ভেঙে দেয়। আমাদের এখন খাবার নাই। আমাদের জন্য কিছু শুকনা খাবার দরকার। পানি ওঠতে ওঠতে ঘর সমান হয়ে গেছে। বর্তমানে আমাদের কিছুই নাই। চায়না বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে কষ্টে আছি। সরকার কিছু বরাদ্দ দিলে কিছুটা কষ্ট লাঘব হবে। এদিকে প্রতিনিয়ত যমুনা নদীর পানি বাড়তে থাকায় চরাঞ্চল ও নিন্মাঞ্চল গুলো প্লাবিত হচ্ছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন গরুর খামারীরা। যমুনা নদীর চরে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গরুর খামার রয়েছে। চরের ঘাস খর খেয়ে গরু গুলো বেঁচে থাকে। চর ডুবে যাওয়ায় খামারীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় রাস্তা ঘাট থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়াতে রাস্তা ঘাটের বিপর্যয় হয়েছে। জেলার ৪৮ কিলোমিটার বাঁধে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কথা হয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলীর সাথে। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে জানান, বন্যায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার আউশ ধান, সবজি, আমনের বীজতলা, পাটসহ ৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে দেড় হেক্টর আউশ ধানের জমি রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসল নষ্ট হওয়ার পথে। সিরাজগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম ভুট্রো পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমার ১৪নং ওয়ার্ডে ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি। মেয়রসহ আমি বন্যা এলাকা পরিদর্শন করেছি। পাশাপাশি অস্থায়ী ভাবে ল্যাট্রিন, টিউবওয়েল, নৌকার ব্যবস্থা করেছি। সরকারী ভাবে যে বরাদ্দ আসবে তা আমরা বিতরণ করে দিবো। আমরা ইতিমধ্যে ১৫শ লোকের একটি তালিকা করেছি। বৃহস্পতিবার থেকে ধারাবাহিক ভাবে তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবো। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা পরিবর্তন ডটকমকে জানান, সিরাজগঞ্জ একটি নদী ভাঙন এলাকা। ৯টি উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ৩টি উপজেলা সদর, শাহজাদপুর এবং কাজিপুর বেশি হয়েছে। আমরা প্রাথমিক তালিকা করেছি। এর মধ্যে আমরা ২ হাজার মানুষের তালিকা করতে পেরেছি। শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুড়ীতে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এখানকার কিছু মানুষ নতুন আশ্রয় স্থলে চলে গেছেন। এখানে ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আরো জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আমরা অ্যাডভান্স বরাদ্দ দিয়ে রেখেছি। তারা খুব তাড়াতাড়ি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ রয়েছে। তা যথাসময়ে বিতরণ করা হবে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৮৪ মে. টন চাল ও নগদ ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা প্রতিদিন বন্যাকবলিত এলাকায় সরেজমিন গিয়ে বন্যার্তদের মধ্যে এগুলো বিতরণ করেছে।

সম্পর্কিত সংবাদ

কোরবানীকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের কামাররা মহাব্যস্ত

কোরবানীকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের কামাররা মহাব্যস্ত

সৈয়দ শামীম শিরাজী, সিরাজগঞ্জ: গ্রামীণ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্প নানা সংকটে আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রয়োজনীয় উপ...

সাবেক এমপি চয়নকে শাহজাদপুর থানা পুলিশে হস্তান্তর

জাতীয়

সাবেক এমপি চয়নকে শাহজাদপুর থানা পুলিশে হস্তান্তর

গাজীপুরের শ্রীপুর থানা থেকে সাবেক এমপি চয়ন ইসলামকে আজ ১০ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) শাহজাদপুর থানা-পুলিশের একটি

রিক্সাচালক চাঁদের ঘরে চাঁদনীর আলো

জাতীয়

রিক্সাচালক চাঁদের ঘরে চাঁদনীর আলো

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার মাদলা গ্রামের হৎদরিদ্র রিকশা চালক চাঁদ আলীর মেয়ে চাঁদনী খাতুন দারিদ্রতার নাগপাশ

প্রয়াত এমপি হাসিবুর রহমান স্বপনের দুই বাড়ি ভাঙচুর : অগ্নিসংযোগ

অপরাধ

প্রয়াত এমপি হাসিবুর রহমান স্বপনের দুই বাড়ি ভাঙচুর : অগ্নিসংযোগ

সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সাবেক এমপি প্রয়াত হাসিবুর রহমান স্বপনের সিরাজগঞ্জ সদরের দুটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের

বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার ক্ষোভে প্রেমিকের আত্মহত্যা

শাহজাদপুর

বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার ক্ষোভে প্রেমিকের আত্মহত্যা

পবিত্র ঈদুল আজহা'র আনন্দঘন দিনে ফজলে রাব্বি ওরফে চয়েনের আত্মহত্যার ঘটনায় পুরো ঘোষ শ্রীফলতলা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছ...

শাহজাদপুর পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের বিশাল আনন্দ শোভাযাত্রা

জাতীয়

শাহজাদপুর পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের বিশাল আনন্দ শোভাযাত্রা

বক্তব্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ শাহজাদপুর পৌর শাখার সাধারন সম্পাদক মানিক সরকার বলেন, ‘দেশী বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র প্রত...