ছবিতে- প্রথম কিবলা: পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস শহরের মসজিদ আল-আকসা
শাহজাদপুর সংবাদ ডট কম: বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের প্রথম কেবলা। রাসূলে পাক (সা.) যে তিন মসজিদের উদ্দেশ্যে সওয়াবের নিয়তে সফর করার অনুমতি দিয়েছেন বায়তুল মুকাদ্দাস তার একটি। এ মসজিদে নামাজ আদায়ের বিশেষ ফজিলতের কথা হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কোরআন শরিফের ভাষায় একে বলা হয়েছে মসজিদুল আকসা। হজরত সোলাইমান (আ.) এর নির্দেশে জিনদের দ্বারা এ মসজিদ নির্মিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত একে ঘিরে ঘটে গেছে ইতিহাসের হাজারো ঘটনা। সে ঘটনাপঞ্জির স্মারক হয়ে আজও বিরল ঐতিহ্য বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদটি। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনেও নানা অনুষঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এ মসজিদটি। তাই উম্মতে মুহাম্মদির স্মৃতির মণিকোঠায় জাগরূক এ মসজিদ। জীবনে একবার হলেও প্রিয়তম রাসূলের (সা.) সেই স্মৃতিময় অঙ্গনে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিজেকে মহিমান্বিত করার অভিপ্রায় ও স্বপ্ন প্রতিটি মোমিন হৃদয়ে লালিত।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তখনও ফরজ হয়নি। রাসূলে পাক (সা.) সূর্যোদয়ের আগে দুই রাকাত এবং সূর্যাস্তের আগে দুই রাকাত নামাজ পড়তেন। এ নামাজ তিনি পড়তেন বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে। তবে তিনি এমনভাবে দাঁড়াতেন যাতে একইসঙ্গে কাবা শরিফ এবং বায়তুল মুকাদ্দাস দুটোই তার সামনে থাকে। এর পরে মেরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হলো। এ নামাজও রাসূলুল্লাহ (সা.) একইভাবে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে আদায় করতেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে নবীজি যখন হিজরত করে মদিনা শরিফে তাশরিফ আনলেন, তখন আর একইসঙ্গে কাবা ও বায়তুল্লাহর দিকে ফিরে নামাজ আদায় করার সুযোগ থাকল না। তখন তিনি শুধু বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ আদায় শুরু করলেন। বোখারি শরিফের হাদিস অনুযায়ী ১৬ বা ১৭ মাস তিনি শুধুই বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ পড়েছেন। এর পরে দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে কেবলা পরিবর্তনের নির্দেশ এলো। মসজিদে হারামকে মুসলমানদের কেবলা ঘোষণা করা হলো। বর্তমানে বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের কেবলা নয়; কিন্তু প্রথম কেবলা হিসেবে মুসলমানদের কাছে চিরকালই মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।নবীজির (সা.) জীবনে মেরাজ ছিল এক মহান ও বিস্ময়কর ঘটনা। আর মেরাজের প্রসঙ্গ এলে স্বভাবতই চলে আসে বায়তুল মুকাদ্দাস তথা মসজিদুল আকসার কথা। কারণ, মেরাজের সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বায়তুল মুকাদ্দাস ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 'পবিত্র সেই সত্তা, যিনি রাতের কোনো এক অংশে তার বান্দাকে সফর করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত।' (সূরা বনি ইসরাইল : ১)।যে কেবলার দিকে ফিরে দীর্ঘদিন নামাজ আদায় করেছেন মেরাজের রাতে তা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ এলো। আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ.) নবীজির (সা.) বায়তুল মুকাদ্দাস পরিদর্শনের বর্ণনা এভাবে তুলে ধরেছেন, 'জিবরাঈল (আ.) আমাকে নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসের কাছে এলেন। একটি পাথরে আঙুলের খোঁচা দিয়ে ছিদ্র করে তাতে বোরাক বাঁধলেন। এর পরে আমাকে নিয়ে যখন সাখরায় পেঁৗছলেন তখন কিছু সময় যেতে না যেতেই বহু মানুষ একত্রিত হলো। মুয়াজ্জিন আজান দিলেন। কিছুক্ষণ পরে একামত হলো। সবাই অপেক্ষমাণ, কে ইমামতি করবেন? এরই মধ্যে জিবরাঈল (আ.) হাত ধরে আমাকে সামনে এগিয়ে দিল। আমি ইমামতি করলাম। নামাজ শেষে জিবরাঈল (আ.) প্রশ্ন করলেন, আপনি কি জানেন কারা আপনার পেছনে আজ নামাজ আদায় করলেন? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, আজ পর্যন্ত যত নবী দুনিয়ায় এসেছেন তারাই আজ আপনার পেছনে নামাজ পড়েছেন।'নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর নবীজির সামনে একটি শরাবের পেয়ালা এবং একটি দুধের পেয়ালা পেশ করে বলা হয়, আপনি এর মধ্য থেকে একটি গ্রহণ করুন। নবীজি দুধের পেয়ালা গ্রহণ করলেন। জিবরাঈল (আ.) তখন বললেন, আপনি ফিতরাতকে গ্রহণ করেছেন। আপনি যদি শরাবের পেয়লা গ্রহণ করতেন তাহলে আপনার উম্মত গোমরাহ হয়ে যেত। অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত জিবরাঈল (আ.) বললেন, তারা জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে যেত। অবশ্য অন্য বর্ণনায় মধু, দুধ ও শারাবের তিনটি পেয়েলা পেশ করার কথা উল্লেখ আছে এবং সেই ঘটনাস্থল সাত আসমান পার হয়ে আল্লাহর সানি্নধ্যে। এটা বলে তিনি নবীজিকে পূর্ব প্রাচীরের দিকের উপত্যকা দেখিয়ে দিলেন। সেখানে তিনি জাহান্নামকে দেখতে পেলেন। পরবর্তীতে হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) একদিন সেখানে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন এবং বললেন, এখানেই নবীজি জাহান্নামের ফেরেশতাকে আগুন নাড়াচাড়া করতে দেখেছিলেন। বায়তুল মুকাদ্দাসে যাত্রা বিরতির পরেই শুরু হয় নবীজির ঊর্ধ্বাকাশ ভ্রমণ। ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার সময়ও এখানে তিনি যাত্রা বিরতি করেছিলেন।সরাসরি বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে ঊর্ধ্বাকাশ ভ্রমণ না করে বায়তুল মুকাদ্দাস হয়ে ঊর্ধ্বাকাশ ভ্রমণ করার পেছনে অনেক হিকমত ও রহস্য নিহিত রয়েছে। ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, বায়তুল মুকাদ্দাস হলো আসমান থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটতম স্থান। তাছাড়া বায়তুল মুকাদ্দাস পূর্ববর্তী অনেক নবীর হিজরতের জায়গা। সুতরাং এখানে যাত্রা বিরতির মাধ্যমে সেই নবীদের সুন্নতের অনুকরণ হলো। মেরাজের সত্যতা কোরাইশদের সামনে প্রমাণের জন্যও এ সফর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বায়তুল মুকাদ্দাস সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল। আর নবীজি এর আগে কখনও সেখানে যাননি। তাই সেখানকার খুঁটিনাটি সব যখন নবীজি তাদের সামনে তুলে ধরলেন তখন তারা এ ঘটনা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ পেল না। এছাড়াও সব নবীর উপরে ইমামতির মর্যাদা প্রদানের জন্যও বায়তুল মুকাদ্দাস ছিল যথোপযুক্ত জায়গা। কারণ এটা হলো হাজারও নবীর আবাসস্থল। সেদিন বিশ্ব নবীর সেই ইমামতির মধ্যে মূলত এটাই ইশারা ছিল যে, আজ থেকে পূর্ববর্তী সব ইমামের ইমামতি রহিত হলো। আগামী পৃথিবীর নেতৃত্ব হবে মুহাম্মদ (সা.) ও তার উম্মতের। কিন্তু সে ইমামতি আজ মুসলমানদের হাতছাড়া। বিশ্ব নেতৃত্বের রাজমুকুট মুসলমানরা যেখানে লাভ করেছিল সেখানেই আজ মুসলমানদের রক্ত ঝরছে। সেই পবিত্র স্থঅন জবর দখল করে আছে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া যায়নবাদী ইসরাঈল।
সম্পর্কিত সংবাদ
শিক্ষাঙ্গন
শাহজাদপুর খুকনী বহুমুখী উচ্চ কিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত
শামছুর রহমান শিশির, নিজস্ব প্রতিবেদক : সিরাজগঞ্জের তাঁতসমৃদ্ধ শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়নের খুকনী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যা...
আইন-আদালত
শাহজাদপুরে আদালত পরিদর্শনে জেলা ও দায়রা জজ
এমএ হান্নান, কোর্ট রিপোর্টার : আজ সোমবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ ফাহমিদা কাদের শাহজাদপুর বন্যায় প্লাবিত উপজেলা...
ফটোগ্যালারী
বিগ ডাটা কি এবং কেন! ( What is Big Data and Why? )
শিল্প ও সাহিত্য
শাহজাদপুরে লোকনাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শাহজাদপুরে গত বৃহস্পতিবার রাতে লোকনাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয় । শাহজাদপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় চত্বর...
শাহজাদপুর
শাহজাদপুরে চলছে মখদুমিয়া জামে মসজিদের উন্নয়নের কাজ
মোঃ শফিকুল ইসলাম ফারুক : প্রায় সাড়ে আট শত বছরের পুরাতন হযরত মখদুম শাহ্দৌলা শহীদ ইয়েমেনী (রহঃ) এর পবিত্র মাজার সংলগ্ন মখদ...
রাজনীতি
মন্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আবদুল মজিদ মন্ডল আর নেই
সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবদুল মজিদ মন্ডল (৭২) আর ন...